সিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
এই নিবন্ধটি কিংবা অনুচ্ছেদটি সিরাজগঞ্জ নিবন্ধে একত্র করা যেতে পারে। (আলোচনা করুন) প্রস্তাবের তারিখ: সেপ্টেম্বর ২০২৪। |
সিরাজগঞ্জ জেলায় বেশকিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে।যেখানে এ জেলার এবং জেলার বাহিরেন অনেক মানুষের অবসর কাটানোর জন্য আসে।এসব দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সিরাজগঞ্জ ক্রসবার বা (চায়না বাঁধ)।সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ(হার্ড পয়েন্ট),যমুনা সেতু ও যমুনা ইকো পার্ক, শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি,হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার,ঐতিহ্যবাহী ইলিয়ট সেতু,নবরত্ন মন্দির, ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি,ঝাঐল রেল সেতু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সিরাজগঞ্জ জেলা | |
---|---|
ডাকনাম: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার/তাঁতকুঞ্জ/গো-রাজধানী/দুধের দেশ | |
বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনার অবস্থান | |
দেশ | বাংলাদেশ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
নবগ্রাম মসজিদ
সম্পাদনানবগ্রাম শাহী মসজিদ সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ইসলাম ধর্মীয় একটি প্রাচীন স্থাপনা, যা ষোড়শ শতাব্দীতে (৪৯৮ বছর আগে) নির্মিত হয়েছে। গৌড় অধিপতি নাসির উদ্দিন নসরত শাহের শাসনামলে "শাহানশাহ্ হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী-এর মাজার" সংলগ্ন এলাকায় এটি নির্মাণ করা হয়।
অবস্থান
সম্পাদনাএই শাহী মসজিদটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামে অবস্থিত।[৩] এই মসজিদটির অবস্থান চাটমোহর রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০.৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে[১] এবং তাড়াশ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৩৭ সালের দিকে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসিরুদ্দীন আবুল মুজাফফর নুসরত শাহের রাজত্বকালে ৯৩২ হিজরির ৪ রজব (১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল) "মীর বহর মনোয়ার আনার পুত্র আজিয়াল মিয়া জংদার" (যোদ্ধা) মসজিদটি নির্মাণ করেন।[১]
শহর রক্ষা বাঁধ/হার্ড পয়েন্ট
সম্পাদনারবীন্দ্র কাছারি বাড়ি
সম্পাদনারবীন্দ্র কাচারী বাড়ি | |
---|---|
অবস্থান
সম্পাদনারবীন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিরাজগঞ্জ থেকে ৪০.২ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার এই কুঠিবাড়িটির গুরুত্ব অনুধাবন করে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আগে রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান।[২] তিনি নিজে এখানে জমিদারি করতেন কিন্তু পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালের দিকে কবি এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এবং এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেছেন। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩ টাকা ১০ আনায় এই জমিদারি কিনে নিয়েছিলেন। এর আগে কাছারি বাড়ির মালিক ছিল নীলকররা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বসেই রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলী কাব্যের কাজও শুরু করেন। যাতে পরবর্তীতে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। পোস্ট মাস্টার গল্পের 'রতন' চরিত্রও শাহজাদপুরে বসেই লেখা। চিত্রা, শীতে ও বসন্তে, নগর সঙ্গীতে এবং চৈত্রালীর ২৮টি কবিতা, ছিন্ন পত্রাবলীর ৩৮টি, পঞ্চভূতের অংশবিশেষ এবং বিসর্জনের নাটক তিনি শাহজাদপুরে বসেই রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর এখানে জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে অবস্থান করেছেন।[৩] ১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত করা হয়। এখন সকল দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত।
বিবরণ
সম্পাদনাবর্তমানে এই পুরো ভবনটি জাদুঘর হিসেবে সাধারণ দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষ রয়েছে । এই ১৬টি কক্ষেই রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের এবং নানা সময়ের বিচিত্র ভঙ্গির সব ছবি । তার একদম ছোটবেলা থেকে মৃত্যুশয্যায় ছবি পর্যন্ত এখানে সংরক্ষিত আছে। তাছাড়াও এখানে কবির নানান রয়েছে সকল শিল্পকর্ম এবং তার ব্যবহার্য আসবাবপত্র। যা দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো এটি। কবির ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোর মধ্যে আরো আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের তার ব্যবহার করা দুটো স্পিডবোট, পল্টন, ৮ জন বেহারার পালকি, কিছু কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
কাছারি বাড়ির সামনের দিক
-
রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি
-
কাছারি বাড়ির পাশের ভবন
যমুনা ইকো পার্ক
সম্পাদনাঅবস্থান
সম্পাদনাযমুনা ইকো পার্কটি যমুনা বহুমূখী সেতুর সংলগ্ন যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ের বাঁধ ঘেঁষে জাতীয় মহাসড়ক,এলেঙ্গা-হাটিকমরুল N405 -এর উত্তর পাশে অবস্থিত।
বিবরণ
সম্পাদনাসেতু তৈরির পরপরই বনবিভাগ সেতুর আশপাশে বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে। এবং ২০০৭ সালে, ৫০.২ হেক্টর (১২৪ একর)[৫] জায়গা নিয়ে ইকোপার্ক তৈরির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।[৬] ২০০৮ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সরকারের সচিব খান এম ইব্রাহীম হেসেন পার্কটি উদ্বোধন করেন।
ইলিয়ট সেতু/বড়পুল
সম্পাদনাইতিহাস
সম্পাদনাসিরাজগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বড়াল বা কাটাখালী নদী[ক] শহরটিকে পূর্ব ও পশ্চিম– দুই ভাগে বিভক্ত করে। যমুনা নদীর সাথে যুক্ত থাকায় এই কাটাখালীর পানির স্রোত ছিল অনেক বেশি। তাই দুই পাড়ের মধ্যে যাতায়াত সমস্যা সমাধানে ১৮৯২ সালের দিকে তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার প্রশাসক (সাব ডিভিশনাল অফিসার) বিটসন বেল একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা করেন।[৫] ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্টুয়ার্ট হার্টল্যান্ডের[৬] নকশায় হার্টল্যান্ড কোম্পানি[৫] এই সেতু নির্মাণ করে। বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (ছোট লাট) চার্লস আলফ্রেড ইলিয়ট [en] ৬ আগস্ট ১৮৯২ তারিখে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার নামানুসারে সেতুটির নাম রাখা হয় ইলিয়ট ব্রিজ। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে।
অর্থ সংস্থান
সম্পাদনাসেতুটি নির্মাণে তৎকালীন প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পাবনা জেলার[খ] ম্যাজিস্ট্রেট জুলিয়াস জেলা বোর্ড থেকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। বাকি টাকা স্থানীয় জমিদার ও বিত্তবানদের অনুদান থেকে সংগ্রহ করা হয়।
স্থাপত্য
সম্পাদনাএটি একটি খিলান (আর্চ) সেতু। ১৮০ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট চওড়া এই সেতুটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কোনো পিলার নেই। পুরো সেতুর কাঠামো ইস্পাতের তৈরি। এর উপরে কাঠের পাটাতন বসানো ছিল। সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে কংক্রিট ব্যবহার করা হয়।[৭] সেতুটির উচ্চতা ৩০ ফুট। মূলত কাটাখালী নদীতে চলাচলকারী বড় বড় মালবাহী জাহাজগুলোর চলাচল যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্যই সেতুটি উঁচু করে এবং পিলার ছাড়া তৈরি করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সেতুর উপর দাঁড়িয়ে যাতে সিরাজগঞ্জ শহরের দৃশ্য অবলোকন করা যায় সেটিও ছিল সেতু উঁচু করে নির্মাণের আরেকটি কারণ।
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাসেতুটিটি সিরাজগঞ্জ শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৯৬২ সালে কাটাখালী নদীর বাঐতারা প্রান্তে থাকে একটি স্লুইচ গেটের মুখ বন্ধ হয়ে এবং পরবর্তীতে যমুনায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কারণে অপর মুখটিও বন্ধ হয়ে কাটাখালীর পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি পুনঃখনন করে। যমুনা নদীর সাথে তখন স্লুইচ গেটের মাধ্যমে বাঐতারায় সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে নদীতে পানি প্রবাহ চালু হয় এবং সেতুটি সৌন্দর্য ফিরে পায়।[১০] সেতুটি রক্ষায় এর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
হযরত মখদুমের মাজার
সম্পাদনাসিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা | |
---|---|
অবস্থান
সম্পাদনাহযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।[১] বগুড়া নগরবাড়ি পাকা সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে হুরাসাগর নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই মাযার।
বিবরণ
সম্পাদনাশাহজাদপুর দরগাহ মসজিদটির পাশেই হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার এবং অন্যান্য শহিদের কবর অবস্থিত।[৩] মখদুম শাহের সমাধিটি একটি প্রাচীন গোলাকার এক কক্ষের স্থাপত্য। কক্ষের উপরে একটি বৃহদাকার গম্বুজ আছে।
মাজারের কিংবদন্তি
সম্পাদনাকথিত আছে, ইয়েমেনের শাহজাদা মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী ১১৯২-৯৬ সালের মধ্যে ইয়েমেন থেকে ধর্মপ্রচারার্থে যাত্রা শুরু করে বোখারা শহরে আগমন করেন। বোখারা শহরে জালালুদ্দিন বোখারী এর দরবার শরীফে কিছু সময় অতিবাহিত করে তিনি বাংলার পথে যাত্রা শুরু করে বাংলার শাহজাদপুর অঞ্চলে আসেন। তিনি বাংলায় প্রবেশ করে ইসলাম প্রচার শুরু করলে তৎকালীন সুবা বিহারের অমুসলিম অধিপতি "রাজা বিক্রম কেশরী" মখদুম শাহদৌলার আগমনে রাগান্বিত হয়ে তার সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। রাজা বিক্রম কেশরী বেশ কয়েকবার সৈন্য প্রেরণ করে পরাজিত হয়, ইতিমধ্যে মখদুম শাহদৌলা শাহজাদপুরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করেন। শেষ যুদ্ধে মখদুম শাহদৌলা এবং তার বহু সঙ্গী ও অনুসারী যোদ্ধা নিহত হন, এই ধর্মযুদ্ধে তার নিহত হবার কারণে তিনি মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী নামে পরিচিত লাভ করেন। এবং সাময়িকভাবে এখানে বসবাস করে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দরগাহপাড়ার এই স্থানটিতেই মখদুম শাহদ্দৌলা তাঁর অনুচর এবং ওস্তাদ শামসুদ্দিন তাবরেজীকে নিয়ে পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করতেন। ধীরে ধীরে এখানে গড়ে তোলেন জামে মসজিদ। তখনকার ওই মসজিদটি “মখদুমিয়া জামে মসজিদ” হিসেবেই পরিচিত লাভ করে। আর এই মসজিদকে ঘিরেই ইসলাম প্রচারণা চালাতে থাকেন তখন এই অঞ্চলের সবটুকুই ছিল সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কিশোরীর অধীনে। ইসলাম প্রচারে ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা বিক্রম কিশোরী বাধা প্রদান করতে থাকলে সর্বমোট ৩৩ বার মখদুম শাহদ্দৌলা এর সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম দুটি যুদ্ধে বিক্রম কিশোরী পরাজিত হলে প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া হয়ে উঠে। পরে গুপ্তচর পাঠিয়ে ওই গুপ্তচর মখদুম শাহদ্দেীলা এর বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হয়ে একদিন একাকী অবস্থায় আসর নামাজ পড়ার সময় ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে গুপ্তচর দেহ থেকে গর্দান বিছিন্ন করে হত্যা করেন। পরে তাঁর দ্বিখণ্ডিত মাথা সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কিশোরীর নিকট নেয়া হলে সেখানেও মুখ থেকে সোবহান আল্লাহ ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে। এই অলৈাকিক দৃশ্য দেখে সুবা বিহারের রাজাসহ অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দ্বিখণ্ডিত দেহ এই মসজিদের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে সমাধিস্থ করা হয়। থেমে থাকেনি ইসলাম প্রচারের কাজ। শাহাদতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে মখদুম শাহদৌলা অনুচররা অব্যাহত রাখেন প্রচার প্রসারের কাজ। তার উত্তরসূরী ইউসুফ শাহ, শাহ হাবিবুল্লাহ ইয়ামেনী, শাহ বদর, শাহ নুর উদ্দিন ইয়ামেনী এর প্রচেষ্টায় দিন দিন ইসলাম ব্যাপকভাবে বিস্তার করে। যার ফলে হিন্দুদের সংখ্যা কমে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করা হয়। এজন্য বহু সংখ্যক মুসলমানকে নিহত হতে হয়। দরগাহপাড়ার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নিহতদের কবর রয়েছে। এমনকি এই মসজিদের দক্ষিণ কোণে নিহতদের গণ কবর বা গঞ্জে শহীদান রয়েছে। পরে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করে এ অঞ্চলে শাসন ভার অর্পিত হয় ইউসুফ শাহের উপর। আর তাঁর নামানুসারেই এ অঞ্চলকে ইউসুফ শাহ পরগনার অধীনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে (১৫০০–১৫৭৬) খৃষ্টাব্দে বাংলার মুসলিম সুলতানি আমলে এই মসজিদের নিদর্শন কাজ শুরু হয়। তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম কারুকার্য ব্যবহার করা হয় এর নির্মাণে। ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের উত্তর দক্ষিণ দৈর্ঘ্য ১৩.১৯ মিটার পূর্ব পশ্চিম প্রস্থ ১২.৬০ মিটার এবং ছাদের উপরিভাগের গম্বুজের ব্যাস ৩.০৮ মিটার। গম্বুজের প্রতিটি মাথায় পিতলের কারুকার্যমণ্ডিত।
নবরত্ন মন্দির
সম্পাদনানবরত্ন মন্দির | |
---|---|
স্থানীয় নাম হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির | |
নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত বলে একে হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির নামেও ডাকা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে এটি দোলমঞ্চ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত নবরত্ন মন্দিরসমূহের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।
ইতিহাস
সম্পাদনানবরত্ন মন্দিরটি আবিষ্কারের সময় এখানে কোন শিলালিপির অস্তিত্ব ছিল না বলে এর নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে জনশ্রুতি অনুসারে, মন্দিরটি ১৬৬৪ সালের দিকে রামনাথ ভাদুরী নামে স্থানীয় এক জমিদার নির্মাণ করেছিলেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন আরও পরে, মন্দিরটি বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের সময়কাল ১৭০৪ থেকে ১৭২৮ সালের মধ্যে কোন এক সময় নির্মাণ করা হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের তৎকালীন রাজা প্রাণনাথের বন্ধু ছিলেন। ভাদুরী তার বন্ধুকে তার রাজ্যের রাজস্ব পরিশোধে একবার সাহায্য করেছিলেন। তারই ফলস্বরূপ প্রাণনাথ দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দিরের অদলে সিরাজগঞ্জে এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ভাদুরী তার নিজস্ব অর্থ ব্যয় করেই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
অবকাঠামো
সম্পাদনানবরত্ন মন্দিরটি তিনতলাবিশিষ্ট ও এর দেয়ালে প্রচুর পোড়ামাটির নকশা করা রয়েছে। শক্ত একটি মঞ্চের উপর স্থাপিত মন্দিরটির আয়তন ১৫ বর্গমিটার এর উপর। যে স্তম্ভগুলোর মাধ্যমে মন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার প্রতিটি স্তম্ভের দৈর্ঘ্য ১৫.৪ মিটার ও প্রস্থ ১৩.২৫ মিটার।নবরত্ন নামটি এসেছে মন্দিরের উপর বসানো নয়টি চূড়া থেকে যেগুলো বর্তমানে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
মন্দির প্রাঙ্গনে অবস্থিত মুড়া নবরত্ন মন্দিরটি ৭টি বারান্দা ও ৫টি দরজার সমন্বয়ে গঠিত। নবরত্ন মন্দিরের পাশাপাশি আরও তিনটি মন্দির রয়েছে।
চিত্রশালা
সম্পাদনাপোতাজিয়া মন্দির
সম্পাদনাপোতাজিয়া মন্দির বা পোতাজিয়া নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। আনুমানিক ১৭০০ সালে স্থানীয় রায় পরিবারের গোবিন্দরাম রায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে মন্দিরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন রয়েছে।
অবস্থান
সম্পাদনামন্দিরটি শাহজাদপুর উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে পোতাজিয়া গ্রামে অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাইতিহাসবেত্তা আক্তার উদ্দিন মানিক অনুমান করেন পোতাজিয়া মন্দিরটি নবাবী আমলে নির্মিত। তাদের হিন্দু কায়স্থ বংশীয় দেওয়ান ছিলেন গোবিন্দরাম রায়।[২] সে সময়ে হিন্দু অধ্যুষিত পোতাজিয়ায় রায় পরিবার ছিল সম্ভান্ত শ্রেনীয় ও তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করত। এই রায় পরিবারের গোবিন্দরাম রায় আনুমানিক ১৭০০ সালে পারিবারিক উপাসনা কেন্দ্র হিসেবে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর রায় পরিবার ভারতে চলে যায় এবং মন্দিরটি পরিচর্যার অভাবে তার জৌলুশ হারায়।[৩] ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ৮ শতাংশ জমিতে অবস্থিত জরাজীর্ণ মন্দিরটি অধিগত করে সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়।
অবকাঠামো
সম্পাদনা৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট তিনতলা মন্দিরটিতে প্রতিতলায় ৩টি করে মোট ৯টি কক্ষ ছিল।[৩] এই ৯টি কক্ষের জন্য এটি নবরত্ন নামে পরিচিত ছিল।[২] মন্দিরটি ইট, চুন ও সুরকি দ্বারা নির্মিত। দেয়ালে পোড়ামাটির কারুকাজ ও দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা ছিল।[১] মন্দিরের প্রথম তলায় পূজার উপকরণ ও অন্যান্য সামগ্রী ছিল। দ্বিতীয় তলায় পূজারি ও পরিচালকেরা বাস করতেন। তৃতীয় তলায় রাধাবল্লভ বিগ্রহ ছিল।[২]
রাউতারা জমিদার বাড়ি
সম্পাদনারাউতারা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
ইতিহাস
সম্পাদনাজমিদার রুধেষ বাবু পোতাজিয়া ইউনিয়নের বড়াল নদীর তীরে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে তিনি এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটির অবস্থান নদীর তীরে হওয়ায় কুমিরের ভয়ে বাড়ির চারপাশে ১০ ফুট উচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল। কারণ প্রায় সময় কুমির বাড়িটিতে প্রবেশ করত। এছাড়াও বাড়িটি নদীর তীরে হওয়ায় জমিদারের বাড়ির বাইরে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল নৌকা দিয়ে। জমিদার রুধেষ বাবু ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার। যা এখনো এখানের লোকমুখে রচিত আছে। ১৯৫৭ সালের জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির মধ্য দিয়েই এই জমিদার বাড়ির জমিদারীরও সমাপ্তি ঘটে। আর তখনই জমিদার রুধেষ বাবু তার বংশধরদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান।
অবকাঠামো
সম্পাদনাএখানে এখনো একটি পাঁচতলা বিশিষ্ট বাসভবন রয়েছে। যাতে প্রায় ২৫টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও জলসা ঘর, কাছারিঘর, সুড়ঙ্গপথ ও নদীর তীরে গোসল করতে যাওয়ার জন্য একটি সুন্দর নকশার সিঁড়ি রয়েছে।
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাঅযত্ন ও অবহেলার কারণে জমিদার বাড়িটির প্রায় প্রত্যেকটি স্থাপনাই এখন ধ্বংসের মুখে। সবগুলো স্থাপনাতেই এখন গাছগাছালি ও লতাপাতায় জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়রা এটিকে গরুছাগলের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করতেছে।
জয়সাগর দিঘি
সম্পাদনাবাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দীঘির নাম জয়সাগর। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি ও গোতিথা দুই মৌজার মধ্যে জয়সাগর দীঘি অবস্থিত। ঐতিহাসিক ও প্রাচীন এই দীঘিটি বেশ বিশালাকার। প্রাচীনকালে দীঘিটির দৈর্ঘ্য ছিল আধা মাইল, প্রস্থ ছিল আধা মাইল এর কিছু কম, অর্থাৎ আয়তন প্রায় ৫৮ একর ছিল। এই দিঘীর স্বচ্ছ জলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আগত পর্যটকদের। এই দিঘীটি নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। সেন বংশীয় রাজা অচ্যুত সেন গৌড়াধিপতি ফিরোজ শাহর করদ রাজা ছিলেন। তার রাজধানী ছিল কমলাপুর। জানা যায়, ফিরোজ শাহের পুত্র বাহাদুর শাহ অচ্যুত সেন রাজার কন্যা অপরূপ সুন্দরী ভদ্রাবতীকে দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজা অচ্যুত সেন সম্মত না হওয়ায় বাহাদুর শাহ কমলাপুর আক্রমণ করে ভদ্রাবতীকে অপহরণ করে নিমগাছিতে নিয়ে যান। রাজা অচ্যুত সেন তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করেন। নিমগাছি প্রান্তরে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। বাহাদুর শাহের মুষ্টিমেয় সৈন্য সেনরাজের বিরাট সৈন্যবাহিনীর কাছে যুদ্ধে (১৫৩২-৩৪ খ্রি.) পরাজয়বরণ করেন। রাজা অচ্যুত সেন যুদ্ধে জয়লাভ করে ভদ্রাবতীকে উদ্ধার করেন। এ বিজয় গৌরবের স্মৃতি হিসেবে এবং পরকালের কল্যাণের জন্য তিনি নিমগাছির কাছে ‘জয়সাগার’ নামে এক দিঘি খনন করান। যুদ্ধজয়ের কারণেই দিঘিটির নাম হয় জয়সাগর। ৪ পারে ২৮টি বাধা ঘাট দিয়ে জয়সাগর দীঘি তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এ ঘাটের কোনো চিহ্ন নেই। বল্লাল সেনের বংশধর রাজা অচ্যুত সেনের দুর্গ ও সেনানিবাস ছিল এই দীঘির পারে, এখন তা বিলুপ্ত হয়েছে গেছে। জয়সাগর দীঘি ছাড়াও রাজা অচ্যুত সেন তার সেনাপতি প্রতাপের নামে, প্রতাপ দীঘি, ভৃত্য উদয়ের নামে উদয় দীঘি এবং কন্যা ভদ্রাবতির নামে ভদ্রা দীঘি খনন করেন।
অবস্থান
সম্পাদনারায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি ও গোতিথা দুই মৌজার মাঝে জয়সাগর দীঘিটি অবস্থিত। নিমগাছি বাজার থেকে দীঘির দুরত্ব পশ্চিম দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার। আয়তন প্রায় ৫৮ একর। এ দিঘি সংলগ্ন আরও কয়েকটি দিঘী রয়েছে।প্রতিদিন এখানে প্রচুর দর্শনার্থী ঘুরে বেড়াতে আসেন।
ইতিহাস
সম্পাদনাজনশ্রুতি আছে রাজা তার কয়েকলক্ষ গরু ও প্রজাদের পানি কষ্ট নিবারণের জন্য জয়সাগর দীঘি খনন করেন। সে সময় এ অঞ্চল সেন বংশীয় রাজা অচ্যুত সেন শাসন করেন।