ফ্রাঙ্ক অ্যালান

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

ফ্রান্সিস আরস্কাইন ফ্রাঙ্ক অ্যালান (ইংরেজি: Frank Allan; জন্ম: ২ ডিসেম্বর, ১৮৪৯ - মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭) ভিক্টোরিয়ার অ্যালান্সফোর্ডে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮৭৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি মিডিয়াম হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন ‘ক্যাঙ্গারু’ ডাকনামে পরিচিত ফ্রাঙ্ক অ্যালান

ফ্রাঙ্ক অ্যালান
১৮৭৮ সালে ফ্রাঙ্ক অ্যালান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ফ্রান্সিস আরস্কাইন অ্যালান
জন্ম(১৮৪৯-১২-০২)২ ডিসেম্বর ১৮৪৯
অ্যালান্সফোর্ড, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭(1917-02-09) (বয়স ৬৭)
মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামশতাব্দীর বোলার, ক্যাঙ্গারু
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনবামহাতি মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩১
রানের সংখ্যা ৩৭১
ব্যাটিং গড় ৫.০০ ১০.৯১
১০০/৫০ ০/০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ৩৫*
বল করেছে ১৮০
উইকেট ১২৩
বোলিং গড় ২০.০০ ১৩.৩১
ইনিংসে ৫ উইকেট ১১
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ২/৩০ ৮/২০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/০ ১৪/০
উৎস: ক্রিকইনফো, ১১ অক্টোবর ২০১৮

শৈশবকাল

সম্পাদনা

১৮৪৯ সালে টুরামে ফ্রাঙ্ক অ্যালানের জন্ম। ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টসের অ্যালান্সফোর্ডের দুই মাইল দূরে ওয়ার্নাম্বুলের কাছাকাছি পিতা জন ম্যাকমাহন অ্যালান গবাদিপশুর খামার পরিচালনা করতেন।[] ১৮০৮ সালে হেলিগোল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী জনকে প্রথম ব্রিটিশ শিশু জন্মগ্রহণকারীর মর্যাদা দেয়া হয় ও পিতামাতা নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে স্থানান্তরিত হন। জনের বাবা ডেভিড অ্যালান স্কটিশ ছিলেন ও লাচলান ম্যাককুয়ারির শাসন আমলে ডেপুটি কমিসারি জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন।[] জন ও ক্যারোলিন দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে ফ্রাঙ্ক অ্যালান তৃতীয় ছিলেন।[]

অ্যালানের পরিবার স্থানীয় আদিবাসী গোত্র গিরাই ওরাংয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। জন তাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে রক্ষাকর্তা ও আদিবাসী রক্ষা কেন্দ্রীয় সংস্থায় সম্মানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতেন।[] ফ্রাঙ্ক এ পদ সম্পর্কে বলেন যে, এ দায়িত্ব গ্রহণের দায়বদ্ধতা ও প্রচণ্ড পরিশ্রম মূলতঃ তার বাবা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে করতেন।[]

গিরাই ওরাংয়েরা ফ্রাঙ্কের প্রধান সঙ্গী ছিল ও শৈশবকাল কাটে। তাদের সাথে মিশে ভাষা, প্রথা, বুমেরাংয়ের সাহায্যে শিকার করা, নুলা নুলা ও অন্যান্য আদিবাসী অস্ত্রাদির প্রয়োগ সম্পর্কে অবগত হন। তন্মধ্যে, বুমেরাংয়ের সাহায্যে ক্রিকেটে বোলিং কৌশলে প্রয়োগ ঘটান।[] আদিবাসীদের সাথে অবস্থান করে তার নিক্ষেপের শক্তিমত্তা প্রায়শঃই অতিপ্রাকৃত পর্যায়ের ছিল।[]

১৮৬৩ সালে ভিক্টোরীয় স্বর্ণ উদগীরনের সময়কালে অটওয়েজে স্বর্ণ আহরণের লক্ষ্যে অভিযানে গেলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।[] এ অভিযানের নেতৃত্বে তার বাবা ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ফ্রাঙ্ক ও দুই আদিবাসী বালক স্বর্ণ আহরণ করলেও তা বিক্রয়যোগ্য ছিল না।[]

আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতা

সম্পাদনা

সাউথ মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সাথে আজীবন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৮৬৬ সালে প্রথমবারের মতো দলের পক্ষে খেলতে শুরু করেন ফ্রাঙ্ক অ্যালান। ঐ মৌসুমেই বোলিং গড়ে ক্লাবের শীর্ষস্থানীয় বোলারের মর্যাদা লাভে স্বীয় অপ্রত্যাশিত স্বভাবসুলভ সক্ষমতা প্রদর্শন করেন। ১৮৬৭ সালে সতেরো বছর বয়সে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলার প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নেন। উইলিয়াম হ্যামারস্লের ভাষায় তা অভূতপূর্ব ছিল।[] ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৯ সালে দ্বিতীয় আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় ভিক্টোরীয় অধিনায়ক টম উইলসকে সাথে নিয়ে বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় প্রথম ইনিংসে ৮/২০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/৪৪ নিয়ে ভিক্টোরিয়ার ৭৮ রানের জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।[১০] ফ্রাঙ্ক অ্যালানের এ সাফল্যে আন্তঃঔপনিবেশিক ক্রিকেটে শতাব্দীর সেরা বোলার ডাকনামের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল।[১১]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

ভিক্টোরিয়ার পক্ষে আন্তঃঔপনিবেশিক খেলার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। ভিক্টোরিয়ার বোলিং আক্রমণের প্রধান মেরুদণ্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আন্তঃঔপনিবেশিক খেলাগুলোয় অসাধারণ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করতেন এবং ১৮৭৩-৭৪ মৌসুমে ডব্লিউ. জি. গ্রেসের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন। ফলশ্রুতিতে, গ্রেস তাকে পেশাদারী পর্যায়ে খেলার প্রস্তাবনা দেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন যে, তার ন্যায় সেরা বোলারের বিপক্ষে কখনো ব্যাটিং করেননি।

১৮৭৮ সালে প্রথমবারের মতো গঠিত অস্ট্রেলীয় প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্যরূপে বিদেশ সফরে যান এবং ইংল্যান্ড ও উত্তর আমেরিকায় গমন করেন। তবে, এ সফরের অধিকাংশ সময়ই তিনি শারীরিক অসুস্থতার মুখোমুখি হন। ইংল্যান্ডের ঠাণ্ডা ও পোতানো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি ও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে গমন করেন। সফরের সকল খেলায় অংশ নিয়ে দুই শতাধিক উইকেটের সন্ধান পান। তবে, ইংল্যান্ডে মাটিতে পা রাখার পরপরই বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

১৮৭৭ সালে জেমস লিলিহোয়াইটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাসের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু, বিতর্কিতভাবে দলের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। ১৮৭৮-৭৯ মৌসুমে লর্ড হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন নিখিল ইংল্যান্ড একাদশের মুখোমুখি হন তিনি।

পরের বছর মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান তিনি। ২ জানুয়ারি, ১৮৭৯ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ফ্রাঙ্ক অ্যালানের। ১৮৭৯ সালে সফরকারী লর্ড হ্যারিস একাদশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। দুই বছর পূর্বে ইতিহাসের প্রথম দুই টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হলেও উদ্বোধনী টেস্টের চেয়ে বন্ধুদের নিয়ে ওয়ার্নাম্বুলের কৃষি মেলায় অংশগ্রহণকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি।[১২]

খেলার ধরন

সম্পাদনা

দীর্ঘদেহী বামহাতি মিডিয়াম পেসার হিসেবে তিনি শতাব্দীর বোলার হিসেবে পরিচিতি পান। সেরা স্পিন বোলারের ন্যায় ভঙ্গীমা প্রদর্শন করতেন ও অদ্ভুত ধরনের বোলিং করতেন যা তিনি আদিবাসী ভিক্টোরীয় বুশদের বুমেরাং ব্যবহার করা থেকে শিখেছিলেন। এছাড়াও, উইকেট লাভের পর উচ্ছ্বাস প্রদর্শনের জন্য প্রাণীদের ন্যায় লাফাতেন। ফলশ্রুতিতে ক্যাঙ্গারু ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন।

বোলিং করা ছাড়াও চমৎকার ফিল্ডিং করতেন ও নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামলেও অনেকের কাছে বিস্ময়বোধক ও কুৎসিত আকৃতির ছিল।[১৩]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

ক্রিকেট মৌসুমের বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল খেলতেন। সাউথ মেলবোর্নের পর আলবার্ট পার্কের পক্ষে খেলেছেন। ক্রিকেট ছাড়াও, বিলিয়ার্ড, বন্দুকচালনায় অংশ নিতেন। অবসর গ্রহণের পর বোলস খেলায় অংশ নেন। বড়শিতে মাছ ধরতে বেশ পছন্দ করতেন। বড় ধরনের খেলার তুলনায় মৎস্য শিকারে ডুবে থাকতেন।[১৪] প্রথিতযশা প্রকৃতিবিদ ডোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ডের অভিমত, ফ্রাঙ্ক অ্যালান মাছ সম্পর্কে বেশ জানতেন ও তার সমকক্ষ অস্ট্রেলিয়ায় অন্য কেউ ছিল না।[১৫]

ফ্রাঙ্ক অ্যালান ওয়ার্নাম্বুলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে আজীবন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯১৬ সালে দ্য ক্যাম্পারডাউন ক্রনিকলে অ্যালানের উইলমটের স্মৃতিচারণ করা হয়। এতে উইলমট ও অন্যান্য কৃষকায় বালকদের সাথে শিকার ও মাছ ধরার কথা তুলে ধরেন তিনি। একান্ত আগ্রহী ছাত্রদেরকে শেখানোর মতো করে তাকেও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল।

খেলাধূলার বাইরে অ্যালান ভিক্টোরিয়ার মূখ্য বালাইনাশক পরিদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। অস্ট্রেলীয় প্রাণী ও উদ্ভিদকূল রক্ষায় জড়িত ছিলেন তিনি।

দেহাবসান

সম্পাদনা

২৯ জানুয়ারি, ১৯১৭ তারিখে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বোলিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ফ্রাঙ্ক অ্যালান। সেখানে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে ফ্লিন্ডার্স লেনের মিস গার্লিকস প্রাইভেট হসপিটালে তাকে প্রেরণ করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ তারিখে ভিক্টোরিয়ার মেলবোর্নে ৬৮ বছর বয়সে ফ্রাঙ্ক অ্যালানের দেহাবসান ঘটে। কিউ’র বোরুন্ডারা সিমেট্রিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাকে সমাহিত করা হয়।[]

তার স্মরণে উইজডেন লেখে যে, ফ্রাঙ্ক অ্যালান অস্ট্রেলিয়ার অনেক সেরা বোলারদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছিলেন ও বিশেষ গুণাবলীর অধিকারী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে ক্রিকেট বিশ্বে জানান দেন।[১৬]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. McLeod ও McLeod 2006, পৃ. 23, 35।
  2. McLeod ও McLeod 2006, পৃ. 19।
  3. McLeod McLeod, পৃ. 33।
  4. "The Last of His Tribe". Campderdown Chronicle (Camperdown). 3 August 1916. p. 4. Retrieved 10 June 2016.
  5. "Death of Mr. Frank Allan: The Bowler of a Century". The Argus (Melbourne). 10 February 1917. p. 16. Retrieved 12 June 2016.
  6. "In the Early Days: Coming of the Allans". The Argus (Melbourne). 8 May 2016. p. 10. Retrieved 10 June 2016.
  7. McLeod McLeod, পৃ. 22।
  8. "Current Topics". Geelong Advertiser (Geelong). 10 February 1863. p. 2. Retrieved 10 June 2016.
  9. "The Intercolonial Match: Victoria v. New South Wales". The Australasian (Melbourne). 28 December 1867. p. 11. Retrieved 10 June 2016.
  10. "New South Wales v Victoria in 1868/69", Cricket Archive. Retrieved 20 December 2013.
  11. Moyes, Alban George. Australian Bowlers from Spofforth to Lindwall. Angus and Robertson, 1953, p. 29
  12. Knox, p. 5.
  13. "Cricket". South Australian Register (Adelaide). 26 December 1876. p. 7. Retrieved 12 June 2016.
  14. "Nature Notes and Queries". The Argus (Melbourne). 23 February 1917. p. 5. Retrieved 10 June 2016.
  15. "Frank Allan's Career. Expert Bushman: Authority on Nature Study". Referee (Sydney). 21 February 1917. p. 12. Retrieved 10 June 2016.
  16. Rice ও Renshaw 2011, পৃ. 115।

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

গ্রন্থ

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা