ব্রাইস ম্যাকগেইন

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

ব্রাইস এডওয়ার্ড ম্যাকগেইন (ইংরেজি: Bryce McGain; জন্ম: ২৫ মার্চ, ১৯৭২) ভিক্টোরিয়ার মর্নিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ব্রাইস ম্যাকগেইন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামব্রাইস এডওয়ার্ড ম্যাকগেইন
জন্ম (1972-03-25) ২৫ মার্চ ১৯৭২ (বয়স ৫২)
মর্নিংটন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
উচ্চতা১.৮২ মিটার (৬ ফুট ০ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ ব্রেক ও গুগলি
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ৪১০)
১৯ মার্চ ২০০৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০২ - ২০১১ভিক্টোরিয়া
২০০২ডেনমার্ক
২০১০এসেক্স
২০১১ - ২০১২অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৩ ২৬
রানের সংখ্যা ২৪৮ ৯৭
ব্যাটিং গড় ১.০০ ১০.৭৮ ১৯.৪০
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ০/১
সর্বোচ্চ রান ২৫ ৫১
বল করেছে ১০৮ ৬,৩২১ ১৩২০
উইকেট ১০১ ৩৪
বোলিং গড় - ৩৫.৪৮ ৩১.২০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ০/১৪৯ ৬/১১২ ৩/১১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/- ১৩/- ৯/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ মার্চ ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স, অস্ট্রেলিয়া এ, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও ডেনমার্ক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি লেগ ব্রেক ও গুগলি বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন ব্রাইস ম্যাকগেইন

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাইস ম্যাকগেইনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ২০০২ সালে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ব্রাইস ম্যাকগেইনের। তবে, ভিক্টোরিয়ার অপর স্পিনারদ্বয় - শেন ওয়ার্ন ও ক্যামেরন হোয়াইটের কারণে দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে নিতে পারেননি।

ভিক্টোরিয়া দলে পুনরায় অংশগ্রহণ করার পূর্বে একটি ব্যাংকের আইটি বিভাগে কাজ করেন। পাশাপাশি ভিক্টোরিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেটে প্রাহরান ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলতেন।

আইটি পেশা পরিত্যাগ করে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আশাতীত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। এক বছরের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। ভারত সফরে যান। এরফলে, অস্ট্রেলিয়ায় স্পিনার হিসেবে তার দীর্ঘদিনের যাত্রা শুরুর প্রত্যাশা করা হয়। অস্ট্রেলিয়া এ দলে সদস্য হিসেবে বৃষ্টিবিঘ্নিত সফরই এর প্রধান কারণ ছিল। এ সফরে দলের প্রধান স্পিনার ছিলেন।

অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়লে বয়সের কারণে তার টেস্ট দলে অংশগ্রহণের স্বপ্ন অনেকাংশেই ক্ষীণ হয়ে পড়ে। জানুয়ারি, ২০০৯ সালে রাজ্য দলের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। শেফিল্ড শিল্ডে সময় উপযোগী পাঁচ-উইকেট প্রাপ্তির প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রায় পনেরো বছর রাজ্য দলে খেলেন। কেবলমাত্র, শেন ওয়ার্ন, কলিন মিলারক্যামেরন হোয়াইট তাদের ধীরগতিসম্পন্ন বোলিংয়ের কারণে এতগুলো বছর খেলতে পেরেছিলেন। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত তিনবার পুরা কাপে খেলেন। কিন্তু, খুব কমই প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। এএনজেড ব্যাংকে আইটি শাখায় চাকরি করেন। এ পর্যায়ে প্রাহরান দলের পক্ষে গ্রেড ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। তবে, জানুয়ারি, ২০০৭ সালে ক্যামেরন হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া দলে অংশগ্রহণ করলে ম্যাকগেইনকে দুই খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগান তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/১১২ নিয়ে সিডনিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অন্যতম খেলার বিজয়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

স্বর্ণালী সময় সম্পাদনা

প্রথমবারের মতো রাজ্য দলের সাথে চুক্তি লাভের সুযোগ পান। চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘অধিকাংশ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারের বয়সই ৩৫ বছরের ও দশ বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন। তবে, আমার নেই।’ শুরুতে তিনি বেশ ভালো করেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে পুরা কাপের শীর্ষস্থানীয় স্পিনারের মর্যাদা পান। এ মৌসুমেই ব্রাইস ম্যাকগেইন ভিক্টোরিয়া দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ৩৪.৭৮ গড়ে ৩৮ উইকেট দখল করেন ও এফআর কাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[১] ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রত্যেকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, সীমিত ওভারের খেলায়ও অপ্রত্যাশিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বোলার হয়ে উঠেন। ২৪.৪০ গড়ে ১৫ উইকেট লাভ করেন। এমনকি, টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান। ১৬.১৬ গড়ে ছয় উইকেট পান ও ওভারপ্রতি ৬.৪৬ রান দেন। এরফল, চ্যাম্পিয়ন দলটিতে তার দক্ষতার বহিঃপ্রকাশে স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসেন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে তাসমানিয়ার কাছ থেকে চূড়ান্ত খেলায় বিজয় ছিনিয়ে আনেন। শেষদিকে ৩/১১ পান। টাইগার্স ও ব্লুজের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। তবে, পুরা কাপের চূড়ান্ত খেলায় এ সফলতা পাননি। এসসিজির পিচে সর্বোচ্চ দক্ষতার প্রকাশ করতে পারেননি। এরফলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাকে অস্ট্রেলিয়া দলে রাখা হয়নি। তাসত্ত্বেও, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের অবসর গ্রহণের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় লেগ স্পিনার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ব্রাইস ম্যাকগেইন। ১৯ মার্চ, ২০০৯ তারিখে কেপ টাউনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ স্পিন পরামর্শক টেরি জেনারের পরামর্শক্রমে ২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২] তবে, দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে তার এ প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। এর পরিবর্তে, সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে তাকে প্রেরণ করা হয়। এ পর্যায়ে রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থা একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেলেও ব্যাট কিংবা বল হাতে তাকে দেখা যায়নি। তাসত্ত্বেও, ২০০৮-০৯ মৌসুমে চার টেস্ট নিয়ে গড়া ভারত সফরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৩] দূর্ভাগ্যজনকভাবে, এ সফরে একটিমাত্র প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের পর কাঁধের আঘাতের কবলে পড়ে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।[৪][৫]

অবশেষে, ৩৬ বছর বয়সে মার্চ, ২০০৯ সালে কেপ টাউনের নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ব্রাইস ম্যাকগেইনের টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।[৬] বব হল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার বয়োজ্যেষ্ঠ টেস্ট অভিষেকধারীর মর্যাদা পান। কিন্তু, সঠিক নিশানায় বল ফেলতে হিমশিম খান।

তবে, অভিষেক খেলাটি তার জন্যে বেশ দুর্বিষহ ছিল। ১৮ ওভারে ১৪৯ রান দিয়ে কোন উইকেটের সন্ধান পাননি তিনি। কোন টেস্ট খেলায় এটিই যে-কোন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের সর্বাপেক্ষা বাজে পরিসংখ্যান ছিল।[৭] তিনি ১৯৫০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জন ওয়ারের ১৪২ রান খরচ করে উইকেট শূন্যতার রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।[৮] দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তার বোলিং থেকে অনেকগুলো ছক্কা হাঁকায় তারা। প্রথম ইনিংসে দুই রান তুললেও দ্বিতীয় ইনিংসে রান আউটের শিকার হন।

কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পরও ভিক্টোরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে স্বীয় অবস্থান বহাল রাখেন। ২০০৯-১০ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে ৩২.৫০ গড়ে ২৬ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, চূড়ান্ত খেলায় কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় উইকেট পেয়েছিলেন। ঐ গ্রীষ্মের শেষে বয়সসীমা ৩৮ বছর হলেও নতুনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে এসেক্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. First-class Bowling in Each Season by Bryce McGain[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Cricket World, 12 September 2008
  2. Terry Jenner says Bryce McGain worth the risk ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে Herald Sun. Retrieved 13 December 2007
  3. Rajasthan Cricket Association XI v Australians, Cricket Archive, retrieved 28 March 2009
  4. McGain ruled out of India tour, Cricket God, 4 October 2008
  5. McGain injures his shoulder. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে, Cricket With balls, 4 September 2008
  6. "Bryce McGain to make Test debut"Herald Sun। ১৯ মার্চ ২০০৯। ২২ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০০৯ 
  7. "Australian Test records – Worst bowling figures in an innings"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  8. Tweedle, Alistair (১৪ অক্টোবর ২০১৫)। "Adil Rashid is record-breakingly bad for England - but is spared complete humiliation"The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৬ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা