অও
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা৩২,৭৭৫[১]
ধর্ম
অও ধর্ম
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
অসমীয়া

অও আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একটি উপজাতি। একসময় ত্রিপুরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেও এরা বসবাস করতো। ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুসারে অওদের জনসংখ্যা ছিল ৩২,৭৭৫। এ উপজাতির মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা অধিকভাবে পরিলক্ষিত হয়।[১]

নৃতত্ত্ব সম্পাদনা

অও-রা তিনটি শাখায় বিভক্ত- চোঙলি, মোঙসেন ও চঙকি। প্রতিটি শাখাই আবার একাধিক উপশাখায় বিভক্ত। অওগণ অন্যান্য উপজাতির চেয়ে আকৃতিতে বেশ লম্বা - গড়ে প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি। এদের গায়ের রং তামাটে, কোঁকড়া চুল। দেহ যথেষ্ট লোমশ। অওদের নাক চ্যাপ্টা এবং মুখমন্ডল মঙ্গোলীয়দের মতো কিছুটা চওড়া। [১]

পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পাদনা

অও পুরুষগণ সাধারণত স্বল্প কাপড় পরে থাকে। মেয়েরা এক গজ থেকে দেড় গজ লম্বা ও বিশ থেকে ত্রিশ ইঞ্চি চওড়া কাপড় পরিধান করে। তাদের কাপড় পরার কায়দা অনেকটা জাঙ্গিয়ার মতো। অবিবাহিত মেয়েরা ফিতা দিয়ে বুক বেঁধে রাখে কিন্তু বিবাহিতা মেয়েদের বক্ষ উন্মুক্ত থাকে। পুরুষ ও নারী সবাই প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত লতাপাতা, চামড়া, পাখির পালক ও নানারকম পাথরের অলঙ্কার পরিধান করে থাকে।

অওগণ খুবই শান্তিপ্রিয়। প্রতিরোধ মনোভাবের অভাবের ফলে এরা প্রায়ই উর্বর এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে অনাবাদি পার্বত্য ভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তবে অওরা বেশ কলহপ্রিয়। কলহ এদের জন্য একটি বিনোদন বিশেষ।

জীবিকা সম্পাদনা

অওগণ প্রদানত শিকার করে। তাঁরা কৃৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাঁদের প্রধান খাদ্য ভাত। ধান-চাল ধন-সম্পত্তি তাঁদের কাছে সম্মানের পরিচায়ক। তাঁরা জুম চাষ প্রথায় জমি আবাদ করে। ধান ব্যতীত তুলা চাষও তাঁদের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত। তুলা থেকে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের কাপড় বানিয়ে থাকে। অতীব প্রয়োজন হলে অওগণ চোরাগর্ত খুঁড়ে হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার করে থাকে। দলবদ্ধভাবে এরা বাঘহাতি শিকার করে।

সংস্কৃতি সম্পাদনা

ধর্ম সম্পাদনা

অওগণের ধর্মে নৈতিকতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাঁদের ধর্ম কিছু পূজা-অর্চনা ও বলি প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেবতাকে তুষ্ট ও অপদেবতাকে প্রতিহত করার জন্য তাঁরা প্রায়ই বলি দিয়ে থাকে। আত্মা, পরজন্ম, জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে তাঁদের ধারণা খুবই সরল।

বিয়ে সম্পাদনা

অওরা সমগোত্রীয় বিবাহ করে না। বিয়ে করার পূর্বে একজন অও পাত্র প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পাত্রীর সঙ্গে কিছুকাল সহবাস করে। পছন্দ হলে পাত্রীর মা-বাবা পাত্রপক্ষের নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। যদি পছন্দ না হয়, তবে প্রস্তাব আসার আগেই পাত্রীর সঙ্গ ত্যাগ করতে হয়। বিয়ে কিংবা উৎসবের সময় মেয়েরা বিচিত্র পোশাক পরে।

সামাজিক সংগঠন সম্পাদনা

অওদের সামাজিক সংগঠন বয়সের ওপর নির্ভর করে। সমস্ত গ্রামবাসীদের বয়সভেদে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হয়। দলের সদস্যরা সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের হয়ে থাকে। প্রত্যেক দলের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। চাষ, শিকার, উৎসব, ভোজ, বাড়ি নির্মাণ, আত্মরক্ষা প্রভৃতি কাজ এক একটি দলের ওপর ন্যস্ত থাকে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "অও - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org