বনু হাশিম (আরবি: بنو هاشم) ছিল কুরাইশ গোত্রের একটি আরবীয় উপগোত্র। ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। গোত্রটির নামকরণ করা হয়েছে মুহাম্মদের প্রপিতামহ হাশিম ইবনে আব্দ মানাফ-এর নামানুসারে।

বনু হাশিম
(আরবি: بنو هاشم)
কুরাইশ, আদনানীয়
আরবিতে বংশের নামের ক্যালিগ্রাফি
গোত্রের নামের আরবি ক্যালিগ্রাফি
নৃগোষ্ঠীআরবীয়
নিসবাআল-হাশিমি
অবস্থানআরব
এর বংশহাশিম ইবনে আব্দ মানাফ
প্রধান উপজাতিকুরাইশ
শাখা
ভাষাআরবি
ধর্মইসলাম
উপাধিআল হাশিমি

এই গোত্রের সদস্যদের এবং তাদের বংশধরদের সাধারণত হাশিমি, হাশিমাইট, হাশিমিদ বা বাকারা নামে ডাকা হয়। এদের অনেকেই উপনাম হিসেবে আল-হাশিমি ব্যবহার করেন। বিশেষত যারা মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমার মাধ্যমে তার বংশধর, তারা ঐতিহ্যগতভাবে শরীফ উপাধি ধারণ করেন, যা অনেক সময় সাইয়িদ এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[]

অষ্টম শতক থেকে হাশিমি বংশধারাকে সম্মানীয়তার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। অনেক ইসলামী রাজবংশ তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় এই বংশীয় পরিচয়কে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে।[] হাশিমি বংশধারীদের মধ্যে বিখ্যাত কিছু ইসলামী রাজবংশ হলো: আব্বাসীয়রা (৭৫০–৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে শাসন করে; ৯৪৫–১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে এবং ১২৬১–১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে খেলাফতের পদ ধারণ করে), ফাতেমীয়রা (৯০৯–১১৭১ খ্রিষ্টাব্দে কায়রো থেকে খেলাফতের দাবি করে), আলাউই রাজবংশ (১৬৩১ সাল থেকে মরক্কোর শাসক), এবং হাশেমাইট রাজবংশ (১৯২১ সাল থেকে জর্দানের শাসক)।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

এই গোত্রের নামকরণ ঐতিহ্যগতভাবে হাশিম ইবনে আব্দ মানাফ-এর নামে করা হয়েছে। তিনি আজদি গোত্রের একটি উপগোত্র বনু নাজ্জার-এর সালমা বিনত আমর-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[][]

ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবরা নিজেদের পরিচয় তিনটি স্তরে দিত—গোত্র, উপগোত্র এবং পরিবার বা গৃহ। সেই সময়ের দুইটি প্রধান গোত্রিক গোষ্ঠী ছিল: আদনানীয় (যারা আদনান থেকে উদ্ভূত, এবং আরব উপদ্বীপের উত্তর, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের আরবদের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত) এবং কাহতানীয় (যারা কাহতান থেকে উদ্ভূত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব আরবের আরবদের পূর্বপুরুষ)।[][]

বনু হাশিম ছিল কুরাইশ গোত্রের একটি উপগোত্র,[] এবং এটি একটি আদনানীয় গোত্র হিসেবে পরিচিত। এই উপগোত্রের নাম রাখা হয়েছে মুহাম্মদের প্রপিতামহ হাশিম ইবনে আব্দ মানাফ-এর নাম অনুসারে। বনু আবদ শামস, বনু আল-মুততালিব এবং বনু নওফাল—এই উপগোত্রগুলোর সঙ্গে মিলে বনু হাশিম বনু আব্দ আল-মানাফ নামক বৃহত্তর অংশ গঠন করে, যা কুরাইশ গোত্রের অন্তর্গত।

রাজবংশ ও গোত্রসমূহ

সম্পাদনা

নিম্নলিখিত রাজপরিবার, সম্রাজ্যিক রাজবংশ এবং গোত্রসমূহ নিজেদের হাশিম এর বংশধর বলে দাবি করে:

আরব উপদ্বীপ

আফ্রিকা

ইন্দো-পারস্য

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

ইউরোপ

পারিবারিক বংশবৃক্ষ

সম্পাদনা


কিলাব ইবনে মুররাহফাতিমা বিনতে সা'দ
জুহরাহ ইবনে কিলাব
(বনু জুহরার পূর্বপুরুষ)
মাতৃ-পক্ষীয় চতুর্থ প্রপিতামহ
কুসাই ইবনে কিলাব
পিতৃ-পক্ষীয় পঞ্চম প্রপিতামহ
হুব্বা বিনতে হুলাইল
পিতৃ-পক্ষীয় পঞ্চম প্রপিতামহী
আবদ মানাফ ইবনে জুহরাহ
মাতৃ-পক্ষীয় প্রপিতামহ
আবদ মানাফ ইবনে কুসাই
পিতৃ-পক্ষীয় চতুর্থ প্রপিতামহ
আতিকা বিনতে মুররাহ
পিতৃ-পক্ষীয় চতুর্থ প্রপিতামহী
ওহ্ব ইবনে আবদ মানাফ
মাতামহ
হাশিম ইবনে আবদ মানাফ
(বনু হাশিমের পূর্বপুরুষ)
পিতামহের পিতামহ
সালমা বিনতে আমর
পিতামহের পিতামহী
ফাতিমা বিনতে আমর
পিতামহী
আবদুল মুততালিব
পিতামহ
হালাহ বিনতে ওহায়ব
সৎ-দাদী
আমিনা
মাতা
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুততালিব
পিতা
আজ-জুবায়ের ইবনে আবদুল মুততালিব
চাচা
হারিস ইবনে আবদুল মুততালিব
সৎ-চাচা
হামজা ইবনে আবদুল মুততালিব
সৎ-চাচা
সুয়াইবাহ
প্রথম ধাত্রী
হালিমা বিনতে আবু জুয়াইব
দ্বিতীয় ধাত্রী
আবু তালিব ইবনে আবদুল মুততালিব
চাচা
আব্বাস ইবনে আবদুল মুততালিব
সৎ-চাচা
আবু লাহাব
সৎ-চাচা
আরও ৬ পুত্র ও ৬ কন্যা
মুহাম্মদখাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ
প্রথম স্ত্রী
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
চাচাত ভাই
ফাতিমা
কন্যা
আলী
চাচাত ভাই ও জামাতা
আলির বংশবৃক্ষ, আলির সন্তানগণ
কাসিম ইবনে মুহাম্মদ
পুত্র
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ
পুত্র
জাইনাব বিনতে মুহাম্মদ
কন্যা
রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ
কন্যা
উসমান ইবনে আফফান
জামাতা
উম্মে কুলসুম বিনতে মুহাম্মদ
কন্যা
জায়েদ ইবনে হারিসা
দত্তকপুত্র
আলী ইবনে জাইনাব
নাতি
উমামা বিনতে জাইনাব
নাতনী
আবদুল্লাহ ইবনে উসমান
নাতি
রাইহানা বিনতে জায়েদ
(বিবাহ বিতর্কিত)
উসামা ইবনে জায়েদ
দত্তক নাতি
মুহসিন ইবনে আলী
নাতি
হাসান ইবনে আলী
নাতি
হুসাইন ইবনে আলী
নাতি
উম্মে কুলসুম বিনতে আলী
নাতনী
জাইনাব বিনতে আলী
নাতনী
সাফিয়া বিনতে হুয়াইয়্য
দশম/একাদশ স্ত্রী*
আবু বকর
শ্বশুর
সাওদা বিনতে জামআ
দ্বিতীয়/তৃতীয় স্ত্রী*
উমর
শ্বশুর
উম্মে সালামা
ষষ্ঠ স্ত্রী
জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস
অষ্টম স্ত্রী
মাইমুনা বিনতে হারিস
একাদশ/দ্বাদশ স্ত্রী*
আয়েশা
দ্বিতীয়/তৃতীয় স্ত্রী
জাইনাব বিনতে খুজাইমা
পঞ্চম স্ত্রী
হাফসা বিনতে উমর
চতুর্থ স্ত্রী
জাইনাব বিনতে জাহশ
সপ্তম স্ত্রী
রামলা বিনতে আবু সুফিয়ান (উম্মে হাবিবা)
নবম স্ত্রী
মারিয়া আল-কিবতিয়া
ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মদ
পুত্র
  • উল্লেখ্য, সরাসরি বংশধরেরা গাঢ় অক্ষরে চিহ্নিত।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Van Arendonk, C.; Graham, W.A. (১৯৬০–২০০৭)। "Sharīf"Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P.Encyclopaedia of Islam, Second Edition 
  2. Van Arendonk ও Graham 1960–2007.
  3. Routledge, Bruce (২০০৪-০৭-২৬)। Moab in the Iron Age: Hegemony, Polity, Archaeology (ইংরেজি ভাষায়)। University of Pennsylvania Press। পৃষ্ঠা 236। আইএসবিএন 978-0-8122-3801-3 
  4. আল-তাবারি, আবু জাফর। দ্য হিস্টরি অব আল-তাবারি, ভলিউম ৬: মুহাম্মদ অ্যাট মক্কা, পৃষ্ঠা ১২৫।
  5. দি অ্যাগ্রেরিয়ান সিস্টেম অব ইসলাম, মুহাম্মদ তাকি আমিনি, ইদারাহ-ই আদাবিয়াত-ই দিল্লি, ১৯৯১।
  6. Reuven Firestone (১৯৯০)। Journeys in Holy Lands: The Evolution of the Abraham-Ishmael Legends in Islamic Exegesis। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 9780791403310 
  7. Göran Larsson (২০০৩)। Ibn García's Shuʻūbiyya Letter: Ethnic and Theological Tensions in Medieval al-Andalus। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 9004127402 
  8. Al-Mubarakpuri, Safi-ur-Rahman (২০০২)। The Sealed Nectar (Ar-Raheeq Al-Makhtum)। Darussalam। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 1591440718 
  9. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 236
  10. Hoiberg 2010, পৃ. 10।
  11. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 238
  12. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 235।
  13. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 236।
  14. I. M. Lewis, A pastoral democracy, LIT Verlag Münster, 1999, পৃষ্ঠা ১৫৭।
  15. Abul Fazl (২০০৪)। The Āʼīn-i Akbarī (2nd সংস্করণ)। Sang-e-Meel Publications। আইএসবিএন 9693515307 
  16. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 237।
  17. Abu Huraira Virasat Rasul। Ashraf Al Ansab। Karachi Publications। 
  18. Khan, Shah Nawaz (১৯৫২)। Maasir al Umara। Calcutta: Calcutta Oriental Press। পৃষ্ঠা 259–262। 
  19. Vachon, Boudreau এবং Cogné 1998, পৃ. 233।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা