কন্যাকুমারী
কন্যাকুমারী (তামিল: கன்னியாகுமரி, প্রতিবর্ণী. কন়্ন়িয়াকুমরি) বা কুমারিকা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলার অন্তর্গত একটি শহর। এই শহরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম বিন্দুতে অবস্থিত। এটি তিরুবনন্তপুরম থেকে ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) দক্ষিণে এবং কন্যাকুমারী জেলার সদর নগরকোইল থেকে ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
কন্যাকুমারী கன்னியாகுமரி কুমারিকা | |
---|---|
শহর | |
স্থানাঙ্ক: ৮°০৫′১৮″ উত্তর ৭৭°৩২′১৯″ পূর্ব / ৮.০৮৮৩০০° উত্তর ৭৭.৫৩৮৫০০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | তামিলনাড়ু |
জেলা | কন্যাকুমারী জেলা |
নামকরণের কারণ | দেবী কন্যাকুমারী |
সরকার | |
• ধরন | নগর পঞ্চায়েত |
• শাসক | কন্যাকুমারী নগর পঞ্চায়েত |
• জেলাশাসক | পি. এন. শ্রীধর, আইএএস |
আয়তন | |
• মোট | ২৫.৮৯ বর্গকিমি (১০.০০ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৬০ মিটার (২০০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২৯,৭৬১ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | তামিল |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৬২৯ ৭০২ |
টেলিফোন কোড | ৯১-৪৬৫১/৪৬৫২ |
যানবাহন নিবন্ধন | টিএন ৭৪/৭৫ |
ওয়েবসাইট | www |
কন্যাকুমারী একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ও হিন্দু তীর্থস্থান। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনন্য দৃশ্য; উপকূল থেকে দূরবর্তী বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, ১৮৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বামী বিবেকানন্দ এই শিলাখণ্ডের উপর বসে দীর্ঘক্ষণ ধ্যান করেছিলেন; ৪১ মিটার (১৩৩ ফুট) উঁচু তিরুবল্লুবরের মূর্তি; এবং গান্ধীমণ্ডপম্ (ভারত মহাসাগরের জলে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভষ্ম বিসর্জনের আগে এখানে তা রাখা হয়েছিল)।।[১]
কন্যাকুমারী নামটি এসেছে হিন্দু দেবী কন্যাকুমারীর নামানুসারে, যাঁর মন্দির এই শহরে অবস্থিত।[২] প্রাচীনকালেও কন্যাকুমারী ছিল তামিলকম বা প্রাচীন তামিল দেশের দক্ষিণতম অঞ্চল।[৩] এছাড়া প্রাচীন মালয়ালম সাহিত্য এবং টলেমি ও মার্কো পোলোর রচনায় এই শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়।[২][৪][৫]
অপরূপা কন্যাকুমারী
সম্পাদনাভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে কন্যাকুমারী এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। ভারতের দক্ষিণে তামিলনাডুর শেষ প্রান্তে কন্যাকুমারী। এটি ভারত ভূখণ্ডের শেষ সীমা। পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে আরব সাগর দিয়ে কন্যাকুমারী পরিবেষ্টিত। কন্যাকুমারী সুন্দর ঝকঝকে একটি ছোট্ট শহর। জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। জেলার নামও কন্যাকুমারী। তবে জেলার সদর শহর নাগের কোয়িল। কন্যাকুমারী থেকে এর দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। নাগের কোয়িলের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কন্যাকুমারীর সমুদ্রতটে লাল, কালো এবং সাদা বালি দেখা যায়। এখানের সমুদ্র থেকে শঙ্খ কড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায়। সমুদ্রের ধারেই কন্যাকুমারী মন্দির। এই মন্দিরে প্রবেশের সময় পুরুষ তীর্থ যাত্রীদের ধুতি বা প্যান পরে খালি গায়ে যেতে হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে বাধা নিষেধ নেই।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস আদিকালে পরশুরাম কন্যাকুমারী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর যে সব রাজারা এই এলাকায় রাজত্ব করেছেন তাঁরাই মন্দিরের সংস্কার করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনাদেবী কন্যাকুমারী মন্দির থেকে রেল স্টেশনের দিকে এলে দেখা যাবে রোমান ক্যাথলিক গির্জা। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গির্জার মিনারে ওঠা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্টেশনের কাছাকাছি বাস চলাচলের রাস্তার পাশে একটি প্রাচীন মন্দির আছে। এর নাম "গুগানাথ স্বামী" মন্দির। এটি প্রকৃত পক্ষে শিবমন্দির। এই মন্দিরের পশ্চিমে আছে গান্ধী স্মারক। গান্ধীজির চিতা ভস্ম বিসর্জনের স্মারক এটি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কন্যাকুমারী থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শুচীন্দ্রম মন্দির। এটি ত্রিমূর্তি মন্দির। কথিত আছে গৌতম মুনির শাপ মোচনের জন্য ইন্দ্র এখানে স্থানু মলয়নের আরাধনা করে শুচি হয়েছিলেন। তাই নাম শুচীন্দ্রম। এই মন্দিরে ধর্নুমাস ও চৈত্র মাসে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সাত নম্বর জাতীয় সড়কে পাঁচ কিলোমিটার - আসার পর সমুদ্রের দিকে এক কিলোমিটার এলে দেখা যাবে গোল কেল্লা। গোলাকৃতি এই দুর্গ স্থাপিত হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে। বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি আরব সাগরের কূলে "অগস্তীশ্বর তীর্থ" দেখা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
দেবী কন্যাকুমারী মন্দিরের অধীনে বেশ কয়েকটি দেবালয় আছে। এগুলি গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন দিকে অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য মন্দির গুলি হল: সমুদ্রতটে পরশুরাম প্রতিষ্ঠিত বিঘ্নেশ্বরালয়, মরুগান বা গণপতি মন্দির, শিব মন্দির, কাশী বিশ্বনাথের মন্দির ইত্যাদি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভূগোল
সম্পাদনাকন্যাকুমারীর অবস্থান ৮°০৫′ উত্তর ৭৭°৩৪′ পূর্ব / ৮.০৮° উত্তর ৭৭.৫৭° পূর্ব[৬] এবং এর গড় উচ্চতা ৩০ মিটার। কন্যাকুমারীর উপদ্বীপীয় অংশ তিনদিকে লাক্ষাদ্বীপ সাগর দ্বারা আবদ্ধ। এটি পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির সঙ্গমস্থলে অবস্থিত।
কন্যাকুমারী ভারতীয় উপমহাদেশের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম বিন্দুতে অবস্থিত। যার ফলে এটি হিন্দুস্তানি প্রবচন "কাশ্মীর সে কন্যাকুমারী" (कश्मीर से कन्याकुमारी)-এর অংশ হয়ে গিয়েছে, যা সমগ্র ভারতের বিস্তৃতিকে বোঝায়। ভারত বিভাজনের আগে এটি "খাইবার সে কন্যাকুমারী" প্রবচনের অংশ ছিল।[৭] অবশ্য দ্বীপসমূহ মিলিয়ে ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু হচ্ছে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Travel"। National Geographic (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ ক খ "The eternal charm of Kanyakumari, that is situated at the tip of peninsular India..."। The Hindu Images। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ Kanakasabhai, V (১৯৯৭)। The Tamils Eighteen Hundred Years Ago। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 8120601505।
- ↑ Kanakasabhai, V (১৯৯৭)। The Malayalees Eighteen Hundred Years Ago। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 8120601505।
- ↑ Abraham, Shinu (২০০৩)। "Chera, Chola, Pandya: using archaeological evidence to identify the Tamil kingdoms of early historic South India."। Asian Perspectives। 42 (2): 207–223। hdl:10125/17189 । এসটুসিআইডি 153420843। ডিওআই:10.1353/asi.2003.0031।
- ↑ Falling Rain Genomics, Inc – Kanyakumari
- ↑ Rajghatta, Chidanand (২৭ জুন ২০১৭)। "Attock to Cuttack, PM Narendra Modi causes a stir"। দ্য ইকোনমিক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কন্যাকুমারী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০২৪ তারিখে – সরকারি পোর্টাল (ইংরেজি ও তামিল ভাষায়)
- উইকিভ্রমণ থেকে কন্যাকুমারী ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।