সামরিক হুন্তা[ক] (স্পেনীয়: Junta militar, উচ্চারিত: [ˈxũn̪.t̪a mi.liˈt̪aɾ]; /ˈhʊntə, ˈʌn-/) হল সামরিক নেতাদের কার্যনির্বাহী সভার নেতৃত্বাধীন একটি সরকারহুন্তা শব্দটির অর্থ “সভা” বা “সমিতি” যা ১৮০৮ সালে নেপোলিয়নের স্পেন আক্রমণের বিরুদ্ধে স্পেনীয় প্রতিরোধ দ্বারা সংগঠিত জাতীয় ও স্থানীয় হুন্তা থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[১] এই শব্দটি এখন গোষ্ঠীশাসনতান্ত্রিক সামরিক একনায়কতন্ত্র দ্বারা চিহ্নিত একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অন্যান্য ধরন, বিশেষত স্ট্রংম্যান (স্বৈরাচারী সামরিক একনায়কতন্ত্র); মেশিন (গোষ্ঠীশাসনতান্ত্রিক দলীয় একনায়কতন্ত্র) এবং বসবাদ (স্বৈরাচারী দলীয় একনায়কতন্ত্র) থেকে আলাদা।[২]

আউগুস্তো পিনোচের নেতৃত্বাধীন চিলীয় সামরিক হুন্তা, মার্চ ১৯৮৬

একটি হুন্তা প্রায়ই একটি কু দেতার[খ] ফলে ক্ষমতায় আসে।[১] হুন্তা ফরমান দ্বারা শাসনের ক্ষমতা দিয়ে হয় আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের পরিচালনা পরিষদ হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে অথবা একটি নামমাত্র বেসামরিক সরকারের উপর বাধ্যতামূলক (কিন্তু অনানুষ্ঠানিক) নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে ক্ষমতা চালাতে পারে।[৩] হুন্তা শাসনের এই দুটি রূপকে কখনও কখনও প্রকাশ্য শাসনছদ্মবেশী শাসন বলা হয়।[৪] ছদ্মবেশী শাসন বেসামরিকীকরণ বা পরোক্ষ শাসনের রূপ নিতে পারে।[৪] বেসামরিকীকরণ ঘটে যখন একটি হুন্তা প্রকাশ্যে তার স্পষ্ট সামরিক বৈশিষ্ট্য খতম করে, কিন্তু তার আধিপত্য জারি রাখে।[৪] উদাহরণস্বরূপ, হুন্তা সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পারে, বেসামরিক পোশাকের পক্ষে সামরিক উর্দি পরিত্যাগ করতে পারে, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাদের দিয়ে সরকারকে “উপনিবেশায়ন” করতে পারে এবং রাজনৈতিক দল বা গণসংগঠনের ব্যবহার করতে পারে।[৫] “পরোক্ষ শাসনে” একটি বেসামরিক পুতুল সরকারের উপর হুন্তার গোপন, পর্দার আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ জড়িত থাকে। সামরিক বাহিনী দ্বারা পরোক্ষ শাসনের মধ্যে হয় সরকারের উপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ বা সামরিক বা জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ের মতো নীতিগত ক্ষেত্রগুলির একটি সংকীর্ণ সমুচ্চয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।[৪]

১৯২০-এর দশক থেকে প্রায়শই লাতিন আমেরিকায় সামরিক হুন্তাদের দেখা গেছে, সাধারণত একটি “প্রাতিষ্ঠানিক, উঁচুমানের কর্পোরেট/পেশাদার হুন্তা” আকারে বিভিন্ন সামরিক শাখার (স্থলফৌজ, নৌফৌজ ও আকাশফৌজ) কমান্ডিং অফিসারদের নেতৃত্বে এবং কখনও কখনও জাতীয় পুলিশ বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানের সহযোগে।[৩] রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল ফিনার ১৯৮৮ সালে লিখেছিলেন যে, লাতিন আমেরিকার হুন্তাদের মাঝে অন্যান্য জায়গার হুন্তাদের চেয়ে ছোট হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়; মধ্যবর্তী হুন্তার ১১ জন সদস্য ছিল, যেখানে লাতিন আমেরিকান হুন্তাদের সাধারণত তিন বা চারজন সদস্য ছিল।[৩] “কর্পোরেট” সামরিক অভ্যুত্থানকে “দলীয়” সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা করা হয়েছে। প্রাক্তনগুলি একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে সামরিক শ্রেণিবিন্যাসের শীর্ষে সিনিয়র কমান্ডারদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়, অন্যদিকে পরেরটি সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং প্রায়শই মধ্য-পদাধিকারী অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হয়।[৩][৬]

অ্যানুয়াল রিভিউ অব পলিটিক্যাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সামরিক শাসন বেসামরিক একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী সামরিক স্ট্রংম্যান উভয়ের থেকে ভিন্নভাবে আচরণ করে।[৭] গবেষণাটিতে দেখা গেছে যে, (১) “বেসামরিক একনায়কত্বের চেয়ে স্ট্রংম্যান ও সামরিক শাসনগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি”; (২) “সামরিক স্ট্রংম্যানরা সামরিক শাসন বা বেসামরিক একনায়কদের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ শুরু করে, সম্ভবত কারণ তাদের উত্তরোত্তর নির্বাসন, কারাগার বা হত্যার ভয় পাওয়ার কারণ বেশি” এবং (৩) সামরিক শাসন ও বেসামরিক একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রায়নে পর্যবসিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর বিপরীতে সামরিক স্ট্রংম্যানগুলো প্রায়শই বিদ্রোহ, গণঅভ্যুত্থান বা আক্রমণের মাধ্যমে লোপ পায়।[৭]

উদাহরণ সম্পাদনা

আফ্রিকা সম্পাদনা

  1.   চাদক্রান্তিকালীন সামরিক পরিষদ (২০২১–বর্তমান)
  2.   মিশরসশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদ (২০১১–২০১২)
  3.   ইথিওপিয়াডার্গ (১৯৭৪–১৯৮৭)
  4.   গিনিপুনর্মিলন ও উন্নয়নের জাতীয় কমিটি (২০২১–বর্তমান)
  5.   লাইবেরিয়াগণমুক্তি পরিষদ (১৯৮০–১৯৮৪)
  6.   মালিগণমুক্তির জন্য জাতীয় কমিটি (২০২০–বর্তমান)
  7.   নাইজেরিয়াসামরিক হুন্তাসমূহ (১৯৬৬–১৯৭৯ ও ১৯৮৩–১৯৯৮)
  8.   সুদানক্রান্তিকালীন সামরিক পরিষদ (২০১৯), সামরিক হুন্তা (২০২১)

আমেরিকা সম্পাদনা

  1.   আর্জেন্টিনাআর্হেন্তিনীয় বিপ্লব (১৯৬৬–১৯৭৩), জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া (১৯৭৬–১৯৮৩)
  2.   বলিভিয়াবলিভীয় সামরিক হুন্তাসমূহ (১৯৭০–১৯৭১ ও ১৯৮০–১৯৮২)
  3.   ব্রাজিল১৯৩০ সালের ব্রাজিলীয় সামরিক হুন্তা (১৯৩০–১৯৪৫) ও ব্রাজিলে সামরিক একনায়কতন্ত্র (১৯৬৪–১৯৮৫)
  4.   চিলিসরকার হুন্তা (১৯৭৩–১৯৯০)
  5.   এল সালভাদোরনাগরিক নির্দেশক (১৯৩১), সরকারি হুন্তা (১৯৬০–১৯৬১), নাগরিক–সামরিক নির্দেশক (১৯৬১–১৯৬১), বিপ্লবী সরকার হুন্তা (১৯৭৯–১৯৮২)
  6.   গুয়াতেমালা১৯৫৪ সালের গুয়াতেমালীয় অভ্যুত্থানের হুন্তা
  7.   হাইতি১৯৯১ সালের হাইতীয় অভ্যুত্থানের হুন্তা (১৯৯১–১৯৯৪)
  8.   নিকারাগুয়াজাতীয় পুনর্গঠনের হুন্তা (১৯৭৯–১৯৮৫)
  9.   পেরুপেরুবীয় সামরিক হুন্তা (১৯৬৮–১৯৮০)

এশিয়া সম্পাদনা

  1.   বাংলাদেশজিয়াউর রহমান (১৯৭৫–১৯৮১) ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের (১৯৮২–১৯৯০) সামরিক সরকার
  2.   জর্জিয়াজর্জীয় প্রজাতন্ত্রের সামরিক পরিষদ (৬ জানুয়ারি–১০ মার্চ ১৯৯২)
  3.   মিয়ানমাররাষ্ট্রীয় শান্তি ও উন্নয়ন পরিষদ (১৯৮৮–২০১১), ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার পরিষদ নামে পরিচিত; এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিষদ (২০২১–বর্তমান)
  4.   পাকিস্তানআইয়ুব খান (১৯৫৮–১৯৬৯), ইয়াহিয়া খান (১৯৬৯–১৯৭১), মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক (১৯৭৭–১৯৮৮) ও পারভেজ মুশাররফের (১৯৯৯–২০০৮) সামরিক সরকার
  5.   দক্ষিণ কোরিয়াজাতীয় পুনর্গঠনের জন্য সর্বোচ্চ পরিষদ (১৯৬১–১৯৬৩)
  6.   তাইওয়ানচীনের মূল ভূখণ্ড সাম্যবাদীদের দখলে যাওয়ার পর কুওমিনতাং কর্তৃক ব্যবহৃত সাম্যবাদী বিদ্রোহের বিরুদ্ধে অস্থায়ী বিধান (১৯৪৮–১৯৯১)
  7.   থাইল্যান্ডজাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (২০০৬–২০০৮) ও জাতীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা পরিষদ (২০১৪–২০১৯)

ইউরোপ সম্পাদনা

  1.   গ্রিসগ্রীক হুন্তা, দাফতরিক নাম “বিপ্লবী কমিটি” (১৯৬৭–১৯৭৪)
  2.   পোল্যান্ডজাতীয় মুক্তির সামরিক পরিষদ (১৯৮১–১৯৮৩)
  3.   পর্তুগালজাতীয় মুক্তি হুন্তা (১৯৭৪–১৯৭৫)
  4.   তুরস্কজাতীয় ঐক্য কমিটি (১৯৬০–১৯৬১) ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (১৯৮০–১৯৮৩)

ওশেনিয়া সম্পাদনা

  1.   ফিজিফ্র‍্যাঙ্ক বাইনিমারামার সামরিক সরকার (২০০৬–২০১৪)[৮]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. এই স্পেনীয় শব্দটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় স্পেনীয় শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
  2. এই ফরাসি শব্দবন্ধটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Junta, Encyclopædia Britannica (last updated 1998).
  2. Lai, Brian; Slater, Dan (২০০৬)। "Institutions of the Offensive: Domestic Sources of Dispute Initiation in Authoritarian Regimes, 1950-1992"American Journal of Political Science50 (1): 113–126। জেস্টোর 3694260ডিওআই:10.1111/j.1540-5907.2006.00173.x 
  3. Paul Brooker, Non-Democratic Regimes (Palgrave Macmillan: 2d ed. 2009), pp. 148-150.
  4. Paul Brooker, Comparative Politics (ed. Daniele Caramani: Oxford University Press, 2014), pp. 101-102.
  5. Brooker, Non-Democratic Regimes (2d ed.), p. 153.
  6. David Kuehn, "Democratic Control of the Military" in Handbook of the Sociology of the Military (eds. Giuseppe Caforio & Marina Nuciari: Springer, 2nd ed.), p. 164.
  7. Geddes, Barbara; Frantz, Erica; Wright, Joseph G. (২০১৪)। "Military Rule"। Annual Review of Political Science17: 147–162। ডিওআই:10.1146/annurev-polisci-032211-213418  
  8. "Fiji holds historic election after years of military rule - DW - 17.09.2014"DW.com। Deutsche Welle।