সমমণ্ডল (ইংরেজি: homosphere) হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের ঐ স্তর যেখানে যথেচ্ছভাবে মিশ্রণ বা এডি ব্যাপন সংঘটনের কারণে, সকল গ্যাস সমসত্ত্বভাবে মিশ্রিত হয়। বায়ুর আয়তনিক সংযুতি মোটামুটি সুষম থাকার কারণে, সমগ্র সমমণ্ডল জুড়েই বাতাসের অণুর ঘনত্ব একই থাকে। সমমণ্ডলের ওপরের অংশকে বলা হয় সমবিরতি, যা টার্বোবিরতি নামেও পরিচিত। সমবিরতি'র ওপরে রয়েছে বিষমমণ্ডল, যেখানে মিশ্রণের তুলনায় ব্যাপনের হার দ্রুততর, এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, হালকা গ্যাসের তুলনায় ভারী গ্যাসের ঘনত্ব দ্রুততর হারে হ্রাস পেতে থাকে।

যেসব প্রক্রিয়া এই সুষম আচরণ বজায় রাখে তার মধ্যে রয়েছে তাপ পরিচলন এবং বায়ু প্রবাহের ধরন। ট্রপোমণ্ডলে, উদীয়মান উষ্ণ বায়ু উচ্চতর শীতল বায়ুকে সরিয়ে দেয়, যা গ্যাসগুলোকে উল্লম্বভাবে মিশ্রিত করে। বায়ুপ্রবাহের প্যাটার্ন বায়ুকে তল বরাবর ধাক্কা দিয়ে অনুভূমিকভাবে মিশ্রণ ঘটায়।[১] অধিকতর উচ্চতায় অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহও বিরাজমান থাকে, যেমন- পার্থিব স্ট্রাটোমণ্ডলে ব্রুয়ার-ডবসন প্রবাহ (Brewer-Dobson circulation), যা বায়ুকে মিশ্রিত করে। পৃথিবীর মেসোমণ্ডলে, বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং অপসৃত হয়, যা এই অঞ্চলে যথেচ্ছ মিশ্রণের (turbulent mixing) প্রবণতা তৈরি করে।

পৃথিবীর সমমণ্ডল সম্পাদনা

 
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাতটি বৃহত্তম উপাদান প্রদর্শক একটি লেখচিত্র। ০ থেকে ১০০ কি.মি. পর্যন্ত আপেক্ষিক ঘনত্ব একই অনুপাত বজায় রাখে, যা তুলনামূলকভাবে অনুভূমিক রেখাগুলি দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। লেখচিত্রের ডানদিকের নয়-দশমাংশে প্রদর্শিত বক্ররেখাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, অধিকতর উচ্চতায় এই অনুপাতগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

পৃথিবীর সমমণ্ডল শুরু হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে এবং টার্বোবিরতি পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত থাকে।[২] এতে ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল এর সম্পূর্ণ অংশ এবং তাপমণ্ডলের নিম্নভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাসায়নিকভাবে সমমণ্ডল ৭৮% নাইট্রোজেন, ২১% অক্সিজেন, এবং নগণ্য পরিমাণে অন্যান্য পদার্থ যেমন- আর্গনকার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে গঠিত। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভরের ৯৯% এরও বেশি অংশ এই স্তরভুক্ত। ক্রমবর্ধমান উচ্চতার সাথে সাথে সমমণ্ডলের বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে।[৩]

ঘনত্বের বৈচিত্র্য সম্পাদনা

কার্যকর মিশ্রণের একটি বড় ধরনের ব্যতিক্রম হচ্ছে ওজোন স্তর, যা উচ্চতায় ২০-৩০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত। সেখানে ওজোন গ্যাসের ( ) ঘনত্ব বায়ুমণ্ডলের অন্য যে কোন স্তরের তুলনায় অনেক বেশি।[৪] এর কারণ হচ্ছে আগত অতিবেগুনী রশ্মি, যা অক্সিজেনকে ( ) ওজোনে ( ) রূপান্তরিত করে। সৃষ্ট এই ওজোনই আবার অতিবেগুনী রশ্মির সিংহভাগকে বায়ুমণ্ডলের নিম্নতর স্তরে পৌঁছাতে বাধা দান করে এবং সেখানে একই ধরনের ওজোন স্তর গঠন করে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এর অর্ধায়ু প্রায় এক দিন মত হওয়ায়, বায়ুমণ্ডলের নিম্নতর স্তরের সাথে যথাযথভাবে মিশ্রণের আগেই ওজোন গ্যাস ভেঙে যায়। ওজোন ছিদ্র (ozone hole) একটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল কাঠামো, যা দূষণ এবং স্ট্রাটোমণ্ডলে অ্যান্টার্কটিক বায়ুপ্রবাহ প্যাটার্নের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

পানির বাষ্প ঘনত্ব (আর্দ্রতা) উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে ট্রপোমণ্ডলে, এবং তা আবহাওয়ার একটি মুখ্য উপাদান। পানির বাষ্পীভবন সৌর বিকিরণ হতে আগত তাপ দ্বারা পরিচালিত হয়, এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে পানি-সম্পৃক্ত বাতাস বৃষ্টি, তুষারপাত অথবা কুয়াশা হিসেবে পানি নিঃসরণ করে। এই সব প্রক্রিয়ায় পানি কর্তৃক গৃহীত এবং বর্জিত তাপ বায়ুমণ্ডলের নিম্নতর স্তরে অস্থিরতা (turbulence) বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে মেসোস্কেলমাইক্রোস্কেল স্তরে। ব্রুয়ার-ডবসন প্রবাহ হচ্ছে বড় পরিসরে ওজোন গ্যাসের প্রবাহ সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব।

প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উৎসগুলোর কাছাকাছি অঞ্চলে অন্যান্য নগণ্য গ্যাসসমূহের ঘনত্ব বেশি থাকে। এর মধ্যে রয়েছে মানব কর্মকাণ্ডজনিত (বিশেষ করে কৃষি, শিল্প এবং পরিবহন) দূষণ, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, নির্দিষ্ট কিছু খনিজ পদার্থের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় হতে নির্গত রেডন গ্যাস, আগ্নেয় গ্যাস, লিমনিক উদগিরণ এর নিঃসরণ ইত্যাদি। উদ্ভিদ ও আণুবীক্ষণিক জীব কর্তৃক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর শোষণ ঘটে, কিন্তু  এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় দাবানল এবং মানবঘটিত কর্মকাণ্ড দ্বারা।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "OS411B: M2, U1, P3 : The Homosphere"www.shodor.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০১ 
  2. "Atmosphere | gaseous envelope"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০১ 
  3. "ATMOSPHERIC COMPOSITION TEMPERATURE AND FUNCTION"web.ccsu.edu। ২০১৮-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০১ 
  4. "CHAPTER 10. STRATOSPHERIC OZONE"acmg.seas.harvard.edu। ২০১৯-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৯ 

বিষয়শ্রেণী:পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল