বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত
বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত (১৩ মে ১৮৮৮ ― ৫ জানুয়ারি ১৯৭৪) ছিলেন একজন প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী। তিনি জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ঈশানচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকিল।
বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত | |
---|---|
জন্ম | ১৩ মে ১৮৮৮ |
মৃত্যু | ৫ জানুয়ারি ১৯৭৪ |
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
ছাত্র রাজনীতি
সম্পাদনাজলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন তিনি ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। বিলিতি কাপড় পোড়ানোর জন্যে প্রধান শিক্ষক অন্য এক ছাত্রকে বেত্রদন্ড দিলে তার প্রতিবাদে তিনি স্কুল ত্যাগ করেন ও কলকাতায় আসেন। ১৯০৬ সালে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের পরিচালনাধীন শিক্ষালয়ে (বর্তমান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) যোগ দেন। ছাত্রাবস্থায় অরবিন্দ ঘোষ ছাড়াও বিনয় সরকার, সতীশচন্দ্র মুখার্জী, রাধাকুমুদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শিক্ষক হিসেবে পান এবং ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের সাহচর্যে বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্যে মেধাবী বীরেন্দ্রনাথ স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকা যাত্রা করেন এবং পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পান।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিপ্লবী তৎপরতা
সম্পাদনাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের সাথে যোগ দেন এবং গোপনে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করে 'মির্জা আলি হায়দার' ছদ্মনামে পাসপোর্ট নিয়ে দুঃসাহসিক পথে রটারডেম হয়ে বার্লিন আসেন ১৯১৪ এর শেষার্ধে। সেখানে সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন। মানবেন্দ্রনাথ রায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের সাথে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অধিবেশনে মস্কো গেছিলেন তিনি।[১][২]
যুদ্ধক্ষেত্রে
সম্পাদনাবার্লিন কমিটির অন্যতম প্রধান মৌলানা বরকতুল্লাহর সেক্রেটারি হিসেবে আলেপ্পো ও জেরুজালেম যান। ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে তুর্কি সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করেছেন বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। নিজ কৃতিত্ববলে তিনি মেজর হন এবং সুয়েজ খাল রক্ষার লড়াইতে আহত হন। দিনের পর দিন জল না খেয়ে মরুভূমিতে লড়াই করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে উদ্ধার করে আনেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বীরেন চট্টোপাধ্যায়।[৩]
লেখালিখি
সম্পাদনাযুদ্ধে আহত হওয়ার পর তিনি সুইজারল্যাণ্ডে সাত বছর অতিবাহিত করেছেন ব্যবসায়। জার্মান ব্যবসায়ীর সাথে ইন্দো-সুইস ট্রেডিং কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন ১৯২১ সালে। এসময় লেখালিখির কাজেও রত ছিলেন। ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে তার একাধিক প্রবন্ধ বিখ্যাত Nue Zuricher Zeitung পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে প্রত্যাবর্তন
সম্পাদনা১৯২৪ সালে দেশে ফিরলেও ব্রিটিশ পুলিশের তাড়ায় তাকে আবার জার্মানি চলে যেতে হয়। ১৯৩৭ সালে হিটলারের রোষানলে পড়ে একমাস হামবুর্গের আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে কাটাতে হয়।
সমাজসেবা
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতবর্ষে আবার ফিরে আসেন তিনি, তবে আর সক্রিয় ভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি তবু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যথাযথ সাহায্য করতেন। ১৯৫০ সালে নদীয়াতে একটি সর্বোদয় আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেবামূলক উদ্দেশ্যে। বিনয় সরকার ইনস্টিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সে'র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ প্রমথ খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২ জানুয়ারি)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৬২। আইএসবিএন 81-85626-65-0। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ শুক্লা, ইন্দ্রনীল (২০২১-০৪-১৫)। "স্বামীজির 'বিপ্লবী' ভাইয়ের রিসার্চ পেপার লেনিনের হাতে"। EiSamay Gold। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৫।
- ↑ রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী, চিন্মোহন সেহানবীশ (১৯৭৩)। পরিশিষ্ট। কলকাতা: মনীষা গ্রন্থালয়। পৃষ্ঠা ৩২০।