মির্জা নূরুল হুদা

বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

মির্জা নূরুল হুদা (১ আগস্ট ১৯১৯ - ২২ ডিসেম্বর ১৯৯১) বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।[][]

মির্জা নূরুল হুদা
বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
নভেম্বর ২৪, ১৯৮১ – মার্চ ২৩, ১৯৮২
রাষ্ট্রপতিআবদুস সাত্তার
পূর্বসূরীআবদুস সাত্তার
উত্তরসূরীমোহাম্মদউল্লাহ
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী/উপদেষ্টা
কাজের মেয়াদ
নভেম্বর ২৬, ১৯৭৫ – নভেম্বর ২৪, ১৯৮১
রাষ্ট্রপতিআবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
জিয়াউর রহমান
পূর্বসূরীআজিজুর রহমান মল্লিক
উত্তরসূরীসাইফুর রহমান
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর
কাজের মেয়াদ
মার্চ ২৩, ১৯৭১ – মার্চ ২৫, ১৯৭১
রাষ্ট্রপতিআইয়ুব খান
পূর্বসূরীআবদুল মোনেম খান
উত্তরসূরীমোজাফফরুদ্দিন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআগস্ট ১, ১৯১৯
জাঙ্গালিয়া গ্রাম, দেলদুয়ার উপজেলা, টাঙ্গাইল, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি
মৃত্যু২২ ডিসেম্বর ১৯৯১(1991-12-22) (বয়স ৭২)
ঢাকা, বাংলাদেশ
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৯-১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশি (১৯৭১-১৯৯১)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাশিক্ষকতা
ধর্মইসলাম
পুরস্কারহিলাল-ই-খিদমত (১৯৬৮)

মির্জা নূরুল হুদা ১৯১৯ সালের ১ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন।[][]

শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

১৯৪০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ. (অনার্স) অর্জন করেন। এই পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য তিনি কালিনারায়ণ বৃত্তি লাভ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।[] এরপর ১৯৪৯ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতির উপর পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[][]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

মির্জা নূরুল হুদা ১৯৪৪ সালে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে চাকরি ছেড়ে পিএইচ.ডি পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান।[]

দেশে ফেরার পর ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি অধ্যাপক হন।[] শিক্ষাকতার পাশাপাশি তিনি সরকারি বিভিন্ন দায়িত্বপালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কর তদন্ত কমিটি, ঋণ তদন্ত কমিশন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণীত প্রথম ও দ্বিতীয় পাঁচশালা পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন কমিটিতে তিনি কাজ করেছেন।[][]

১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি সেসময় প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান অর্থনীতি সমিতির সভাপতি হন। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন।[] ১৯৭৬ সালে তিনি পুনরায় অর্থনীতি সমিতির সভাপতি হন।[]

পূর্ব পাকিস্তনের গভর্নর

সম্পাদনা

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথানের সময় ২৩ মার্চ আবদুল মোনেম খানের স্থলে মির্জা নূরুল হুদাকে গভর্নর নিয়োগ করা হয়। তিনি একদিন মাত্র গভর্নরের দায়িত্বপালন করেছেন। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করার পর তিনি ইস্তফা দিয়ে পুনরায় শিক্ষকতায় ফিরে যান। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।[]

বাংলাদেশে

সম্পাদনা

১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তাকে কৃষি, বাণিজ্য, অর্থ, শিল্প ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।[]

১৯৭৯ সালের ২৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ২৪ নভেম্বর বিচারপতি আবদুস সাত্তার তাকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।[][]

গবেষণা

সম্পাদনা

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে তার লেখা ২০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।[][] তমিজউদ্দিন খানের লেখা দ্য টেস্ট অব টাইম: মাই লাইফ এন্ড ডেস গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেছেন।[]

সম্মাননা

সম্পাদনা

মির্জা নূরুল হুদা ১৯৬৮ সালে হিলাল-ই-খিদমত খেতাব পান।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

মির্জা নূরুল হুদা ১৯৯১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মির্জা নূরুল হুদা, বাংলাপিডিয়া
  2. "Governors and Acting Governors of East Bengal/ East Pakistan 1947-1971, ২১ জুলাই ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত"। ১৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৬ 
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
আবদুস সাত্তার
বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি
নভেম্বর ২৪, ১৯৮১ – মার্চ ২৩, ১৯৮২
উত্তরসূরী
মোহাম্মদউল্লাহ
পূর্বসূরী
আবদুল মোনেম খান
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর
মার্চ ২৩, ১৯৭১ – মার্চ ২৫, ১৯৭১
উত্তরসূরী
মুজাফফরউদ্দিন