সারাজী ভাষা
সারাজী বা সিরাজী উত্তরা ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি ভাষা, যা মূলত উত্তর ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ডোডা জেলার সারাজ অঞ্চলে বসবাসকারী সারাজি জনগোষ্ঠীর ভাষা৷ ডোডা জেলার উত্তরাংশ এবং পার্শ্ববর্তী রামবন ও কিশ্তওয়ার জেলায় এদের বসতি৷[২] এছাড়াও প্রায় ৫০,০০০ সারাজীভাষী হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় বসবাস করেন৷
সারাজী | |
---|---|
साराज़ी سرازی | |
দেশোদ্ভব | জম্মু ও কাশ্মীর |
অঞ্চল | ডোডা জেলা |
জাতি | সারাজি জাতি |
মাতৃভাষী | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | – |
গ্লোটোলগ | sira1264 [১] |
অন্তিম জনগণনায় সারাজী ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিলো ১,২৪,৮৯৬ জন,[২] যার মূলত সিংহভাগই ধর্মীয়ভাবে হিন্দু, এছাড়া সারাজ অঞ্চলে কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলা বহু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকও যোগাযোগের সুবিধার্থে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে এই সারাজী ভাষার ব্যবহার করে থাকেন৷[৩]
সারাজীর সাথে কাশ্মীরি ভাষার যেমন মিল রয়েছে, তেমনি ভদ্রবাহীর মতো পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষারও মিল রয়েছে৷ তবে ইদানীং কালে অধিক মিল থাকার কারণে এটিকে পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে৷ এই ভাষাটির তিনটি প্রকৃষ্ট উপভাষা হলো ভাগোয়ালি, দেশোয়ালি এবং কোরারোয়ালি.[৪]
সারাজীর কোনো লেখ্য সাহিত্য বা লেখ্যরূপ নেই, তবে লেখার সময়ে স্থানীয়রা আরবি লিপিতে লিখতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷ লাতিন লিপিতেও ক্ষুদ্রস্তরে লেখার চল রয়েছে, আবার আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে দেবনাগরী ও প্রাচীন টাকরী লিপিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷[২]
জনসংখ্যা
সম্পাদনাসারাজী ভাষাভাষী লোক মূলত সারাজ অঞ্চলে বাস করেন৷ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে ভদ্রবাহী ভাষাভাষীর সংখ্যা ১,২৪,৮৯৬ জন, যেখানে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে এই জনসংখ্যা ছিলো ৮৭,১৭৯ জন৷[৫] জন সচেতনতার অভাবে যথেষ্ট সংখ্যক লোক নিজেদের কাশ্মীরি ভাষী বলে উল্লেখ করেছেন৷
- ভারত - ১,২৪,৮৯৬
- জম্মু ও কাশ্মীর - ৭৭,৩৬২ (০.৬৩%)
- ডোডা জেলা - ৫৬,৭৫৪ (১৩.৮৪%)
- ঠাথরি ব্লক - ১,৩৬২
- ডোডা ব্লক - ৫৫,২৮৩ (৩৪.৮৬%)
- রামবন জেলা - ১৬,৮৫৩ (৫.৯৪%)
- রামবন ব্লক - ১৬,৭৬১
- ডোডা জেলা - ৫৬,৭৫৪ (১৩.৮৪%)
- হিমাচল প্রদেশ - ৪৭,১৯২ (০.৬৯%)
- কুলু জেলা - ৪৫,২৬৪ (১০.৩৪%)
শ্রেণীবিন্যাস
সম্পাদনাখ্রিস্টীয় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভাষাবিদ জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন এই ভাষাটির সাথে কাশ্মীরি এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ভাষাগুলির সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন৷ তিনি সারাজীকে কাশ্মীরি বা পাহাড়ি যে কোনো একটি গোষ্ঠীতেই রাখতে সম্মত হন৷ তবে ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ, জনসম্পর্ক, বাচনভঙ্গি অনুসারে এটিকে কাশ্মীরির একটি উপভাষা হিসাবে গন্য করা হয়৷ [৬]
সারাজীকে বহুল ক্ষেত্রে কাশ্মীরির উপভাষা হিসাবে গন্য করা হলেও[৭] আধুনিক ভাষাবিদরা নিজেদের গবেষণায় এটিকে পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করতে অধিক আগ্রহী৷[৮] আবার সারাজীভাষীদের নিজেদের মতামত অনুসারে তারা নিজেদের ভাষার সাথে কাশ্মীরির বিশেষ মিল খুঁজতে নারাজ,[৯] শুধু তাই নয় তারা নিজেরা নিজেদের পাহাড়িভাষী বলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷[১০]
একটি বিকল্প প্রস্তাব অনুসারে এই ভাষাটি কাশ্মীরি ও পাহাড়ি ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যবর্তী একটি স্বতন্ত্র ও অনন্য ভাষা৷[১১] অনুমান করা হয় যে ভাষাটি শুরু থেকেই একটি ক্রেওল ভাষা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে৷[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Siraji of Doda"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- ↑ ক খ গ Ashiqehind 2018।
- ↑ Mahajan 2018; Ashiqehind 2018. Some Muslim communities are speakers of Gojri or Watali.
- ↑ Parihar ও Dwivedi 2019, পৃ. 4।
- ↑ [১]
- ↑ Grierson 1919, পৃ. 433।
- ↑ Wali ও Koul 1996, পৃ. xii; a recent example is in Bhat ও Niaz 2014, পৃ. 292.
- ↑ Kaul 2006, পৃ. 158–166; Ashiqehind 2018, "Sarazi should be classed as a Western Pahari language. It would still make a very aberrant member of the group."
- ↑ Mahajan 2018।
- ↑ Kaul 2006, পৃ. 163।
- ↑ This is the proposal by Varma (1939, pp. 88–89), according to whom the characteristics of Dardic and Pahari "have so deeply penetrated the grammatical structure of the dialect that it must be called as fundamentally Dardo-Pahāṛī". This was criticised by Kaul (2006).
- ↑ Koul ও Schmidt 1983, পৃ. 10।