শয়তান
শয়তান বা দিয়াবল হল একটি চরিত্র যাকে বিভিন্ন ধর্ম দুষ্ট বা খারাপ প্রকৃতির, একই সাথে ক্ষমতাশালী, স্রষ্টার এবং মানবজাতির শত্রু বলে চিহ্নিত করেছে। সাধারণভাবে ধরা হয় যে শয়তান উৎপথগামী, অবিশ্বাসী এবং অন্যান্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। শয়তান শব্দটি গ্রিক ভাষার, Διάβολος, Diábolos (দিয়াবলস) থেকে এসেছে যার শাব্দিক অর্থ হল অপবাদদানকারী ব্যক্তি অথবা অভিশপ্ত।[১]

আরবি ভাষায় শয়তান (شيطان) মানে "বিপথে", "দূরবর্তী", বা মাঝে মাঝে "শয়তান" এবং হিব্রু ভাষায় সতন (שָּׂטָן; লাতিনে সাতান) মানে "শত্রু" বা "দুশ্মন"। ইব্রাহিমীয় ধর্মের গ্রন্থসমূহে আবির্ভুত একটি চরিত্র যে মানবজাতির মধ্যে মন্দ, প্রতারণা এবং প্রলোভন এনেছে, এবং মানবজাতির বিপথগামী হিসাবে পরিচিত হয়। কুরআন এবং এর পূর্বসূরী বাইবেল ইত্যাদি ধমর্গ্রন্থ মতে ইবলিশ নামীয় জ্বীন পথভ্রষ্ট হয়ে শয়তানে পরিণত হয়েছে যে মানুষকে ধোকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা রাখে এবং চেষ্টা করে। এই জ্বীন আদিতে সৃষ্টিকর্তার অনুগত ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার আদেশ প্রতিপালনে অস্বীকার করে সে শয়তানে পরিণত হয়। সে মিথ্যা ও পাপের পথে মানবজাতিকে প্রলুব্ধ করে চলেছে। হিব্রু বাইবেল এবং নূতন নিয়মে (নিউ টেস্টামেন্ট) শয়তান প্রাথমিকভাবে একটি ফরিয়াদি এবং প্রতিপক্ষ, একটি সন্দেহাতীতভাবে অমঙ্গলকামনাকারী সত্তা।
আদিপুস্তক-এ শয়তানের সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও তাকে ইডেনের বাগান-এর সর্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মধ্যযুগে খৃস্টান ধর্মতত্বে শয়তান শুধুমাত্র একটি অলৌকিক সত্তা হিসেবেই বিদ্যমান ছিল। আধুনিক যুগ-এর শুরুর দিকে দৈব আছর ও ডাইনিবিদ্যার প্রসারের কারণে শয়তান চরিত্রটি নতুন এক অস্তিত্ব লাভ করে। আলোকিত যুগ-এ শয়তানের অস্তিত্বের বিষয়টিই অস্বীকার করা হয়, তথাপি আমেরিকা ও তদসংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে শয়তানের বিশ্বাস আরও শক্ত অবস্থান লাভ করে। শয়তানকে সাধারণত অশুভ সত্তা ধরা হলেও কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন। যারা শয়তানের উপাসক তারা তাকে উপাসনা করে। আস্তিক্যবাদী শয়তানবাদ-এ শয়তানকে পূজনীয় সত্তা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। নাস্তিক্যবাদী শয়তানবাদ-এ শয়তানকে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মৌলিক গুণাবলির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। চলতি ব্যবহারে এছাড়াও শয়তান বলা হয় তাদের যারা জঘন্য গুণাবলীর অধিকারী।
ধর্মে সম্পাদনা
ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মে "'শয়তান"' কে যথাক্রমে "দুষ্ট জ্বীন" ও "দুষ্ট আত্মা" বলা হয়েছে। মানুষ খারাপ কাজ শয়তানের ধোকায় করে বলে এ ধর্মগুলোতে বলা হয়। বাইবেল ও কোরআনে অনেক জায়গায় শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। মানুষ যে কোন খারাপ প্রবৃত্তির ব্যাপারে শয়তানকে দোষি সাব্যাস্ত করে থাকে। পবিত্র কোরআন এ উল্লেখ করা হয়েছে যে যখন আল্লাহ আদম কে সৃষ্টি করলেন এবং তিনি সকল ফেরেশতাদের বললেন তোমরা আদমকে সিজদাহ কর তখন সকল ফেরেশতা সিজদাহ করলো অথচ ইবলিশ ( শয়তান) সিজদা করল না। ফলে সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো এবং তাকে আল্লাহ অভিশপ্ত করলেন। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে শয়তানকে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআন এ শয়তান সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ইসলামের দ্বিতীয় ধর্মশাস্ত্র অর্থাৎ হাদিস এও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শয়তানের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
সাধারণ ব্যবহার সম্পাদনা
মানুষ গালি হিসেবেও শয়তান শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। কেউ কোন খারাপ কাজ করলে সাধারণত তাকে শয়তান বলে গালি দেওয়া হয়।
আরও দেখুন সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "শয়তান", অথবা "যে ভাগ করে" Encyclopædia Britannica Online.
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- ক্যাথলিক বিশ্বকোষ
- শয়তানের শিশু
- শয়তান - Unjustly Maligned
- “আল-কোরআন” জহুরুল হকের বাংলা অনুবাদ