মক্কার যুদ্ধ (১৯১৬)

মক্কার যুদ্ধ ১৯১৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে ইসলামের পবিত্র শহর মক্কায় সংঘটিত হয়। ১০ জুন মক্কার শরিফ ও বনু হাশিম গোত্রের প্রধান হুসাইন বিন আলী উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে এই শহরে বিদ্রোহের সূচনা করেন। মক্কার যুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন আরব বিদ্রোহের একটি অংশ ছিল।

মক্কার যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্গত আরব বিদ্রোহ
তারিখজুন–জুলাই, ১৯১৬
অবস্থান
ফলাফল ব্রিটিশদের বিজয়। হেজাজ রাজতন্ত্রের সূচনা।
বিবাদমান পক্ষ
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ রাজ
আরব বিদ্রোহ আরব বাহিনী
 উসমানীয় সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
যুক্তরাজ্য টি ই লরেন্স
যুক্তরাজ্য এডমন্ড এলেনবি
আরব বিদ্রোহ ফয়সাল বিন হুসাইন
আরব বিদ্রোহ আবদুল্লাহ বিন হুসাইন
আরব বিদ্রোহ আলী বিন হুসাইন
উসমানীয় সাম্রাজ্য আহমেদ তৌফিক পাশা
উসমানীয় সাম্রাজ্য ফখরি পাশা
শক্তি
~৫,০০০+ ১,০০০[]

পটভূমি

সম্পাদনা

হুসাইন বিন আলী এডেন থেকে আলেপ্পো পর্যন্ত একটি বিস্তৃত আরব রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে পরিকল্পনা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ব্রিটিশদের সাহায্য চান। তার চার পুত্রকে তিনি এজন্য অনুপ্রাণিত করেন।

ঘটনাসমূহ

সম্পাদনা

১৯১৬ সালের জুনের দিকে অধিকাংশ উসমানীয় সেনা তাইফ গমন করে। হেজাজের গভর্নর গালিব পাশা এখানে অবস্থান করছিলেন। মক্কার প্রতিরক্ষার জন্য মাত্র ১,০০০ জন সৈনিক অবশিষ্ট ছিল। হুসাইন বিন আলী যখন বিদ্রোহের সূচনা চিহ্নিত করে হাশেমি প্রাসাদের জানালা দিয়ে শূণ্যে গুলি ছুড়েন তখন অধিকাংশ সৈনিক ব্যারাকে ঘুমন্ত ছিল। শব্দ শুনে তার ৫০০০ সমর্থক মক্কাকে পর্যবেক্ষণকারী তিনটি দুর্গ ও জেদ্দা সড়কের পাশে অবস্থিত জিরওয়াল ব্যারাকে তুর্কি বাহিনীর উপর গুলি ছুড়তে শুরু করে। এই আক্রমণ অতর্কিতে সংঘটিত হয় এবং দায়িত্বরত তুর্কি কমান্ডিং অফিসার এটিকে বিদ্রোহের সূচনা বুঝতে ব্যর্থ হন। শরিফ ও উসমানীয় ব্যানারগুলো একই রঙের হওয়ায় তুর্কি কমান্ডার পার্থক্য ধরতে পারেননি। তিনি পরিস্থিতির ব্যাপারে শরিফ হুসাইনকে ফোন করেন। হুসাইন তাকে কারণ জানান ও তুর্কি কমান্ডারকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কমান্ডার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। পরের দিন বনু হাশিম বাহিনী মসজিদুল হারামের পার্শ্ববর্তী সাফা কোণে বাশ-কারাকলের দিকে অগ্রসর হয় ও তা দখল করে। তৃতীয় দিন উসমানীয় গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের অফিস দখল করা হয়। বন্দী ডেপুটি গভর্নর অবশিষ্ট তুর্কি সৈনিকদেরকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেন। সৈনিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে।

এরপর অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। স্যার রেজিনাল্ড উইনগেট প্রশিক্ষিত মিশরীয় গানার সহযোগে সুদান থেকে জেদ্দার মধ্য দিয়ে দুটি কামান পাঠান। তারা তুর্কি দুর্গের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়। শরিফি বাহিনী আক্রমণ করে ও আত্মরক্ষাকারী সৈনিকরা বন্দী হয়। ৪ জুলাই তিন সপ্তাহ ধরে কঠোর প্রতিরোধের পর মক্কার শেষ তুর্কি প্রতিরোধ জিরওয়াল ব্যারাক আত্মসমর্পণ করে।

এটি ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা। সেসাথে এটিকে হাশেমি রাজ্যের সূচনা হিসেবেও ধরা হয়। মক্কা এই রাজ্যের রাজধানী ছিল। ধীরে ধীরে এটি উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধ গভীর ক্ষত রেখে গেছে। এরপর আরব রাষ্ট্রগুলো শক্ত ইউরোপীয় প্রভাবের অধীনে চলে আসে। উসমানীয় খিলাফত বিলুপ্ত হয় এবং ফিলিস্তিন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে আসে। পরবর্তীতে এখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মক্কার শরিফ হুসাইন বিন আলীকে প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদিরা ক্ষমতাচ্যুত করে। ফলে শরিফ হুসাইনের ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত আরব রাষ্ট্রের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Spencer C. Tucker, Arab Revolt (1916-1918), The Encyclopedia of World War I, ABC-CLIO, 2005, আইএসবিএন ১-৮৫১০৯-৪২০-২, page 117.