শরীফ মুহাম্মদ আজিজুল হক

বাংলাদেশি অধ্যাপক ও গণিতবিদ

শরীফ মুহাম্মদ আজিজুল হক (যিনি এস এম আজিজুল হক নামেও পরিচিত) (১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৪ – ১৩ এপ্রিল ২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশি অধ্যাপক এবং গণিতবিদ যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি প্রতিষ্ঠায় যে ১২ জন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ভূমিকা পালন করেন তিনি তাদের একজন। এছাড়া তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ গণিত সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

শরীফ মুহাম্মদ আজিজুল হক
জন্ম(১৯২৪-০২-০১)১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৪
মৃত্যু১৩ এপ্রিল ২০১৬(2016-04-13) (বয়স ৯২)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
পেশাগণিতবিদ
পুরস্কারবাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফাউন্ডেশন ফেলো (১৯৭৩)

প্ররম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আজিজুল হক ১৯২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের আস্তাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম আব্দুল ওয়াজিদ শরীফ এবং মাতার নাম মতিউন্নেসা। তিনি বাগেরহাটের মোল্লাহাট ইংরেজি মিডেল স্কুল, খুলনার ইখড়ি কাটেংগা ইংরেজি স্কুল এবং মোল্লাহাটের ওয়াজিদ মেমরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৪০ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৪২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবনের প্রায় সব পরীক্ষাতে তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

আজিজুল হক শীক্ষাজীবন শেষে ১৯৪৭ সালে কলকাতায় কাস্টমস মূল্যনির্ধারক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন।[১] ভারত ভাগের পর তিনি একই বছরের দ্বিতীয় ভাগে একই পদে চট্টগ্রামখুলনায় অতিবাহিত করেন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং একই বছরের আগস্টে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গমন করেন। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন।[১]

১৯৫২ সালে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ‘ফরেন স্টুডেন্ট সামার প্রজেক্টে’ যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে টকিওতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো সিম্পোজিয়াম পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি নুফিল্ড ফাউন্ডেশনের ফেলো হিসেবে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।[১] ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সালে তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৬২ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান কিন্তু তিনি ১৯৫৪ সাল থেকেই এ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিদেশে অবস্থানকালীন সময় ব্যতীত ১৯৫৪ থেকে তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ‘পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠানটির ‘পদার্থবিদ্যা, গণিত, পরিসংখ্যান, জ্যোতির্বিদ্যা এবং আবহাওয়াবিদ্যা’ বিভাগের সভাপতি ছিলেন।[১]

আজিজুল হক ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) প্রভোস্ট এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

শিক্ষকতার বাইরে তিনি ছিলেন একজন বিমা-গাণনিক।[১] লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব অ্যাকচুয়ারিজের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিমা বিষয়ক পরামর্শক ছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি বাংলাদেশে বীমা কর্পোরেশ প্রতিষ্ঠা হলে তাকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।[১] ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে গণিত সমিতি প্রতিষ্ঠার পর তিনি এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

আজিজুল হক ১৯৭০ সালে পাকিস্তান বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফেলো মনোনীত হন।

মৃত্যু সম্পাদনা

আজিজুল হক ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ফেলোশিপ"বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. "পরিচিতি"বাংলাদেশ গণিত সমিতি। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২