জীববিজ্ঞানে বিলুপ্তি বলতে সাধারণত জীব বা একদল ট্যাক্সন, বা একটি প্রজাতির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বোঝায়। বিলুপ্তি সাধারণত প্রজাতির শেষ প্রাণীর মৃত্যুর মুহূর্তটিকে বলা হয়, এরপর সেই প্রজাতির কোনো জীবন্ত নমুনা প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারে আর দেখা যায় না। যদিও তাদের প্রজনন ও পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা এই সময়ের আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে। একটি প্রজাতির সম্ভাব্য ক্ষমতার পরিসীমা খুব বেশি হতে পারে, তাই এই মুহুর্তটি নির্ধারণ করা কঠিন, এবং সাধারণত অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করে এর হিসেব হয়। এই অসুবিধার ফলে বিলুপ্ত, কিন্তু পুনরাবির্ভূত ট্যাক্সনের মতো ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কোনও প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে হলেও, আপাত অনুপস্থিতির কিছু সময় পরে হঠাৎ "পুনরায় আবির্ভূত" হয় (জীবাশ্ম নথি অনুযায়ী)।

সংরক্ষণ অবস্থা
Bufo periglenes, the Golden Toad, was last recorded on May 15, 1989
বিলুপ্ত
সংকট জনক
কম সংকট জনক

অন্যান্য শ্রেণী

সম্পর্কিত বিষয়

IUCN Red List category abbreviations (version 3.1, 2001)

উপরে রেড লিস্ট ক্লাসের তুলনা
এবং নিচে NatureServe স্ট্যাটাস


NatureServe category abbreviations
ডোডো, জ্যান স্যাভেরির ১৬৫১ সালের চিত্রকর্মে। আধুনিক বিলুপ্তির একটা উদাহরণ হিসেবে প্রায়ই ডোডো'র কথা বলা হয়ে থাকে।[]

পাঁচশো কোটি প্রজাতির মধ্যে, সমস্ত প্রজাতির ৯৯ শতাংশেরও বেশি,[] যারা কোন সময় পৃথিবীতে বেঁচে ছিল, সে সব প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে।[][][] পৃথিবীর বর্তমান প্রজাতির সংখ্যা আনুমানিক ১ কোটি থেকে ১.৪ কোটি,[] যার মধ্যে প্রায় ১২ লাখ প্রজাতি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৮৬ শতাংশেরও বেশির কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।[] আরো সম্প্রতি, ২০১৬ সালের মে মাসে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে বর্তমানে পৃথিবীতে আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন প্রজাতি রয়েছে যাদের ১ শতাংশের ১০০০ ভাগের এক ভাগ সম্বন্ধে জানা গেছে।[]

বিবর্তন এর মধ্য দিয়ে প্রজাত্যায়ন (স্পিসিশন) প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রানের বিকাশ ঘটে — তারা কোনও পরিবেশগত যথাযোগ্য স্থান সন্ধান করে নেয় এবং পরিবেশে কোন বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় যখন তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারেনা বা উচ্চশক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। প্রাণী এবং তাদের পরিবেশগত যথাযোগ্য স্থানের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[] একটি সাধারণ প্রজাতি তার প্রথম উপস্থিতির ১ কোটি বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায়,[] যদিও জীবিত জীবাশ্ম নামে পরিচিত কিছু প্রজাতি, কয়েক কোটি বছর ধরে অঙ্গসংস্থানের কোনও পরিবর্তন না করে বেঁচে আছে।

গণবিলুপ্তির ঘটনা খুবই কম ঘটে; তবে, কিন্তু একক বিলুপ্তি খুবই সাধারণ ঘটনা। অতি সাম্প্রতিক সময়ে বিলুপ্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ রাখা শুরু হয় এবং বিজ্ঞানীরা বর্তমান উচ্চমাত্রায় বিলুপ্তির ব্যাপারে সতর্কতার কথা জানান।[১০][১১][১২][১৩] বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ প্রজাতিই বৈজ্ঞানিকভাবে কখনই নথিভুক্ত হয়নি। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন যে বর্তমানে বিদ্যমান উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।[১৪] ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মানব যুগে ৩০০ স্তন্যপায়ী প্রজাতির ফাইলোজেনেটিক বৈচিত্র মুছে গেছে যেহেতু অন্ত প্লাইস্টোসিন পুনরুদ্ধার করতে ৫০ থেকে ৭০ লাখ বছর প্রয়োজন।[১৫]

আইপিবিইএস এর দ্বারা ২০১৯ জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশবিজ্ঞান পরিষেবাদি সম্পর্কিত গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে, বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জৈববস্তু ৮২% কমে গেছে, প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল শেষ হয়ে গেছে এবং দশ লক্ষ প্রজাতির সামনে ঝুঁকি রয়েছে বিলুপ্তির — এগুলির অধিকাংশই মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফল। পঁচিশ শতাংশ গাছপালা এবং প্রাণীজ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।[১৬][১৭][১৮]

২০১৯ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী, দশ লক্ষ প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ছিল। ১৭৫০ সাল থেকে কমপক্ষে ৫৭১ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির মূল কারণ হল - বন কেটে ফেলা এবং জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করা জাতীয় মানব ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস করা।[১৯]

যে সমস্ত প্রজাতি বা ট্যাক্সন বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের বোঝানোর জন্য সেই প্রজাতির নামের পাশে একটি ছোরা চিহ্ন (†) ব্যবহার করা হয়।

.

সংজ্ঞা

সম্পাদনা
 
ওহাইওর উচ্চ কার্বোনিফেরাস থেকে বিলুপ্ত লেপিডোডেনড্রনের বাহ্যিক ছাঁচ[২০]
 
বিভিন্ন বিলুপ্ত ডাইনোসরের কঙ্কাল; অন্য কিছু ডাইনোসর বংশ এখনও পাখি আকারে বিকশিত

পরিবেশবিজ্ঞানে, বিলুপ্তি প্রায়শই সাধারণভাবে স্থানীয় বিলুপ্তি উল্লেখ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রজাতিটি গবেষণা চলা স্থানে বিলুপ্ত হয়েছে, তবে অন্য কোথাও তখনো থাকতে পারে। এই ঘটনাটি উন্মূলন হিসাবেও পরিচিত। স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত প্রাণীগুলি অন্য স্থান থেকে এনে প্রজাতির একটি প্রতিস্থাপন হতে পারে; এর একটি উদাহরণ নেকড়ে পুনরায় প্রত্যাবর্তন। যে প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়নি, তাদের জীবিত ট্যাক্সন বলা হয়। যেগুলি অস্তিত্বশীল কিন্তু বিলুপ্তির পথে তাদের বিপন্ন বা বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ বিদ্যমান সদস্য মারা গেলে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়। যখন কোন প্রজাতিতে পুনরুৎপাদন এবং একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম কেউ বেঁচে না থাকে, তখন সেই প্রজাতির বিলুপ্তি নিশ্চিত বলে ধরা হয়। একটি প্রজাতি হয়ে উঠতে পারে কার্যত বিলুপ্ত যখন কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বেঁচে থাকে, যারা খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে, বয়সের কারণে, একটি বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে, উভয় লিঙ্গের সঙ্গীর অভাবে (যৌন প্রজননক্ষম প্রজাতির মধ্যে) অথবা অন্য কোন কারণে পুনরুৎপাদন করতে পারে না। একটি প্রজাতির বিলুপ্তি (বা অলীক বিলুপ্তি) নির্দেশ করে একটি প্রজাতির স্পষ্ট সংজ্ঞা প্রয়োজন। যদি কোন প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হয়, তবে তাকে অবশ্যই কোনও পূর্বপুরুষ বা পরের প্রজাতির থেকে এবং অন্যান্য যে কোনও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত প্রজাতি থেকে বিশেষভাবে স্বতন্ত্র হতে হবে। স্টিভেন জে গুল্ড এবং নাইলস এল্ডারেজের জোর দেওয়া সাম্যাবস্থা অনুমানে একটি প্রজাতির বিলুপ্তি (বা পরের প্রজাতি দ্বারা প্রতিস্থাপন) মূল ভূমিকা পালন করে।[২১]


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Diamond, Jared (১৯৯৯)। "Up to the Starting Line"। Guns, Germs, and SteelW. W. Norton। পৃষ্ঠা 43-44। আইএসবিএন ০-৩৯৩-৩১৭৫৫-২ 
  2. Kunin, W.E.; Gaston, Kevin, সম্পাদকগণ (১৯৯৬)। The Biology of Rarity: Causes and consequences of rare–common differencesআইএসবিএন 978-0412633805। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৫ 
  3. Stearns, Beverly Peterson; Stearns, S.C.; Stearns, Stephen C. (২০০০)। Watching, from the Edge of ExtinctionYale University Press। পৃষ্ঠা preface x। আইএসবিএন 978-0-300-08469-6। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৭ 
  4. Novacek, Michael J. (৮ নভেম্বর ২০১৪)। "Prehistory's Brilliant Future"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-২৫ 
  5. Newman, Mark (১৯৯৭)। "A model of mass extinction"। Journal of Theoretical Biology189 (3): 235–252। arXiv:adap-org/9702003 ডিওআই:10.1006/jtbi.1997.0508পিএমআইডি 9441817 
  6. G. Miller; Scott Spoolman (২০১২)। Environmental Science – Biodiversity Is a Crucial Part of the Earth's Natural CapitalCengage Learning। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 978-1-133-70787-5। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-২৭ 
  7. Mora, C.; Tittensor, D.P.; Adl, S.; Simpson, A.G.; Worm, B. (২৩ আগস্ট ২০১১)। "How many species are there on Earth and in the ocean?"PLOS Biology9 (8): e1001127। ডিওআই:10.1371/journal.pbio.1001127পিএমআইডি 21886479পিএমসি 3160336  
  8. Staff (২ মে ২০১৬)। "Researchers find that Earth may be home to 1 trillion species"National Science Foundation। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৬ 
  9. Sahney, S.; Benton, M.J.; Ferry, P.A. (২০১০)। "Links between global taxonomic diversity, ecological diversity and the expansion of vertebrates on land"Biology Letters6 (4): 544–547। ডিওআই:10.1098/rsbl.2009.1024পিএমআইডি 20106856পিএমসি 2936204  
  10. Species disappearing at an alarming rate, report says. NBC News. Retrieved July 26, 2006.
  11. ইউটিউবে The Sixth Extinction (PBS Digital Studios, November 17, 2014)
  12. Ceballos, Gerardo; Ehrlich, Paul R.; Barnosky, Anthony D.; García, Andrés; Pringle, Robert M.; Palmer, Todd M. (২০১৫)। "Accelerated modern human–induced species losses: Entering the sixth mass extinction"Science Advances1 (5): e1400253। ডিওআই:10.1126/sciadv.1400253পিএমআইডি 26601195পিএমসি 4640606 বিবকোড:2015SciA....1E0253C 
  13. Ripple WJ, Wolf C, Newsome TM, Galetti M, Alamgir M, Crist E, Mahmoud MI, Laurance WF (১৩ নভেম্বর ২০১৭)। "World Scientists' Warning to Humanity: A Second Notice"। BioScience67 (12): 1026–1028। ডিওআই:10.1093/biosci/bix125Moreover, we have unleashed a mass extinction event, the sixth in roughly 540 million years, wherein many current life forms could be annihilated or at least committed to extinction by the end of this century. 
  14. Wilson, E.O., The Future of Life (2002) (আইএসবিএন ০-৬৭৯-৭৬৮১১-৪). See also: Leakey, Richard, The Sixth Extinction : Patterns of Life and the Future of Humankind, আইএসবিএন ০-৩৮৫-৪৬৮০৯-১
  15. Davis M, Faurby S, Svenning JC (২০১৮)। "Mammal diversity will take millions of years to recover from the current biodiversity crisis"Proc Natl Acad Sci U S A115 (44): 11262–11267। ডিওআই:10.1073/pnas.1804906115পিএমআইডি 30322924পিএমসি 6217385  
  16. Watts, Jonathan (মে ৬, ২০১৯)। 06/human-society-under-urgent-threat-loss-earth-natural-life-un-report "Human society under urgent threat from loss of Earth's natural life" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)The Guardian। সংগ্রহের তারিখ মে ৬, ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  17. Plumer, Brad (মে ৬, ২০১৯)। "Humans Are Speeding Extinction and Altering the Natural World at an 'Unprecedented' Pace"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ মে ৬, ২০১৯ 
  18. Staff (মে ৬, ২০১৯)। "Media Release: Nature's Dangerous Decline 'Unprecedented'; Species Extinction Rates 'Accelerating'"Intergovernmental Science-Policy Platform on Biodiversity and Ecosystem Services। সংগ্রহের তারিখ মে ৬, ২০১৯ 
  19. "'Frightening' number of plant extinctions found in global survey"The Guardian। ১০ জুন ২০১৯। 
  20. Davis, Paul and Kenrick, Paul. Fossil Plants. Smithsonian Books, Washington, DC. (2004). Morran, Robin, C. [আইএসবিএন অনুপস্থিত]; A Natural History of Ferns. Timber Press (2004). আইএসবিএন ০-৮৮১৯২-৬৬৭-১
  21. See: Niles Eldredge, Time Frames: Rethinking of Darwinian Evolution and the Theory of Punctuated Equilibria, 1986, Heinemann আইএসবিএন ০-৪৩৪-২২৬১০-৬

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Extinction

টেমপ্লেট:Zoos টেমপ্লেট:Deforestation and desertification টেমপ্লেট:Death