মক্কার শরিফ
মক্কার শরিফ (আরবি: شريف مكة, Sharīf Makkah) বা হেজাজের শরিফ (আরবি: شريف الحجاز, Sharīf al-Ḥiǧāz) উপাধিটি মক্কা শরিফাতের নেতাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত। তারা প্রথা অনুযায়ী মক্কা ও মদিনার তত্ত্বাবধান করতেন। শরিফ অর্থ সম্ভ্রান্ত। মুহাম্মদ এর নাতি হাসান ইবনে আলির বংশধরদের ক্ষেত্রে তা ব্যবহৃত হয়।
শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা ও হজ্জযাত্রীদের সুরক্ষা শরিফের দায়িত্ব ছিল। একে শেরিফ হিসেবেও উচ্চারণ করা হয়। টি ই লরেন্স তার সেভেন পিলারস অব উইজডোম বইয়ে শেরিফ উল্লেখ করেছেন। কিছু দেশে আইন ও প্রশাসনিক পদ হিসেবে যে শেরিফ দেখা যায় তার সাথে এই পদের সম্পর্ক নেই।
আব্বাসীয় যুগের শেষের দিকে মক্কার শরিফের পদটি প্রথম দেখা যায়। ১২০১ সাল থেকে শরিফাত হাশিমি গোত্রের ব্যক্তিরা এই পদে আসীন হতেন। তবে এটি বৃহত্তর বনু হাশিম গোত্র নয়। হাশিমি পরিবারের সদস্যরা ২০ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিম শক্তি যেমন আইয়ুবীয়, মামলুকদের প্রতিনিধি হিসেবে শরিফ পদ লাভ করতেন। ১৫১৭ সালে শরিফ উসমানীয় খিলাফতের অধীনতা মেনে নেন। তবে এসময় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বজায় ছিল। উসমানীয় যুগে শরিফাত উত্তরে মদিনা ও দক্ষিণে আসিরকে এর নিয়ন্ত্রণাধীন করে নেয় এবং নিয়মিতভাবে নজদে আক্রমণ চলতে থাকে।
হুসাইন বিন আলির সময় শরিফাত সমাপ্ত হয়। ১৯১৬ সালের আরব বিদ্রোহের সময় তিনি উসমানীয় শাসনের বিদ্রোহ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয় ও সাম্রাজ্যের বিলুপ্তির পর তিনি নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন। ব্রিটিশরা তার দুই পুত্র ফয়সাল ও আবদুল্লাহকে যথাক্রমে ইরাক ও ট্রান্সজর্ডান আমিরাতের ক্ষমতায় বসায়। ১৯২৪ সালে হুসাইন নজদের আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের ক্রমবর্ধমান হামলার সম্মুখীন হন। তিনি তার জাগতিক উপাধিগুলো তার পুত্র আলি বিন হুসাইনকে সমর্পণ করেন। আলি বিন হুসাইন ছিলেন শেষ শরিফ। ১৯২৫ সালের শেষদিকে ইবনে সৌদ হেজাজ জয় করে নেন এবং হাশিমিদের বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে মক্কা ও মদিনা আল সৌদ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।[১]
মক্কার শরিফদের তালিকা (৯৬৭–১৯২৫)
সম্পাদনাফাতেমীয় খিলাফতের সময় (৯৬৭–১১০১)
সম্পাদনা- তাইমুন (৯৬৭–৯৮০)
- শরিফ ঈসা (৯৮০–৯৯৪)
- শরিফ আবুল ফুতুহ আল হাসান ইবনে জাফর (৯৯৪–১০৩৯), ১০১২ সালে সংক্ষিপ্তকাল খলিফা বিরোধী
- শরিফ শুকরুলদিন (১০৩৯–১০৬১)
- আবুল হাশিম ইবনে মুহাম্মদ (১০৬১-১০৯৪)
- ইবনে আবুল হাশিম আল সালাব (১০৯৪–১১০১)
আইয়ুবীয় সাম্রাজ্যের সময় (১২০১-১২৫৪)
সম্পাদনা- কাতাদা ইবনে ইদরিস (১২০১–১২২০)
- হাসান ইবনে কাতাদা আল হাসানি আল আলাউয়ি (১২২০–১২৪১)
- আল হাসান আবুল সাদ (১২৪১–১২৫৪)
মামলুক সালতানাতের সময় (১২৫৪-১৫১৭)
সম্পাদনা- মুহাম্মদ আবুল নুবাজ (১২৫৪–১৩০১): প্রথম মামলুক শরিফ
- রুমাইসা আবুল রাদা (১৩০১–১৩৪৬)
- আলজান আবুল সারজা (১৩৪৬–১৩৭৫)
- দ্বিতীয় আল হাসান (১৩৯৪–১৪২৫)
- প্রথম বরকত (১৪২৫–১৪৫৫)
- মালিকুল আদিল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে বরকত (১৪৫৫–১৪৯৭)
- দ্বিতীয় বরকত বিন মুহাম্মদ (বরকত এফেন্দি) (১৪৯৭–১৫২৫)
উসমানীয় খিলাফতের সময় (১৫১৭-১৯১৭)
সম্পাদনা- বরকত এফেন্দি (১৪৯৭–১৫২৫)
- মুহাম্মদ আবুল নুবাজ বিন বরকত (১৫২৫-১৫৮৩)
- আল হাসান বিন মুহাম্মদ আবুল নুবাজ (১৫৮৩-১৬০১)
- ইদরিস বিন আল হাসান (১৬০১-১৬১০)
- মুহসিন বিন হুসাইন (১৬১০-১৬২৮)
- আহমেদ বিন তালিব আল হাসান (১৬২৮-১৬২৯)
- মাসুদ বিন ইদরিস (মাসুদ এফেন্দি) (১৬২৯-১৬৩০)
- আবদুল্লাহ বিন হাসান (১৬৩০-১৬৩১)
- জাইদ বিন মুহসিন (১৬৩১-১৬৬৬)
- সাদ বিন জাইদ (১৬৬৬-১৬৬৭)
- মুহসিন বিন আহমেদ (১৬৬৭-১৬৬৮)
- সাদ বিন জাইদ (১৬৬৮-১৬৭০)
- হামুদ বিন আবদুল্লাহ বিন আল হাসান (১৬৭০)
- সাদ বিন জাইদ (১৬৭০–১৬৭১)
- বরকত বিন মুহাম্মদ (১৬৭২-১৬৮২)
- সাইদ বিন বরকত (১৬৮২-১৬৮৩)
- ইবরাহিম বিন মুহাম্মদ (১৬৮৩-১৬৮৪)
- আহমেদ বিন জাইদ (১৬৮৪-১৬৮৮)
- আহমেদ বিন গালিব (১৬৮৮-১৬৮৯)
- মুহসিন বিন আহমেদ (১৬৮৯-১৬৯১)
- সাইদ বিন সাদ (১৬৯১-১৬৯৩)
- সাদ বিন জাইদ (১৬৯৩-১৬৯৪)
- আবদুল্লাহ বিন হাশিম (১৬৯৪)
- সাদ বিন জাইদ (১৬৯৪-১৭০২)
- সাইদ বিন সাদ (১৭০২-১৭০৪)
- আবদুল মুহসিন বিন আহমেদ (১৭০৪)
- আবদুল করিম বিন মুহাম্মদ (১৭০৪-১৭০৫)
- সাইদ বিন সাদ (১৭০৫)
- আবদুল করিম বিন মুহাম্মদ (১৭০৫-১৭১১)
- সাইদ বিন সাদ (১৭১১-১৭১৭)
- আবদুল্লাহ বিন সাইদ (১৭১৭-১৭১৮)
- আলি বিন সাইদ (১৭১৮)
- ইয়াহিয়া বিন বরকত (১৭১৮-১৭১৯)
- মুবারক বিন আহমেদ (১৭১৯-১৭২২)
- বরকত বিন ইয়াহিয়া (১৭২২-১৭২৩)
- মুবারক বিন আহমেদ (১৭২৩-১৭২৪)
- আবদুল্লাহ বিন সাইদ (১৭২৪-১৭৩১)
- মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ (১৭৩১-১৭৩২)
- মাসুদ বিন সাইদ (১৭৩২-১৭৩৩)
- মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ (১৭৩৩-১৭৩৪)
- মাসুদ বিন সাইদ (১৭৩৪-১৭৫৯)
- জাফর বিন সাইদ (১৭৫৯-১৭৬০)
- মুসাইদ বিন সাইদ (১৭৬০-১৭৭০)
- আহমেদ বিন সাইদ (১৭৭০)
- আবদুল্লাহ বিন হুসাইন (১৭৭০-১৭৭৩)
- সুরাওর বিন মুসাইদ (১৭৭৩-১৭৮৮)
- আবদুল মুইন বিন মুসাইদ (১৭৮৮
- গালিব এফেন্দি বিন মুসাইদ (১৭৮৮–১৮০৩)
- ইয়াহিয়া বিন সুরাওর (১৮০৩-১৮১৩)
- গালিব এফেন্দি বিন মুসাইদ (১৮১৩-১৮২৭)
- আবদুল মুতালিব বিন গালিব (১৮২৭)
- মুহাম্মদ বিন আবদুল মুইন (১৮২৭-১৮৫১)
- আবদুল মুতালিব বিন গালিব (১৮৫১-১৮৫৬)
- মুহাম্মদ বিন আবদুল মুইন (১৮৫৬-১৮৫৮)
- আবদুল্লাহ কামিল পাশা (১৮৫৮-১৮৭৭)
- হুসাইন বিন মুহাম্মদ (১৮৭৭-১৮৮০)
- আবদুল মুতালিব বিন গালিব (১৮৮০-১৮৮২)
- আওন আল রফিক পাশা (১৮৮২-১৯০৫)
- আলি আবদুল্লাহ পাশা (১৯০৫-১৯০৮)
- হুসাইন বিন আলি (১৯০৮-১৯১৬) (পরবর্তীতে রাজা)
- আলি হায়দার পাশা (১৯১৬-১৯১৭)
হেজাজ রাজতন্ত্রের সময় (১৯১৬-১৯২৫)
সম্পাদনা- হুসাইন বিন আলি (১৯১৬–১৯২৪) (পূর্বে হুসাইন পাশা)
- আলি বিন হুসাইন (১৯২৪–১৯২৫)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Ibn Saud reign of Hejaz – www.saudinf.com"। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৫।