মানালি, হিমাচল প্রদেশ

ভারতবর্ষের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের একটি শহর

মানালি (উচ্চতা ১,৯৫০ মি. বা ৬,৩৯৮ ফু.), ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিয়াস নদীর উপত্যকায়, পর্বতশ্রেণীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক হিল-স্টেশন, কুল্লু উপত্যকার উত্তর প্রান্তের নিকটে এর অবস্থান।

মানালি
শহর
মানালি হিমাচল প্রদেশ-এ অবস্থিত
মানালি
মানালি
হিমাচল প্রদেশ, ভারতে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩২°১৬′ উত্তর ৭৭°১০′ পূর্ব / ৩২.২৭° উত্তর ৭৭.১৭° পূর্ব / 32.27; 77.17
দেশ ভারত
রাজ্যহিমাচল প্রদেশ
জেলাকুল্লু
সরকার
 • বিধায়কগোবিন্দ সিং ঠাকুর (ভারতীয় জনতা পার্টি)
উচ্চতা১,৯৫০ মিটার (৬,৪০০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০০৫)
 • মোট১৭,৭৮৬
ভাষা
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন১৭৫১৩১
টেলিফোন কোড৯১০৯০২

শাসন ব্যবস্থার দিক থেকে মানালি কুল্লু জেলারই অন্তর্গত, এর জনসংখ্যা কম-বেশি ৩০,০০০. ছোট শহরটা প্রাচীন লাদাখ বাণিজ্য পথের শুরুতে এবং সেখান থেকে কারাকোরাম গিরিপথের উপর দিয়ে তারিম বেসিন-এর ইয়ারকন্দ আর খোটান পর্যন্ত এই পথ।

মানালি ও তার পার্শবর্তী অঞ্চল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ধারার কাছে, কারণ বলা হয়, সপ্তর্ষি বা সপ্ত ঋষির বাসস্থান ছিল এখানে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভূগোল সম্পাদনা

মানালির শহরের উচ্চতা বিস্তার ১,৮০০ মি (৫,৯০০ ফু) থেকে উচ্চতম পুরনো মানালির ২,০০০ মি (৬,৬০০ ফু) পর্যন্ত।[১]

সামাজিক পরিসংখ্যান সম্পাদনা

২০০১-এর হিসাব অনুযায়ী ভারতের লোক গণনার[২] হিসেবে মানালির জনসংখ্যা ছিল ৬,২৬৫, শতকরা ৬৪ জন পুরুষ আর শতকরা ৩৬ জন মহিলা। মানালির গড় সাক্ষরতার হার ৭৪ % , জাতীয় গড় ৫৯.৫ এর বেশি। পুরুষ সাক্ষরতা শতকরা ৮০ আর মহিলা সাক্ষরতা শতকরা ৬৩। মানালির জনসংখ্যার শতকরা ৯ ভাগ ছ'বছরের নিচে।

জলবায়ু সম্পাদনা

 
হিড়িম্বা দেবীর মন্দির, মানালি

মানালির জলবায়ু প্রধানত শীতকালে ঠান্ডা এবং গ্রীষ্মকালে সহনীয় শীতল. তাপমাত্রা 4 ডিগ্রী সে. (39 ডিগ্রী ফা.)৪ °সে (৩৯ °ফা) আর 30 ডিগ্রী সে. (86 ডিগ্রী ফা.)-র৩০ °সে (৮৬ °ফা) মধ্যে থাকে.গ্রীষ্মে গড় তাপমাত্রা 14 ডিগ্রী সে. (57 ডিগ্রী ফা.)১৪ °সে (৫৭ °ফা) আর 20 ডিগ্রী সে. (68 ডিগ্রী ফা.)২০ °সে (৬৮ °ফা)-র মধ্যে থাকে. শীতে তা 7 ডিগ্রী সে. (19.4 ডিগ্রী ফা.)−৭ °সে (১৯ °ফা) আর 10 ডিগ্রী সে. (50 ডিগ্রী ফা.)১০ °সে (৫০ °ফা)-র মধ্যে থাকে.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মাসিক বৃষ্টিপাত নভেম্বরে 24 মি.মি. (0.9 ই.)২৪ মিমি (০.৯৪ ইঞ্চি) আর জুলাইয়ে 41.5 মি.মি. (16.3 ই.)৪১৫ মিমি (১৬.৩ ইঞ্চি)-র মধ্যে ঘোরাফেরা করে. গড় ৪৫ মিমি (১.৮ ইঞ্চি)বৃষ্টিপাত শীতে এবং বসন্ত শরতে প্রায় 45 মি.মি. (1.8 ই.) এবং তা বেড়ে গ্রীষ্মে১১৫ মিমি (৪.৫ ইঞ্চি), বর্ষা এসে গেলে, 115 মি.মি. (4.5 ই.) পর্যন্ত. গড়ে বছরে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 1,520 মি.মি. (60 ই.)১,৫২০ মিমি (৬০ ইঞ্চি). এ অঞ্চলে তুষারপাত, সাধারণত যা ডিসেম্বরে হতো, গত ১৫ বছর ধরে তা পিছিয়ে জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে হচ্ছে.

শব্দের ব্যুত্পত্তিগত তত্ব সম্পাদনা

ব্রাহ্মণ বিধান কর্তা মনু-র নাম থেকে মানালির নামকরণ. 'মানালি' শব্দটার আক্ষরিক অর্থ 'মনুর বাসভূমি'। পুরাণে আছে, ঋষি মনু তার নৌকা থেকে মানালিতে নেমেছিলেন মানুষকে নবজীবন দিতে। প্রবল বন্যায় পৃথিবী আক্রান্ত হবার পরে মানালি 'দেব উপত্যকা' নামে পরিচিত। পুরনো মানালি গ্রামে মনুর নামে উত্সর্গীকৃত একটি প্রাচীন মন্দির আছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন].

ইতিহাস সম্পাদনা

 
মল স্ট্রিট, মানালি

প্রাচীনকালে এই উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে 'রাক্ষস' নামে এক যাযাবর শিকারী সম্প্রদায়ের লোকের বাস ছিল. পরবর্তী কালে আগমন ঘটে কাংরা উপত্যকা থেকে আসা মেষপালকদের, এরা এখানে কৃষি কাজের জন্য বসতি স্থাপন করে. এ অঞ্চলের প্রাচীনতম বসবাসকারীদের অন্যতম ছিল 'নৌর' অথবা 'নর', কুলু উপত্যকায় এরা এক বিচিত্র প্রজাতি.এখনো অল্প কয়েক ঘর 'নর' পরিবার এখানে বর্তমান. মানালির পশ্চিম তীরে হরিপুরের কাছে সোয়াল গ্রামে এক 'নৌর' পরিবার ছিল. বস্তির জমির অধিকার বলে রাক্ষসদের শ্রমজীবী হিসেবে ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়েছিল এই পরিবার.

ইংরেজরা আপেল আর ট্রাউটের চাষ শুরু করে, মানালির উদ্ভিদ আর প্রাণীকুলের ইতিহাসে এদের অস্তিত্ব ছিল না. শোনা যায়, প্রথম যখন আপেল গাছ লাগানো হয় এতো ফলন হয় যে, তার ভার বইতে না পেরে প্রায়ই গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]. এখনো আপেল প্লাম আর পিয়ার চাষ এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের মুখ্য জীবিকা.

1980-র শেষে কাশ্মিরে জঙ্গি তত্পরতা বেড়ে ওঠায় মানালিতে পর্যটন ফুলেফেপে ওঠে. অতীতের শান্ত এক গ্রাম আজকের তেল আর রেস্তর্যন্ট নিয়ে এক কলরব মুখর শহরে রুপান্তরিত হল.

পরিবহন সম্পাদনা

 
সাধারণ বাড়ি, মানালি, 2004

NH 21 আর NH 1 এর সুবাদে দিল্লীর সঙ্গে মানালির যোগ-সম্পর্ক বেশ ভালো. লে পর্যন্ত বিস্তৃত এন এইচ 1 কে (ভুলক্রমে) পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম গাড়িচলার রাস্তা বলে দাবি করা হয়. নতুন দিল্লি থেকে মানালির পথে যেতে হরিয়ানার পানিপত আর আম্বালা, চন্ডিগড় (কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল), পাঞ্জাবের রোপার আর হিমাচলের বিলাসপুর, সুন্দরগড় আর মান্ডি শহরগুলো পড়ে.

রেলপথে মানালি যাওয়া সহজসাধ্য নয়.নিকটতম ব্রড গেজ জংশন চন্ডিগড়৩১৫ কিমি (১৯৬ মা) (315 কি.মি./196 মা.), পাঠানকোট৩২৫ কিমি (২০২ মা) (326 কি.মি./202 মা.) অথবা কালকা৩১০ কিমি (১৯০ মা) 310 কি.মি./190 কি.মি.). নিকটতম ন্যারো গেজ জংশন হচ্ছে যোগিন্দরনগর১৩৫ কিলোমিটার (৮৪ মা) (135 কি.মি./84 মা.)

নিকটতম বিমানবন্দর হচ্ছে ভুনতার, মানালি থেকে প্রায় 50 কি.মি./31 মা.৫০ কিমি (৩১ মা). সম্প্রতি কিংফিশার রেড দৈনিক দিল্লি থেকে একটানা উড়ানের ব্যবস্থা করেছে. এয়ার ইন্ডিয়া সপ্তাহে দু-দিন একটানা উড়ানের ব্যবস্হা করেছে আর MDLR এয়ারলাইনস দিল্লি থেকে সপ্তাহে ছ'দিন.

মানালিতে পর্যটন সম্পাদনা

 
বন বিহার থেকে বিয়াস নদী এবং পাহাড় যেমন লাগে
 
মানালির পর্বতশ্রেনী
 
শহরের মাঝ বরাবর একটি সেতু ও প্রার্থনার পতাকা

হিমালয় ভ্রমণের লক্ষ্য মানালি জনপ্রিয় স্থান. হিমাচল প্রদেশের বাত্সরিক ভ্রমনার্থীর প্রায় এক চতুর্থাংশ এই কারণে এখানে আসে.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]ভারতের গ্রীষ্মকালের বিপরীত শীতল পরিবেশ এখানকার বৈশিষ্ট্য.

মানালি বিখ্যাত স্কিইং, হাইকিং, পর্বতারহন, প্যারাগলাইডিং, রাফটিং, ট্রেকিং, কায়াকিং আর মাউন্টেন বাইকিং এর মতো এডভেঞ্চার স্পোর্টস-এর জন্য. এখানকার ইয়াক স্কিইংএক অনন্য স্পর্ট.[৩]. চূড়ান্ত ইয়াক স্পোর্টস এর জন্য টাইম ম্যাগাজিন-এর 'মানালি এশিয়াশ্রেষ্ঠ' বলে উল্লেখিত.এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণ ধর্মীয় কুঠি ও তিব্বতী বৌদ্ধ মঠও দেখবার.

গত কয়েক বছর ধরে মানালি মধুচন্দ্রিমা যাপনকারীদের কাছে পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে. পরিসংখ্যান বলে, 550 জনের মতো দম্পতিরা দৈনিক মধুচন্দ্রিমার জন্য মে জুন ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসে মানালিতে আসে আর বাকি সময় দৈনিক 350 জন দম্পতি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন].

মানালি পরিচিত তার উজ্জ্বল গুম্ফা আর বৌদ্ধ মঠগুলোর জন্য. গোটা কুলু উপত্যকার মধ্যে এখানেই তিব্বতী উদ্বাস্তুদের উপর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়. 1969 সালে স্থাপিত এখানের বিখ্যাত গাধন থেকছোক্লিং গুম্ফা. এই মঠের রক্সবেক্ষণ স্থানীয় সম্প্রদায়ের আর্থিক সাহায্যে এবং মঠের কর্মশালায় প্রস্তুত হাতে বোনা কার্পেট বিক্রী থেকে অর্জিত আয় মারফত.আকারে একটু ছোট আরও আধুনিক হিমালয়ান নিইংগাম্পা গুম্ফা, বাজার সন্নিকট এক সূর্যমুখী ফুলের বাগানে.

দ্রষ্টব্য স্থান সম্পাদনা

নাগরদুর্গ , মানালির দক্ষিণের এই স্থান পাল সাম্রাজ্যের স্মৃতিবাহক. পাথর, মার্বেল আর সূক্ষ্ম কাঠের খোদাই-এর মিশ্র ফল, এই দুর্গ, হিমাচলের বিখ্যাত সুন্দর শিল্প-সৃষ্টির স্বাক্ষর. পরবর্তী কালে এই প্রাসাদ হোটেলে রুপান্তরিত হয়[তথ্যসূত্র প্রয়োজন].

হিড়িম্বা দেবী মন্দির , ১৫৫৩-এ প্রতিষ্ঠিত এ মন্দির স্থানীয়দের আরাধ্য, পাণ্ডব রাজপুত্র ভীমের স্ত্রী হিড়ীম্বা স্মরণে. এই মন্দিরের লক্ষনীয় বিষয় হ'ল চারধাপ বিশিষ্ট প্যাগোডা আর অতি সুন্দর কাঠের কারুকাজ.

রহ্লা জলপ্রপাত ,২৭ কিমি (১৭ মা) মানালি থেকে রোটাং-পাস যাবার ঠিক মুখে 27 কি.মি./17 মা. দূরত্বে এই রহ্লা জলপ্রপাতের উচ্চতা 2,507 মি./4,210 ফু২,৫০১ মি (৮,২০৫ ফু).

সোলাং উপত্যকা , 'স্নো পয়েন্ট' নামে পরিচিত. মানালির 13 কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান.

মণিকরণ , মানালি যাবার পথে, কুলু থেকে ৪৫ কি.মি. দূরত্বে, এ অঞ্চল পার্বতী নদীর কাছে উষ্ণ প্রস্রবনের জন্য পরিচিত.

স্থান মল রোড থেকে দূরত্ব সময়
হিড়িম্বা দেবী মন্দির ২ কিমি দিবা
মানু টেম্পল ২,৫ কিমি দিবা
হিমালয়ান সংস্কৃতি জাদুঘর ২ কিমি সকাল ৮ - রাত ৮
হিমালয় নয়নমাপা বৌদ্ধ মঠ ১ কিমি দিবা
বশিষ্ঠ টেম্পল ৩ কিমি দিবা

আরো পড়ার জন্য সম্পাদনা

  • বর্মা, ভি . 1996. গাদ্দিস অফ ধুলাধার : এ ত্রান্শুমান্ট ট্রাইব অফ দ্য হিমালায়ায়্স ইন্দাস পাবলিশিং ক., নিউ দিল্লি.
  • হান্ডা ও. সি. 1987. বুদ্ধিস্ট মনাস্টারিস ইন হিমাচল প্রদেশ . ইন্দাস পাবলিশিং ক., নিউ দিল্লি.আইএসবিএন ৮১-৮৫১৮২-০৩-৫.

উল্লেখ্য সম্পাদনা

  1. ফলিং রেন জেনমিক্স, ইনক - মানালি
  2. "Census of India 2001: Data from the 2001 Census, including cities, villages and towns (Provisional)"। Census Commission of India। ২০০৪-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০১ 
  3. "টাইম এশিয়া ম্যগাজিন : এশিয়ায় সর্বশ্রেষ্ঠ চূড়ান্ত ইয়াক স্পোর্টস"। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০০৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা