ম্যাথু নিকোলসন

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

ম্যাথু জেমস নিকোলসন (ইংরেজি: Matthew Nicholson; জন্ম: ২ অক্টোবর, ১৯৭৪) নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ম্যাথু নিকোলসন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামম্যাথু জেমস নিকোলসন
জন্ম (1974-10-02) ২ অক্টোবর ১৯৭৪ (বয়স ৪৯)
সেন্ট লিওনার্ডস, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামনিকো
উচ্চতা১.৯৭ মিটার (৬ ফুট ৬ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ৩৮০)
২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১০৭
রানের সংখ্যা ১৪ ২৫০৪
ব্যাটিং গড় ৭.০০ ২০.৬৯
১০০/৫০ -/- ২/৪
সর্বোচ্চ রান ১০৬*
বল করেছে ১৫০ ২১১০২
উইকেট ৩৭৭
বোলিং গড় ২৮.৭৫ ২৯.১৫
ইনিংসে ৫ উইকেট - ১১
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ৩/৫৬ ৭/৬২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ৫৯/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১ আগস্ট ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ার ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘নিকো’ ডাকনামে পরিচিত ম্যাথু নিকোলসন

শৈশবকাল সম্পাদনা

সিডনির শহরতলী সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ম্যাথু নিকোলসন নক্স গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেন।ডানহাতি ফাস্ট বোলার ও নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটসম্যান ম্যাথু নিকোলসন নিউ সাউথ ওয়েলসে ক্রিকেট খেলা শিখেন। সেখানে তিনি বিদ্যালয় দলের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেন।

সিডনি প্রতিযোগিতায় গর্ডন ক্লাবের পক্ষে খেলতে শুরু করেন তিনি। পরবর্তীকালে ঐ ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। আঘাতের পাশাপাশি গ্রন্থিজ্বরে ঔষধ সেবনে দীর্ঘস্থায়ী অবসাদজনিত রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু, পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে এ সমস্যা দূরীকরণে সমর্থ হন ও পরবর্তীতে ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্স ও নিউ সাউথ ওয়েলসের বোলিং আক্রমণে দলের অন্যতম সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ঐ বছরগুলো রান-আপ, বুক ফুলিয়ে দীর্ঘ ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে বাউন্স করতে থাকেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ম্যাথু নিকোলসনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। নিউ সাউথ ওয়েলস, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, নর্দাম্পটনশায়ার ও সারে দলের পক্ষে শতাধিক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

শুরুরদিকের সফলতা নিয়ে শক্তিধর নিউ সাউথ ওয়েলসের অন্তর্ভূক্তিতে বেশ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। ফলশ্রুতিতে, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার দিকে ধাবিত হন। শুরুতে তার ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা না দিলেও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সুযোগ এনে দেয়। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে পার্থে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ম্যাথু নিকোলসনের।

এরপরই তার প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর শুরু হয়। কেবলমাত্র গ্রন্থিজ্বরে আক্রান্ত হবার ফলে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমের পুরোটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় গ্রহণ, দুগ্ধজাত ও মাংসজাত খাদ্য বর্জন করার ফলে রোগ মুক্ত হন। দীর্ঘ ১৮ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে দারুণ খেলা উপহার দেন। প্রথম ইনিংসে ৭/৭৭ লাভসহ প্রথমবারের মতো অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে পার্থে সফররত শ্রীলঙ্কা একাদশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কমনওয়েলথ ব্যাংক ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসে ফিরে আসেন। পুরা কাপে ৩৯ উইকেট পান ও অস্ট্রেলিয়া এ দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। পরের মৌসুমে নাথান ব্র্যাকেনস্টুয়ার্ট ক্লার্কের সাথে সমন্বয় ঘটান। ৪৭টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভ করেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমের পুরা কাপে ৪৭ উইকেট দখল করেন তিনি। তন্মধ্যে, চূড়ান্ত খেলায় কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলসের শিরোপা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

২০০৫-০৬ মৌসুমে কিছুটা দূর্বল খেলা উপহার দেন ও আইএনজি কাপের চূড়ান্ত খেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। তাসত্ত্বেও, ৩১.৯৭ গড়ে ৪৬ উইকেট নিয়ে ঐ মৌসুমে নর্দাম্পটনশায়ারের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হয়েছিলেন। ঐ মৌসুমে ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকালে অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনে সচেষ্ট হন। ৪৫৪ রান সংগ্রহ করেন তিনি। তন্মধ্যে, ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৯৩ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন।

ব্লুজ দলের মূল্যবান খেলোয়াড় হিসেবে রয়ে যান তিনি। এ পর্যায়ে দলের অধিনায়কের মর্যাদার অধিকারী হন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে অবসর গ্রহণকালীনও এ দায়িত্বে ছিলেন। তবে, জাতীয় দলের বোলারদের প্রত্যাবর্তনে পুরা কাপের চূড়ান্ত খেলায় বিজয়ের পরও তার বিদায়বরণ হয়নি।

২০০৭ সালে সারে দলের পক্ষে খেলেন। এরপূর্বে ২০০৬ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে খেলেছিলেন তিনি। তবে, ২০০৮ সালে সারে দল থেকে তাকে অবমুক্ত করা হয় ও শোয়েব আখতারকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। সারেতে নিজস্ব দ্বিতীয় মৌসুমে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। তবে, তিনি দ্রুত কাউন্টি ত্যাগ করেন ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ম্যাথু নিকোলসন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে মেলবোর্নে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

১৯৯৮ সালে বিস্ময়করভাবে জাতীয় দলের পক্ষে খেলার জন্যে আমন্ত্রিত হন। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম ও একমাত্র টেস্টে খেলায় অংশ নেন।[১] ঐ খেলায় তিনি চার উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৫৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

তাসত্ত্বেও পরের টেস্টে তাকে আর রাখা হয়নি। আরও আঘাতপ্রাপ্তি ও বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ১৯৯৯ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে তাকে রাখা হয়নি।

অবসর সম্পাদনা

মার্চ, ২০০৮ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউ সাউথ ওয়েলসের সদস্যরূপে থাকাকালীন নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।[২] ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর নিউ সাউথ ওয়েলসের দল নির্বাচক হিসেবে মনোনীত হন।[৩]

বর্তমানে তিনি নিউইংটন কলেজের ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Coverdale, Brydon (৮ জুলাই ২০১৭)। "Matthew Nicholson's Christmas miracle"The Cricket Monthly। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৮ 
  2. Nicholson retires from New South Wales
  3. Cricinfo Staff "Nicholson named New South Wales Selector", Cricinfo http://content-www.cricinfo.com/ci/content/story/364970.html Accessed 15 August 2008
  4. The cricket curse facing private schoolboys

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা