রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

বাংলাদেশের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বা রহনপুর আহম্মদী বেগম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গোমস্তাপুর উপজেলা[] তথা তৎকালীর নবাবগঞ্জ মহাকুমার একটি প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ।

রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর লোগো
অবস্থান
মানচিত্র
রহনপুর, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

তথ্য
ধরনসরকারি
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৪২
বিদ্যালয় জেলাচাঁপাইনবাবগঞ্জ
ইআইআইএন১২৪৩৫১ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
বিদ্যালয়ের প্রধানমোঃ আব্দুল মতিন
শ্রেণি৬ষ্ঠ থেকে ১০ম
ভর্তি১৯৮৭
শিক্ষায়তন১৩.৮৪ একর
ক্যাম্পাসের ধরনউপজেলা শহরে অবস্থিত
শিক্ষা বোর্ডরাজশাহী
শাখা সংখ্যা
প্রতিষ্ঠাকালীন নামমাইনর ইংলিশ (এম.ই.) স্কুল

ইতিহাস

সম্পাদনা

আনুমানিক ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মালদহ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তৎকালীন বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের আলিনগর গ্রামে মাইনর ইংলিশ স্কুল নামে একটি স্কুল প্রায় ১৫/২০ জন ছাত্র নিয়ে প্রথম পথচলা শুরু করে যা আহম্মদী বেগম তথা এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়ীত্ব পালন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের রাজারামপুর গ্রামের তাহেরউদ্দিন আহমেদ। সেখানে বছর খানেক অবস্থান করার পর একই ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামে মহানন্দা পুনর্ভবা নদীর মোহনায় স্থানান্তর হয়।

মকরমপুর গ্রামে স্কুলটি স্থানান্তরিত হওয়ার পর পূর্বের শিক্ষকদের সাথে আরো কয়েকজন শিক্ষক যোগদান করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম বীরভুমের সৈয়ব চাঁদ পণ্ডিত, শ্রী প্রবীর বাবু, শওকত আলী ও তামিজ উদ্দিন।[]

নামকরণ

সম্পাদনা

অতঃপর এই অঞ্চলের তথা বাঙ্গাবাড়ী বোয়ালিয়া ও রহনপুর ইউনিয়নের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগন বিশেষ করে বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামের গাজিউদ্দিন মহাজন, হাজি নেজামুদ্দিন বিশ্বাস, হযরত উল্লাহ, আবেদ হোসেন মন্ডল হায়দার বক্স বিশ্বাস, আব্দুল হামিদ মন্ডল ও রহনপুর ইউনিয়নের রায়বাহাদুর বিষ্ণুচরন বন্দোপাধ্যয় (রায় সাহেব), হাজি বোগদাদ আলী সহ আরো অনেকে বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়ন এর কথা ভেবে তৎকালীন জমিদার মোসাঃ শওকত আরা কুলসুম বেগম ওরফে কানিজ হোসেন আহম্মদী বেগম কে একটি বিস্তীর্ন ফাঁকা জায়গা স্থায়ীভাবে দান করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন। উক্ত ব্যক্তিগনের অনুরোধ রক্ষার্থে তৎকালীন জমিদার মোসাঃ শওকত আরা কুলসুম বেগম ওরফে কানিজ হোসেন আহম্মদী বেগম পূনর্ভবা নদীর তীরে রহনপুর রেলস্টেশন হতে কয়েক’শ গজ দূরে প্রসাদপুর মৌজায় প্রায় ৫.০০ একর (পনের বিঘা) জমি স্কুল এর নামে দান করেন। অতঃপর মকরমপুরের মাইনর ইংলিশ (এম.ই.) স্কুল আবার স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে রহনপুরে।[]

 
রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান প্রবেশপথ

জমিদার মোসাঃ শওকত আরা কুলসুম বেগম ওরফে কানিজ হোসেন আহম্মদী বেগম এর দানকৃত জমির উপরেই ১৯৪২ সালে তার নামানুসারেই আহম্মদী বেগম বা সংক্ষেপে এ. বি. নামে বিদ্যালয়টি নামকরণ হয়ে অদ্যাবধি সেখানে সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।

আন্দোলন ও সংগ্রাম

সম্পাদনা

দেশের ক্রান্তি লগ্নে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত উজ্জল। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির দিনগুলোতে ঢাকার রাজপথ যখন ভাষার দাবীতে উত্তাল ঠিক তখনই রহনপুরের এ. বি. উচ্চ বিদ্যালয় এর কিছু দুরন্ত ছেলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিলো রহনপুরের মেঠোপথ। রহনপুরের এ. বি. উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র হাফিজুর রহমান হাসনু এর নেতৃত্বে এই বিদ্যালয় এর তৎকালীন ছাত্র আফতাব উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম সহ আরো অনেকে রহনপুরের ভাষা আন্দোলনের গতিতে দূর্বার করেছিলেন।[]

এরপর ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান৭১ এর মুক্তি সংগ্রামেও বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশেষ ভুমিকা রাখেন। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমান হাসনু আখতার হোসেন কচি খাঁন, আলতাফ হোসেন, আব্দুস সাত্তার, মাহাতাবুল আলম নূরি সহ আরো নাম না জানা ছাত্ররা মুক্তি সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন।

পরিচালনা

সম্পাদনা

আশে পাশের এলাকার অন্যান্য বিদ্যালয় এর চেয়ে এই বিদ্যালয়টি গুরুত্বের দাবীদার হলেও বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রায় ৭০ দশকের শেষ পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দ ঠিকমত বেতন পেতেন না। হাট, ঘাট, বাগান এর নিলামে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য বৃন্দ ও শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করে যে লভ্যংশের টাকা পেতেন তা দিয়েই বিদ্যালয়টির খরচ সহ বেতন ভাতাদি চালাতেন। এছাড়াও বিদ্যালয় মাঠে মেলা বসিয়ে সার্কাস প্রদর্শন করে শিক্ষকদের বেতন ভাতাদির পরিষোধ করার দৃষ্টান্তও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির। পরবর্তি ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ছাত্র বেতন কিছুটা বাড়িয়ে সংকটময় অবস্থার কিছুটা উত্তরণ ঘটে।[]

বর্তমানে এই বিদ্যালয় এর মোট স্থাবর সম্পত্তি ১৩.৮৪ একর। ভূমিদাতাগনের মধ্যে মোসাঃ শওকত আরা কুলসুম বেগম ওরফে কানিজ হোসেন আহম্মদী বেগম, শ্রী বিষ্ঞুচরন ব্যানার্জী , মুঃ নিজামউদ্দিন বিশ্বাস, মুঃ সুলতান আলীর নাম উল্লেখযোগ্য।

জাতীয়করণ

সম্পাদনা

১৯৮৭ সালে প্রলয়ংকরী বন্যায় বিদ্যালয় ভবনটি শরণার্থী শিবিরে পরিনত হয়। আশে পাশের লোকজন প্রাণ রক্ষার্থে এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আশ্রয় নেয়। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরন এর জন্য হেলিকপ্টার নিয়ে এই বিদ্যালয় পাঙ্গনে অবতরন করেন। এই সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাঃ আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস তার সহকারী শিক্ষকবৃন্দসহ বয়স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট ও সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। এরপর বিদ্যালয় সংলগ্ন সি. এন্ড বি. ডাকবাংলোতে রাষ্ট্রপতির অবস্থানকালে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ৫,০০০ টাকার একটি চেক রাষ্ট্রপতির হাতে হস্তান্তর করেন। এরপর জনগনের উদ্দেশ্যে ভাষন দান কালে মঞ্চে উপস্থিত তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বিশ্বাস কে তিনি বিদ্যালয়টির নাম জিজ্ঞেস করেন এবং তাৎক্ষনিক জাতীয়করণ এর ঘোষণা দেন।[]

অদ্যবধী এই বিদ্যালয় এর ২ জন ছাত্র জাতীয় মেধাতালিকায় স্থান দখল করেন।[] এর মধ্যে একজন ৮ম এবং অন্যজন ১৬তম। এছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষায় এ বিদ্যালয়টি ভালো ফলাফলসহ সুনাম বয়ে নিয়ে আসে।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "গোমস্তাপুর উপজেলা"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৯ 
  2. ৬৮ বছর পূর্তি স্মরণিকা, রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর ৬৮ বছর পূর্তি উৎসব এ প্রকাশিত। ৬৮ বছর পূর্তি উৎসব। রহনপুর: রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। মার্চ ২০১১। 
  3. "জেলায় শীর্ষে যে সব স্কুল"দৈনিক ইত্তেফাক। ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স লিঃ। ২ জুন ২০১৫। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৯ 
  4. "জেলার সেরা দশ"দৈনিক গৌড় বাংলা। মে ৩১, ২০১৫। ১৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  5. "গোমস্তাপুরে রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৬৭জন জিপিএ-৫ পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শীষে"এশিয়া বার্তা ২৪ ডট কম। এশিয়া বার্তা ২৪ ডট কম লিমিটেড। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫