মোনাজাতউদ্দিন

বাংলাদেশী সাংবাদিক ও লেখক
(মোনাজাত উদ্দিন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মোনাজাতউদ্দিন (১৮ জানুয়ারি ১৯৪৫ – ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক। আশির দশকে বাংলাদেশে তিনি মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ চারণ সাংবাদিক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দৈনিক সংবাদে পথ থেকে পথে শীর্ষক ধারাবাহিক রিপোর্টের জন্য তিনি খ্যাতি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৯৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।[১]

মোনাজাতউদ্দিন
জন্ম(১৯৪৫-০১-১৮)১৮ জানুয়ারি ১৯৪৫
রংপুর
মৃত্যু২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫(1995-12-29) (বয়স ৫০)
ঢাকা
পেশাসাংবাদিক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারফিলিপস, একুশে পদক ও অন্যান্য

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

মোনাজাত ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারী রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আলীম উদ্দীন, মায়ের নাম মতিজান নেছা।[১]

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

রংপুরের কৈলাশরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর কারমাইকেল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগী হন। ছড়া-কবিতা-গল্প রচনা এবং সাময়িক পত্রিকার প্রচ্ছদ অঙ্কনে সুনাম অর্জন করেন। বি.এ. ক্লাসে পড়ার সময় পিতার মুত্যুতে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে এবং তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে তার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে এবং পরে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বি.এ. পাশ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর নিজের প্রকাশনায় "দৈনিক রংপুর" প্রকাশিত হয়। তিনি রংপুর কেরানিপাড়ার বাসা থেকে নানা অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও সাংবাদিকতা চালিয়ে যান। এছাড়া পূর্বদেশ, সংবাদ (১৯৭৬) ২০ বছর কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সংবাদ ছেড়ে জনকন্ঠ পত্রিকায় যোগদান করেন।[২]

গ্রন্থতালিকা সম্পাদনা

তার উল্লেখযোগ্য লেখাগুলো হলো:

  • সংবাদের নেপথ্য
  • পথ থেকে পথে
  • কানসোনার মুখ
  • নিজস্ব রিপোর্ট
  • অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
  • কাগজে মানুষেরা
  • নরনারী
  • শাহ আলম ও মজিবের কাহিনী
  • কানসোনার মুখ
  • পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ
  • ছোট ছোট গল্প
  • মোনাজাতের শেষ লেখা ও শেষ দেখা
  • লক্ষ্মীটারী
  • চিলমারীর এক যুগ

তার রচিত একমাত্র নাটক “রাজা কাহিনী”।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন নাসিমা আক্তার ইতির সঙ্গে ১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় কণ্যা মাহফুজা মাহমুদ চৈতি ও ফেরদৌস সিঁথি পেশায় চিকিৎসক। তার ছেলে আবু ওবায়েদ জাফর সাদিক সুবর্ণ বুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৯৭ সালে আত্মহত্যা করে।

মৃত্যু সম্পাদনা

মোনাজাত উদ্দীন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে পানিতে পড়ে যান এবং পানিতে ডুবে মারা যান।[২]

পুরস্কার ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

  • দিনাজপুর নাট্যসমিতি কর্তৃক সংবর্ধনা (১৯৭৭)
  • জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতিপদক (১৯৮৪)
  • আলোর সন্ধানে পত্রিকা কর্তৃক সংবর্ধনা (১৯৮৫)
  • ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ বগুড়া কর্তৃক সম্মাননা সনদ প্রদান (১৯৮৬)
  • ফিলিপস পুরস্কার (বাংলা ১৩৯৩ সালে দৈনিক সংবাদ-এ প্রকশিত মানুষ ও সমাজ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য)[৩]
  • ইন্সটিউট অফ ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ পুরস্কার (১৯৮৭)
  • রংপুর পদাতিক নাট্যগোষ্ঠী কর্তৃক গুনীজন সংবর্ধনা (১৯৮৮)
  • বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার (১৯৯০)
  • কারিগর সম্মাননা পদক (১৯৯০)
  • অশোকা ফেলোশিপ (অবৈতনিক) (১৯৯৫)
  • ওয়াশিংটনের পদ্মার ঢেউ বাংলা সম্প্রচার কেন্দ্র সম্মাননা প্রদান
  • রংপুর নাগরিক নাট্যগোষ্ঠী পুরস্কার (১৯৯৬)
  • লালমনিরহাট ফাউন্ডেশন ও উন্নয়ন সমিতি স্বর্ণপদক ১৯৯৬
  • রংপুর জেলা প্রশাসন গুণীজন সম্মননা ১৯৯৭
  • একুশে পদক (১৯৯৭)
  • রুমা স্মৃতি পদক, খুলনা (১৯৯৮)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মুহম্মদ মনিরুজ্জামান। "মোনাজাতউদ্দিন"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৫, ২০১৫ 
  2. আদনান আমিন (ডিসেম্বর ২৬, ২০১৪)। "The Minstrel Journalist"দ্য ডেইলি স্টার 
  3. "শুভ জন্মদিন সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন"www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-৩০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা