রঙ্গনাথস্বামী মন্দির, শ্রীরঙ্গম

ভারতের একটি হিন্দু মন্দির

শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির বা তিরুবরঙ্গম (তামিল: திருவரங்கம்) একটি হিন্দু মন্দির যা হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নির্মিত। রঙ্গনাথ বিষ্ণুর একটি নাম। মন্দিরটি শ্রীরঙ্গম, তিরুচিরাপল্লী, তামিলনাড়ু, ভারতে অবস্থিত। এটি একটি দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্য।[] মন্দিরটির বর্ণনা মধ্যযুগীয় তামিল সাহিত্যে পাওয়া যায়।

শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির
শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাতিরুচিরাপল্লী
অবস্থান
অবস্থানশ্রীরঙ্গম
রাজ্যতামিল নাড়ু
দেশভারত
স্থাপত্য
ধরনদ্রাবিড়ীয় স্থাপত্য[]
ওয়েবসাইট
http://www.srirangam.org/

এই মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বিষ্ণু মন্দির যার ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক গুরুত্ব অপরিসীম। মন্দিরটি কাবেরী নদীর মধ্যস্থ একটি দ্বীপে স্থাপিত। ফলে মন্দিরটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে মুসলিম এবং ইউরোপীয় আক্রমণ ও লুটতরাজকে মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়েছে।[] মন্দিরের প্রধান ফটকের নাম রাজগোপুরম। এটির উচ্চতা ২৩৭ ফুট। মন্দিরের ২১ দিন ব্যাপী বার্ষিক উৎসবে প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে। এজন্য শ্রীরঙ্গম কে বিশ্বের সব থেকে বড় জীবিত মন্দির ধরা হয় যদিও এটি অ্যাংকর ভাট থেকে ছোট।[][] ১৫৬ একর জুড়ে বিস্তৃত এই মন্দির কমপ্লেক্সটি ভারতের সব থেকে বড় মন্দির কমপ্লেক্স।[]

স্থাপত্য

সম্পাদনা

মন্দিরটি ৭টি সমকেন্দ্রিক দেয়ালে ঘেরা যা ৩২,৫৯২ ফুট বা ৬ মাইলের অধিক দীর্ঘ। এই মন্দিরে ২১ টি গোপুরম বা টাওয়ার আছে যার মধ্যে রাজাগোপুরম সব থেকে উঁচু। এছাড়া ৩৯ টি প্যাভিলিয়ন, ৫০ টি মন্দির এবং ১০০ পিলার বিশিষ্ট একটি মণ্ডপ ও কয়েকটি জলাধার আছে।

মন্দির

সম্পাদনা

সভাগৃহ

সম্পাদনা

গোপুরম

সম্পাদনা

ইতিহাস

সম্পাদনা

এ মন্দিরটির কথা সঙ্গম যুগের তামিল সাহিত্য সিলাপরিক্রম কাব্যে পাওয়া যায়। (খণ্ড ১১,৩৫-৪০ লাইন) “āyiram viritteḻu talaiyuṭai aruntiṟaṟpāyaṟ paḷḷip palartoḻu tētta viritiraik kāviri viyaṉperu turuttittiruvamar mārpaṉ kiṭanta vaṇṇamum”[]

ধারণা করা হয় মন্দিরটি ১০ম শতকে নির্মিত।[] মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, চোল, পাণ্ড্য, হয়সালা ও বিজয়নগর রাজত্বকাল অতিক্রম করেছে তিরুচিরাপল্লীর এ মন্দিরটি।

জনবসতি না থাকায় যে স্থানে রঙ্গনাথনের মূর্তিটি ছিল সেটি ঘন বনজঙ্গলে ঢাকা পড়ে থাকে বহু দিন। অনেক দিন পরে একজন চোল রাজা একটি টিয়া পাখির পিছনে ধাওয়া করতে করতে এসে এটির দেখা পান। সেখানে তিনি রঙ্গনাথস্বামীর মন্দির স্থাপন করেন যেটি বর্তমানের ভারতের বৃহত্তম মন্দির কমপ্লেক্স।[] ইতিহাস থেকে জানা যায় এই অঞ্চলে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন হিন্দু রাজ্যের মধ্যকার সংঘর্ষের সময়ও এই মন্দিরের নিরাপত্তা, পবিত্রতা এবং ঐতিহ্য বিঘ্নিত হয়নি।

১৩১০-১৩১১ সালের মুসলিম সেনাপতি মালিক কফুর যখন এই অঞ্চলে লুটতরাজ চালায় তখন রঙ্গনাথ স্বামীর মূর্তিটি লুট করে দিল্লী নিয়ে যায়।শ্রীরঙ্গমের ভক্তরা মূর্তিটি ফেরত আনতে দিল্লী চলে যায় এবং তাদের নৃত্য ও নাটক দেখে সুলতান মোহিত হয়ে যায়। ভক্তরা সুলতানের কাছ থেকে মূর্তিটি ফেরত নিয়ে আসে। কিন্তু রাজকন্যা সুরাথানি রঙ্গনাথ স্বামীর প্রেমে পড়ে যান এবং তিনিও মূর্তির খোঁজে শ্রীরঙ্গম চলে আসেন। প্রায় হাজার মাইল পার হয়ে এসে সুরাথানি শ্রীরঙ্গমে রঙ্গনাথ স্বামীর মূর্তির সামনে প্রণিপাত করে মৃত্যুবরণ করে। এখনও পর্যন্ত শ্রীরঙ্গমে অর্জুন মণ্ডপের কাছে সুরাথিনির চিত্র রয়েছে।[১০][১১] তামিল ভক্তরা এঁকে থালুকা নাচিয়ার বলে সম্বোধন করে। প্রতিদিন তার উদ্দেশ্যে পূজা দেয়া হয়। প্রতিবছর সুরাথিনির জন্য কল্লানা উৎসব পালন করা হয়ে থাকে শ্রীরঙ্গমে।[১২]

১৩২৩ সালে মালিক কফুর আবারও শ্রীরঙ্গম আক্রমণ করে। এটা ছিল আরও তীব্র এবং পাশবিক। মালিক কফুরের সৈন্য বাহিনী পৌঁছানোর পূর্বে বৈষ্ণব আচার্য পিল্লাই লোকাঁচারিয়ার এবং স্বামী বেদান্ত দেশিকা স্বামী রঙ্গনাথ ও দেবী রঙ্গনায়িকার মূর্তি দুটি নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে বেরিয়ে পড়েন। যাবার আগে যেখানে মূর্তি দুটি প্রকটতি ছিল সে জায়গা ইট দিয়ে গেঁথে বন্ধ করে দেন। পিল্লাই লোকাঁচারিয়ার যাত্রা পথেই মারা যান। মালিক কফুর যখন শ্রীরঙ্গমে পৌছায় তখন শ্রীরঙ্গমের ১৩,০০০ ভক্ত শ্রী বৈষ্ণব মন্দির রক্ষার্থে জীবন দিয়ে দেন।[১৩] রক্তের নদী বইতে শুরু করে কাবেরী বিধৌত শ্রীরঙ্গম জুড়ে। পরবর্তী ৬০ বছর স্বামী রঙ্গনাথের মূর্তিটি মাদুরাই, কেরালা, মহীশুর ঘুরে তিরুমালা তিরুপতি পাহাড়ে নিয়ে রক্ষা করা হয়।[১৩] ১৩৭১ সালে স্বামী বেদান্ত দেশিকা পুনারায় মূর্তি দুটি নিয়ে শ্রীরঙ্গমে প্রতিষ্ঠা করেন। [১১]

রঙ্গনাথ স্বামীর মূর্তিটির একটি চোখ ছিল অরলভ নামে হীরার তৈরি আরেক চোখ ছিল একই রকম দেখতে জেম পাথরের। অরলভ হীরক খণ্ডটি বর্তমানে রাশিয়ার মস্কোর ক্রেমলিনের ডায়মন্ড ফান্ড কালেকশনে সংরক্ষিত রয়েছপ। এটি ওজন ১৮৯.৬২ ক্যারেট বা ৩৭.৯২৪ গ্রাম যা প্রায় একটি মুরগীর ডিমের অর্ধেক আয়তনের। কিংবদন্তি অনুসারে, প্রথম করনাটিক যুদ্ধের (ফ্রেন্স ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মধ্যকার যুদ্ধ) সময় একজন ফরাসী যোদ্ধা শ্রীরঙ্গমে আশ্রয় নেয়। ১৭৭৪ সালে দ্বিতীয় করনাটিক যুদ্ধের সময় সে একজন হিন্দু হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে হীরক খণ্ডটি চুরি করে।[১৪]

কিংবদন্তি

সম্পাদনা

মন্দির পরিচালনা এবং দর্শন

সম্পাদনা


বৈকুণ্ঠ একাদশী

সম্পাদনা

জ্যেস্তাবিশেকা

সম্পাদনা

ব্রাহ্মতসাভাম

সম্পাদনা

অন্যান্য অনুষ্ঠান

সম্পাদনা

ধর্মীয় গুরুত্ব

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. Urwick 2007, পৃ. 58।
  2. Urwick 2007, p. 58.
  3. Spencer 1978, p. 3
  4. Vater 2010, p. 40
  5. Jones 2004, p. 4.
  6. Mittal 2005, p. 456
  7. Silappadikaram.
  8. Sircar 1979, p. 64
  9. Sajnani 2001, p. 312.
  10. Sundararajan 2003, p. 434
  11. Hopkins 2002, p. 69
  12. [1]
  13. Ramaswamy 2007, pp. 301–302.
  14. Erlich 2002, p. 66.

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:তিরুচিরাপল্লী