মুঙ্গের জেলা

বিহারের একটি জেলা

মুঙ্গের জেলা হল ভারতের বিহার রাজ্যের ৩৯টি জেলার অন্যতম। এই জেলার সদর শহর হল মুঙ্গের। মুঙ্গের জেলা বিহারের মুঙ্গের বিভাগের অন্তর্গত।

মুঙ্গের জেলা

ضلع مگیر
বিহারের জেলা
বিহারে মুঙ্গেরের অবস্থান
বিহারে মুঙ্গেরের অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যবিহার
প্রশাসনিক বিভাগমুঙ্গের
সদরদপ্তরমুঙ্গের
সরকার
 • লোকসভা কেন্দ্রমুঙ্গের
 • বিধানসভা আসনতারাপুর, জামালপুর ও মুঙ্গের
আয়তন
 • মোট১,৪১৯.৭ বর্গকিমি (৫৪৮.১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১৩,৫৯,০৫৪
 • জনঘনত্ব৯৬০/বর্গকিমি (২,৫০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
 • সাক্ষরতা৭৩.৩০%
 • লিঙ্গানুপাত৮৭৯
প্রধান মহাসড়ক৮০ নং জাতীয় সড়ক, ৩৩৩ নং জাতীয় সড়ক, ৩৩৩খ নং জাতীয় সড়ক
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত১১৪৬ মিমি
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট
জামালপুর বিহারের পাহাড়

নাম-ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

মুঙ্গের জেলার নামকরণ করা হয়েছে এই জেলার সদর শহরের নামানুসারে। ‘মুঙ্গের’ নামটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে একাধিক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ‘মুঙ্গের’ নামটি প্রাচীন ‘মুদ্গগিরি’ নাম থেকে এসেছে। উল্লেখ্য, ‘মুদ্গগিরি’ নামটি মহাভারতদেবপালের তাম্রলিপিতেও পাওয়া যায়। অন্যমতে, এই নামটি এসেছে ঋষি মুদগল বা গৌতম বুদ্ধের শিষ্য মৌদগল্যায়নের নাম থেকে। যদিও কানিংহাম মনে করেন, ‘মুঙ্গের’ নামটির সঙ্গে মুন্ডা জাতির কোনো যোগ আছে। এই জাতিই এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা। সি. ই. এ. ওল্ডহ্যামের মতে, মুঙ্গেরের আদি নাম সম্ভবত ছিল ‘মুনিগৃহ’।

ইতিহাস সম্পাদনা

মুঙ্গের জেলার ভূখণ্ডটি প্রাচীনকালে অঙ্গ মহাজনপদের অন্তর্গত ছিল। মহাভারতে কর্ণকে অঙ্গের রাজা বলা হয়েছে। পাল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মুদ্গগিরি বা মুঙ্গের। বাংলার নবাব মিরকাশিম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুঙ্গেরে গঙ্গার তীরে তিনটি দরজাবিশিষ্ট একটি দুর্গ তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে মুঙ্গের ভাগলপুর জেলার অংশ ছিল। ১৮৩২ সালে মুঙ্গের পৃথক জেলার স্বীকৃতি পায়।

১৯৭৬ সালে মুঙ্গের জেলা ভেঙে বেগুসরাই জেলা গঠিত হয়।[১] এরপর মুঙ্গের জেলা ভেঙে ১৯৮৮ সালে খাগারিয়া জেলা;[১] এবং ১৯৯৯ সালে জামুই, লখিসরাইশেখপুরা জেলা গঠিত হয়।[১]

বর্তমানে মুঙ্গের জেলা রেড করিডোরের অন্তর্গত।

ভূগোল সম্পাদনা

মুঙ্গের জেলা বিহারের দক্ষিণে অবস্থিত। মুঙ্গের শহরটি গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ১,৪১৯ বর্গকিলোমিটার (৫৪৮ মা)।[২] আয়তনের দিক থেকে এই জেলা রাশিয়ার উরুপ দ্বীপের প্রায় সমান।[৩]

মুঙ্গের জেলার উত্তরে গঙ্গা নদী প্রবাহিত। লখিসরাই ও বেগুসরাই জেলা এই জেলার যথাক্রমে উত্তরপশ্চিম ও উত্তরপূর্ব দিকে (গঙ্গার অপর পাড়ে) অবস্থিত। মুঙ্গের জেলার দক্ষিণে জামুই জেলা; উত্তরপশ্চিম ও দক্ষিণপূর্বে যথাক্রমে ভাগলপুর জেলা ও বাঁকা জেলা এবং উত্তর দিকে (গঙ্গার পরপারে) খাগারিয়া জেলা অবস্থিত।

বিভাগ সম্পাদনা

মুঙ্গের জেলা তিনটি মহকুমায় বিভক্ত। যথা: মুঙ্গের সদর, খড়গপুর ও তারাপুর। মুঙ্গের সদর মহকুমা চারটি ব্লকে বিভক্ত। যথা: সদর, জামালপুর, বারিয়ারপুর ও ধারহারা। খড়গপুর মহকুমা দুটি ব্লকে বিভক্ত। যথা: খড়গপুর ও তেতিয়া বামবার। তারাপুর মহকুমা তিনটি ব্লকে বিভক্ত। যথা: তারাপুর, আসারগঞ্জ ও সংগ্রামপুর।

অর্থনীতি সম্পাদনা

২০০৬ সালে ভারত সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রক দেশের ২৫০টি সর্বাধিক অনগ্রসর জেলার তালিকায় মুঙ্গের জেলার নাম নথিভুক্ত করে।[৪] বিহারের যে ৩৬টি জেলা অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান তহবিল কর্মসূচির অধীনে অনুদান পেয়ে থাকে, এই জেলা তার মধ্যে অন্যতম।[৪]

জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, মুঙ্গের জেলার জনসংখ্যা ১,৩৫৯,০৫৪।[৫] এই জেলার জনসংখ্যা সোয়াজিল্যান্ড রাষ্ট্র[৬] বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় সমান।[৭] জনসংখ্যার হিসেবে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে এই জেলার স্থান ৩৫৮তম।[৫] মুঙ্গের জেলার জনঘনত্ব ৯৫৮ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (২,৪৮০ জন/বর্গমাইল)।[৫] ২০০১=২০১১ দশকে এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯.৪৫%।[৫] মুঙ্গের জেলার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৭৯ জন মহিলা[৫] এবং সাক্ষরতার হার ৭৩.৩%।[৫]

ভাষা সম্পাদনা

মুঙ্গের জেলার প্রধান ভাষা হল হিন্দিঅঙ্গিকা অঞ্চলের প্রায় ৭২৫,০০০ জন অঙ্গিকা ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষাটি একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। এটি দেবনাগরী হরফে লেখা হয়।[৮]

বনাঞ্চল সম্পাদনা

১৯৭৬ সালে মুঙ্গের জেলায় ভীমবাঁধ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত হয়। এই অভয়ারণ্যের আয়তন ৬৮২ কিমি (২৬৩.৩ মা)।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Law, Gwillim (২০১১-০৯-২৫)। "Districts of India"Statoids। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  2. Srivastava, Dayawanti et al. (ed.) (২০১০)। "States and Union Territories: Bihar: Government"। India 2010: A Reference Annual (54th সংস্করণ)। New Delhi, India: Additional Director General, Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting (India), Government of India। পৃষ্ঠা 1118–1119। আইএসবিএন 978-81-230-1617-7। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  3. "Island Directory Tables: Islands by Land Area"United Nations Environment Program। ১৯৯৮-০২-১৮। ২০১৮-০২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১Urup 1,436km2  horizontal tab character in |উক্তি= at position 5 (সাহায্য)
  4. Ministry of Panchayati Raj (সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme" (পিডিএফ)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১ 
  5. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ 
  6. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Swaziland 1,370,424  line feed character in |উক্তি= at position 10 (সাহায্য)
  7. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২০১১-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০Hawaii 1,360,301  line feed character in |উক্তি= at position 7 (সাহায্য)
  8. M. Paul Lewis, সম্পাদক (২০০৯)। "Angika: A language of India"Ethnologue: Languages of the World (16th সংস্করণ)। Dallas, Texas: SIL International। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮ 
  9. Indian Ministry of Forests and Environment। "Protected areas: Bihar"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Munger Division