বলাগড় বন্দর বা বলাগড় টার্মিনাল হল পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রস্তাবিত নদী বন্দর।[১][২] এই বন্দরটি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে ভাগীরথী-হুগলী নদী পশ্চিম পাড়ে হুগলী জেলার বলাগড়ে। নির্মাণের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ₹৩০০ কোটি টাকা।[৩] শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বন্দর বা বার্জ টার্মিনাল নির্মাণ জন্য দরপত্র ২০২১ সালের শেষের দিকে দরপত্রের আহ্বান করা হবে।[৪]

বলাগড় বন্দর
অবস্থান
দেশ ভারত
অবস্থানবলাগড়, হুগলী জেলা, পশ্চিমবঙ্গ
বিস্তারিত
পরিচালনা করেকলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ
মালিকজাহাজ মন্ত্রক, ভারত সরকার
পোতাশ্রয়ের ধরননদী বন্দর
প্রতাশ্রয়ের গভীরতা৪ মিটার (১৩ ফু)

অবস্থান সম্পাদনা

বলাগড় বন্দর সমুদ্র সমতল থেকে ১৫ মিটার উচ্চতায় এবং ২৩.১২ ডিগ্রী উত্তর ও ৮৮.৪৬ ডিগ্রী পূর্বে অবস্থিত। এই বন্দর হুগলী জেলার চুঁচুড়া মহকুমায় অবস্থিত। বন্দরটি ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠবে। এটি কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডক থেকে নদী বা জলপথে ৯০ কিলোমিটার দূরে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে নদী পথে ২৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

অতীত সময় থেকেই নদী বন্দর ও নৌপরিবহনের কেন্দ্র হিসাবে বলাগড়ের পরিচিত রয়েছে। বলাগড় প্রাচীন বাংলায় এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে নৌকা নির্মাণ শিল্পের প্রধান কেন্দ্র।[৫] বর্তমান সময়ে বড় বড় জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন এবং সড়ক ও রেল পথে পণ্য পরিবহনের কারণে বলাগড় নৌপরিবহনের ক্ষেত্র থেকে অবলুপ্ত হয়েছিল। তবে নতুন করে বলাগড় বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব বলাগড়ের অতীত ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধি করবে।

উদ্দেশ্য সম্পাদনা

কলকাতা বন্দরে পণ্য পরিবহন প্রতিবছর ৯%-১০% হারে বৃদ্ধি পাছে। অপর দিকে নাব্যতা সমস্যার জেরে কলকাতা বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বরাবরই অসুবিধার মুখে পড়ে এবং কলকাতা বা হলদিয়ায় গড়ে ২০-২৫ হাজার টনের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ আসতে পারে না।[৩][৬] যে কারণে বন্দর এলাকার বাইরে জেটি বা টার্মিনাল গড়ে দানবীয় জাহাজ সাগরে এনে, সেখান থেকে বার্জে করে পণ্য খালাসের নীতি নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।[৬] বলাগড়ে নতুন টার্মিনাল বা বন্দর তৈরির সিদ্ধান্তও তা ভেবেই। এর হাত ধরে কলকাতা বন্দরে বার্জের আনাগোনা আরও বাড়বে। ঠিক যে ভাবে হলদিয়ায় লক গেটের সমস্যা যুঝতে বন্দরের বাইরে তৈরি হচ্ছে নতুন জেটি।

নদীপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে হুগলী জেলার বলাগড়ে একটি ছোট টার্মিনাল ও তাকে ঘিরে শিল্পাঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ (কেপিটি)।[৭] এর ফলে কলকাতা বন্দর বা হলদিয়া বন্দর থেকে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জট অনেকটা কমবে এবং বলাগড় থেকে উত্তর ভারতে দ্রুত পণ্য পরিবহন করা যাবে।[১]

নদীপথে পরিবহনে জোর দিতে হুগলির বলাগড়ে কেপিটি-র হাতে থাকা ৩০০ একর জমিতে টার্মিনালটি গড়া হবে।[১]

হলদিয়া থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত জাতীয় জলপথ ১ প্রকল্পে ছ’টি বড় টার্মিনাল বা নদীবন্দর নির্মানের কথা, যার মধ্যে রয়েছে হলদিয়া বহুমুখী টার্মিনালসাহেবগঞ্জ নদী বন্দর নির্মানের কাজ চলছে এবং বারাণসী বন্দর পণ্য পরিবহন শুরু করেছে।[১] সে ক্ষেত্রে বলাগড়ে ছোট টার্মিনাল বা বন্দর গড়া হলে নদীপথে পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা হবে। হলদিয়া বন্দর বা কলকাতা বন্দরে পণ্য খালাসের পরে তা সড়ক বা রেল পথে পাঠাতে বাড়তি সময় লাগে। পরিবর্তে কলকাতা বন্দর বা হলদিয়া বন্দর থেকে বার্জে করে সোজা নদীপথে বলাগড়ের ছোট নদী বন্দর বা টার্মিনালে তা পাঠানো যাবে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বলাগড়ে টার্মিনাল, লক্ষ্য উত্তর ভারত"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ৯ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  2. "Kolkata Port planning to set up a barge terminal at Balagarh"। BusinessLine। www.thehindubusinessline.com। ১২ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৯ 
  3. "বলাগড়ে টার্মিনাল, কাজ শুরু সেপ্টেম্বরেই"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  4. "DEVELOPMENT, OPERATIONS AND MAINTENANCE OF BARGE TERMINAL AT BALAGARH, WEST BENGAL."www.kolkataporttrust.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ 
  5. "Boat makers work at traditional workshop at Balagarh, India"। Global Times। www.globaltimes.cn। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ১২ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  6. "KoPT wants barge terminal at Balagarh"। Times of India। timesofindia.indiatimes.com। ২৮ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  7. "Kolkata Port Trust mulls river terminal, economic zone on Ganga at Balagarh"। Times of India। timesofindia.indiatimes.com। ৮ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা