শরৎকুমার রায় (ভূতত্ববিদ)

শরৎকুমার রায় (২৭ আগস্ট ১৮৯৭—১৭ এপ্রিল ১৯৬২) একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ।

শরৎকুমার রায়
জন্ম২৭ আগস্ট ১৮৯৭
মৃত্যু১৭ এপ্রিল ১৯৬২

প্রথম জীবন সম্পাদনা

নদীয়ার শ্যামনগর গ্রামে এক বনেদি মাহিষ্য পরিবারে ১৮৯৭ সালের ২৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।[১] পিতা নবীনকৃষ্ণ রায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। পিতার চাকুরিসূত্রে তাকে হাজারিবাগ চলে যেতে হয়। সেখানে সেন্ট কলম্বাস স্কুলে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন তিনি। আই.এস.সি পাশ করার পর বন্ধু রাজা বসুর (বিখ্যাত ভূতাত্ত্বিক প্রমথনাথ বসুর অন্যতম পুত্র) সাথে লন্ডনে চলে যান ১৯১৯ সালে ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[২]

আমেরিকা যাত্রা ও উচ্চশিক্ষা সম্পাদনা

আর্থিক সমস্যার কারণে চাকরি নিয়ে আমেরিকা যাত্রা করেন। নৈশপ্রহরীর কাজ দিয়ে তার জীবিকা শুরু হয়। ইলিয়নর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাশ করেন ১৯২০ সালে কর্মরত অবস্থায়। সহকারী জীবাশ্মবিদের চাকরি নেন নিউ ইয়র্ক স্টেট মিউজিয়ামে এবং জীবাশ্মবিদ্যার সহ কিউরেটর পদে যোগ দেন শিকাগো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে কয়েক বছর পরেই। ভূতত্ব নিয়ে গবেষণার জন্যে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী পান ১৯৪১ সালে।

ভারতে প্রত্যাবর্তন সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভারতে আসেন কর্মসূত্রে। এসময় তিনি রুজভেল্ট নগর (বর্তমান কল্যাণী) ও নদীয়ার ধুবুলিয়া সৈন্যব্যারাকে কিছুদিন ছিলেন।

সুমেরু অভিযান সম্পাদনা

যুদ্ধ শেষে শরৎকুমার ১৯৪৭ সালে শিকাগো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের চিফ কিউরেটর পদ পেয়েছিলেন। অবসর গ্রহণ পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন তিনি। গবেষণামূলক কাজে 'রসন ম্যাকমিলান আর্কটিক একসপিডিশনে'র সদস্য হন তিনি এবং সুমেরু যান। প্রথম ভারতীয় শুধু নন, প্রথম এশিয়ান হিসেবে সুমেরু পদার্পণ করেন শরৎকুমার রায়। নৃতাত্ত্বিক গবেষণা, এস্কিমো ও যাযাবর ন্যাসকেপি মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি সম্পর্কে এই গবেষণামূলক অভিযান সাফল্য লাভ করে। প্রায় পনের মাস মেরুপ্রদেশের অভিযানে শরৎকুমার বহু অমেরুদণ্ডী প্রানীর জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন ও দুটি বই লেখেন এর ওপর নির্ভর করে।[৩][৪] তার কৃতিত্ব প্রকাশ হয় মডার্ন রিভিউ ও বাঙালি 'প্রবাসী' পত্রিকায়।[২]

দক্ষিণ আমেরিকা অভিযান সম্পাদনা

আগ্নেয়গিরি বিশারদ বা ভলকানোলজিস্ট হিসেবেও খ্যাতির শিখরে ওঠেন তিনি। ফিল্ড মিউজিয়ামের বিজ্ঞানী রূপে পঞ্চাশের দশকে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাদোর, নিকারাগুয়াকোস্টা রিকা যান। মুলত জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বিপজ্জনক গবেষণা করেছেন। শিকাগো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নিউজ বুলেটিন সূত্রে জানা যায় দু- বার তার হাত পা ঝলসে যায় আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণের কাজে। তার কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে।[২]

সম্মান সম্পাদনা

শরৎকুমার 'জিওলজিকাল সোসাইটি অফ আমেরিকা'র ফেলো ছিলেন। আর্কটিক ইনস্টিটিউট অফ নর্থ আমেরিকা, আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি এডভ্যান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের সদস্য হন। শরৎকুমার রায়ের সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তার নামে সুমেরুর ব্যাফিন দ্বীপের একটি পর্বতের নামকরণ করা হয় মাউন্ট শরৎ।[৪][৫]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

শিকাগোর বিলিং হাসপাতালে ১৭ এপ্রিল ১৯৬২ তে মারা যান বাঙালি বিজ্ঞানী শরৎকুমার রায়।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mahishya Ratnabali। কলকাতা: তুহিন প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২০৬। 
  2. লোকেশ চন্দ্র বিশ্বাস (২০১২)। বিস্মৃত বাঙালি বিজ্ঞানী। নদীয়া: কৃষ্টি, সান্মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। পৃষ্ঠা ৪১, ৪৪। 
  3. Sunanda K. Dattaray (28.02.2015)। "The Last Burra Memsahib"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ 13.01.2017  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "Dr. SK Roy, 64. Died expart on volcanoes"। Chicago Daily Tribune। 18th April, 1962। সংগ্রহের তারিখ 13.01.2017  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Ordovician Cephalopod Fauna of Baffin Island, Arthur K. Miller (১৯৫৪)। Introduction and Acknowledgments। Giological Society of America। পৃষ্ঠা 3।