লাওস–মিয়ানমার সীমান্ত

লাওস ও মিয়ানমার সীমান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস এবং মায়ানমারের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। এই সীমন্তের দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার (১৪৮ মাইল)। সীমান্তটি মেকং নদীর গতিপথ বরারর উত্তরে চীনের সাথে মিয়ানমার ও লাউসের ত্রিবিন্দু (ত্রিদেশীয় সীমানার সংযোগবিন্দু) থেকে দক্ষিণে থাইল্যান্ডের সাথে দুইদেশের ত্রিবিন্দু পর্যন্ত নির্ধারিত।[১] এটি একটি ঔপনিবেশিক সীমান্ত ছিল। ১৮৯৬ সালে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একটি চুক্তির মাধ্যমে মেকং নদী বরাবর সীমানাটি প্রথম নির্ধারিত হয়। বৃটিশ ও ফরাসি সম্রাজ্য হতে মিয়ানমার ও লাওস স্বাধীনতা অর্জনের পর এটি দুটি স্বাধীন দেশের সীমানায় পরিণত হয়।

লাওস-মিয়ানমার সীমান্তের মানচিত্র

বর্ণনা সম্পাদনা

সীমানাটি উত্তরে মেকং নদীর সাথে নানলা নদীর মিলনস্থলে চীনের সাথে মিয়ানমার ও লাওসের ত্রিদেশীয় সীমান্তের সংযোগবিন্দুতে শুরু হয় এবং তারপর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে কক নদীর সংগমস্থলে থাইল্যান্ডের সাথে দেশ দুটির ত্রিবিন্দুতে এসে মিলিত হয়। সম্পূর্ণ সীমান্তটি মূলত মেকং দক্ষিণ্মুখী গতিপথ যা দেশদুটিকে আলাদা করেছে। সীমান্তে নদীর পশ্চিম পাড়ে মিয়ানমার এবং পূর্ব পাড়ে লাওস অবস্থিত।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

ঐতিহাসিকভাবে মেকং নদী এই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সীমান্ত হিসেবে কাজ করেছে।[২] লাওস এবং মায়ানমারের মধ্যে আধুনিক সীমানা হিসাবে এর ব্যবহার ১৯ শতকের ঔপনিবেশিক সময় থেকে শুরু হয়েছে। ১৮৬০-এর দশক হতে এই অঞ্চলে ফ্রান্স উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে, প্রাথমিকভাবে আধুনিক কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে এবং ১৮৮৭ সালে ফরাসি ইন্দোচীনের উপনিবেশ তৈরি করে।[২] ফ্রাঙ্কো-সিয়ামিজ যুদ্ধের পর ১৮৯৩ সালে লাওসকে ফরাসি উপনিবেশে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে ব্রিটেন মিয়ানমার (তখন বার্মা নামে পরিচিত) দখল করতে শুরু করে, ধীরে ধীরে এটিকে ব্রিটিশ ভারতে অন্তর্ভুক্ত করে।[২] ১৮৯৬ সালের ১৫ জানুয়ারী ব্রিটেন এবং ফ্রান্স সম্মত হয় যে, মেকং নদী বরাবর তাদের দুটি উপনিবেশের মধ্যে সীমানা হবে।[২]

১৯৪১ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বার্মা বিজয়ের পর, বার্মার কিছু অংশ সাহারাত থাই ডোয়েম অঞ্চল হিসাবে শ্যামদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, যার ফলে লাওস-মায়ানমার ঔপনিবেশিক সীমানার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়, তবে জাপানের পরাজয়ের পরে এই অঞ্চলগুলি ১৯৪৬ সালে বার্মাকে ফিরিয়ে দেওয়ায় সীমানা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে।[৩] ১৯৩৭ সালে বার্মা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি পৃথক উপনিবেশে পরিণত হয়, ১৯৪৮ সালে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। লাওস ১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে আংশিক স্বাধীনতা লাভ করে, ১৯৫৩ সালে সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়ে যায়, সীমানাটি তখন দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানা হয়ে যায়। সীমান্ত অঞ্চলটি পরবর্তী দশকে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, এখানে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী কাজ করে, যেমন চীনা কুওমিনতাং, পাথেত লাও এবং বিভিন্ন শান মিলিশিয়া।[২] ১৯৯৩ সালের জুন মাসে সীমান্তের একটি যৌথ সীমানা জরিপ করা হয়েছিল এবং ২০১৫ সালে এটির উপর একটি মৈত্রী সেতু নির্মিত হয়েছিল।[৪]

সীমান্ত পারাপার সম্পাদনা

ওয়ান পং-ক্যাইংলাপ মৈত্রী সেতু এই সীমান্ত পাড়াপাড়ের প্রধান পথ যা লাওসের জিয়েং কক শহরকে মিয়ানমারের কিয়াইংলাপের সাথে সংযুক্ত করেছে। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর আন্তঃসীমান্ত সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।[৫][৬]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Burma"। CIA World Factbook। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "International Boundary Study No. 33 – Burma – Laos Boundary" (পিডিএফ)। US Department of State। ১৮ জুন ১৯৬৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. Donald M. Seekins, Historical Dictionary of Burma (Myanmar), p. 251
  4. "The Friendship Bridge between Laos and Myanmar is officially opened"Investlaos.gov.la। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  5. Thu, Ei Ei (৮ নভেম্বর ২০১৮)। "Myanmar-Laos border gate receives international status"। Myanmar Times। ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. "Laos - Myanmar Border Status"Asian Tour। ১৪ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০