ঈশ্বরের পুত্র

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা MohdMabroor (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:০৮, ১৯ জুন ২০২২ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (নতুন নিবন্ধ)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

ঐতিহাসিকভাবে, অনেক শাসকই ঈশ্বরের পুত্র, দেবপুত্র বা স্বর্গের পুত্র এ ধরণের উপাধি ধারণ করেছেন।[১]

"ঈশ্বরের পুত্র" শব্দটি হিব্রু বাইবেলে ঈশ্বরের সাথে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত মানুষদের উল্লেখ করার জন্য ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এক্সোডাসে, ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র বলা হয়েছে।[২] সুলাইমানকেও "ঈশ্বরের পুত্র" বলা হয়েছে।[৩][৪] ফেরেশতা, ন্যায়পরায়ণ এবং ধার্মিক ব্যক্তি এবং ইস্রায়েলের রাজাদের সবাইকে " ঈশ্বরের পুত্র" বলা হয়েছে।[৫]

খ্রিস্টান বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে, "ঈশ্বরের পুত্র" শব্দটি অনেক ক্ষেত্রে যীশুর ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে।[৬] দুটি জায়গায়, যীশুকে স্বর্গ থেকে কথা বলা একটি কণ্ঠের দ্বারা ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যীশু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং নিউ টেস্টামেন্টে বর্ণিত বিভিন্ন মহান ব্যক্তিরা তাকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবেও বর্ণনা করেছেন।[৬][৭][৮][৯] যীশুকে বলা হয়েছে "ঈশ্বরের পুত্র" এবং তার অনুসারীদের বলা হয়েছে "ঈশ্বরের পুত্রগণ"।[১০] যীশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শব্দটি মসীহ বা ঈশ্বর নির্বাচিত রাজা খ্রিস্ট হিসাবে তাঁর ভূমিকার একটি উল্লেখ।[১১] ( Matthew 26:63)। যে প্রেক্ষাপটে ও যে উপায়ে যীশুর উপাধি, ঈশ্বরের পুত্র, "মসীহ" উপাধি ছাড়াও আরও কিছু বা অন্য কিছু বুঝায়, তা চলমান শাস্ত্রিক অধ্যয়ন এবং আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে থেকে যায়।

"ঈশ্বরের পুত্র" পরিভাষাটিকে "পুত্র ঈশ্বর" (গ্রিক: Θεός ὁ υἱός) পরিভাষাটির সাথে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়, যা কিনা খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বে ত্রিত্বের দ্বিতীয় সত্ত্বা। ত্রিত্ব মতবাদ যীশুকে ঈশ্বর পুত্র হিসাবে চিহ্নিত করে, সারগত অভিন্ন কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে পিতা ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর এর ব্যাপারে স্বতন্ত্র। অত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানরাও যীশুর প্রতি "ঈশ্বরের পুত্র" শব্দটির প্রয়োগ গ্রহণ করে, যা নিউ টেস্টামেন্টে আছে।

শাসক এবং রাজকীয় উপাধি

ইতিহাস জুড়ে, চীনের পশ্চিম ঝো রাজবংশ (আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে শুরু করে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (সি. 360 খ্রিস্টপূর্ব) ও জাপানের সম্রাট (আনু. ৬০০ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত সম্রাট এবং শাসকরা এমন উপাধি গ্রহণ করেছেন যা তাদের সাথে দেবতাদের একটি ফিলিয়াল তথা সন্তানোচিত সম্পর্কের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।[১২][১৩][১৪][১৫]

"স্বর্গপুত্র" উপাধিটি অর্থাৎ天子 ( অর্থ আকাশ/স্বর্গ/দেবতা এবং অর্থ শিশু) পশ্চিম ঝো রাজবংশে (আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব) প্রথম ব্যবহৃত হয়। শিজিং সঙ্গিত বইয়ে এর উল্লেখ রয়েছে, এবং তাতে প্রতিফলিত করা হয় ঝোউ বিশ্বাসকে যেখানে বলা হয়েছে, স্বর্গের পুত্র (এবং তার প্রতিনিধি হিসাবে) চীনের সম্রাট স্বর্গের আদেশ দ্বারা সমগ্র বিশ্বের মঙ্গলের জন্য দায়ী ছিলেন।[১৬][১৭] এই শিরোনামটিকে "ঈশ্বরের পুত্র" হিসাবেও অনুবাদ করা যেতে পারে কারণ চীনা ভাষায় তিয়ান শব্দের অর্থ আকাশ বা ঈশ্বর হতে পারে।[১৮] জাপানের সম্রাটকে ৭ম শতাব্দীর শুরুতে স্বর্গের পুত্র (天子 তেনশি ) নামেও ডাকা হত।[১৯] ইউরেশীয় যাযাবরদের মধ্যে, "ঈশ্বরের পুত্র/স্বর্গের পুত্র" এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে, শাসককে বলা হত চানিউ, [২০] এবং অনুরূপ উপাধিগুলি ১৩ শতকের শেষের দিকে চেঙ্গিস খান কর্তৃক ব্যবহৃত হয়।[২১]

রাজাদের ঈশ্বরের পুত্র বলে বিবেচিত হওয়ার উদাহরণ প্রাচীন নিকট প্রাচ্য জুড়েও পাওয়া যায়। বিশেষ করে মিশরে একটি দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য গড়ে উঠে। মিশরীয় ফেরাউনদেরকে একটি নির্দিষ্ট দেবতার পুত্র হিসাবে উল্লেখ করা হত এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের জন্মদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট যৌন বিবরণ দেওয়া হত। মিশরীয় ফেরাউনদের তাদের ঐশ্বরিক পিতার সাথে পূর্ণ সমতা ছিল না বরং তারা অধস্তন ছিল।[২২]:৩৬ তা সত্ত্বেও, প্রথম চারটি রাজবংশের মধ্যে, ফেরাউনদেরকে দেবতার মূর্ত প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এভাবে মিশর সরাসরি ধর্মতন্ত্র দ্বারা শাসিত হত,[২৩] যেখানে "স্বয়ং ঈশ্বর" ছিলেন রাষ্ট্রের স্বীকৃত প্রধান"।[২৪] পরবর্তী আমার্না যুগে, আখেনাতুন ফেরাউনের সেই প্রধান ভূমিকাকে কমিয়ে আনেন যেখানে ফেরাউন এবং ঈশ্বর পিতা ও পুত্র হিসাবে শাসন করতেন। আখেনাতুন অন্যদের দ্বারা তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে নিজেই ঈশ্বরের পুরোহিতের ভূমিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে, নিকটতম মিশর হোরেনহোরের রাজত্বকালে ইহুদী থিওক্রেসির বৈকল্পিকে ফিরে আসে। তিনি শাসকের ভূমিকা গ্রহণ করেন একজন মহাযাজক এবং রাজা হিসাবে, দেবতা হিসাবে নয়।[২৩]

তথ্যসুত্র

  1. Introduction to the Science of Religion by Friedrich Muller 2004 আইএসবিএন ১-৪১৭৯-৭৪০১-X page 136
  2. (Exodus 4:22)
  3. The Tanach - The Torah/Prophets/Writings। Stone Edition। ১৯৯৬। পৃষ্ঠা 741। আইএসবিএন 0-89906-269-5 
  4. The Tanach - The Torah/Prophets/Writings। Stone Edition। ১৯৯৬। পৃষ্ঠা 1923। আইএসবিএন 0-89906-269-5 
  5. "Catholic Encyclopedia: Son of God"। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৪ 
  6. "Catholic Encyclopedia: Son of God"। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৪ 
  7. One teacher: Jesus' teaching role in Matthew's gospel by John Yueh-Han Yieh 2004 আইএসবিএন ৩-১১-০১৮১৫১-৭ pages 240–241
  8. Dwight Pentecost The words and works of Jesus Christ 2000 আইএসবিএন ০-৩১০-৩০৯৪০-৯ page 234
  9. The International Standard Bible Encyclopedia by Geoffrey W. Bromiley 1988 আইএসবিএন ০-৮০২৮-৩৭৮৫-৯ pages 571–572
  10. "International Standard Bible Encyclopedia: Sons of God (New Testament)"BibleStudyTools.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৪ 
  11. Merriam-Webster's collegiate dictionary (10th ed.) (2001). Springfield, MA: Merriam-Webster.
  12. Introduction to the Science of Religion by Friedrich Muller 2004 আইএসবিএন ১-৪১৭৯-৭৪০১-X page 136
  13. China : a cultural and historical dictionary by Michael Dillon 1998 আইএসবিএন ০-৭০০৭-০৪৩৯-৬ page 293
  14. East Asia: A Cultural, Social, and Political History by Patricia Ebrey, Anne Walthall, James Palais 2008 আইএসবিএন ০-৫৪৭-০০৫৩৪-২ page 16
  15. A History of Japan by Hisho Saito 2010 আইএসবিএন ০-৪১৫-৫৮৫৩৮-৪ page
  16. China : a cultural and historical dictionary by Michael Dillon 1998 আইএসবিএন ০-৭০০৭-০৪৩৯-৬ page 293
  17. East Asia: A Cultural, Social, and Political History by Patricia Ebrey, Anne Walthall, James Palais 2008 আইএসবিএন ০-৫৪৭-০০৫৩৪-২ page 16
  18. The Problem of China by Bertrand Russell 2007 আইএসবিএন ১-৬০৫২০-০২০-৪ page 23
  19. Rethinking Japan: Social Sciences, Ideology and Thought। Japan Library Limited। ২০০৩। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 0-904404-79-X 
  20. Xiongnu (people) article 
  21. Darian Peters (জুলাই ৩, ২০০৯)। "The Life and Conquests of Genghis Khan"। Humanities 360। এপ্রিল ২৬, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  22. King and Messiah as Son of God: Divine, Human, and Angelic Messianic Figures in Biblical and Related Literature। Wm. B. Eerdmans Publishing। ২০০৮। আইএসবিএন 9780802807724। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  23. Jan Assmann (২০০৩)। The Mind of Egypt: History and Meaning in the Time of the Pharaohs। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 300–301। আইএসবিএন 9780674012110। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৪ 
  24. "Catholic Encyclopedia"। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৪