ব্র্যাক অন্বেষা
ব্র্যাক অন্বেষা হলো বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট), যা ২০১৭ সালের ৪ জুন মধ্যরাত ৩টা ৭ মিনিটে একটি কার্গো রকেটের মাধ্যমে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সিআরএস-১১ অভিযানের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটিকে মহাকাশের ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।[৪] এরপর ৭ জুলাই ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার থেকে এর নিজস্ব কক্ষপথে ছাড়া হয়।[৪] মহাকাশ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, সাগর-পাহাড়, গ্রাম-নগর ইত্যাদির আলোকচিত্র ধারণ করা যাবে এই ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার[৫] উপরে অবস্থান করে প্রতিদিন ১৬ বার সমস্ত পৃথিবীকে এবং প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ বার বাংলাদেশকে প্রদক্ষিণ করবে।[৬]
ব্র্যাক অন্বেষা | |
---|---|
নাম | বার্ড বিবি |
অভিযানের ধরন | প্রযুক্তি প্রদর্শন পৃথিবী পর্যবেক্ষণ |
পরিচালক | ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় |
সিওএসপিএআর আইডি | 1998-067MX |
এসএটিসিএটি নং | 42823 |
অভিযানের সময়কাল | Elapsed: ২১ মাস, ২৮ দিন |
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য | |
মহাকাশযানের ধরন | ১ ইউ কিউবস্যাট |
উৎক্ষেপণ ভর | ১ কেজি (২.২ পা) |
অভিযানের শুরু | |
উৎক্ষেপণ তারিখ | ৪ জুন ২০১৭,২১:০৭UTC[১] |
উৎক্ষেপণ রকেট | Falcon 9 FT, CRS-11 |
উৎক্ষেপণ স্থান | কেনেডি LC-39A |
ঠিকাদার | স্পেসএক্স |
পরিষেবা চালু হয়েছে | ৭ জুলাই ২০১৭, ৯:১১ ইউটিসি |
অভিযানের সমাপ্তি | |
ক্ষয়ের তারিখ | ৬ মে ২০১৯[২] |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
তথ্য ব্যবস্থা | ভূকেন্দ্রিক |
আমল | নিম্ন কক্ষপথ |
পরাক্ষ | ৬,৭৭৯ কিমি (৪,২১২ মা) |
উৎকেন্দ্রিকতা | 0.0007937 |
অনুভূ | ৩৯৫.৫ কিমি (২৪৫.৮ মা) |
অ্যাপোgee | ৪০৬.২ কিমি (২৫২.৪ মা) |
নতি | 51.6401° |
পর্যায় | 92.57 minutes |
কক্ষীয় প্রসঙ্গ-সময়বিন্দু | 9 August 2017, 03:06:33 UTC[৩] |
ইতিহাস
সম্পাদনাবিশ্বের উন্নত দেশ গুলো অনেক আগে থেকেই ক্ষুদ্রাকৃতিরকৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের এই ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহ ছিলো। তবে ২০১৭ থেকে বাংলাদেশও উক্ত তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে ব্র্যাক অন্বেষা কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে।[৭] ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এবং বর্তমানে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষণারত শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আব্দুল্লাহিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার, এই তিনজন মিলে এই কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ করেছেন। [৮] স্যাটেলাইটটি বানানোর জন্য ২০১৬ সালের জুন মাসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। [৯][১০]
গঠন
সম্পাদনাকৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা প্রণয়ন থেকে চূড়ান্ত কাঠামো নির্মাণের সকল কাজ করেছেন নির্মাতা তিন শিক্ষার্থী। এর গঠনাকৃতি ঘনকের মত। ১ কেজি ওজনের এই কৃত্রিম উপগ্রহের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার করে।[১১]
মিশন
সম্পাদনাউৎক্ষেপণ
সম্পাদনা৩ জুন ২০১৭ তারিখে স্পেস এক্স আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) সিআরএস-১১ মিশনের উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয়। উপগ্রহটি ফ্যালকন ৯ রকেটে করে ড্রাগন মহাকাশযানটিতে বহন করা হয়েছিল, যা নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার প্যাড ৩৯এ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি প্যাড ৩৯এ থেকে ১০০তম উৎক্ষেপণ এবং প্রথমবার স্পেস এক্স তার ড্রাগন ক্যাপসুলগুলির একটি পুনঃব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাওয়ার পর, জাপানী কিবো মডিউল থেকে স্যাটেলাইটটি স্থাপন করা হয়।
উপগ্রহটি ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) উচ্চতায় এবং ৫১.৬ ডিগ্রী বাঁকে পৃথিবীর উপর আবর্তিত হবে। উপগ্রহটি ৭.৬৭ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড (১৭,২০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতিবেগে প্রতি ৯২ মিনিটে পৃথিবীকে একবার করে প্রদক্ষিণ করবে।
ভূকেন্দ্র
সম্পাদনাউপগ্রহটি সাতটি স্থল স্টেশনগুলির সাথে যোগাযোগ করে: বার্ড-১ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশে একটি করে ও এবং থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে একটি করে। বাংলাদেশে স্যাটেলাইট থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভূকেন্দ্র আছে। কেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসের চার নাম্বার ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে যা ২৫ মে ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। এখান থেকে স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।[১২]
কার্যক্রম
সম্পাদনাএই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদ-নদী, সাগর, গ্রাম-শহর ইত্যাদির আলোকচিত্র গ্রহণ করা যাবে,[১২] যা দিয়ে দেশের ভূ-প্রকৃতি, গঠন ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা করা যাবে।[৯] এই কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" যুক্ত করা আছে, যা মহাকাশে ছড়িয়ে দেবে এবং ভূমি থেকেও তা ডাউনলোড করা যাবে।[৯]
সুবিধা
সম্পাদনাবাংলাদেশ তার ভূ-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য অন্য দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ছবি কিনতো,[৯] যা অনেক ব্যায়বহুল ও অবাধ গবেষণার জন্য প্রতিকূল। ব্র্যাক অন্বেষা উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ গবেষণার জন্য নিজের তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করতে পারবে। তখন এর গবেষণা কার্যক্রম আরো বেগবান হবে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Clark, Stephen (৩ জুন ২০১৭)। "Reused Dragon cargo capsule launched on journey to space station"। Spaceflight Now। ৪ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "BIRD BB"। N2YO.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Bird BB - Orbit"। Heavens Above। ৯ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ "'ব্র্যাক অন্বেষা' কক্ষপথে ছাড়া হচ্ছে আজ"। জাগো নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৮।
- ↑ দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট প্রস্তুত, দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
- ↑ "Contract signing Ceremony of Nation's First Nano Satellite project at BRAC University"। BRAC। BRAC University। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত 'ব্র্যাক অন্বেষা'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৭-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য"। দৈনিক সমকাল। ২০১৭-০২-০৯। ২০১৭-০৪-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "মহাকাশে যাচ্ছে ন্যানো-স্যাটেলাইট!"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২০১৬-০৬-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলাদেশ আগামী বছর দুটি স্যাটেলাইটের মালিক হচ্ছে"। জনকন্ঠ। ৫ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Brac University says 'hi' to first nano-satellite"। দ্য ডেইলি স্টার। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ "ব্র্যাক অন্বেষা কক্ষপথে"। jugantor.com। ২০১৭-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৮।