রুদ্র মহালয়া মন্দির

ভারতের একটি হিন্দু মন্দির

রুদ্র মহালয়া মন্দির হলো ভারতের গুজরাটের পাটান জেলার সিদ্ধপুরে অবস্থিত একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দির চত্বর। এটি একাদশ রুদ্রদের জন্য নিবেদিত ১১টি সহায়ক মন্দির সহ একটি বহুতল শিব মন্দির ছিল এবং রুদ্রমাল নামেও পরিচিত।[১] ৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মুলরাজা রুদ্র মহালয়া মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১১৪০ খ্রিস্টাব্দে চৌলুক্য রাজবংশের শাসক জয়সিংহ সিদ্ধরাজা মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। পরবর্তীকালে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি এবং গুজরাটের সুলতান আহমেদ শাহ প্রথম (১৪১০-১৪৪৪) মন্দিরটি ধ্বংস করেন। ব্যাপকভাবে ধ্বংস করার পর মন্দিরের কিছু অংশকে জামে মসজিদ রূপান্তরিত করা হয়। আদি মন্দিরের কেন্দ্রীয় কাঠামোর দুটি তোরণ (প্রবেশদ্বার) এবং চারটি স্তম্ভ এখনও জামে মসজিদে ব্যবহৃত চত্বরের পশ্চিম অংশে স্থাপত্যের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।

রুদ্র মহালয়া মন্দির
১৮৭৪ সালে তোলা রুদ্র মহালয়া মন্দিরের প্রধান তোরণের ধ্বংসাবশেষের ছবি
রুদ্র মহালয়া মন্দির গুজরাট-এ অবস্থিত
রুদ্র মহালয়া মন্দির
রুদ্র মহালয়া মন্দির
গুজরাটে অবস্থান
বিকল্প নামরুদ্র মালা
সাধারণ তথ্য
অবস্থাধ্বংসপ্রাপ্ত
স্থাপত্য রীতিমারু-গুর্জারা স্থাপত্য বা সোলাঙ্কি শৈলী
অবস্থানসিদ্ধপুর, পাটন জেলা, গুজরাট
দেশভারত
স্থানাঙ্ক২৩°৫৫′০৯″ উত্তর ৭২°২২′৪৫″ পূর্ব / ২৩.৯১৯১৭° উত্তর ৭২.৩৭৯১৭° পূর্ব / 23.91917; 72.37917
নির্মাণকাজের আরম্ভ৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ
খোলা হয়েছে১১৪০ খ্রিস্টাব্দ
ধ্বংসপ্রাপ্ত১২৯৬ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দ
কারিগরী বিবরণ
তলার সংখ্যা
উপাধিজাতীয় গুরুত্বের এএসআই স্মৃতিস্তম্ভ (মন্দিরের জন্য এন-জিজে-১৬৪/মসজিদের জন্য ১৬৩)
রুদ্র মহালয়া মন্দির
রুদ্র মহালয়া মন্দিরের চার ভাগের এক ভাগ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা। বেঁচে থাকা কাঠামোগুলি লাল দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
ঈশ্বররুদ্র (শিব)
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীমূলরাজা, জয়সিংহ সিদ্ধরাজা এবং অন্যান্য চৌলুক্য রাজা

ইতিহাস সম্পাদনা

 
ধ্বংসপ্রাপ্ত রুদ্র মহালয়া মন্দিরের চারটি স্তম্ভ ও স্থাপত্য

দশম শতাব্দীতে চৌলুক্য রাজবংশের শাসকদের অধীনে সিদ্ধপুর একটি বিশিষ্ট শহর ছিল। ৯৮৬-৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের একটি শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে যে, গুজরাটের চৌলুক্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মুলরাজা রুদ্র মহালয়ের কাছে প্রার্থনা করতেন। ঔপনিবেশিক তথ্য মতে, মুলদেব তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য সেখানে একটি মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন।[২] তবে তার রাজত্বের আগেও এই স্থানে একটি মন্দির বিদ্যমান ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, একটি আদি কাঠামো অপসারণ করার পর দ্বাদশ শতাব্দীতে বিদ্যমান ভিতের উপরে একটি নতুন কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছিল।[৩]

পবিত্রতা সম্পাদনা

১২শ শতকের ১১৪০ খ্রিস্টাব্দে সময়ে জয়সিংহ সিদ্ধরাজ (১০৯৪-১১৪৪) শিবের উপাসনার জন্য এই মন্দির চত্বরটিকে একটি পবিত্রস্থানের মর্যাদা দেন।[২] এই নিয়ম চালুক্যদের দ্বারা দীর্ঘকাল ধরে নগরের পৃষ্ঠপোষকতা ধারায় অব্যাহত রাখা হয়।[৩]

মন্দির ভেঙে ফেলা সম্পাদনা

মুজাফফরিদ রাজবংশের আহমাদ শাহ প্রথম (১৪১০-৪৪) শহর অবরোধের সময় মন্দিরটিকে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এর কিছু অংশ নতুন জামাতের মসজিদ স্থাপনে পুনরায় ব্যবহার করা হয়।[৩] শাহের প্রচারাভিযানের নথিভুক্ত পারস্যের প্রাচীনতম বর্তমান ইতিহাস মিরত-ই-সিকান্দিরি-তে ধ্বংসের জন্য ধর্মীয় উগ্রতাকে দায়ী করে। তবে, অলকা প্যাটেল মন্তব্য করেন যে এই পাঠ্যগুলি প্রায়শই প্রশংসামূলক কারণে পক্ষপাতগ্রস্ত ছিল এবং যা প্রায়শই অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা বিরোধিতা করা হয়।[৩]

স্থাপত্য সম্পাদনা

মন্দিরটি মারু-গুর্জারা স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল।

গ্যালারি সম্পাদনা

কিংবদন্তি সম্পাদনা

  • একটি কিংবদন্তি অনুসারে, গোবিন্দদাস এবং মাধবদাস নামে মালওয়া থেকে দুজন পারমার রুদ্র মহালয়ার আশেপাশের ঘাসের উপর তাদের আবাসস্থল গড়ে তোলেন। তারা সম্পত্তি লুণ্ঠনের মাধ্যমে জীবনযাপন করতেন। সেখানে তারা একটি মন্দির এবং শিব লিঙ্গের ভিত খুঁজে পান। তারা দাবি করেন যে রাতে তারা সেখানে স্বর্গীয় প্রাণীদের দেখতে পান। এই ঘটনা সিদ্ধরাজকে মন্দিরের নির্মাণ বা সমাপ্তির কাজ করতে পরিচালিত করে।[২]
  • মিরাত-ই-আহমাদীতে, আলী মুহাম্মদ খান লিখেছেন, "মন্দির নির্মাণের জন্য রাজা একটি ভালো সময় নির্ধারণ করার জন্য জ্যোতিষীদের অনুরোধ করেছিলেন। বলা হয়, তারা সেই সময় ভবনটির ধ্বংসেরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এরপর সিদ্ধ রাজা মন্দিরে "ঘোড়া প্রভু" এবং অন্যান্য মহান রাজাদের মূর্তি স্থাপন করেন। তারা একটি শিলালিপি লিখে প্রার্থনা করেছিলেন যে, যদি জমিটি পরিতক্তও হয়ে যায় তবুও এই মন্দিরটিকে ধ্বংস করা যাবে না।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Rudra Mahalay | Patan, Gujarat, India | India" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০৯ 
  2. Burgess; Murray (১৮৭৪)। "The Rudra Mala at Siddhpur"Photographs of Architecture and Scenery in Gujarat and Rajputana। Bourne and Shepherd। পৃষ্ঠা 19। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৬    এই নিবন্ধ এই উৎস থেকে পাঠ্য অন্তর্ভুক্ত করে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে
  3. Patel, Alka (২০০৪)। "Architectural Histories Entwined: The Rudra-Mahalaya/Congregational Mosque of Siddhpur, Gujarat": 144–163। জেস্টোর 4127950ডিওআই:10.2307/4127950 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা