সিলেটের মজুমদারগণ

সিলেটের মুজমাদারগণ সিলেট অঞ্চলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবার।

মজুমদার পরিবার
বর্তমান অঞ্চলসিলেট, বাংলাদেশ
পূর্ববর্তী বানানমুজমাদার (Mujmader)
ব্যুৎপত্তিরেকর্ড রক্ষক (জমারাখা)
উৎপত্তির স্থানতুর্কী
প্রতিষ্ঠাতাসরোয়ার খান (সর্বানন্দ)
ধর্মসুন্নি ইসলাম
জমিদারি1.Syeadiya Waqaf Estate,2.Hamidiya Waqaf Estate, 3. Syeadiya Hamidiya waqaf Estate.

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
১৯ শতকের শেষের দিকে মিজোরামের লুসেই বংশের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ও তাদের মিত্রদের মধ্যের বহু যুদ্ধের একটি
 
মজিদ বখত মুজমাদারকে ১৯০৩ সালে দিল্লি দরবারে আমন্ত্রণ জানানো হয়

পরিবারটি টারকি (Turkey) থেকে আগত সরোয়ার খান এবং বাংলার সুলতানের অধীনে মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেন। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের নির্দেশে সরোয়ার প্রতাপগড় রাজ্যের সুলতান মুহাম্মদ বাজিদকে সিলেটের বাংলা সুলতানে ফিরিয়ে আনতে আলোচনার মধ্যস্থতার জন্য যান।[] বাজিদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে সরোয়ার তাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং বাজিদের মিত্র,কানহাতীর জমিদার এবং ইটার সাথেও লড়াই করেন।[] বাজিদ প্রতাপগড়ের সুলতান উপাধি ত্যাগ করেন এবং সরোয়ার সিলেটের নবাব ও খান উপাধি পান।

সরোয়ারের ছেলে মীর খান সিলেটের পরবর্তী নবাব হন।[] মীর খানকে সিলেটের কানুনগো (রাজস্ব কর্মকর্তা) করা হয় এবং কানুনগো পদ্ধতি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই পরিবার এই পদে অধিষ্ঠিত থাকে। কথিত আছে লোদি খাঁ খাজা উসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেন, ইটাকে সিলেট মোগলের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং পরে তার পুত্র জাহান খান নিজের নামে জাহানপুর প্রতিষ্ঠা করেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে সিলেটের কানুনগো কেশ্বর খান, কেশ্বর খাল নামে একটি খাল খনন করেন। তার পুত্র মাহতাব খান নিজের নামে সিলেট অঞ্চলে হাট বাজার প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়।

মাহতাব খানের ছেলে মাসুদ বখতকে সিলেটের প্রধান কানুনগো করা হয়। মাসুদ ১৭৮২ সালের মুহররমের বিদ্রোহের সময় শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৭৯৩ সালে তার ভাগ্নে মুহাম্মদ বখত কানুনগোর স্থলাভিষিক্ত হন। মুহাম্মদ বখত মোহাম্মদাবাদ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন।[]

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে সৈয়দ বখত মজুমদার ও তাঁর পরিবার অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে মক্কায় চলে আসেন, সেখানে মক্কার শরীফের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন এবং মেজধির নক্ষত্রে ভূষিত হন। সৈয়দ বখ্ত মুজমাদার সিলেটে ফিরে আসার পরে তিনি এবং তার প্রথম পুত্র মৌলভী হামিদ বখত মুজমাদার তাদের অঞ্চলের একমাত্র মানুষ হিসাবে দেওয়ানি আদালতের উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি পান। [] হামিদ বখ্ত মুজমাদার সিলেটের সহকারী কালেক্টর এবং লুসাই পাহাড় অভিযানে সহায়তা করেন। হামিদ ফারসি ভাষায় সাবলীল ছিলেন এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস বিষয়কআইন-ই-হিন্দ রচনা করেন। আলা বখশ মজুমদার হামেদ তুহফাতুল মুহসীনীন এবং দিওয়ান-ই-হামদ রচনা করেন। সম্মিলিতভাবে এই দুজনের রচনাগুলি সিলেট অঞ্চলের সেরা সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম হিসাবে গণ্য হয়।[]

সৈয়দ বখত মুজমাদার তাহার প্রথম পুত্রকে নিয়ে তিনটি ওয়াকফ এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেন, যাহার মধ্যে একটি হচ্ছে ওয়াকফ লিল্লাহ্ (১) সৈয়দীয়া,হামিদিয়া ওয়াকফ এস্টেট, ই সি নং ১১৬৪৩, মুজমাদার বাড়ি জামে মসজিদ, কবরস্হান ও মাদ্রাসা নিয়ে গঠিত।ঠিকানা-মুজমাদার বাড়ি, মুজমাদারী, সিলেট-৩১০০) ও অপর দুইটি হল ওয়াকফ আওলাদ (২) সৈয়দীয়া ওয়াকফ এস্টেট ই সি নং,,,,, আম্বরখানা,বড়শালা,ছালিয়া,জকিগন্জ মৌজা নিয়ে গঠিত (৩) হামিদীয়া ওয়াকফ এস্টেট, ই সি নং,,,,, আম্বরখানা, বাগবাড়ী, ফেন্চুগন্জ, বালাগন্জ,জকিগন্জ মৌজা নিয়ে গঠিত।

হামিদ বখ্ত মুজমাদারের চার পুত্র (১)-ইব্রাহিম বখ্ত মুজমাদার (২)-ইয়াকুব বখ্ত মুজমাদার (৩)-ইসহাক বখ্ত মুজমাদার (৪)-তফজ্জুল বখ্ত মুজমাদার।

হামিদ বখত মুজমাদারের ছোট ভাই মজিদ বখত মজুমদারকে ১৮৭৮ সালে রাজশাহীর উপ-সমাহর্তা ও বিচারক করা হয়। তারপরে তিনি আসাম প্রদেশের সহকারী কমিশনার হন। তিনি লুসাই এবং মণিপুরের যুদ্ধে সরকারকে সহায়তা করেন। তাঁর প্রচেষ্টার জন্য মজিদকে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন এবং ১৯০৩ সালের দিল্লির দরবারে রাজার রাজ্যাভিষদে আমন্ত্রিত করেন।(১) ইব্রাহিম বখ্ত মুজমাদারের ছয় পুত্র,

আঠারো শতকের গোড়ার দিকে সৈয়দ বখ্ত মুজমাদারের ৫ম পুত্র (যিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন), মুহাম্মদ বখত মুজমাদারকে বাংলার বিচারক এবং আসামের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার করা হয়। তিনি সিলেটের বেসামরিক কারাগার এবং লেপার আশ্রমের একজন গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শক এবং জেলার স্থানীয় বোর্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৮৫৭ সালে ছয় টুকরো বিশিষ্ট সামরিক সরঞ্জাম ব্রিটিশ সরকারের কাছে উপস্থাপন করেন। চা শিল্পে তার গভীর আগ্রহের ফলে ১৯০৪ সালে সৈয়দ আবদুল মজিদ, গোলাম রাব্বানী ও করিম বখশের পাশাপাশি ব্রাহ্মণচর চা বাগান চালু করেন।[] ১৯০৯ সালে তাকে খান বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।[] পূর্বে পৃথক হওয়া সিলেট জেলাকে বাংলার সাথে পুনরায় একত্রিত করার ১৯২০ সালে গঠিত সিলেট-বেঙ্গল রিইউনিয়ন লিগের মুহাম্মদ অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা। তবে ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বরে সৈয়দ আবদুল মজিদ এবং তাঁর সংগঠন আঞ্জুমান-ই-ইসলামিয়া পাশাপাশি মুসলিম শিক্ষার্থীদের সমর্থনে সিলেট ও ​​কাছাড়কে বাংলায় স্থানান্তরের বিরোধিতায় সুরমা উপত্যকায় মুসলিম সম্মেলনে মুহাম্মদ একটি প্রস্তাব করেন।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Choudhury (1917, p. 483)
  2. Bangladesh Itihas Samiti, Sylhet: History and Heritage, (1999), p. 715
  3. Choudhury (1917, p. 484)
  4. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ। পৃষ্ঠা 102–103 – উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  5. B C Allen (১৯০৫)। "Chapter III: The People: Leading Families"। Assam District GazetteersGovernment of Assam। পৃষ্ঠা 94। 
  6. Islam, Sirajul (১৯৯২)। History of Bangladesh, 1704-1971Asiatic Society of Bangladesh 
  7. আশফাক হোসেন (২০১২)। "চা শিল্প"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  8. Who's who in India। Newul Kishore Press। ১৯১১। পৃষ্ঠা 285। 
  9. Bhuyan, Arun Chandra (২০০০)। Nationalist Upsurge in AssamGovernment of Assam