লৌহ যুগ

প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ

লৌহ যুগ হলো মানব সভ্যতার প্রাকইতিহাসপ্রায়-ইতিহাসের তিনটি যুগের চূড়ান্ত যুগ। এর আগের যুগ হলো প্রস্তর যুগ (পুরা প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ, নব্যপ্রস্তরযুগ, তাম্র যুগ) এবং ব্রোঞ্জ যুগ। ধারণাটি মূলত ইউরোপ এবং প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলেও এটি প্রাচীন বিশ্বের অন্যান্য অংশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

লৌহ যুগ
ব্রোঞ্জ যুগ

Bronze Age collapse

Ancient Near East (1300-600 BC)

Aegean, Anatolia, Assyria, Caucasus, Egypt, Levant, Persia

India (1200-200 BC)

Painted Grey Ware
Northern Black Polished Ware
Mauryan period

Europe (1000 BC-400 AD)

Novocherkassk
Hallstatt C
Villanovan culture
British Iron Age
Greece, Rome, Celts
Scandinavia

China (600-200 BC)

Warring States Period

Japan (500 BC-300 AD)

Yayoi period

Korea (400-60 BC)

Nigeria (400 BC-200 AD)

Axial Age
Classical Antiquity
Zhou Dynasty
Vedic period
alphabetic writing, metallurgy

Historiography
Greek, Roman, Chinese, Islamic

লৌহ যুগের সময়কাল বিবেচনাধীন অঞ্চলের উপর নির্ভর করে। এই সময়কাল প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়ম দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগের যে সময়কালে কোন এলাকার ধাতব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি মূলত লোহা দ্বারা তৈরি হত সেই সময়কালকে প্রত্নতত্ববিদ্যায় লৌহযুগ বলা হয়।[১] লোহার ব্যবহার শুরুর সাথে সাথে মানবসমাজে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যার মধ্যে কৃষিব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শিল্পকলা অন্যতম। প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে খ্রিষ্টপূর্ব ১২ শতকে ব্রোঞ্জ যুগের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রূপান্তর ঘটেছিল। এই প্রযুক্তি শীঘ্রই সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা অঞ্চলে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মধ্য এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য ইউরোপে এর বিস্তার কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিল এবং উত্তর ইউরোপে এটি প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ শতকের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছেছে।

ইতিহাস লিখনধারা আবিষ্কৃত হওয়ার মাধ্যমে লৌহ যুগের সমাপ্তি হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডে লৌহ যুগের স্পষ্ট সমাপ্তি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের জন্য ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আচেমেনিড সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকে ঐতিহ্যগতভাবে এখনও লৌহ যুগের সমাপ্তি ধরে নেওয়া হয়। এর পরবর্তী তারিখগুলি হিরোডোটাসের রেকর্ডের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক হিসাবে বিবেচিত হয়। যদিও এর অনেক আগের (ব্রোঞ্জ যুগের) যথেষ্ট লিখিত রেকর্ড পরবর্তীতে পাওয়া গিয়েছে। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর রোমান বিজয়গুলি লৌহ যুগের সমাপ্তির চিহ্ন হিসাবে কাজ করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জার্মানিক লৌহ যুগের সমাপ্তি নেওয়া হয় ৮০০ খ্রিস্টাব্দে ভাইকিং যুগের শুরুর সময়কে।

ভারতীয় উপমহাদেশে লৌহ যুগের সূচনা করা হয় লোহার কাজ করা ধূসর মাটির পাত্র সংস্কৃতি দিয়ে। সাম্প্রতিক অনুমান থেকে জানা যায় যে এটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে অশোকের রাজত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রত্নতত্ত্বে "লৌহ যুগ" শব্দটির ব্যবহার পশ্চিম ইউরেশিয়ার তুলনায় সাম্প্রতিক এবং কম ব্যবহৃত। চীনে লৌহকর্মের আগে লিখিত ইতিহাস শুরু হয়েছিল, তাই লৌহ যুগ তেমন ব্যবহৃত হয় না। সহিল (সুদান অঞ্চল) এবং সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা ত্রি-যুগ ব্যবস্থার বাইরে, সেখানে কোন ব্রোঞ্জ যুগ নেই, তবে "লৌহ যুগ" শব্দটি কখনও কখনও লোহার কাজের অনুশীলনকারী প্রাথমিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন নাইজেরিয়ার নক সংস্কৃতি

ধারণার ইতিহাস সম্পাদনা

ইউরোপের প্রত্নতত্ত্বের জন্য ১৯শতকের প্রথমার্ধে এই তিন-যুগের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল এবং ১৯ শতকের পরে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের প্রত্নতত্ত্বে প্রসারিত হয়েছিল। যুগের নামগুলো হেসিয়ডের লেখা পৌরাণিক "এইজেস অব ম্যান" থেকে গৃহীত। ক্রিশ্চিয়ান জার্গেনসেন থমসেন ১৮৩০ এর দশকে প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ হিসাবে এটি প্রথম স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জন্য চালু করেছিলেন। ১৮৬০-এর দশকে এটি সাধারণভাবে "মানবজাতির প্রাচীনতম ইতিহাস" এর একটি দরকারী বিভাগ হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং অ্যাসিরিওলজিতে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছিল।[২] প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের প্রত্নতত্ত্বে এখন-প্রচলিত সময়কালের বিকাশ ১৯২০ থেকে ১৯৩০ এর দশকে বিকশিত হয়েছিল।[৩] লৌহ যুগের প্রযুক্তি লৌহঘটিত ধাতুবিদ্যা (লোহার কাজ) দ্বারা সরঞ্জাম এবং অস্ত্র উত্পাদন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, বিশেষ করে কার্বন ইস্পাত থেকে।

 
ডান কারলোয়ে ব্রচ, স্কটল্যান্ড
 
A replica Iron Age thatched roof, Butser Ancient Farm, Hampshire, England

লৌহ যুগের ভারত সম্পাদনা

মৌর্য সাম্রাজ্যনন্দ সাম্রাজ্যমগধ সাম্রাজ্যমহাজনপদ

ভারতের ধাতুবিদ্যার ইতিহাস খ্রী:পূ: ২য় সহস্রাব্দে আরম্ভ হয়। বর্তমান উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত মলহার, দাদুপুর, রাজা নালা কা টিলা ও লাহোরাদেওয়া ইত্যাদি পুরাতাত্ত্বিক স্থানে খ্রী:পূ: ১৮০০-১২০০ অব্দে লোহা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।[৪] হায়দরাবাদের পুরাতাত্ত্বিক খননস্থলে লৌহ যুগের এক সমাধিস্থল পাওয়া গেছে।[৫] খ্রীষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের আরম্ভে ভারতে লোহার বহুল বিকাশ হয়েছিল। পূর্ব ভারতে খ্রীষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দেরর একটা লৌহকর্ম কেন্দ্র পাওয়া গেছে।[৬] দক্ষিণ ভারতে খ্রী:পূ: ১২শ-র থেকে ১১শ সহস্রাব্দের ভিতর লোহার আবির্ভাব ঘটে।[৬] ভারতীয় উপনিষদসমূহে ধাতুবিদ্যার উল্লেখ আছে।[৭] মৌর্য যুগে ধাতুবিদ্যা প্রসারলাভ করে।[৮] খ্রী:পূ: ৩০০-র থেকে খ্রীষ্টিয় ২০০ সালের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে উন্নতমানের তীখা উৎপাদন করা হয়।[৯]

ব্রোঞ্জ যুগে লোহার ব্যবহার সম্পাদনা

ব্রোঞ্জ হতে লোহায় রুপান্তর সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Milisauskas, Sarunas (ed), European Prehistory: A Survey, 2002, Springer, আইএসবিএন ০৩০৬৪৬৭৯৩৩, 9780306467936, google books
  2. (Karl von Rotteck, Karl Theodor Welcker, Das Staats-Lexikon (1864), p. 774
  3. Oriental Institute Communications, Issues 13–19, Oriental Institute of the University of Chicago, 1922, p. 55.
  4. The origins of Iron Working in India: New evidence from the Central Ganga plain and the Eastern Vindhyas by Rakesh Tewari (Director, U.P. State Archaeological Department)
  5. "News By Industry"The Times Of India। ২০০৮-০৯-১০। ২০০৯-০১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২২ 
  6. Early Antiquity By I. M. Drakonoff. Published 1991. University of Chicago Press. ISBN 0-226-14465-8. pg 372
  7. Upanisads By Patrick Olivelle. Published 1998. Oxford University Press. ISBN 0-19-283576-9. pg xxix
  8. The New Cambridge History of India By J. F. Richards, Gordon Johnson, Christopher Alan Bayly. Published 2005. Cambridge University Press. ISBN 0-521-36424-8. pg 64
  9. Juleff, G. (1996), "An ancient wind powered iron smelting technology in Sri Lanka", Nature, 379 (3): 60–63.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা