ইলিয়ট সেতু
ইলিয়ট সেতু (স্থানীয়ভাবে বড়পুল নামে পরিচিত) সিরাজগঞ্জ শহরে অবস্থিত একটি প্রাচীন সেতু। স্তম্ভবিহীন এই সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ছোটলাট চার্লস আলফ্রেড ইলিয়টের নামানুসারে। এটি তৈরিতে তৎকালীন ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এটি সিরাজগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান।[২]
ইলিয়ট সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৪°২৭′৩৮.১″ উত্তর ৮৯°৪২′৩০″ পূর্ব / ২৪.৪৬০৫৮৩° উত্তর ৮৯.৭০৮৩৩° পূর্ব |
অতিক্রম করে | বড়াল (কাটাখালী) নদী |
স্থান | সিরাজগঞ্জ |
অন্য নাম | বড়পুল |
রক্ষণাবেক্ষক | সিরাজগঞ্জ পৌরসভা |
বৈশিষ্ট্য | |
নকশা | খিলান সেতু |
উপাদান | ইস্পাত ও কংক্রিট |
মোট দৈর্ঘ্য | ১৮০ ফুট |
প্রস্থ | ১৬ ফুট |
উচ্চতা | ৩০ ফুট |
স্প্যানের সংখ্যা | ১টি |
ইতিহাস | |
স্থপতি | স্টুয়ার্ড হার্টল্যান্ড |
নির্মাণকারী | হার্টল্যান্ড কোম্পানি |
নির্মাণ শুরু | ১৮৯২ |
নির্মাণ শেষ | ১৮৯৫[১] |
নির্মাণ ব্যয় | ৪৫,০০০ টাকা |
অবস্থান | |
ইতিহাস
সম্পাদনাসিরাজগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বড়াল বা কাটাখালী নদী[ক] শহরটিকে পূর্ব ও পশ্চিম– দুই ভাগে বিভক্ত করে। যমুনা নদীর সাথে যুক্ত থাকায় এই কাটাখালীর পানির স্রোত ছিল অনেক বেশি। তাই দুই পাড়ের মধ্যে যাতায়াত সমস্যা সমাধানে ১৮৯২ সালের দিকে তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার প্রশাসক (সাব ডিভিশনাল অফিসার) বিটসন বেল একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা করেন।[৫]
ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্টুয়ার্ট হার্টল্যান্ডের[৬] নকশায় হার্টল্যান্ড কোম্পানি[৫] এই সেতু নির্মাণ করে। বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (ছোট লাট) চার্লস আলফ্রেড ইলিয়ট ৬ আগস্ট ১৮৯২ তারিখে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার নামানুসারে সেতুটির নাম রাখা হয় ইলিয়ট ব্রিজ। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে।[৭][৮][৯]
অর্থ সংস্থান
সম্পাদনাসেতুটি নির্মাণে তৎকালীন প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পাবনা জেলার[খ] ম্যাজিস্ট্রেট জুলিয়াস জেলা বোর্ড থেকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। বাকি টাকা স্থানীয় জমিদার ও বিত্তবানদের অনুদান থেকে সংগ্রহ করা হয়।[৫]
স্থাপত্য
সম্পাদনাএটি একটি খিলান (আর্চ) সেতু। ১৮০ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট চওড়া এই সেতুটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কোনো পিলার নেই। পুরো সেতুর কাঠামো ইস্পাতের তৈরি। এর উপরে কাঠের পাটাতন বসানো ছিল। সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে কংক্রিট ব্যবহার করা হয়।[৭]
সেতুটির উচ্চতা ৩০ ফুট। মূলত কাটাখালী নদীতে চলাচলকারী বড় বড় মালবাহী জাহাজগুলোর চলাচল যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্যই সেতুটি উঁচু করে এবং পিলার ছাড়া তৈরি করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সেতুর উপর দাঁড়িয়ে যাতে সিরাজগঞ্জ শহরের দৃশ্য অবলোকন করা যায় সেটিও ছিল সেতু উঁচু করে নির্মাণের আরেকটি কারণ।[১]
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাসেতুটিটি সিরাজগঞ্জ শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৯৬২ সালে কাটাখালী নদীর বাঐতারা প্রান্তে থাকে একটি স্লুইচ গেটের মুখ বন্ধ হয়ে এবং পরবর্তীতে যমুনায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কারণে অপর মুখটিও বন্ধ হয়ে কাটাখালীর পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি পুনঃখনন করে। যমুনা নদীর সাথে তখন স্লুইচ গেটের মাধ্যমে বাঐতারায় সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে নদীতে পানি প্রবাহ চালু হয় এবং সেতুটি সৌন্দর্য ফিরে পায়।[১০] সেতুটি রক্ষায় এর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ নদীটি সিএস জরিপে ভিন্ন দুটি মৌজায় বড়াল নদী ও ধানবান্ধি নদী নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে নদীটি পুনঃখনন করা হলে এটি কাটাখালি নামে পরিচিত হয়।[৩] কিছুকিছু উৎসে এটিকে হুড়া সাগর বা হুরাসাগর নদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪] আবার অনেক উৎসে একে খাল বলা হয়েছে।
- ↑ সেসময় সিরাজগঞ্জ ছিল পাবনা জেলার একটি মহকুমা।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "সিরাজগঞ্জ ইলিয়ট ব্রিজ ঘিরে অনেক ইতিহাস"। নয়া দিগন্ত। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ জীবন, গোলাম মোস্তফা (২৫ অক্টোবর ২০০৭)। "Eliot Bridge attracts tourists in Sirajganj"। ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ "স্বপ্নের শহরের প্রতীক্ষায় সিরাজগঞ্জবাসী"। বাংলানিউজ২৪.কম। ২৩ মার্চ ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ রহমান, এবিএম ফজলুর (২৪ মে ২০১৬)। "সিরাজগঞ্জের ইলিয়ট ব্রিজ রক্ষায় মানববন্ধন"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ ক খ গ বাপন, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য; দাস, স্বপন চন্দ্র (আগস্ট ১৮, ২০১৫)। "শত বছরের সুখ-দুঃখের সাক্ষী যে"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ "ইলিয়ট ব্রীজ"। সিরাজগঞ্জ জেলা: জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ ক খ মোকাদ্দেস, এইচ এম (২৭ জুন ২০১৮)। "ইতিহাস সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ শহরের বড়পুল"। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ "Century-old Eliot Bridge losing attraction in S'ganj"। ডেইলি অবজার্ভার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। ২৬ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ "ইলিয়ট সেতুর ১২৭তম বর্ষপূর্তিতে সিরাজগঞ্জে উৎসব"। প্রথম আলো। ৬ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
- ↑ বাপন, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য; দাস, স্বপন চন্দ্র (সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১)। "ঐতিহ্যের কাটাখালিতে যমুনার স্বচ্ছ পানি"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- বেগম, আয়শা (২০০২)। "ইলিয়ট ব্রিজ, সিরাজগঞ্জ সদর"। পাবনার ঐতিহাসিক ইমারত। ঢাকা: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। পৃষ্ঠা ২২৯। আইএসবিএন 984809007X।
- খান, শামসুজ্জামান, সম্পাদক (২০১৪)। "বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা: সিরাজগঞ্জ"। ঢাকা: বাংলা একাডেমি: ২৪, ৩৬। আইএসবিএন 9840753398।
- খান, ফজলুর রহমান (২০০৫)। সিরাজগঞ্জের ইতিহাস। সিরাজগঞ্জ: বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব, সিরাজগঞ্জ শাখা। পৃষ্ঠা ১৭৮।
- সাহা, রাধারমন; সিদ্দিকী, মৌলবি মোখ্তার আহমদ (২০১৩) [১৯২৪]। "সিরাজগঞ্জের ইতিহাস"। চৌধুরী, কমল। পাবনা জেলার ইতিহাস। কলকাতা: দে’জ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৮৬, ৫৭৭, ৫৭৮। আইএসবিএন 9788129518637।