সিদ্ধেশ্বর স্বামী

ভারতীয় ধর্মগুরু (১৯৪০-২০২৩)

সিদ্ধেশ্বর স্বামী[ক] (জন্মনাম সিদ্দগোন্ডা ওগাপ্পা বিরাদার; ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ - ২ জানুয়ারী ২০২৩) একজন ভারতীয় হিন্দু লিঙ্গায়ত আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। তিনি যোগ এবং আধ্যাত্মিকতার উপর শিক্ষার জন্য পরিচিত। তিনি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বিজয়পুরের একটি জ্ঞানযোগাশ্রম আশ্রমের প্রধান ছিলেন। ২০১৮ সালে যখন তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সন্ন্যাসী হওয়ার কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[১][২][৩] এর আগে তিনি কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেটও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[৪]

সিদ্ধেশ্বর স্বামী
জন্ম
সিদ্দগোন্ডা ওগাপ্পা বীরাদার

(১৯৪০-০৯-০৫)৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪০
বিজ্জারাগী, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২ জানুয়ারি ২০২৩(2023-01-02) (বয়স ৮২)
বিজয়পুরা, কর্ণাটক, ভারত
মাতৃশিক্ষায়তন
আন্দোলনলিঙ্গায়তবাদ

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

স্বামী সিদ্দাগোন্ডা ওগাপ্পা বিরাদার ১৯৪০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, সাঙ্গাভা এবং ওগাপ্পা গৌড়া বিরাদারের কাছে একটি লিঙ্গায়ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২][৫] তাঁর পিতা একজন জমিদার ছিলেন এবং তাঁর তিন পুত্র ও তিন কন্যার (মোট ছয় সন্তান) মধ্যে সিদ্ধেশ্বর জ্যেষ্ঠ ছিলেন।[৪] অল্প বয়স থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। নিজের বেশিরভাগ সময় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন এবং যোগব্যায়ামধ্যান অনুশীলনে ব্যয় করতেন। ১৪ বছর বয়সে, তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং মল্লিকার্জুন স্বামীর আশ্রমে তার শিষ্য হিসেবে যোগদান করেন।[৬] তিনি বিজয়পুরে তার প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করেন এবং ধারওয়াদের কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[৬] তিনি মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের শিবাজী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪]

ধর্মীয় জীবন সম্পাদনা

সিদ্ধেশ্বর স্বামী তার দীক্ষার পর, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বিশেষ করে ভগবদ্গীতা এবং পতঞ্জলির যোগসূত্রের শিক্ষাগুলি অধ্যয়ন এবং অনুশীলন করতে বহু বছর অতিবাহিত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ভারত জুড়ে ভ্রমণ করে বক্তৃতা দেন এবং সাধারণ মানুষকে আধ্যাত্মিক জীবনে ফিরে আসতে নেতৃত্ব দেন।[৪]

তিনি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বিজয়পুরের জ্ঞানযোগাশ্রমের প্রধান ছিলেন। বিভিন্ন যৌগিক নীতির উপর তার বক্তৃতা এবং সহজ ভাষা ব্যবহার করে জটিল দার্শনিক বিষয়গুলির ব্যাখ্যা, ধর্মীয় বাধা পেরিয়ে একটি বড় অনুসারী দলকে আকৃষ্ট করেছিল। একজন হিন্দু ধর্মীয় গুরু হওয়া সত্ত্বেও, তার শিষ্যরা মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মে বিস্তৃত ছিলেন যারা তার বক্তৃতা শুনতে তার আশ্রমে যেতেন।[৪] তিনি বাসভান্নার শরণ সাহিত্য এবং স্থানীয় ভাষার অন্যান্য মহাকাব্যের উপাখ্যানের উপর বক্তৃতা দেন। তিনি যীশু, আব্রাহাম এবং মোহাম্মদ সহ অন্যান্য ধর্মীয় নবীদের পাশাপাশি শঙ্করাচার্য, মাধবাচার্য এবং রামানুজাচার্যের শিক্ষা থেকেও বক্তৃতা দানে পরিচিত ছিলেন। মারাঠি এবং ইংরেজি ছাড়াও তার বেশিরভাগ ধর্মোপদেশ কন্নড়ের স্থানীয় উপভাষায় ছিল।[৬][৭]

যোগব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে তার শিক্ষার পাশাপাশি, স্বামী তার জনহিতকর প্রচেষ্টার জন্যও পরিচিত ছিলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৪] তিনি ভারতীয় দর্শন ও বচন সাহিত্যের উপর ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন । তার অনেক বক্তৃতাও বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।[৬][৮]

২০১৮ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ-সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী ভূষিত করেন। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং একজন সন্ন্যাসী বা তপস্বী হিসাবে বলেছিলেন, "তার এই ধরনের পুরস্কারগুলিতে কোন আগ্রহ নেই"।[২] এর আগে তিনি কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[৪] তিনি কর্ণাটক সরকার কর্তৃক আশ্রমের উন্নয়নের জন্য প্রদত্ত অর্থও ফেরত দিয়েছিলেন।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন এবং মৃত্যু সম্পাদনা

সিদ্ধেশ্বর স্বামী জ্ঞানযোগাশ্রম আশ্রমের মধ্যে একটি দুই কক্ষের বাড়িতে থাকতেন।[৬]

তিনি ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন।[৯] তার ইচ্ছাপত্রে তিনি তাঁর জন্য কোনও স্মৃতিসৌধ তৈরি করা করা থেকে বিরত থাকতে এবং মৃত্যু-পরবর্তী কোনও অনুষ্ঠান ছাড়াই তার দেহকে দাহ করতে অনুরোধ করেছিলেন। এজন্য আশ্রমেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।[৬][১০]

টীকা সম্পাদনা

  1. হিন্দু ধর্মীয় নেতার নামের আগে প্রায়ই সম্মানিত শ্রী উপাধি যুক্ত করা হয়। স্বামীকে সম্মানিত স্বামীজীও উল্লেখ করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সংস্থা, সংবাদ। "'উপাধির দরকার নেই', পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করলেন সন্ন্যাসী"www.anandabazar.com। ২০২৩-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৮ 
  2. "Siddheshwar Swami turns down Padma Shri, writes to PM Modi: 'Being a sanyasin I am little interested in awards'"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জানুয়ারি ২০১৮। ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. Buradikatti, Kumar (২০১৮-০১-২৬)। "Siddeshwar Swami declines Padma Shri"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। ২০২৩-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৮ 
  4. "'Burn my body sans any rituals and don't build any memorial': Siddeshwara Swamy of Karnataka, who refused Padma Shri, is no more"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জানুয়ারি ২০২৩। ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. "Prominent Lingayat seer Siddeshwara Swami dead"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জানুয়ারি ২০২৩। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  6. Desai, Rishikesh Bahadur (৩ জানুয়ারি ২০২৩)। "Siddeshwar Swami, a seer who transcended sectarian beliefs"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  7. "Musings on last days of Spiritual Masters of Sanatana Dharma"Star of Mysore (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জানুয়ারি ২০২৩। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  8. "Jnanyogashram"। jnanayogashrama.org। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  9. Menasinakai, Sangamesh (৩ জানুয়ারি ২০২৩)। "Siddheshwar Swami Death News: Karnataka seer Siddheshwar Swamiji passes away at 82 after prolonged illness"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। TNN। ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  10. "Over a million pay their last respects to Siddeshwar Swami"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জানুয়ারি ২০২৩। আইএসএসএন 0971-751X। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা