ভারত-নেপাল সীমান্ত

ভারত-নেপাল সীমান্ত হলো ভারতনেপালের মধ্যবর্তী একটি মুক্ত আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ১৭৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তটি হিমালয় পর্বতশ্রেণীসিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির ওপর বিস্তৃত। ১২২৩ বঙ্গাব্দে (১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ব্রিটিশ ভারতনেপালের মধ্যে সংঘটিত সুগৌলীর চুক্তির মাধ্যমে বর্তমান ভারত-নেপাল সীমান্ত স্থির হয়, যা ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিকভাবে স্থাপিত হয়।[১]

ভারত-নেপাল সীমান্ত
বৈশিষ্ট্য
সত্ত্বা  ভারত    নেপাল
দৈর্ঘ্য১,৭৫৮ কিলোমিটার (১,০৯২ মা)
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিত১৮১৬

নেপালব্রিটিশ ভারতের মধ্যবর্তী সুগৌলীর চুক্তি
বর্তমান আকৃতি২৯শে শ্রাবণ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ (১৫ই আগস্ট ১৯৪৭)

ব্রিটিশদের থেকে ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতালাভ৷
চুক্তিসমূহইন্দো-নেপাল শান্তি ও বন্ধুত্বের চুক্তি ১৯৫০

মূখ্য স্থলসীমান্ত বন্দর সম্পাদনা

তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে মূখ্য স্থলসীমান্ত বন্দরের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও অস্থায়ী দেশান্তর হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷

১) পানিটাঙ্কি (মেচী সেতু), দার্জিলিং জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতকাঁকড়ভিটা, ঝাপা জেলা, প্রদেশ ১, নেপাল

২) যোগবনী, আরারিয়া জেলা, বিহার, ভারতবিরাটনগর, মোরঙ জেলা, প্রদেশ ১, নেপাল

৩) রক্সৌল, পূর্ব চম্পারণ জেলা, বিহার, ভারতবীরগঞ্জ, পর্সা জেলা, প্রদেশ ২, নেপাল

৪) সোনৌলি, মহারাজগঞ্জ জেলা, উত্তর প্রদেশ, ভারতসিদ্ধার্থনগর, রূপন্দেহী জেলা, প্রদেশ নং ৫, নেপাল

৫) রূপৈদিহা, বাহরাইচ জেলা, উত্তর প্রদেশ, ভারতনেপালগঞ্জ, বাঁকে জেলা, প্রদেশ নং ৫, নেপাল

৬) বনবসা, চম্পাবত জেলা, উত্তরাখণ্ড, ভারতভীমদত্ত, কাঞ্চনপুর জেলা, সুদূরপশ্চিম প্রদেশ, নেপাল

আন্তঃসীমান্ত রেল লাইন সম্পাদনা

ভারত ও নেপালের মধ্যে 8টি রেললাইন হয় বিদ্যমান বা সেগুলি নিম্নরূপ নির্মাণ বা পরিকল্পনাধীন রয়েছে (পূর্ব থেকে পশ্চিমে তালিকাভুক্ত):

  1. রাক্সউল-ড্রাইপোর্ট বীরগঞ্জ(নির্মিত)-কাঠমান্ডু লাইন - পরিকল্পনার অধীনে (জোন: পূর্ব মধ্য    বিভাগ: সমসতীপুর)
  2. জয়নগর-বারদিবাস রেললাইন - বেশিরভাগই সম্পূর্ণ, চূড়ান্ত এবং তৃতীয় ধাপ ছাড়া (এপ্রিল 2022 অনুযায়ী):  2022 সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট 68 কিলোমিটারের মধ্যে 52 কিমি সম্পূর্ণ এবং অবশিষ্টাংশ ভূমি অধিগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে।
  3. জোগবানু-বিরাটনগর রেললাইন - বেশিরভাগই সম্পূর্ণ, নির্মাণাধীন অংশ 8 কিমি দীর্ঘ ছাড়া (এপ্রিল 2022 পর্যন্ত):  মোট 18.6 কিমি।
  4. কাকরভিট্টা-নতুন জলপাইগুড়ি রেললাইন - পরিকল্পনাধীন:

পরিকল্পনাধীন সম্পাদনা

  1. বারহানি-কপিলবস্তু -কাঠমান্ডু লাইন - পরিকল্পনাধীন
  2. নওতানওয়া-ভৈরওয়া লাইন - পরিকল্পনার অধীনে

সীমান্তনিকট রেল লাইন সম্পাদনা

  1. বাবাগঞ্জ-নেপালগঞ্জ লাইন - সম্পূর্ণ এবং কার্যকরী (অঞ্চল: উত্তর পূর্ব    বিভাগ: লক্ষ্ণৌ )

অপ্রধান বন্দরসমূহ সম্পাদনা

ভারত-নেপাল সীমান্তে বিভাজিকার অনুপস্থিতির কারণে একাধিক স্থানে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সীমান্তবন্দর গড়ে উঠেছে৷ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হলো-

১) মিরিক, দার্জিলিং জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত — পশুপতিনগর, ইলাম জেলা, নেপাল

২) বরিয়া, বিহার, ভারত — গৌরীগঞ্জ, ঝাপা জেলা, নেপাল

৩) আমগাছি, বিহার, ভারত — রঙ্গোলি, মোরঙ জেলা, নেপাল

৪) ভীমনগর, বিহার, ভারত — ভাঁটাবাড়ি, সুনসারি জেলা, নেপাল

৫) মাধোয়াপুর, বিহার, ভারত — জনকপুর, নেপাল

৬)ভিট্টামোড়, বিহার, ভারত — জলেশ্বর, নেপাল

৭)শোনবর্ষা, বিহার, ভারত — মালঙ্গোয়া, সর্লাহি জেলা, নেপাল

৮)বাইরগনিয়া, বিহার, ভারত — গৌড়, রৌতহাট, নেপাল

৯)ভিখনা ঠোরি, পশ্চিম চম্পারণ জেলা, বিহার, ভারত — ঠোরি, পর্সা জেলা, নেপাল

১০)বরহ্নি, উত্তর প্রদেশ, ভারত — কৃষ্ণনগর, নেপাল

১১)তুলসীপুর, বলরামপুর জেলা, উত্তর প্রদেশ — কৈলাবাস, নেপাল

১২)তাল বাঘাউড়া, উত্তর প্রদেশ, ভারত — লক্ষ্মণপুর, নেপাল

১৩) মুর্ঠিয়া, উত্তর প্রদেশ, ভারত — গুলারিয়া, বর্দিয়া, নেপাল

১৪) দুধোয়া জাতীয় উদ্যান, উত্তর প্রদেশ, ভারত — ধানগাড়ি, নেপাল

সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পাদনা

ভারত-নেপাল সীমান্ত তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ৷ যেহেতু ভারতীয় ও নেপালবাসীদের একে অপরের দেশে যাতায়াত করতে কোনো নিষ্ক্রমপত্র(পাসপোর্ট) বা প্রবাসাজ্ঞার(ভিসা) প্রয়োজন হয় না তাই প্রত্যহ গড়ে সহস্রাধিক পর্যটক ও আগন্তুক পর্যটনসহ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে এই সীমান্ত পারাপার করে থাকেন৷

সীমানার ভারতের দিক স্থানীয় পুলিশি সহায়তায় সশস্ত্র সীমা বলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একই ভাবে নেপালের দিক নেপাল সশস্ত্র প্রহরী বল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ অনেকক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের যুগ্মপ্রহরা দিতে দেখা যায়৷[২]

সংলগ্ন প্রদেশগুলির প্রতি জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ প্রতিবছর একাধিকবার আলোচনাসভা করে থাকেন৷ যুগ্মপ্রহরা, সীমান্ত সুরক্ষা,বৈদেশিক সম্পর্ক প্রভৃৃতি উক্ত আলোচনাসভার আলোচ্য বিষয় হিসাবে তুলে ধরা হয়৷ উভয় দেশের নগরপালক/মহানাগরিক, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক, সমাহর্তা, স্থানীয় উপস্থাপকরা এই আলোচনায় নিজেদের অভিমত রাখেন৷[৩]

সীমানা বিতর্ক সম্পাদনা

নেপাল ও ভারত উভয়ে দাবীকৃৃত কিছু বিতর্কিত অমিমাংসিত অঞ্চল রয়েছে৷ উত্তর পশ্চিম দিকে ভারত-চিন-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত কালাপানি বিতর্কিত অঞ্চল তার মধ্যে একটি৷ এটি প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত, যা এখন উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার অঞ্চল হিসাবে শাসিত হয়৷ অপরটি হলো দক্ষিণ নেপালে অবস্থিত ১৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুস্তা, যা বর্তমানে নেপালের পরাসী জেলার একটি অঞ্চল হিসাবে পরিগণিত হয়৷[৪][৫]

অবরোধ সম্পাদনা

নেপাল ও ভারতের মধ্যে ঘটিত স্বাধীনতা পরবর্তী অবরোধগুলি নিম্নরূপ-

  • নেপাল অবরোধ ২০১৫: ৫ই আশ্বিন ১৪২২ বঙ্গাব্দে (২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) ঘটিত অর্থনৈতিক ও বদান্য অবরোধের ফল নেপালের অর্থনীতি তৎকালীন বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷
  • ১৩৯৪ বঙ্গাব্দের (১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) নেপাল অবরোধ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Nepal - Entry and Exit Points"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানু ২০১৯ 
  2. "Armed Police Force, SSB start joint patrolling on no man's land"। The Himalayan Times। ৭ জানু ২০১৯। 
  3. "Nepal-India border security meeting concludes"। The Himalayan Times। ১৬ অক্টো ২০১৮। 
  4. "International Boundary Consultants"। ৭ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  5. "Nepal objects to India-China trade pact via Lipu-Lekh Pass"। ৯ জুন ২০১৫ – The Economic Times-এর মাধ্যমে।