বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বাংলাদেশ সরকারের তেল আমদানি ও বাজারজাত করার জন্য নিয়োজিত একটি সংস্থা।[১]
গঠিত | ১৯৭৬ |
---|---|
আইনি অবস্থা | সক্রিয় |
সদরদপ্তর | [[ঢাকা (ময়মনসিংহ) ]], বাংলাদেশ |
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
চেয়ারম্যান (সচিব) | মোঃ আমিন উল আহসান |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
সম্পাদনাবাংলাদেশে অপরিশোধিত তেল, জ্বালানি, লুব্রিকেটিং তেল এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি ও বিতরণের জন্য ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ (নং-৮৮, ১৩/ ১১/১৯৭৬) বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়।[২] ২০০৯ সালের হিসাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের বার্ষিক আমদানির মাত্রা ছিল ২৯০ লাখ ব্যারেল।[৩] ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে সবচেয়ে লাভজনক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখা যায়। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এটি ৯০ বিলিয়ন টাকার বেশি আয় করে।[৪] ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সালে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন একটি নতুন সূত্র ব্যবহার করে তেলের দাম নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল যা আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম সমন্বয় করবে। কোম্পানির আশঙ্কা ছিল দেশীয় বাজারে কম দাম কোম্পানির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং তা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় তেল চোরাচালানকে উৎসাহিত করতে পারে।[৫] ২০২০ সালে, বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় কোষাগারে উদ্বৃত্ত বা নিষ্ক্রিয় তহবিল জমা দেওয়ার জন্য আইন পরিবর্তন করে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা কর-মূসক হিসেবে জাতীয় কোষাগারে টাকা জমা দেয়।[৬]
প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাবাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি)র অধীনে আটটি কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে:
বিপণন
সম্পাদনারিফাইনারি
সম্পাদনা- ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), বাংলাদেশের একমাত্র তেল শোধনাগার
লুব্রিকেন্টস
সম্পাদনাএলপি গ্যাস
সম্পাদনাতেল ডিপো
সম্পাদনাবাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তার অধীনস্থ কোম্পানিসমূহের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল মজুতের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যাতে সময়মত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। বিপিসির অধীনস্থ কোম্পানিসমূহ স্থানীয় বাজারে তার পণ্যসমূহ বিপণনের জন্য মার্কেটিং এজেন্টদের ব্যবহার করে।
দেশের প্রধান প্রধান জ্বালানি তেলের মজুতক্ষেত্র বা ডিপোগুলি হচ্ছে:
- গোদনাইল তেল ডিপো (নারায়ণগঞ্জ)
- দৌলতপুর তেল ডিপো (খুলনা)
- ফতুল্লা তেল ডিপো (ঢাকা) এবং
- বাঘাবাড়ি তেল ডিপো (পাবনা)
মাঝারি আকৃতির ডিপোসমূহ হচ্ছে:
- রংপুর তেল ডিপো
- পার্বতীপুর তেল ডিপো (দিনাজপুর)
- ভৈরব বাজার তেল ডিপো
- আশুগঞ্জ তেল ডিপো
- শ্রীমঙ্গল তেল ডিপো
- ঢাকা তেল ডিপো
- চাঁদপুর তেল ডিপো
- বরিশাল তেল ডিপো এবং
- ঝালকাঠি তেল ডিপো
ছোট ডিপোসমূহ হচ্ছে:
- চিলহাটি তেল ডিপো (কুড়িগ্রাম)
- বালাসি তেল ডিপো (গাইবান্ধা)
- রাজশাহী তেল ডিপো
- হরিয়ান তেল ডিপো
- নাটোর তেল ডিপো
- সিলেট তেল ডিপো এবং
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া তেল ডিপো
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় মজুতক্ষেত্র সমূহ ২,০৬,০০০ টন এবং দেশের অন্যান্য ডিপোসমূহ প্রায় ৬,৮৮,০০০ টন জ্বালানি তেল মজুত ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।[১]
তেল পাইপলাইন
সম্পাদনাবাংলাদেশ ভারত মৈত্রী পাইপলাইন
সম্পাদনাপাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আনার লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। ১৩১.৫০ কিলোমিটার পথে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শেষ হলে ভারতের নুলাইবাড়ী রিফাইনারি লিমিটেড থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে। প্রথম দিকে এর লক্ষ্য মাত্রা বছরে দুই লাখ মেট্রিক টন হলেও পরবর্তীতে দশ লাখ মেট্রিক টনে উন্নিত করা হবে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি-মহেশখালী তেল পাইপলাইন
সম্পাদনামহেশখালীর পশ্চিমাংশে বঙ্গোপসাগর থেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি তেল খালাসের উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্র থেকে মহেশখালী হয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড পর্যন্ত তেল পাইপলাইন নির্মাণ করেছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকার গুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। যার ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করা যায়। গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় এইচএসডি স্থানান্তরের জন্য পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম-ঢাকা তেল পাইপলাইন
সম্পাদনাচট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। দেশের মোট জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশ তেল পরিবহন হয় নৌপথে। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাঙ্কার নিয়োজিত রয়েছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতার কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে চাহিদার বিপরীতে নৌপথে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হবে না। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে প্রায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। তাতে স্বাভাবিক জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নত হয়। তাই জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রাম-ঢাকা তেল পাইপলাইন নির্মাণ করছে সরকার। যা বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে মোট ব্যবহার হয় ৪২ শতাংশ। যার পুরোটাই চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুর ডিপোতে নেয়া হয়। এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলো শ্যালো ড্রাফট ট্যাঙ্কারযোগে উত্তরবঙ্গের বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ মুশফিকুর রহমান (২০১২)। "বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন"। www.bpc.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Bangladesh to lay submarine pipeline for unloading oil"। রয়টার্স (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-১০-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "Petroleum Corporation most profitable"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৬-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "তেলের দাম নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব বিপিসির"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ "লাভে ফিরছে বিপিসি"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড"। mpl.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "বিপিসি ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের তালিকা" (পিডিএফ)। bpc.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "এল পি গ্যাস লিমিটেড"। lpgl.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।