মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত

ভারতীয় বিপ্লবী

মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত (১৮৯৮ - ১৯১৫) (ইংরেজি: Monoranjan Sengupta) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। তিনি পূর্ণচন্দ্র দাসের সহকর্মী ও পূর্ণচন্দ্র পরিচালিত গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন মাদারিপুর সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি বিপ্লবী বাঘা যতীনের নেতৃত্বে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে উড়িষ্যার বালেশ্বরের সমুদ্র উপকূলে জার্মান জাহাজ "ম্যাভেরিক" থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন। বাঘা যতীনের নেতৃত্বে পরিচালিত বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী

মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত
শহীদ মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত.jpg
শহীদ মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত
জন্ম১৮৯৮
মৃত্যু৩ ডিসেম্বর ১৯১৫(1915-12-03) (বয়স ১৬–১৭)
মৃত্যুর কারণফাঁসি
জাতীয়তাভারতীয়
প্রতিষ্ঠানমাদারিপুর সমিতি, যুগান্তর দল
পরিচিতির কারণভারতীয় বাঙ্গালী বিপ্লবী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
ভারতের বিপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মাদারিপুর সদর উপজেলাধীন খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হলধর সেনগুপ্ত।[১] মনোরঞ্জন সেনগুপ্তের বড়ভাই প্রফুল্ল সেনগুপ্ত মাদারিপুর হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। লাঠি, শড়কী, ছোরা এবং তলোয়ারে মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ছিলেন সিদ্ধহস্ত। প্রথমে মাদারিপুর ব্রতী সমিতি এবং পরবর্তীতে মাদারিপুর সমিতির (১৯১০খ্রি.) বিপ্লবী সদস্য ছিলেন।[২]

বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধসম্পাদনা

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে বাঘা যতীন বা যতীন মুখার্জী নিজের সাময়িক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলেন। সঙ্গে চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, জ্যোতিষচন্দ্র পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন কেটে গেল গভীর জংগলে। সারারাত পায়ে হেঁটে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা পৌঁছলেন বালেশ্বরের বলরামগড়িতে[৩] বুড়িবালাম (উড়িষ্যায় একে বলে "বুড্ঢাবালাঙ্গ"[৪]) নদীর উপকণ্ঠে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত শুকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন। বিপরীতপক্ষে চার্লস টেগার্ট, কমান্ডার রাদারফোর্ড, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিলভি অসংখ্য সশস্ত্র পুলিস ও সামরিক বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিল। পরীখার আড়ালে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে পাঁচজন, হাতে মাউজার পিস্তল। যুদ্ধ শুরু হলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী। পরে ১৯১৫ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারের রায়ে মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩ ডিসেম্বর তাদের দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জ্যোতিষচন্দ্র পালও বেশিদিন বাঁচেননি। পুলিশের নির্মম অত্যাচারে আন্দামান সেলুলার জেলে কুঠরিবদ্ধ অবস্থায় উন্মাদ হয়ে যান। বহরমপুর উন্মাদ আশ্রমে ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু ঘটে।[১][৫][৬]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৫৪৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. জাব্বার মিয়া, আবদুল (১৯৯৪)। মাদারীপুর জেলা পরিচিতি। শকুনী, মাদারিপুর: মিসেস লীনা জাব্বার। পৃষ্ঠা ১৬৭। 
  3. "রক্তাক্ত বুড়িবালামের তীরে - Banglahunt"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১১ 
  4. giswami, Ifsita। "গরমের ছুটিতে সিমলিপাল জাতীয় উদ্যানে কয়েকটা দিন"E News Bangla | Bengali News Portal। ২০১৯-০৮-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১১ 
  5. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৭৩।
  6. শৈলেশ দে, মৃত্যুর চেয়ে বড়, বিশ্ববাণী প্রকাশনী, কলিকাতা, প্রথম (বি) সংস্করণ অগ্রহায়ণ ১৩৯২, পৃষ্ঠা ১২১-১২৬।