মুরলী মনোহর জোশী

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

মুরলী মনোহর জোশী (জন্ম ৫ জানুয়ারী ১৯৩৪) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন সদস্য যেখানে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে সভাপতি ছিলেন। জোশী কানপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ[১] তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি বিজেপির অন্যতম সিনিয়র নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জোশী পরে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট সরকারের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ ও উন্নয়ন মন্ত্রী হন।[২] ২০১৭ সালে ভারত সরকার কর্তৃক জোশীকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ প্রদান করা হয়।[৩] কলেজ জীবন থেকেই জোশী আরএসএস- এর সদস্য।

মুরলী মনোহর জোশী
মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯ মার্চ ১৯৯৮ – ২২ মে ২০০৪
প্রধানমন্ত্রীঅটল বিহারী বাজপেয়ী
পূর্বসূরীএস আর বোমাই
উত্তরসূরীঅর্জুন সিং
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৬ মে ১৯৯৬ – ১ জুন ১৯৯৬
প্রধানমন্ত্রীঅটল বিহারী বাজপেয়ী
পূর্বসূরীশঙ্কররাও চবন
উত্তরসূরীএইচ. ডি. দেবেগৌড়া
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯ মার্চ ১৯৯৮ – ২১ মে ২০০৪
প্রধানমন্ত্রীঅটল বিহারী বাজপেয়ী
উত্তরসূরীকপিল সিব্বল
সংসদ সদস্য, লোকসভা
কাজের মেয়াদ
১৬ মে ২০১৪ – ২৩ মে ২০১৯
পূর্বসূরীশ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল
উত্তরসূরীসত্যদেব পাচৌরি
সংসদীয় এলাকাকানপুর
কাজের মেয়াদ
১৬ মে ২০০৯ – ১৬ মে ২০১৪
পূর্বসূরীরাজেশ কুমার মিশ্র
উত্তরসূরীনরেন্দ্র মোদী
সংসদীয় এলাকাবারাণসী
কাজের মেয়াদ
১৯৯৬-২০০৪
পূর্বসূরীসরোজ দুবে
উত্তরসূরীরেবতী রমন সিং
সংসদীয় এলাকাএলাহাবাদ
কাজের মেয়াদ
১৯৭৭–১৯৮০
পূর্বসূরীনরেন্দ্র সিং বিষ্ট
উত্তরসূরীহরিশ রাওয়াত
সংসদীয় এলাকাআলমোড়া
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা
কাজের মেয়াদ
৫ জুলাই ১৯৯২ – ১১ মে ১৯৯৬
সংসদীয় এলাকাউত্তরপ্রদেশ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1934-01-05) ৫ জানুয়ারি ১৯৩৪ (বয়স ৯০)
দিল্লি, ব্রিটিশ ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় জনতা পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীতরলা জোশী
শিক্ষাবিএসসি, এমএসসি, পিএইচডি
প্রাক্তন শিক্ষার্থীএলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়
পুরস্কারপদ্মবিভূষণ (২০১৭)
স্বাক্ষর

পটভূমি এবং ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৯৩৪ সালের ৫ জানুয়ারি দিল্লিতে জোশীর জন্ম হয়। তার পরিবার কুমায়ুন অঞ্চলের আলমোড়া থেকে এসেছে, যা এখন উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অংশ। তাঁর পিতার নাম ছিল শ্রী মনমোহন জোশী। পরিবারটি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। ১৯৫৬ সালে মুরলী মনোহর জোশী বিয়ে করেছিলেন তরলা জোশীকে। তরলা জোশী তার নিজের সম্প্রদায়ের একজন মহিলা এবং তাঁদের একই পারিবারিক প্রেক্ষাপট ছিল। পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় স্বাভাবিক ভারতীয় পদ্ধতিতে তাঁদের বিয়ে হয়েছিলো। তাঁদের বিবাহ সম্পূর্ণরূপে সমন্বয়পূর্ণ এবং শিষ্টাচার-সম্পন্ন হয়ে আছে। এই দম্পতি নিবেদিতা এবং প্রিয়ম্বদা নামে দুই কন্যার বাবা-মা।

শিক্ষা সম্পাদনা

জোশীর প্রাথমিক শিক্ষা বিজনোর জেলার চাঁদপুরে এবং আলমোড়াতে হয়েছিল, তার পরিবার সেখানেই থাকতো। তিনি মিরাট কলেজ থেকে বিএসসি এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি সম্পন্ন করেন। এলাহাবাদে তাঁর একজন শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক রাজেন্দ্র সিং, যিনি পরে আরএসএস সংঘচালক হন।

জোশী এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট করেন। তার ডক্টরাল থিসিসের বিষয় ছিল বর্ণালীবীক্ষণ। তিনি পদার্থবিদ্যায় একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন হিন্দিতে, যা ছিল একেবারেই প্রথম।[৪] পিএইচডি শেষ করার পরে জোশী এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন।[৫]

রাজনীতি এবং সক্রিয়তা সম্পাদনা

জোশী অল্প বয়সে দিল্লিতে আরএসএস-এর সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৫৩-৫৪ সালে গরু সুরক্ষা আন্দোলন, ১৯৫৫ সালে উত্তরপ্রদেশের কুম্ভ কিষাণ আন্দোলনে অংশ নেন।[৬] কুম্ভ কিষাণ আন্দোলন ছিল জমির রাজস্ব মূল্যায়ন অর্ধেক করার দাবিতে সংগঠিত। ভারতে জরুরী অবস্থার সময়কালে (১৯৭৫-১৯৭৭) জোশী ২৬ জুন ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত জেলে ছিলেন। তিনি আলমোড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জনতা পার্টি (যা তখন তার দলকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল) ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম অ-কংগ্রেসী সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আসে এবং জোশী জনতা সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সরকার পতনের পর তার দল ১৯৮০ সালে জনতা পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি গঠন করে। জোশী প্রথমে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখাশোনা করেন এবং পরে দলের কোষাধ্যক্ষ হন। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সরাসরি বিহার, বাংলা এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন। পরে অটল বিহারী বাজপেয়ীর অধীনে বিজেপি ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করলে জোশী মন্ত্রিসভায় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে জোশী একতা যাত্রা নামে একটি যাত্রা করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি যে জাতীয় ঐক্যকে সমর্থন করে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরোধিতা করে তা সকলের দৃষ্টিগোচর করা। এটি ১১ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে শুরু হয়েছিল এবং ১৪টি রাজ্য পরিদর্শন করেছিল।[৭] এই যাত্রা শেষ হয়েছিল ১৯৯২ সালের ২৬ জানুয়ারী জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে, কিন্তু স্থানীয় অংশগ্রহণ ন্যূনতম থাকার ফলে তা ব্যর্থ বলে বিবেচিত হয়েছিল।[৮]

জোশী বাবাসাহেব আম্বেদকর, মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জীবন ও কর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বলে জানা যায়। ২০০৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আগে জোশী এলাহাবাদ থেকে তিন মেয়াদের সাংসদ ছিলেন। তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসাবে বারাণসী থেকে ১৫ তম লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন।[৯] তিনি ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জোশী ২০০৯ সালে বিজেপির ইশতেহার প্রস্তুতি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন। এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাকে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের "প্রাউড পাস্ট অ্যালামনাই" হিসেবে সম্মানিত করেছে।[১০][১১] তিনি বারাণসীর সাংসদ ছিলেন এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি নরেন্দ্র মোদীর জন্য সেই আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি পরে কানপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ২.২৩ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনী এলাকা থেকে জয়ী হন।[১২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Dr. Murli Manohar Joshi"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। 
  2. Debashish Mukerji (১৫ নভেম্বর ১৯৯৮)। "Our students don know India's problems (Interview with Murli Manohar Joshi)"The Week। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. "List of Padma awardees 2017"The Hindu। ২৫ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২১ 
  4. "Evolution of Dr Joshi - Welcome to Dr. Murli Manohar Joshi"। ২৬ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১১ 
  5. "डॉ मुरली मनोहर जोशी: फिजिक्स के इस प्रोफेसर ने लिखी थी हिंदी में थिसिस, बाद में बने बीजेपी की 'तीसरी धरोहर'"ABP Live (Hindi ভাষায়)। 
  6. Patrick, French; French, Patrick (২৭ জানুয়ারি ২০১১)। India: A Portrait (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books Limited। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 978-0-14-194700-6 
  7. Sharma, Naresh Kumar (২২ জানুয়ারি ২০১১)। "BJP to go ahead with Ekta Yatra in Kashmir"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২২ 
  8. Bamzai, Kaveree (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)। "BJP flag-hoisting ceremony in Srinagar turns out to be a damp squib, militancy gets a boost"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২২ 
  9. Dikshit, Rajeev (১৬ মে ২০০৯)। "Joshi beats Mukhtar with big margin Varanasi News - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২১ 
  10. "Allahbad University Alumni Association : Our Proud Past"archive.is। ১০ নভেম্বর ২০১৮। Archived from the original on ১৫ জানুয়ারি ২০০৮। 
  11. "Our Proud Past"archive.is। ১০ নভেম্বর ২০১৮। Archived from the original on ৭ জুলাই ২০১২। 
  12. "Constituency wise-All Candidates"। Eciresults.nic.in। ১৭ মে ২০১৪। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা