প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবী

প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবী বলতে প্রাচীন মিশরে উপাসিত দেবদেবীদের বোঝায়। প্রাগৈতিহাসিক মিশরে কোনও এক যুগে দেবদেবী-কেন্দ্রিক যে সব মতবাদ, প্রথা ও রীতিনীতি গড়ে ওঠেছিল, তাই কালক্রমে মিশরীয় ধর্মের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে গঠন করে। এই দেবদেবীরা ছিলেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও ঘটনার প্রতীক। প্রাচীন মিশরে দেবদেবীদের তুষ্ট করতে মূর্তিপূজা, নৈবেদ্য উৎসর্গ, বলিদান সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালিত, এই সকল প্রাকৃতিক শক্তি মাত অর্থাৎ দৈব শৃঙ্খলা মেনে কাজ করতে পারে। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দ নাগাদ মিশরীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর এই জাতীয় ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদনার দায়িত্ব ফ্যারাওগণ তুলে নেন নিজেদের হাতে। তাঁরা নিজেদের দেবদেবীর প্রতিনিধি বলে দাবি করতেন এবং যে সব মন্দিরে এই সকল ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদিত হত সেগুলি ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও গ্রহণ করেন।

Painted relief of a seated man with green skin and tight garments, a man with the head of a jackal, and a man with the head of a falcon
রাজ-উপত্যকায় হোরেমহেবের সমাধিতে (রা.উ.৫৭) তিন দেবতা ওসাইরিস, আনুবিসহোরাসের খোদাইচিত্র
রাজ-উপত্যকায় প্রথম সেতির সমাধিতে (রা.উ.১৭) এক সারিতে দেবগণের চিত্র

মিশরীয় পুরাণে শুধু দেবতাদের জটিল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিই নয়, বরং এই দেবদেবীদের মধ্যে জটিল সম্পর্কে মানুষের যে-সব ধারণা ছিল (যেমন, পারিবারিক বন্ধন, গোষ্ঠী ও পদমর্যাদার শিথিলতা এবং পৃথক পৃথক দেবতার এক দেবতায় সংযুক্তি) তা-ও প্রকাশ পেয়েছে। পশুপাখি, মানুষ, জড় বস্তু ও বিভিন্ন রূপের সমন্বয়ে শিল্পকলায় দেবদেবীদের যে বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিপ্রকাশ দেখা যায়, তা-ও প্রতীকতত্ত্বের মাধ্যমে এই দেবদেবীদের মৌল বৈশিষ্ট্যগুলিরই দ্যোতক।

মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভিন্ন ভিন্ন দেবদেবী দেবমণ্ডলীতে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় সৌরদেবতা রা, রহস্যময় দেবতা আমুনমাতৃকা দেবী আইসিসের নাম। মিশরীয় সৃষ্টিতত্ত্বে সচরাচর সর্বোচ্চ দেবতাকেই জগতের সৃষ্টিকর্তার মর্যাদা দেওয়া হত এবং প্রায়শই এই সর্বোচ্চ দেবতার সঙ্গে সূর্যের জীবনদায়ী শক্তির একটি যোগসূত্র স্থাপন করা হত। মিশরীয় সাহিত্য অংশত পর্যালোচনা করে কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, মিশরীয়েরা ধীরে ধীরে এমন এক একক দৈবশক্তিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন, যিনি সর্ববস্তুর পশ্চাতে এবং অন্যান্য সকল দেবদেবীর অন্তরে নিহিত। তথাপি জগৎ সম্পর্কে তাদের যে মূলগত বহুদেববাদী দৃষ্টিভঙ্গি তা তারা কখনই পরিত্যাগ করেনি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দীতে আতেনবাদের যুগ। এই যুগে রাষ্ট্রধর্ম এককভাবে আতেন নামে এক বিমূর্ত সৌরদেবতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হত।

মিশরীয় বিশ্বাসে দেবদেবীরা সমগ্র জগতে বিরাজমান এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ও মানবজীবনের ধারাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম ছিলেন। জনসাধারণ ব্যক্তিগত কারণে, এমনকি রাষ্ট্রীয় ধর্মাচরণের বৃহত্তর উদ্দেশ্যেও মন্দিরে বা অননুমোদিত পূজাস্থানে গিয়ে দেবদেবীদের পূজা নিবেদন করত। দেবতাদের সাহায্য লাভের আশায় তারা প্রার্থনা করত, বিভিন্ন ক্রিয়াকাণ্ডের মাধ্যমে দেবতাদের দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিয়ে নিতে চেষ্টা করত অথবা নিছক দৈব পরামর্শ গ্রহণের জন্যও দেবতাদের শরণ গ্রহণ করত। মানুষ ও দেবতার এই সম্পর্কটি ছিল প্রাচীন মিশরীয় সমাজের এক মৌলিক অংশ।

সংজ্ঞা

সম্পাদনা
হায়ারোগ্লিফাসে "দেবতা"
R8Z1A40

or
R8G7

or
R8

nṯr
"দেবতা"[]
R8D21
X1
I12

nṯr.t
"দেবী"[]

প্রাচীন মিশরীয়দের ধ্যানধারণায় কত প্রকার সত্ত্বাকে দেবদেবী হিসেবে চিহ্নিত করা হত, তার সংখ্যা গণনা করা বেশ কঠিন। মিশরীয় সাহিত্যে এমন অনেক দেবদেবীর নাম পাওয়া যায়, যাঁদের প্রকৃতির কথা কিছুই উল্লিখিত হয়নি। আবার এমন কিছু দেবতারও অস্পষ্ট ও পরোক্ষ ইঙ্গিত করা হয়েছে, যাঁদের নাম পর্যন্ত উল্লিখিত হয়নি।[] মিশরতত্ত্ববিদ জেমস পি. অ্যালেনের অনুমান, মিশরীয় সাহিত্যে চোদ্দোশোরও বেশি দেবদেবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে,[] কিন্তু তাঁর সহকর্মী ক্রিস্টিয়ান লেইৎজ বলেছেন যে, প্রাচীন মিশরীয়রা "হাজার হাজার" দেবদেবীতে বিশ্বাস করত।[]

মিশরীয় ভাষায় এই সব সত্ত্বাকে বলা হত nṯr ("পুরুষ দেবতা") বা nṯrt ("দেবী)"।[] এই শব্দগুলির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকেরা এই সব দেবতার মৌলিক প্রকৃতি উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাঁদের কোনও প্রস্তাবনাই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। শব্দের উৎসগুলিও অস্পষ্টই রয়ে গিয়েছে। এই শব্দগুলির লিখনে চিত্রলিপিতে যে-সব ধারকলিপিসীমানানির্দেশক ব্যবহৃত হত, সেগুলি মিশরীয়দের সঙ্গে দেবতাদের যোগাযোগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।[] এই সব চিহ্নের মধ্যে পতাকাদণ্ডের উপর উড্ডীয়মান পতাকার চিহ্নটি প্রায়শই দেখা যায়। প্রাচীন মিশরের সমগ্র ইতিহাস জুড়ে মন্দিরে দেবতার উপস্থিতির প্রতীক হিসেবে মন্দিরগুলির প্রবেশপথে অনুরূপ চিহ্ন স্থাপন করা হত। এই রকম আরেকটি চিহ্ন হল বাজপাখি। এই চিহ্নটি বাজপাখি রূপে কল্পিত বেশ কয়েকজন আদ্যকালীন দেবতার স্মৃতি বহন করে। এ-সব ছাড়াও অন্যান্য দেবদেবীর উপবিষ্ট অবস্থার ছবি বা মূর্তি দেখা যায়।[] স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দগুলি ডিম্বাকার চিহ্নের আকারেও সীমানানির্দেশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকতে। এগুলির সঙ্গে সৃষ্টিকার্য ও জন্মের সঙ্গে দেবীদের ভূমিকাকে যুক্ত করা হত। আবার এই জাতীয় শব্দগুলির জন্য গোখরো সাপের চিহ্নও ব্যবহৃত হত।[]

মিশরীয়রা nṯrw ("দেবগণ") ও rmṯ ("জনসাধারণ") শব্দের মধ্যে পার্থক্য বজায় রেখেছিল; কিন্তু মিশরীয় ও ইংরেজি পরিভাষাগুলির অর্থ যথাযথভাবে খাপ খায় না। nṯr পরিভাষাটি কোনও না কোনও ভাবে দৈনন্দিন জীবনের বৃত্তের বাইরে স্থিত যে কোনও সত্ত্বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।[] nṯr শব্দটি অসুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হত; কারণ মিশরীয়রা মনে করত যে দেবতারা অসুস্থদের পছন্দ করেন।[] কিন্তু যাদের আধুনিক গবেষকেরা "দানব" হিসেবে চিহ্নিত করেন, সেই নিম্নস্তরের অতিলৌকিক সত্ত্বাদের ক্ষেত্রে এই শব্দটি কদাচিৎই ব্যবহৃত হত।[১০] মিশরীয় ধর্মীয় শিল্পকলায় মানুষের আকারেও স্থান, বস্তু বা ধারণাগুলিকে চিত্রায়িত করা হত। ব্যক্তিরূপে প্রকাশিত এই ধারণাগুলি পুরাণকথা এবং প্রথা ও রীতিনীতিতে গুরুত্বপ্রাপ্ত দেবদেবীদের থেকে অনেকটাই দূরবর্তী ধারণা। এগুলির উল্লেখ দুই কি একবারের বেশি হয়নি। সম্ভবত এগুলি রূপকালংকার ব্যতীত আর কিছুই নয়।[১১]

দেবতা ও অন্যান্য সত্ত্বাদের মধ্যে এই অস্পষ্ট পৃথকীকরণের মীমাংসা করতে গিয়ে গবেষকেরা "দেবতা" শব্দের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। জান অ্যাসমান কর্তৃক একটি সংজ্ঞা বহুলভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।[১০] তিনি বলেছেন, এক-একজন দেবতার একটি করে কাল্ট ছিল, কাল্টগুলির সঙ্গে ব্রহ্মাণ্ডের কোনও না কোনও বিষয়ের সম্পর্ক ছিল এবং তা পুরাণকথা অথবা লিখিত প্রথার অন্য কোনও রূপের মাধ্যমে বর্ণিতও হয়েছিল।[১২] ডিমিট্রি মিকস কর্তৃক প্রদত্ত পৃথক একটি সংজ্ঞা অনুযায়ী, nṯr শব্দটি এমন যে-কোনও সত্ত্বার ক্ষেত্রের প্রযোজ্য ছিল, যারা প্রথা ও রীতিনীতির কেন্দ্রে থাকত। তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে "দেবতা" বলতে রাজাকে (রাজাদের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের পর দেবতাই বলা হত) এবং মৃতের আত্মাদেরও (যারা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার মাধ্যমে দৈবরাজ্যে প্রবেশ করত) বোঝানো হত। একইভাবে মহৎ দেবদেবীদের প্রাধান্যও সমগ্র মিশর জুড়ে আচরিত আনুষ্ঠানিক ভক্তিমূলক ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমেও রক্ষিত হত।[১৩]

মিশরের দেবদেবীদের প্রথম লিখিত প্রমাণগুলি আদ্যকালীন রাজবংশীয় যুগের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০-২৬৮৬ অব্দ)।[১৪] দেবদেবীদের উদ্ভব সম্ভবত প্রাক্-রাজবংশীয় যুগের পূর্বে (খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দের আগে) এবং এই উৎপত্তির মূলে সম্ভবত ছিল প্রাগৈতিহাসিক ধর্মবিশ্বাস। প্রাক্-রাজবংশীয় শিল্পকর্মে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি ও মানুষের মূর্তি চিত্রিত হয়েছিল। নক্ষত্র বা গবাদিপশুর মতো এই ধরনের কিছু ছবি পরবর্তীকালেও মিশরীয় ধর্মের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের স্মৃতি বহন করছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলির সঙ্গে দেবদেবীদের সঙ্গে যোগের কোনও প্রমাণ নিশ্চিত করে বলা চলে না। মিশরীয় সমাজ আরও উন্নত রুচিশীল হওয়ার পর ধর্মীয় কাজকর্মের স্পষ্টতর চিহ্নগুলি প্রকাশ পেতে থাকে।[১৫] প্রাচীন মিশরের প্রাচীনতম জ্ঞাত মন্দিরগুলির নির্মাণকাজ ঘটেছিল প্রাক্-রাজবংশীয় যুগের শেষ শতাব্দীগুলিতে।[১৬] এই সব মন্দিরে যে সব ছবি দেখা যায় সেগুলির সঙ্গে পরিচিত দেবতাদের মূর্তিতত্ত্বের সাদৃশ্য দেখা যায়: হোরাস ও অন্য বেশ কয়েকজন দেবতার প্রতীক বাজপাখি, নেইথের প্রতীক আড়াআড়াভাবে স্থাপিত তিরচিহ্ন,[১৭] এবং সেতের প্রতীক এক রহস্যময় "সেত পশু"।[১৮]

Crude stone statue of a baboon
বেবুন-দেবতা হেজ-ওয়েরের মূর্তি, সঙ্গে প্রাক্-রাজবংশীয় যুগের শেষ পর্যায়ের রাজা নারমারের নামটিও খোদিত রয়েছে।

এই আদি যুগে দেবদেবীদের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছিল সেই বিষয়ে মিশরতত্ত্ববিদ ও পুরাতত্ত্ববিদ অনেক তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন।[১৯] উদাহরণস্বরূপ, গুস্তাভ জেকুয়ার ভেবেছিলেন যে, মিশরীয়রা প্রথমে আদিম ভূতশক্তির, তারপর পশুপাখির আকারে দেবদেবীদের এবং শেষে মানবাকৃতি দেবদেবীর পূজা শুরু করেছিল। অন্যদিকে হেনরি ফ্র্যাংকফোর্ট মনে করেন, মিশরীয়দের মধ্যে দেবতার কল্পনা প্রথম থেকেই মানবাকৃতির ছিল।[১৭] এই ধরনের অনেক তত্ত্বকে আজকাল খুবই সরলীকৃত তত্ত্ব জ্ঞান করা হয়।[২০] তবে আধুনিকতর তত্ত্বগুলিও প্রমাণ করা বেশ কঠিন। এই ধরনের তত্ত্বের মধ্যে একটি হল সেইফ্রিজ মোরেঞ্জ কর্তৃক প্রস্তাবিত তত্ত্ব: স্বাতন্ত্র্য প্রতিপাদনের এবং নিজেদের পরিবেশের প্রতিনিধিত্বের জন্য দেবদেবীদের উৎপত্তি মানব রূপেই।[১৭]

প্রাগৈতিহাসিক মিশর আদিতে ছোটো ছোটো স্বাধীন গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল।[২১] যেহেতু অনেক দেবতাই পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট শহর বা অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন, সেই কারণে অনেক গবেষক মনে করেন যে, প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে দেবমণ্ডলী গড়ে উঠেছিল পৃথক পৃথক সম্প্রদায়ের একটি বৃহত্তর রাষ্ট্রব্যবস্থায় একাঙ্গীভূত হওয়ার ফলে। এইভাবেই প্রাচীন স্থানীয় দেবদেবীদের পূজা প্রসার লাভ করে এবং পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য গবেষকেরা মনে করেন যে, মিশরীয় সংস্কৃতির অন্যান্য উপাদানের মতো সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রাক্-রাজবংশীয় দেবদেবীদের পূজাও রাজনৈতিক বিভাজনকে উপেক্ষা করে সমগ্র দেশে প্রচলিত হয়েছিল।[২২]

মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসের সৃজনের সর্বশেষ ধাপটি ছিল মিশরের সাম্রাজিক একত্রীকরণ, যার ফলে উচ্চ মিশরের শাসকবর্গ সমগ্র দেশের ফ্যারাওতে পরিণত হয়েছিলেন।[১৫] এই পবিত্র রাজন্যবর্গ ও তাঁদের অধীনস্থগণ দেবতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অধিকার প্রতিগ্রহণ করেছিলেন[২৩] এবং রাজপদই ধর্মের একত্রীকরণের কারণে পরিণত হয়।[১৫]

এই রূপান্তরের পরেও নতুন নতুন দেবতার উদ্ভব অব্যাহত থাকে। আইসিসআমুনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবীদের অস্তিত্বের উল্লেখ পুরনো রাজ্যের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮৬-২১৮১ অব্দ) আগে পাওয়া যায় না।[২৪] স্থান ও নির্দিষ্ট কোনও ধারণাও দেবতার উৎপত্তিতে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে[২৫] এবং কখনও কখনও দেবতাদেরও প্রতিষ্ঠিত দেবদেবীদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতিরূপ হিসেবে সৃজন করা হয়।[২৬] কথিত ছিল, রাজন্যবর্গ দৈবশক্তিতে শক্তিমান। যদিও অল্প কয়েকজন রাজাই মৃত্যুর বহুকাল পরেও পূজিত হয়েছিলেন। কথিত আছে, রাজা ব্যতীত অন্যান্য কিছু মানুষও দেবতাদের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন এবং তাঁদেরও একইভাবে সম্মানিত করা হত।[২৭] এই ধরনের সম্মাননা এই ব্যক্তিরা বেশিকাল ধরে রাখতে পারেননি বটে, কিন্তু ইমহোটেপআমেনহোটেপ নামে দুই রাজ-স্থপতি তাঁদের জীবদ্দশার বহু শতাব্দীর পরেও দেবতার মর্যাদা পেয়ে এসেছিলেন।[২৮] অন্যান্য কয়েকজন আধিকারিকও এই সম্মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।[২৯]

প্রতিবেশী সভ্যতাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মিশরীয়রাও বিদেশি দেবদেবীদের নিজেদের দেবমণ্ডলীতে গ্রহণ করতে শুরু করে। পুরনো রাজ্যের সময়কালে প্রথম উল্লিখিত দেদুন সম্ভবত নুবিয়া থেকে গৃহীত হয়েছিল এবং নতুন রাজ্যে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০-১০৭০ অব্দ) বাল, আনাতআস্তার্তে সহ অন্যেরা গৃহীত হয়েছিল কনানীয় ধর্ম থেকে।[৩০] গ্রিকরোমান যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম কয়েক শতাব্দী) ভূমধ্যসাগরের অপর পারের দেবদেবীরাও মিশরে পূজা পেতে শুরু করেন। তবে এই সময় স্থানীয় দেবতারাও একইভাবে পূজিত হতেন এবং প্রায়শই এই সব নবাগত দেবদেবীদের কাল্টগুলিকে স্থানীয় দেবতাদের উপাসনাবিধির মধ্যে আত্মীভূত করে নেওয়া হত।[৩১]

বৈশিষ্ট্যসমূহ

সম্পাদনা

প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞানের উৎস প্রধান প্রাচীন মিশরের লিপিকারপুরোহিতদের দ্বারা লিখিত ধর্মীয় লিপিসমূহ। মিশরীয় সমাজের অভিজাতবর্গের মধ্যে পরিগণিত এই ব্যক্তিবর্গ দেশের অধিকাংশ নিরক্ষর জনসাধারণের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিলেন। অভিজাত সমাজের রুচিশীল ধারণার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে দেশের এই বৃহত্তর জনসাধারণের কতটুকু জ্ঞান ছিল সে সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না।[৩২] দেবতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা সম্ভবত পুরোহিত শ্রেণির মতের থেকে পৃথক ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জনসধারণ সম্ভবত দেবদেবী ও তাঁদের কাজকর্ম সম্পর্কে ধর্মের প্রতীকী বক্তব্যগুলিকে আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করত।[৩৩] কিন্তু সামগ্রিকভাবে জনপ্রিয় ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা অভিজাতবর্গের প্রথা ও রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণই ছিল। এই দুই প্রকার ধারণাই দেবদেবী ও তাঁদের প্রকৃতি সম্পর্কে এক আসঞ্জনশীল দৃষ্টিভঙ্গি সৃজন করেছিল।[৩৪]

দেবদেবীদের ভূমিকা

সম্পাদনা
 
আকাশে দৈনন্দিন যাত্রাপথে সৌর-বজরায় সৌর-চাকতি দ্বারা পরিবেষ্টি সৌরদেবতা রা (𓇯)
 
অন্যতম মাতৃকাদেবী তথা রাজপদের এক রক্ষয়িত্রী ফ্যারাও প্রথম সেতিকে কোলে ধরে রয়েছেন।

অধিকাংশ মিশরীয় দেবদেবীই প্রাকৃতিক বা সামাজিক ঘটনার প্রতীক। সাধারণভাবে মনে করা হত, দেবদেবীরা এই ঘটনাবলিতে সর্বব্যাপী—প্রকৃতির মধ্যে উপস্থিত[৩৫] এই ধরনের ঘটনাবলি যে শুধুমাত্র স্থান বা বস্তুরই প্রতিনিধিত্ব করত, তা-ই নয়, বরং বিমূর্ত ধারণা ও শক্তিগুলিরও প্রতিনিধিত্ব করত।[৩৬] দেবতা শু বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের দেবত্বীকরণ; দেবী নেরেৎসেগের পৃথিবীর এক সীমায়িত এলাকা থিবীয় সমাধিক্ষেত্রের তত্ত্বাবধায়ক; দেবতা সিয়া ছিলেন বিমূর্ত ধারণা অন্তর্দৃষ্টির ব্যক্তিরূপ।[৩৭] প্রধান প্রধান দেবতারা প্রায়শই নানা ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, খুঁম ছিলেন মিশরীয় সভ্যতার প্রাণস্বরূপ নীল নদের বুকে অবস্থিত এলিফ্যান্টানাইন দ্বীপের দেবতা। মনে করা হত, নীল নদের বার্ষিক বন্যা, যা দেশের কৃষিজমিকে উর্বর করে তুলত, তা এই খুঁমেরই ক্রিয়া। সম্ভবত নীল নদ ও তার বন্যার এই জীবনদায়ী কার্যকারিতা সম্পর্কে মানুষের মনে এমন এক বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে, মিশরীয়রা মনে করত খুঁম কুমোরের চাকায় দেহের আকার বানিয়ে সকল জীবিত সত্ত্বা সৃজন করেছিলেন।[৩৮] প্রকৃতিতে একই ভূমিকা একাধিক দেবতার উপরেও আরোপ করা হয়েছিল; রা, আতুম, খেপরি, হোরাস ও অন্যান্য দেবতারাও সৌরদেবতা হিসেবে পরিগণিত হতেন।[৩৯] এই বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ কার্যকারিতা সত্ত্বেও অধিকাংশ দেবতাই সাধারণভাবে এক ধনুকাকৃতি ভূমিকা পালন করতেন: মাত অর্থাৎ যে দৈব শৃঙ্খলা মিশরীয় ধর্মে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করত এবং স্বয়ং এক দেবীর রূপে সম্মানিত হত তার রক্ষণাবেক্ষণ করা।[৪০] আবার কয়েকজন দেবদেবী মাত-এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রতীক ছিলেন। এঁদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দেবতা হলেন বিশৃঙ্খলার শক্তি আপেপ, যিনি ক্রমাগত ব্রহ্মাণ্ডের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভয় দেখাতেন; এবং সেত ছিলেন দেবসমাজের এমন এক স্ববিরোধী ভূমিকা পালন করেন, যেখানে তিনি একদিকে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধেও লড়াই করতেন আবার বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি করতেন।[৪১]

সৃষ্টির সকল দিকগুলিকে অবশ্য দেবতা হিসেবে গণ্য করা হত না। নীল নদের সঙ্গে অনেক দেবতা যুক্ত হলেও, রা যেমন ভাবে সূর্যের মূর্তিরূপ হিসেবে গণ্য হতেন, নীল নদের ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেনি।[৪২] রামধনু বা গ্রহণের মতো স্বল্পকাল স্থায়ী প্রাকৃতিক ঘটনার কোনও দেবতা ছিল না;[৪৩] যেমন ছিল না আগুন, জল বা জগতের আরও অন্যান্য কিছু উপাদানের কোনও দেবতা।[৪৪]

প্রত্যেক দেবতার ভূমিকা ছিল পরিবর্তনশীল এবং প্রত্যেক দেবতাই তাঁর প্রকৃতিকে ছাপিয়ে গিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করতেন। এই কারণেই দেবতাদের ভূমিকা শ্রেণিবদ্ধ করা বা সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। এত সারল্য সত্ত্বেও দেবদেবীদের ক্ষমতা ও প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রটি ছিল সীমায়িত। এমনকি সৃষ্টিকর্তা দেবতাও নিজের সৃষ্ট ব্রহ্মাণ্ডের সীমা অতিক্রম করতে পারতেন না। আইসিসকে দেবদেবীদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর মনে করা হলেও তিনিও সর্বজ্ঞ ছিলেন না।[৪৫] যদিও রিচার্ড এইচ. উইলকিনসন মনে করেন যে, নতুন রাজ্যের শেষ দিকের কয়েকটি লিপি থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, লোকবিশ্বাসে দেবতা আমুন সর্বজ্ঞতা ও সর্বব্যাপী সত্ত্বা অর্জন করেছিলেন এবং অন্য দেবতারা না পারলেও তিনি জগতের সীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৪৬]

যে দেবদেবীরা সর্বাপেক্ষা কম ও বিশেষায়িত ক্ষেত্রের দেবতা ছিলেন, আধুনিক রচনায় তাঁদের প্রায়শই "অপ্রধান দেবতা" বা "দানব" নামে অভিহিত করা হয়। অবশ্য এই পরিভাষাগুলির কোনও তথ্যনিষ্ঠ সংজ্ঞা পাওয়া যায় না।[৪৭] কোনও কোনও দানব ছিলেন নির্দিষ্ট অঞ্চলের রক্ষাকর্তা। এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দুয়াতের নাম উল্লেখ করা যায়, তিনি ছিলেন মৃতরাজ্যের রক্ষক। অন্যরা মানবলোক ও দুয়াতের মধ্যে হয় ভৃত্য নয়তো মহত্তর দেবদেবীদের দূত হিসেবে ঘুরে বেড়াতেন। এছাড়া এই ধরনের সত্ত্বাদের মধ্যে ঘুরে-বেড়ানো আত্মারাও ছিল, যারা অসুস্থতা ও মানুষদের অন্যান্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনত।[৪৮] দৈব পদমর্যাদাক্রমে দানবদের স্থান নির্দিষ্ট ছিল না। রক্ষক দেবতা বেসতাওয়েরেতকে আদিতে তাদের দানব-সুলভ স্বভাবের জন্য অপ্রধান দেবতা গণ্য করা হত, কিন্তু কালের সঙ্গে তাদের উপর বৃহৎ প্রভাব আরোপিত হয়।[৪৭] দুয়াতের সর্বাপেক্ষা ভয়ংকর সত্ত্বাগুলিকে মানবসমাজে একাধারে বিরক্তিকর ও ভয়ংকর গণ্য করা হত।[৪৯] মিশরের ইতিহাসে ধীরে ধীরে তারা মূলগতভাবে দৈবসমাজের অধস্তন সদস্য হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে[৫০] এবং মঙ্গলময় ও জীবনদাতা প্রধান দেবতাদের বিপরীত গুণাবলির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[৪৯] এমনকি সর্বাধিক পূজিত দেবতারাও ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ বা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা-পরায়ণ হয়ে উঠতেন বলে কথিত ছিল। এর মাধ্যমে তাঁদের চরিত্রেও দানব-সুলভ দিকগুলি এবং দেবতা ও দানবের মধ্যে পৃথকীকরণের অস্পষ্টতাটি পরিস্ফুট হয়ে উঠত।[৫১]

মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, দেবতাদের আচরণই সকল প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।[৫২] অল্প কয়েকজন দেবতা দৈব ব্রহ্মাণ্ড-শৃঙ্খলা ব্যাহত করার চেষ্টা করলেও[৪১] দেবতাদের কাজ ছিল মাত-কে রক্ষা করা এবং সকল জীবিত সত্ত্বা সৃজন ও প্রতিপালন করা।[৪০] যে শক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে দেবতারা এই কাজগুলি করতেন, তাকে মিশরীয়রা বলত হেকা, যে পরিভাষাটিকে সচরাচর "জাদু" শব্দটির দ্বারা অনুবাদ করা হয়। হেকা ছিল জগৎ সৃষ্টির কাজে সৃষ্টিকর্তা দেবতার মূল শক্তি এবং অন্যান্য দেবতাদেরও শক্তি।[৫৩]

 
আকাশের দেবী নুত সূর্যকে গ্রাস করছেন, সূর্য নুতের শরীরের মধ্য দিয়ে রাত্রে যাত্রা করেন এবং ঊষাকালে নবজন্ম লাভ করতেন বলে মিশরীয়রা বিশ্বাস করত।

স্তোত্রসাহিত্যেঅন্ত্যেষ্টিসাহিত্যে দেবতাদের ক্রিয়াকাণ্ড বর্ণিত ও প্রশংসিত হয়েছে।[৫৪] অন্যদিকে পুরাণকথায় প্রধানত আলোচিত হয়েছে, অস্পষ্টভাবে কল্পিত এক অতীতে দেবদেবীরা কীভাবে পৃথিবীতে বিরাজমান ছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এই অতীতের ঘটনাবলি বর্তমানকালের ঘটনার উদাহরণ হিসেবে পরিগণিত হত। পর্যায়ক্রমিক ঘটনাবলিকে অতিকথামূলক অতীতের ঘটনাবলির সঙ্গে যুক্ত করা হত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রত্যেক নতুন ফ্যারাওয়ের উত্তরাধিকারপদ প্রাপ্তি হোরাসের পিতা ওসাইরিসের থেকে সিংহাসনপ্রাপ্তির ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি।[৫৫]

অতিকথা হল দেবতাদের কার্যাবলির রূপকালংকার, যা মানুষ সম্পূর্ণ বুঝতে পারত না। এই অতিকথাগুলিতে আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর-বিরোধী ধারণা ছিল, যা দৈব ঘটনাবলির একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ করত। পুরাণকথায় এই স্ববিরোধগুলি হল মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বহু-বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারণার অংশ—যাকে হেনরি ফ্র্যাংকফোর্ট বলেছিলেন দেবদেবীদের বোঝার ব্যাপারে "পদ্ধতির বৈচিত্র্য"।[৫৬] পুরাণকথায় দেবতারা অনেকটাই মানুষদের মতোই আচরণ করেন। তাঁরা আবেগ অনুভব করতে পারেন; খেতে ও পান করতে, যুদ্ধ করতে, কাঁদতে, অসুস্থ হতে এমনকি মরতেও পারেন।[৫৭] কয়েকজনের চরিত্রে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়।[৫৮] সেত আগ্রাসী-মনোভাবাপন্ন ও আবেগপ্রবণ এবং লিখন ও জ্ঞানের রক্ষক থোথ ঝোড়ো বক্তৃতাপ্রবণ। তবে সামগ্রিকভাবে দেবতারা সুশৃঙ্খলভাবে চিত্রিত চরিত্রের তুলনায় অনেকটা মৌল আদর্শের মতো ছিলেন।[৫৯] পুরাণকথার ভিন্ন ভিন্ন পাঠে বিভিন্ন দেবদেবীকে একই ধরনের মৌল আদর্শের ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়। এমনই একটি উদাহরণ হল সূর্যদেবতার নারীরূপ তথা বহু দেবীর প্রতীক রা-র চক্ষুর অতিকথাগুলি।[৬০] দেবদেবীদের পুরাণ-কথিত আচরণে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় এবং তাঁদের চিন্তাভাবনা ও অভিসন্ধি খুবই কমই বর্ণিত হয়েছে।[৬১] অধিকাংশ পুরাণকথায় উন্নত মানের চরিত্র ও আখ্যানবস্তুর অভাব দেখা যায়। এর কারণ হল, এই সব পুরাণকথায় বিস্তারিত গল্পকথনের তুলনায় এগুলির প্রতীকী অর্থটিই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।[৬২]

প্রাচীন মিশরীয় সৃষ্টিতত্ত্বে দেবতা ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির প্রাথমিক ক্রিয়াটির কথা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন সৃষ্টিকথায় বিভিন্ন দেবতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রত্যেক দেবতার উপরেই সংশ্লিষ্ট সৃষ্টিকথায় সৃষ্টিকর্তার ভূমিকা আরোপিত হয়েছে।[৬৩] সৃষ্টির পূর্বে যে বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান ছিল তার প্রতীক ছিলেন ওগদোয়াদের আটজন দেবতা। এঁরাই সূর্যদেবতার জন্ম দেন আর এই সূর্যদেবতাই নবগঠিত জগতে শৃঙ্খলা স্থাপন করেন। চিন্তা ও সৃজনশীলতার দেবতা প্তাহ অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সকল বস্তুর আকার দান করেন এবং সে-সবের নামকরণ করেন।[৬৪] আতুম নিজের প্রবাহের মাধ্যমে সকল উৎপাদিত করেন[] এবং আমুনের পুরোহিতদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মতত্ত্ব অনুসারে, এই দেবতা সর্বাগ্রবর্তী এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্তা দেবতাদের স্রষ্টা।[৬৫] সৃষ্টিকথা-সংক্রান্ত এই ঘটনাবলি ও তার অন্যান্য পাঠগুলি পরস্পর-বিরোধী হিসেবে ধরা হয় না। প্রতিটি উপকথাতেই যে জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ব্রহ্মাণ্ড সৃজন সম্ভব হয়েছিল এবং এই সেই এলোমেলো বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে কীভাবে বহু দেবদেবীর উদ্ভব ঘটেছিল, তা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কথিত হয়েছে।[৬৬] সৃষ্টির ঠিক পরবর্তী পর্যায়ে দৈবসমাজে একের পর এক দেবতা আসেন রাজা হয়ে। এই ঘটনাই অধিকাংশ সৃষ্টিকথার মূল আখ্যানবস্তু। দেবতারা বিশৃঙ্খলার শক্তির বিরুদ্ধে, এমনকি নিজেদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম চালিয়ে যেতেন। তারপর তাঁরা মানবসমাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন এবং নিজেদের স্থানে স্থাপন করেন মিশরের ইতিহাস-সম্মত রাজন্যবর্গকে।[৬৭]

এই সব পুরাণকথায় এই পুনঃপৌণিক বিষয়গুলি বিশৃঙ্খলার শক্তির হাত থেকে মাত-কে রক্ষা করার জন্য দেবতাদের প্রয়াসের কথাই বর্ণিত হয়েছে। সৃষ্টির আদিতে বিশৃঙ্খলার শক্তির বিরুদ্ধে তাঁরা ভীষণ যুদ্ধ করেছিলেন। প্রতি রাতে রা ও আপেপের মধ্যে যে সংগ্রাম চলে তা পুরাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলছে বলে কথিত হয়েছে।[৬৮] পুরাণকথার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেবতাদের মৃত্যু ও পুনরুত্থান। দেবতার মৃত্যুর স্পষ্টতম উদাহরণ হল ওসাইরিসের হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত অতিকথা; এই ওসাইরিস পরে দুয়াতের শাসক হিসেবে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।[৬৯][Note ১] কথিত ছিল, আকাশে দৈনন্দিন যাত্রাপথে সূর্য বার্ধক্য প্রাপ্ত হন এবং তারপর রাত্রে দুয়াতে ডুব দিয়ে ঊষাকালে শিশু রূপে পুনরাবির্ভূত হন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি আদ্যকালীন বিশৃঙ্খলার নানের পুনর্যৌবনদাতা জলের সংস্পর্শে আসেন। অন্ত্যেষ্টিসাহিত্যে যেখানে দুয়াতের মধ্য দিয়ে রা-র যাত্রাপথের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেখানে এ-ও দেখানো হয়েছে কীভাবে অন্যান্য দেবতাদের মৃতদেহও তাঁর মতো পুনর্জীবন লাভ করছে। মিশরীয় পুরাণকথা অনুযায়ী, দেবদেবীরা চির-অমর নয়। বরং সৃষ্টির ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তাঁরা পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন এবং এইভাবেই সমগ্র জগৎ নবরূপ ধারণ করে।[৭০] তা সত্ত্বেও এই চক্র ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় এবং বিশৃঙ্খলাও ফিরে আসতে পারে। কয়েকটি অল্প-বোধগম্য মিশরীয় গ্রন্থ তো এমন কথাও ইঙ্গিত করে যে, এই বিপর্যয় ঘটা অবশ্যম্ভাবী—সৃষ্টিকর্তা দেবতা একদিন বিশ্বের শৃঙ্খলা লুপ্ত করে দেবেন এবং ওসাইরিসের সঙ্গে শুধু নিজেই থেকে যাবেন আদ্যকালীন বিশৃঙ্খলার মধ্যে।[৭১]

অবস্থান

সম্পাদনা
 
হুনেফেরের প্যাপিরাসে চিত্রিত হৃদপিণ্ডের ভার নির্ণয় (ঊনবিংশ রাজবংশ, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ অব্দ)
 
মিশরের প্রদেশগুলিকে ব্যক্তিরূপে প্রকাশ করা দেবদেবীগণ

দেবদেবীরা ব্রহ্মাণ্ডের নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে ব্রহ্মাণ্ড বলতে বোঝাত পৃথিবী, আকাশ ও পাতাললোককে। এগুলিকে ঘিরে ছিল এক অন্ধকার নিরাবয়বতা, যা সৃষ্টির পূর্ব হতেই বিরাজমান ছিল।[৭২] সাধারণত দেবতাদের আকাশের অধিবাসী মনে করা হত, যদিও যে সকল দেবগণের ভূমিকা ব্রহ্মাণ্ডের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত ছিল, কথিত হত যে তাঁরা স্বর্গের পরিবর্তে সেই সেই অঞ্চলে বাস করেন। পুরাণকথার অধিকাংশ ঘটনারই প্রেক্ষাপট মানবলোক থেকে সে-সব ঘটনা দেবতাদের নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পূর্বের ঘটনা। এগুলির ঘটনাস্থল পৃথিবী-সদৃশ এক লোক। পৃথিবীস্থ দেবতারা মাঝে মাঝে আকাশের দেবতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতেন। অন্যদিকে পাতাললোককে এক দূরবর্তী ও দুরধিগম্য স্থান বলে গণ্য করা হত। সেখানে যে সব দেবতারা বাস করতেন তাঁরা জীবিতের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতেন।[৭৩] ব্রহ্মাণ্ডের বহিঃস্থ মহাকাশকে অনেক দূরবর্তী এক স্থান বলে মনে করা হত। তবে সেই অঞ্চলেও দেবদেবীরা বাস করতেন। এই দেবদেবীরা কেউ ছিলেন অন্য দেবতা ও তাঁদের শৃঙ্খলাবদ্ধ জগতের প্রতি প্রতিকূল-মনোভাবাপন্ন, আবার কেউ ছিলেন মঙ্গলময়।[৭৪]

কথিত আছে, পুরাণকথার পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ দেবতাই স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে অদৃশ্য অবস্থায় বিরাজমান হয়েছিলেন। মানবসমাজের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমটিই ছিল মন্দিরসমূহ। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, প্রতিদিন দিব্যরাজ্যে তাঁদের বাসস্থান থেকে মানবজগতে তাঁদের গৃহ অর্থাৎ মন্দিরগুলিতে নেমে আসেন। মন্দিরগুলিতে থাকত কাল্ট মূর্তি, অন্য দেবদেবীদের মূর্তি বা ছবি এবং সেখানে মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে জনসাধারণএ দেবতাদের সঙ্গে যোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়া হত। দুই লোকের মধ্যে এই যাতায়াতকে কখনও কখনও আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যাতায়াত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মন্দিরগুলি মিশরীয় মহানগরগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকত বলে প্রধান মন্দিরের দেবতাই হতেন সংশ্লিষ্ট মহানগরের ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রক্ষাকর্তা দেবতা[৭৫] যে যে দেবতা যে যে শহর বা অঞ্চলের অধিপতি হিসেবে গণ্য হতেন, পৃথিবীতে তাঁদের প্রভাবের ক্ষেত্র সেই সব একালাতেই সীমায়িত ছিল।[৭২] অনক দেবতারই একাধিক কাল্ট কেন্দ্র ছিল এবং যুগে যুগে নির্দিষ্ট স্থানের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্রও পরিবর্তিত হয়েছে। নতুন নতুন শহরেই সেই সব দেবতাদের স্থাপন করা হয়েছিল অথবা তাঁদের প্রভাবের ক্ষেত্রকেও সংকুচিত করা হয়েছিল। সেই কারণেই ঐতিহাসিক যুগে কোনও নির্দিষ্ট দেবতার প্রধান কাল্ট কেন্দ্রটিকে সেই দেবতা বা দেবীর উৎসস্থান বলে ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।[৭৬] একটি শহরের রাজনৈতিক প্রভাবও সংশ্লিষ্ট শহরের রক্ষক দেবতার গুরুত্বের উপর প্রভাব ফেলত। মধ্য রাজ্যের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০৫৫-১৬৫০) গোড়ায় যখন থিবসের রাজারা দেশের শাসনভার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন, তখন তাঁরা থিবসের রক্ষক দেবতাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন—প্রথমে যুদ্ধদেবতা মোনতু ও পরে আমি—উভয়েই রাষ্ট্রীয় স্তরে মর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছিলেন।[৭৭]

নাম ও বিশেষণসমূহ

সম্পাদনা

মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে নাম সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌল প্রকৃতিটিকে প্রকাশ করত। এই বিশ্বাসের সঙ্গতি রেখে দেবদেবীদের নাম প্রায়শই তাঁদের ভূমিকা বা উৎসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হত। লুণ্ঠনপরায়ণা দেবী সেখমেতের নামের অর্থ "শক্তিমতী", রহস্যময় দেবতা আমুনের নামের অর্থ "আত্মগোপনকারী" এবং নেখেব শহরে পূজিতা দেবী নেখবেতের নামের অর্থ "নেখেবের নারী"। অন্য অনেক নামেরই নির্দিষ্ট কোনও অর্থ নেই, এমনকি যখন দেবতারা কোনও একক ভূমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন তখনও না। আকাশের দেবী নুত ও পৃথিবীর দেবতা গেবের নামের সঙ্গে "আকাশ" বা "পৃথিবী" শব্দের মিশরীয় প্রতিশব্দের কোনও যোগ ছিল না।[৭৮]

দেবতাদের নামকরণের ক্ষেত্রে মিশরীয়রা ভ্রান্ত ব্যুৎপত্তিবিদ্যা উদ্ভাবনা করেছিল।[৭৮] শবাধার লিপির একটি পংক্তিতে অন্ত্যেষ্টি দেবতা সোকারের নামটি লেখা হয়েছিল sk r, যা "মুখশুদ্ধিকরণ" অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত,[৭৯] কিন্তু একটি পিরামিড লিপিতে বলা হয়েছে যে, এক যন্ত্রণার মুহুর্তে ওসাইরিসের মুখ থেকে উচ্চারিত চিৎকারধ্বনিটি এই শব্দটির ভিত্তি, এবং এটিই সোকারকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অন্ত্যেষ্টিদেবতা করে তুলেছে।[৮০]

মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, দেবদেবীদের অনেকগুলি করে নাম ছিল। এই নামগুলির মধ্যে গোপন নামগুলিই তাঁদের সত্য প্রকৃতি অন্যান্য নামগুলির থেকে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলত। নামের এই গুরুত্ব সেই পুরাণকথাটির মাধ্যমে ব্যাখ্যাত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় আইসিস উচ্চতর দেবতা রা-এর উপর বিষপ্রয়োগ করছেন এবং আইসিসের গোপন নামটি প্রকাশ না করলে তাঁর সুশ্রুষা করতে অস্বীকার করছেন। নামটি জেনে নিয়ে আইসিস নিজ পুত্র হোরাসকে সেটি বলছেন এবং রা-র গোপন নামটি জেনে নিয়ে আইসিস ও হোরাস অধিকতর জ্ঞান ও বৃহত্তর শক্তির অধিকারী হচ্ছেন।[৮১]

নামের পাশাপাশি দেবদেবীদের নানা বিশেষণেও ভূষিত করা হত। যেমন, "চমৎকারিত্বের অধ্যাপক", "অ্যাবিডোসের শাসক" বা "আকাশের অধিপতি"। এই বিশেষণগুলি তাঁদের ভূমিকা বা পূজার কয়েকটি দিককে বর্ণনা করত। দেবদেবদের বহু-বৈচিত্র্যময় ও পরস্পর-প্রাবৃত ভূমিকার জন্য তাঁদের অনেকগুলি বিশেষণ থাকত—অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবীরা অধিকতর উপাধি অর্জন করতেন—এবং একই উপাধি একই সময়ে অনেক দেবতার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত।[৮২] কোনও কোনও বিশেষণ কালক্রমে পৃথক দেবতায় পরিণত হত।[৮৩] এমন এক উদাহরণ হল ওয়েরেথেকাউ নামটি। এটির পূর্বার্থ ছিল "মহতী জাদুকরী" এবং তা প্রযোজ্য হত একাধিক দেবীর বিশেষণ হিসেবে। পরে তা এক স্বতন্ত্র দেবীর নাম হিসেবে গণ্য হতে থাকে।[৮৪] দেবতাদের নাম ও উপাধিগুলির প্রাচুর্য দেবদেবীদের বহু-বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিরই পরিচায়ক।[৮৫]

লিঙ্গ ও যৌনতা

সম্পাদনা
 
দেইর এল মেদিনা থেকে প্রাপ্ত নাউনেত ও নু

মিশরীয়েরা নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভাজিকাটিকে দেবদেবী সকল সত্ত্বার মূল ভিত্তি মনে করত।[৮৬] দেবীদের তুলনায় পুরুষ দেবতাদের অধিকতর মর্যাদা প্রদানের প্রবণতা দেখা যেত এবং পুরুষ দেবতারা সৃষ্টি ও রাজপদের সঙ্গে অধিকতর ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকতেন। অন্যদিকে মনে করা হত যে, দেবীরা মানুষদের সাহায্য করেন ও তাদের চাহিদা পূরণ করেন।[৮৭][৮৮] কয়েকজন দেবতা ছিলেন উভলিঙ্গ। কিন্তু এই ধরনের অধিকাংশ উদাহরণই পাওয়া যায় সৃষ্টিতত্ত্বের প্রেক্ষাপটে। এই উপকথাগুলিতে উভলিঙ্গ দেবতারা ছিলেন জগৎ সৃষ্টির পূর্বে অ-পৃথকীকৃত এক অবস্থার প্রতীক।[৮৬] ওগদোয়াদ নামে আট আদ্যকালীন দেবগোষ্ঠীর একজন করে নারীরূপ ও পত্নী কল্পিত হতেন। আতুম প্রধানত একজন পুরুষ দেবতা হলেও তাঁর অন্তরে এক নারীসত্ত্বাও বিরাজমান ছিল।[৮৯] তাঁকে কখনও কখনও এক দেবী রূপেও বিবেচনা করা হত। এই দেবীর নাম ছিল ইউসাসেত ও ৫নেবেথেতেপেত[৯০] সৃষ্টির সূচনা তখনই ঘটেছিল যখন আতুম দুই বিপরীত লিঙ্গের দেবতা সৃষ্টি করেন: শু ও তাঁর পত্নী তেফনুত[৮৬] একইভাবে সৃষ্টিকর্ত্রী দেবী রূপে বিবেচিত নেইথের মধ্যেও কিছু পুরুষালি বৈশিষ্ট্য ছিল বলে কথিত হত। কিন্তু তাঁকে প্রধানত দেবী হিসেবেই গণ্য করা হত।[৮৯]

যৌনতা ও লিঙ্গের ধারণাটি সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিল এবং সেই সঙ্গে জড়িত ছিল পুনর্জন্মের ধারণাটির সঙ্গেও।[৯১] গর্ভধারণ করার ক্ষেত্রে পুরুষ দেবতাদের এক সক্রিয় ভূমিকার কথা স্বীকার করে নেওয়া হত। দেবীদের প্রায়শই হীনতর সহায়িকা শক্তি হিসেবে গণ্য করা হত। তাঁরা তাঁদের স্বামীদের পৌরুষ ও তাঁদের সন্তানদের প্রতিপালন করতেন। যদিও মিশরীয় ইতিহাসের পরবর্তী পর্যায়ে প্রজননকার্যে দেবীদের এক বৃহত্তর ভূমিকা প্রদান করা হয়েছিল,[৯২] দেবীরা পৌরাণিক মাতৃকা এবং রাজন্যবর্গের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করেন করতেন এবং এইভাবেই হয়ে উঠেছিলেন মানবী রাজ্ঞীপদের মূল আদর্শ।[৯৩] হোরাসের পত্নী তথা মিশরের ইতিহাসের অধিকাংশ সময় জুড়ে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দেবীর পদে আসীনা হাথোর[৯৪] ছিলেন দেবতা ও রাজপদের মধ্যে সম্পর্কের এক উদাহরণ।[৯৩]

দেবীগণের একটি ভীষণ দিকও ছিল যেটি ক্ষেত্রবিশেষে ইতিবাচকরূপে (যেমন রাজার রক্ষাকর্তা দেবীওয়াদজেত ও নেখবেতের ক্ষেত্রে দেখা যেত) অথবা নেতিবাচক রূপেও দেখা যেত।[৯৫] যৌনতা ও সন্তান-প্রতিপালনে দেবীগণের ভূমিকার ঠিক বিপরীতে দেখা যায় রা-এর চোখের অতিকথাটি। এই অতিকথায় দেখা যায় যে, সেখমেত বা অন্যান্য ভয়ংকর দেবতার রূপে দেবী ক্রোধোন্মত্ত হয়ে উঠছেন এবং শেষে অন্যান্য দেবতারা তাঁকে তুষ্ট করার পর তিনি এক মঙ্গলময়ী দেবীতে পরিণত হচ্ছেন। ঠিক তেমনই মিশরীয় পুরাণকথার কোনও কোনও পাঠে দেখা যায় হোরাসও এক পুরুষ দেবতার পত্নীতে পরিণত হচ্ছেন।[৯৬][৯৭]

যৌনতার সম্পর্কে মিশরীয় ধারণা প্রধানত বিষমকামী প্রজনন-কেন্দ্রিক ছিল এবং সমকামী কার্যকলাপকে সাধারণত সমর্থন করা হত না। অবশ্য কোনও কোনও লিপিতে পুরুষ দেবতাদের মধ্যে সমকামী আচরণের কথাও উল্লিখিত হয়েছে।[৯৮] অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে এহেন আচরণের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, সমকামী আচরণে জড়িত দুই দেবতার মধ্যে একজনের অধিকতর আধিপত্যকামিতা এবং দুর্বলতর দেবতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। এর একটি নিদর্শন হল সেত কর্তৃক হোরাসের যৌন হেনস্থা। অন্যান্য যুগল পুরুষ দেবতার সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা হত এবং তাঁরা সন্তানও উৎপাদন করেছিলেন। যেমন একটি লিপিতে বলা হয়েছে রা ও শু-এর মিলনের ফলে জন্ম হয়েছিল খুঁমের[৯৯]

সম্পর্ক

সম্পাদনা

মিশরীয় দেবদেবীরা পরস্পরের সঙ্গে এক জটিল ও সদা-পরিবর্তনশীল সম্পর্কের বিন্যাসে যুক্ত ছিলেন। অন্যান্য দেবতাদের সঙ্গে কোনও দেবতার যোগ ও পারস্পরিক কার্যকলাপ সেই দেবতার চরিত্রটি নির্ধারিত করত। এইভাবেই মাতৃকা দেবী তথা হোরাসের রক্ষয়িত্রী আইসিস একাধারে এক মহতী আরোগ্যদায়িনী দেবী তথা রাজন্যবর্গের রক্ষয়িত্রীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।[১০০] মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্ববীক্ষা ব্যাখ্যানের ক্ষেত্রে এই ধরনের সম্পর্কগুলি পুরাণকথার তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।[১০১] অবশ্য পুরাণকথা যা থেকে গড়ে উঠেছে তার ভিত্তি এই সম্পর্কগুলিই।[৬১]

 
রাজাকে ঘিরে রয়েছেন প্তাহসেখমেত, রাজাও তাঁদের সন্তান নেফেরতুমের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।[১০২]

দেবদেবীদের মধ্যে যোগসূত্রের একটি সাধারণ ধরন হল পারিবারিক সম্পর্ক। দেবদেবীরা প্রায়শই যুগলে সম্পর্ক স্থাপন করতেন। পিতা, মাতা ও সন্তান নিয়ে দেবতাত্রয়ী নূতন জীবনের সৃজন এবং পিতার উত্তরাধিকার সন্তানের প্রাপ্তির প্রতীক। এই ধাঁচটি দেব-পরিবারগুলির সঙ্গে রাজকীয় উত্তরাধিকারের যোগসূত্র স্থাপন করত।[১০৩] ওসাইরিস, আইসিস ও হোরাস এই ধরনের দেব-পরিবারের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন স্থাপন করেন। এই যে ধাঁচটি তাঁরা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তা এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল যে অন্যান্য স্থানীয় কাল্ট কেন্দ্রেও পারিবারিক দেবত্রয়ী গঠিত হয়েছিল। এর উদাহরণ মেমফিসে প্তাহ, সেখমেত ও তাঁদের সন্তান নেফেরতুম এবং থিবসে থিবীয় ত্রয়ী[১০৪][১০৫] পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই ধরনের বংশলতিকায় কিছু ব্যতিক্রমও লক্ষিত হয়। যেমন বিভিন্ন স্থানীয় পারিবারিক দেবত্রয়ীতে হাথোরকে দেখা যায় মা, পত্নী, সূর্যদেবতার কন্যা রবং পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে হোরাসের শিশু রূপ হিসেবে।[১০৬]

অন্যান্য দেবগোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল পরস্পর-সম্পর্কযুক্ত দেবদেবীদের নিয়ে অথবা সেই সব দেবদেবীদের নিয়ে যাঁরা মিশরীয় পৌরাণিক ব্রহ্মাণ্ডের কোনও নির্দিষ্ট স্থানের প্রতিনিধি। দিন ও রাতের ঘণ্টাগুলির এবং মিশরের প্রতিটি নোমের (প্রদেশ) জন্যও একগুচ্ছ দেবদেবী ছিলেন। এই ধরনের কোনও কোনও গোষ্ঠী দেবদেবীদের এক নির্দিষ্ট প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা দ্বারা গঠিত হত।[১০৭] যুগ্ম দেবতাদের ভূমিকা কখনও কখনও একই ধরনের হত। যেমন আইসিস ও তাঁর ভগিনী নেফথিস ওসাইরিস্কে রক্ষা ও সহায়তা করতেন।[১০৮] অন্যান্য যুগ্ম দেবতারা বিপরীত অথচ পরস্পর-সম্পর্কযুক্ত ধারণার প্রতীক ছিল এবং তা ছিল এক বৃহত্তর ঐক্যের অংশ। গতিময় ও আলোকদাতা রা এবং স্থানু ও বস্ত্রাচ্ছাদিত ওসাইরিস প্রতি রাতে এক একক দেবতায় মিলিত হয়ে যেতেন।[১০৯] প্রাচীন মিশরীয় চিন্তাভাবনায় তিন দেবতার গোষ্ঠী অনেকত্বের এবং চার দেবতার গোষ্ঠী ছিল সম্পূর্ণতার দ্যোতক।[১০৭] নতুন রাজ্যের পরবর্তী পর্যায়ের শাসকবৃন্দ অন্যান্য সকল দেবতার থেকে অধিক গুরুত্ব বিশেষভাবে আরোপ করেছিলেন তিন জনের উপর: আমুন, রা ও প্তাহ। এই দেবতারা একাধারে সকল দেবতার অনেকত্বের, নিজ নিজ কাল্ট কেন্দ্রের (থিবস, হেলিওপোলিস ও মেমফিসের মতো প্রধান প্রধান শহর) এবং মিশরীয় ধর্মীয় ধারণার অনেক ত্রয়ীর প্রতীক ছিলেন।[১১০] কখনও কখনও ঊনবিংশ রাজবংশের রাজন্যবর্গের রক্ষাকর্তা[১১১] এবং জগতে বিশৃঙ্খলার মূর্তরূপ সেতকেও এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত করা হত। এর ফলে দেবমণ্ডলী সম্পর্কে একটি একক স্পষ্ট দৃষ্টিকোণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা সম্ভব হত।[১১২]

তিনের সঙ্গে তিন গুণ করে যে নয় সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা একটি সমুচ্চয়ের প্রতীক। তাই মিশরীয়রা একাধিক বৃহত্তর দেবগোষ্ঠীকে "এননিয়াড" বা নয় দেবতার গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করত। এমনকি গোষ্ঠীতে নয়ের বেশি দেবদেবী থাকলেও এই বিশেষণটিই ব্যবহৃত হত।[Note ২] সর্বপ্রধান এননিয়াডটি ছিল হেলিওপোলিসের এননিয়াড। এটি ছিল আতুমের বংশধর দেবদেবীগণের এক সম্প্রসারিত পরিবার, যার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেবতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।[১০৭] এননিয়াড পরিভাষাটির মাধ্যমে আবার অধিকতর সম্প্রসারিত অর্থে মিশরের সকল দেবদেবীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হত।[১১৩]

দেবদেবীদের মণ্ডলটিতে একটি অস্পষ্ট ও পরিবর্তনশীল পদমর্যাদাক্রম বিদ্যমান ছিল। ব্রহ্মাণ্ডের বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রভাব-বিস্তারকারী অথবা পৌরাণিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীনতর দেবগণ দিব্যসমাজে উচ্চতর স্থানের অধিকারী ছিলেন। এই সমাজের শীর্ষস্থানে ছিলেন দেবরাজ, যাঁকে সচরাচর সৃষ্টিকর্তা দেবতা মনে করা হত।[১১৩] মিশরের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাদা আলাদা দেবতাকে এই উচ্চ স্তানটি প্রদান করা হয়েছিল। আদি রাজবংশীয় যুগে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন হোরাস; পুরনো রাজ্যে সর্বপ্রধানের মর্যাদা অর্জন করেন রা, নতুন রাজ্যে আমুন সর্বোচ্চ দেবতার মর্যাদা পান এবং টলেমীয় ও রোমান যুগে আইসিসকে দেবতাদের রানি ও সৃষ্টিকর্ত্রী দেবী মনে করা হত।[১১৪] নতুনভাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত দেবতাদের মধ্যে তাঁদের পূর্বসূরিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি পরিগ্রহণ করার প্রবণতা দেখা যেত।[১১৫] আইসিস তাঁর উত্থানের সময় অন্যান্য অনেক দেবীর বৈশিষ্ট্য আত্মীভূত করেছিলেন এবং যখন আমুন দেবমণ্ডলীর রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি সৌরদেবতা হওয়ার জন্য রা-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।[১১৬]

প্রকাশ ও সংযুক্তি

সম্পাদনা
 
আমুন-রা-কামুতেফ। আমুনের এই রূপটি সৌরদেবতা রূপে রা-এর বৈশিষ্ট্য ও মিনের প্রজনন-শক্তির সম্মিলিত রূপ।[১১৭] তাঁর মস্তকাবরণীতে স্থিত সৌর-চাকতিটি রা-এর থেকে গৃহীত এবং তাঁর সমুত্তেজিত পুরুষাঙ্গটি এসেছে মিনের মূর্তিতত্ত্ব থেকে।[১১৮]

মনে করা হত যে, দেবদেবীরা বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হন।[১১৯] মিশরীয়দের মধ্যে আত্মা সম্পর্কে জটিল ধারণাটি বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত ছিল। দেবতাদের আত্মাও এই ধরনের একই রকম অনেক উপাদান নিয়ে গঠিত ছিল।[১২০] বা ছিল মানব ও দেবতাদের আত্মার এমন এক উপাদান যা চারিপাশের জগৎকে প্রভাবিত করত। দেবতার শক্তির যে কোনও দৃশ্যমান প্রকাশকে বলা হত সেই দেবতার বা; যেমন সূর্যকে বলা হত রা-এর বা[১২১] কোনও দেবতার বিবরণকে বলা হত সেই দেবতার কা। এটি ছিল সংশ্লিষ্ট দেবতার আরেকটি উপাদান, যা দেবতার বা-এর বাসস্থান-স্বরূপ আধারের কাজ করত। দেবদেবীদের কাল্ট মূর্তি মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে থাকত। সেই সঙ্গে থাকত পবিত্র পশুপাখিদের মূর্তিও, যা ছিল নির্দিষ্ট দেবদেবীদের প্রতীক। এই সব মূর্তিগুলিকেই এইভাবে দিব্য বা-এর বাসভবন মনে করা হত।[১২২] দেবদেবীদের উপর একাধিক বাকা আরোপ করা হয়, যেগুলির ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট দেবতার প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যবাচক বিভিন্ন দিকের পরিচায়ক ছিল।[১২৩] কথিত ছিল যে, সৃষ্টিতে যা কিছু আছে তা সৃষ্টিকর্তা দেবতা আতুমের অন্যতম কা। তিনি আদিতে সব কিছুকে নিজের মধ্যমে ধারণ করতেন।[১২৪] এছাড়া একজন দেবতাকেও অপর এক দেবতা বা বলা হত; যার অর্থ এই ছিল যে প্রথম দেবতাটি দ্বিতীয় জনের শক্তিস্বরূপ।[১২৫] দেবতাদের দেহাংশও পৃথক দেবতা হিসেবে পরিগণিত হতে পারত। যেমন, রা-এর চোখ ও আতুমের হাত উভয়েই দেবী হিসেবে বিবেচিত হত।[১২৬] দেবতারা জীবনদায়ী শক্তি দ্বারা এতটাই পরিপূর্ণ ছিল যে তাদের দেহজাত রসও অন্য জীবন্ত সত্ত্বায় পরিণত হতে পারত।[১২৭] যেমন কথিত আছে, সৃষ্টিকর্তা দেবতার চোখের জল থেকে মানবজাতির এবং ঘাম থেকে অন্যান্য দেবতাদের উৎপত্তি।[১২৮]

রাষ্ট্রীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবীরাও স্থানীয় রূপের উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন। এই রূপগুলি আবার কখনও কখনও প্রাচীনতর আঞ্চলিক দেবতাদের বৈশিষ্ট্যাবলি আত্মীভূত করে নিত।[১২৯] হোরাসের এমন অনেক রূপ আছে যা নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত; যার মধ্যে আছেন নেখেনের হোরাস, বুহেনের হোরাস ও এদফুর হোরাস।[১৩০] এই স্থানীয় রূপগুলি প্রায় পৃথক সত্ত্বা হিসেবেও পরিগণিত হতে পারত। নতুন রাজ্যের শাসনকালে, পে-খেন্তির আনুমের থেকে বার্তালাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি ওর্যাকল কর্তৃক এক ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়েছিলেন কাপড় চুরি করার অপরাধে। সেই ব্যক্তি পৃথক বিচারলাভের আশায় আনুমেরই দুই অন্যান্য স্থানীয় ওর্যাকলের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন।[১৩১] দেবতাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপগুলি তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকাকেও প্রকাশ করত। উদাহরণস্বরূপ, হোরাসকে এক শক্তিশালী আকাশ-দেবতা অথবা এক অসহায় শিশু দেবতা হিসেবেও গণ্য করা হত এবং এই রূপগুলি কখনও কখনও স্বতন্ত্র দেবতা হিসেবে পরিগণিত হত।[১৩২]

যত সহজে দেবতাদের বিভাজিত করা হত, ঠিক তত সহজেই তাদের একসঙ্গে যুক্তও করা হত। একজন দেবতাকে অন্য একজনের বা বলা হত এবং দুই বা ততোধিক দেবতাকে এক দেবতায় যুক্ত করে এক সমন্বিত নাম ও মূর্তিতত্ত্ব প্রদান করা হত।[১৩৩] স্থানীয় দেবতারা বৃহত্তর দেবতাদের সঙ্গে যুক্ত হতেন এবং একই ধরনের বিষয়ের দেবতাদের সমন্বিত করা হত। স্থানীয় দেবতা সোবেকের সঙ্গে যুক্ত করে সোবেক-রা রূপটি কল্পিত হয়েছিল; আমুনের সঙ্গে তাঁর সহকারী শাসক-দেবতা রা-কে যুক্ত করে কল্পিত হয় আমুন-রা; আবার হোরাসের সৌর রূপটি নিয়ে গঠিত হয়েছিল রা-হোরাখতি এবং বিভিন্ন সৌরদেবতাকে সম্মিলিত করে কল্পিত হয়েছিল হোরেমাখেত-খেপরি-রা-আতুমের রূপটি।[১৩৪] কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের দেবদেবীদের এইভাবে সম্মিলিত করা হত। তবে যে সব ক্ষেত্রে করা হত তার একটি উদাহরণ হল ওসাইরিস-নেইথ।[১৩৫] দেবতাদের মধ্যে এই সম্মিলনকে বলা হয় সমন্বয়বাদ। অন্যান্য ক্ষেত্রে যখন এই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়, তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ধর্মীয় ব্যবস্থার মিশরীয় প্রথাটিকে বোঝায় না; যদিও বিদেশি দেবদেবীরা স্থানীয় দেবদেবীদের সঙ্গে সমন্বিত হয়েছিলেন।[১৩৪] পরিবর্তে সমন্বয়বাদ থেকে দেবদেবীদের ভূমিকাগুলির অংশত একই রকম হওয়ার এবং সম্প্রসারিত ক্ষেত্রে প্রত্যেকের প্রভাবগুলি জানান দেয়। সমন্বয়মূলক সমষ্টিগুলি চিরস্থায়ী ছিল না; কোনও এক দেবমণ্ডলীর সদস্য কোনও দেবতাকে যেমন পৃথকভাবে পূজিত হতে দেখা যেত, তেমনই আবার অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে নতুন দেবমণ্ডলী গঠন করতেও দেখা গিয়েছে।[১৩৫] ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত দেবতারা কখনও কখনও পরস্পরের সঙ্গে মিশে যেতেন। বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক বাজপাখি দেবতাকে হোরাস আত্মীভূত করেছিলেন। এই সব দেবতাদের মধ্যে ছিলেন খেন্তি-ইর্তি ও খেন্তি-খেতি (যিনি হোরাসের স্থানীয় প্রকাশের তুলনায় সামান্য বেশি মর্যাদা পেয়েছিলেন। হাথোর সম্মিলিত হয়েছিলেন বাত নামে এক অনুরূপ গো-দেবীর মধ্যে এবং আদিযুগীয় অন্ত্যেষ্টি দেবতা খেন্তি আমেন্তিউকে স্থানচ্যূত করেছিলেন ওসাইরিস ও আনুবিস[১৩৬]

আতেন ও সম্ভাব্য একেশ্বরবাদ

সম্পাদনা

নতুন রাজ্যের মধ্যভাগে আখেনাতেনের রাজত্বকালে (আনুমানিক ১৩৫৩-১৩৩৬ অব্দ) এককভাবে সৌরদেবতা আতেন রাষ্ট্রধর্মের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। আখেনাতেন অন্যান্য দেবতাদের মন্দিরে অর্থসাহায্য করা বন্ধ করে দেন এবং বিভিন্ন স্মারক থেকে দেবদেবীদের নাম ও চিত্র নিশ্চিহ্ন করে দেন। এই ব্যাপারে তাঁর বিশেষ লক্ষ্য ছিলন আমুন। এই নতুন ধর্মব্যবস্থাটিকে ক্ষেত্রবিশেষে আতেনবাদ নামেও অভিহিত করা হত। মিশরের ইতিহাসের অন্যান্য পর্বগুলিতে যে বহু দেবতার বহুদেববাদী পূজার থেকে নাটকীয় রকমের ভিন্নতর ছিল। আতেনের কোনও পুরাণকথা ছিল না। প্রথাগত দেবদেবীদের রীতির বিপরীতে আতেনকে বিমূর্ততরভাবে চিত্রিত ও বর্ণনা করা হত। পূর্ববর্তীকালে যেখানে নতুনভাবে গুরুত্বপ্রাপ্ত দেবতারা প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে আত্মীভূত হয়ে যেতেন, আতেনবাদে তার পরিবর্তে একক দেবতার উপাসনার উপর দৃষ্টি আরোপ করত এবং তার ফলে মিশরের প্রথাগত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বহুত্ববাদকে বাদ দিয়ে দিত।[১৩৭] তবে আতেনবাদ সম্ভবত সম্পূর্ণভাবে একেশ্বরবাদ ছিল না, কারণ একেশ্বরবাদে অন্যান্য দেবদেবীতে বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এই যুগেও জনসাধারণ যে ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য দেবতার উপাসনা করত, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।[১৩৮] মাত, শু ও তেফনুত প্রমুখ কয়েকজন দেবদেবীর প্রতি আতেনবাদের আপাত সহিষ্ণুতা চিত্রটিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। এই সব কারণে মিশরতত্ত্ববিদ ডোমিনিক মন্টসেরাটজন বেইনেস মনে করেন যে, আখেনাতেন সম্ভবত ছিলেন মনোলেটারাস অর্থাৎ একক দেবতার পূজা করলেও তিনি অন্যান্য দেবতাদের অস্তিত্ব স্বীকার করতেন।[১৩৯][১৪০] কোনও কারণে আতেনবাদের বেদস্তুত্র ধর্মতত্ত্বটি মিশরীয় জনসাধারণের মধ্যে গৃহীত হয়নি এবং আখেনাতেনের উত্তরসূরিরা প্রথাগত ধর্মবিশ্বাসে ফিরে যান।[১৪১]

দৈব ও প্রথাগত ধর্মের ঐক্য

সম্পাদনা
 
অন্যান্য অনেক দেবতার বৈশিষ্ট্য বহনকারী দেবতা বেস। এই ধরনের চিত্র একক সত্ত্বার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দৈব ক্ষমতার উপস্থিতির প্রতীক।[১৪২]

দীর্ঘকাল ধরে গবেষকদের মধ্যে এই বিতর্ক প্রথাগত মিশরীয় ধর্ম এক গভীরতর স্তরে বিভিন্ন দেবদেবীদের একত্রীভূত করতে পেরেছিল কিনা তা নিয়েছে। এই বিতর্কের অন্যতম কারণগুলি হল সমন্বয়বাদের অনুশীলন (যা ইঙ্গিত করে যে পৃথক পৃথক দেবদেবীরা শেষ পর্যন্ত এক দেবতায় মিলিত হয়েছিল) এবং মিশরীয় লিপিগুলির এমন এক প্রবণতা যেখানে দেখানো হত কোনও নির্দিষ্ট দেবতার ক্ষমতা এতটাই বেশি ছিল যা অপর সকল দেবদেবীকে অতিক্রম করে যেত। বিতর্কের অপর এক বিষয় হল প্রজ্ঞাসাহিত্যে "ঈশ্বর" শব্দটির উল্লেখ, যে শব্দটি কোনও নির্দিষ্ট দেবতা বা দেবমণ্ডলীকে উদ্দেশ্য করে ব্যবহৃত হয়নি।[১৪৩] উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ই. এ. ওয়ালিস বাজ মনে করতেন যে, মিশরীয় জনসাধারণ বহুদেববাদী হলেও যথাযথ একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে অভিজাত শ্রেণির ধারণা ছিল এবং তাঁরাই এই প্রজ্ঞাসাহিত্য রচনা করেন।[১৪৪] তাঁর সমসাময়িক জেমস হেনরি ব্রেস্টেড মনে করতেন যে, মিশরীয় ধর্ম প্রকৃতপক্ষে ছিল সর্বপ্রাণবাদী; এই ধর্মে মনে করা হয় সৌরদেবতার শক্তি অন্য সকল দেবতার মধ্যে বিরাজমান। অন্যদিকে হারমান জাঙ্কার মনে করতেন যে, মিশরীয় সভ্যতা ছিল আদিতে একেশ্বরবাদী ছিল এবং ইতিহাসের ধারার প্রবাহিত হয়ে বহুদেববাদী হয়ে পড়ে।[১৪৫]

১৯৭১ সালে এরিক হরনাং একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।[Note ৩] এই গবেষণাপত্রে এই সকল দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে খণ্ডন করা হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন যে, কোনও নির্দিষ্ট সময়কালে অপ্রধান দেবদেবী সহ অনেক দেবদেবীই অন্যদের তুলনায় অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, প্রজ্ঞাসাহিত্যে এই অসংজ্ঞায়িত "ঈশ্বর" শব্দটি সামগ্রিকভাবে প্রযোজ্য একটি শব্দ; পাঠক যে পরিস্থিতিতে রয়েছেন সেই পরিস্থিতিতে যে কোনও দেবতার ক্ষেত্রে তিনি এই শব্দটি বসিয়ে নিতে পারেন।[১৪৬] যদিও প্রত্যেক দেবতার সমন্বায়িত রূপ, রূপের প্রকাশ ও মূর্তিতত্ত্ব ছিল চির-পরিবর্তনশীল, তবুও সেগুলি একটি সীমিত সংখ্যক রূপের মধ্যে সীমায়িত ছিল এবং কখনও এক একেশ্বরবাদী বা সর্বপ্রাণবাদী পন্থায় পরিণত হয়নি। হরনাং বলেন যে, মিশরীয় ধর্মকে সবচেয়ে ভালো ‘হেনোথেইজম’ শব্দটি দ্বারা বর্ণনা করা যায়। একজন মিশরীয় কোনও এক দেবতাকে নির্দিষ্ট সময়ে পূজা করতে পারত এবং তাঁকেই সেই মুহুর্তে সর্বোচ্চ দেবতার মর্যাদা প্রদান করতে পারত। অবশ্য এই কাজ করতে গিয়ে তাকে অন্যান্য দেবতাদের অস্বীকার করতে হত না এবং যে দেবতা বা দেবীকে সে পূজা করছে তাঁর মধ্যে অন্যান্য দেবদেবীদেরও একত্রীভূত করে দিতে পারত। হরনাং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে দেবতারা শুধুমাত্র পুরাণকথাতেই সম্পূর্ণ একত্রীভূত হতে পেরেছিলেন এবং সেই ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় সৃষ্টির পূর্ববর্তী অবস্থার বিবরণে। তারপর বহু দেবদেবীর উৎপত্তি ঘটেছিল এক সমরূপীয় অনস্তিত্ব থেকে।[১৪৭]

হরনাং-এর বক্তব্যগুলি মিশরীয় ধর্মের অন্যান্য গবেষকদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। তবুও কয়েকজন এখনও বিশ্বাস করেন যে, হরনাং যেমন বলেছিলেন তার তুলনায় কোনও কোনও সময়ে দেবতারা অনেক বেশি পরিমাণ একত্রীভূত হয়েছিলেন।[৫৬] জান অ্যাসমান মনে করেন যে, নতুন রাজ্যে একক একজন দেবতা ধীরে ধীরে প্রাধান্য অর্জন করেছিলেন এবং যার সূত্রপাত ঘটেছিল সর্বাপেক্ষা-গুরুত্বপূর্ণ সূর্যদেবতা আমুন-রা-এর প্রতি গুরুত্বারোপের মাধ্যমে।[১৪৮] তাঁর মতে, আতেনবাদ এই প্রবণতারই স্বাভাবিক ফল। এই ধর্মমতে এক একক দেবতাকে সৌরদেবতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং অন্যান্য সকল দেবতাকে অস্বীকার করা হয়। তারপর আতেনবাদের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, পুরোহিত-স্থানীয় ধর্মতত্ত্ববিদগণ বিশ্বজনীন দেবতা এক ভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করেন, সে এমন এক দেবতার বর্ণনা যা প্রথাগত বহুদেববাদের সঙ্গে সহাবস্থান করেন। মনে করা হত যে, এক দেবতাই বিশ্বের ও অন্যান্য সকল দেবদেবীর সীমা অতিক্রম করে যেতে পারেন, অন্যদিকে একই সময় বিভিন্ন দেবদেবীরা হলেন সেই একক দেবতারই রূপান্তর মাত্র। অ্যাসমানের মতে, এই একক দেবতাকে বিশেষভাবে আমুনের সঙ্গে নতুন রাজ্যের শেষভাগের প্রধান দেবতা আমুনের সঙ্গে যুক্ত করা হত, অন্যদিকে মিশরের ইতিহাসের অন্যান্য সময়ে বিশ্ববজনীন দেবতাকে অন্যান্য অনেক দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।[১৪৯] জেমস পি. অ্যালেন মনে করেন যে, একক দেবতা ও বহু দেবতার একত্র অস্তিত্বের ধারণাটি মিশরীয় চিন্তাধারণার "পন্থার বৈচিত্র্য" ধারণাটির সঙ্গে খাপ খায়, সেই সঙ্গে খাপ খায় সাধারণ পূজকদের হেনোথেইস্টিক ধর্মাচারণের সঙ্গেও। তিনি বলেন যে, মিশরীয়রা সম্ভবত দেবত্বের একত্বকে স্বীকৃতি দিত "নির্দিষ্ট অবস্থার ভিত্তিতে এক নির্দিষ্ট দেবতার দঙ্গে তাদের ‘দেবতা’র সমরূপীয় ধারণাটিকে চিহ্নিত করার" মাধ্যমে।[]

বর্ণনা ও চিত্রণ

সম্পাদনা
 
ওয়েপওয়াওয়েতের শৃগাল-কবচ

মিশরীয় লিপিগুলিতে দেবতাদের শরীর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের শরীর মূল্যবান উপাদান দ্বারা গঠিত হত: সোনার মাংস, রুপোর হাড় এবং নীলকান্তমণির চুল। তাঁদের শরীর থেকে এমন এক গন্ধ বের হত যা মিশরীয়রা আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ধূপের গন্ধের অনুরূপ মনে করত। কোনও কোনও লিপিতে তো দেবদেবীদের সুনির্দিষ্ট বিবরণও দেওয়া হয়েছে, সেখানে তাঁদের উচ্চতা ও চোখের রং পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। তবে এই বৈশিষ্ট্যগুলি স্থায়ী বলে গণ্য হত না। পুরাণকথায় দেখা যায় যে, দেবতারা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য রূপ পরিবর্তন করে নিচ্ছেন।[১৫০] মিশরীয় গ্রন্থাবলিতে দেবতাদের প্রকৃত অন্তর্নিহিত রূপটিকে প্রায়শই "রহস্যময়" বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কারণে মিশরীয়দের দেবদেবীদের দৃশ্যগত রূপকে আক্ষরিক অর্থে ধরা যায় না। এই রূপগুলি দেবদেবীদের চরিত্রের নির্দিষ্ট দিকের প্রতীক, যা কাজ করত অনেকটা চিত্রলিপিমূলক রচনার ধারকলিপির মতো।[১৫১] এই কারণেই অন্ত্যেষ্টি দেবতা আনুবিসকে সাধারণত মিশরীয় শিল্পকলায় কুকুর বা শিয়াল হিসেবে দেখানো হত। উল্লেখ্য, এই দুই প্রাণীর শিকারী মনোবৃত্তি সমাহিত মমিগুলির সংরক্ষণে এক আশঙ্কার কাজ করত, যা ছিল এই ধরনের সুরক্ষার আশঙ্কার এক বিপরীত প্রয়াস। তাঁর কৃষ্ণবর্ণ দেহ ছিল মমিকৃত মাংসের প্রতীক এবং উর্বর কালো মাটিকে মিশরীয়রা পুনর্জন্মের এক প্রতীক হিসেবে দেখত।[১৫২]

 
সেত-পশু শা

অধিকাংশ দেবদেবীকে বিভিন্ন ভাবে দেখা হত। হাথোরের মূর্তিতে তাঁকে গোরু, গোখরো সাপ, সিংহী অথবা গোরুর শিং বা কান-বিশিষ্ট নারীর রূপে দেখা যায়। এক দেবতাকে বিভিন্ন ভাবে চিত্রায়িত করে মিশরীয়রা সেই দেবতার মূল প্রকৃতির বিভিন্ন দিকগুলিকে তুলে ধরত।[১৫১] দেবতাদের এই ধরনের প্রতীকী রূপের সীমায়িত সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়, যাতে তাঁদের একে অপরকে মূর্তিতত্ত্বের মাধ্যমে প্রায়শই পৃথকীকৃত করা যায়। এই রূপগুলির মধ্যে রয়েছে পুরুষ ও নারী (নরাত্বরোপণবাদ), পশুপাখি (পশুত্বারোপণবাদ) এবং অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে মাত্র জড় বস্তু। বিভিন্ন রূপের সমন্বয়, যেমন মানুষের শরীর ও পশুপাখির মাথা সহ দেবদেবীর মূর্তিও সচরাচর দেখা যেত।[] ইতিহাসের ধারার প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন রূপ এবং ক্রমবর্ধমান রূপে জটিল সমন্বায়িত রূপেরও আবির্ভাব ঘটতে থাকে।[১৪২] এক্ষেত্রে অধিকাংশ পরাবাস্তব রূপগুলি দেখা যায় পাতাললোকের দানবদের মধ্যে।[১৫৩] আইসিস বা হাথোরের মতো কয়েকজন দেবতাকে অন্যান্যদের থেকে তখনই পৃথক করা যেত যদি লিপিতে তাঁদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হত।[১৫৪] দেবীদের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ যোগের কারণেই তাঁরা গোরুর শিং-বিশিষ্ট মস্তকাবরণী ধারণ, যা আদিতে ছিল শুধুমাত্র হাথোরেরই মস্তকাবরণী।[১৫৫]

 
সম্পূর্ণ পশুর আকারে কুমির দেবতা সোবেকের মূর্তি। এটি সম্ভবত কোনও মন্দিরের কাল্ট মূর্তি।[১৫৬]

একজন দেবতাকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দেবতার মূর্তির কোনও কোনও বৈশিষ্ট্যগুলি অন্যান্যগুলির চেয়ে বেশি কাজে লেগেছে। একটি নির্দিষ্ট দেবমূর্তির মাথাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।[১৫৭] কোনও সংকর মূর্তিতে মাথাটি ছিল সংশ্লিষ্ট সত্ত্বাটির মূল রূপ। এই কারণেই মিশরতত্ত্ববিদ হেনরি ফিশার বলেছেন, "সিংহ-মস্তা দেবী হলেন মানব রূপে সিংহ-দেবী, অপর দিকে রাজকীয় স্ফিংক্স হলেন সিংহ-রূপ ধারণকারী এক মানুষ।" (উদ্ধৃতি: "a lion-headed goddess is a lion-goddess in human form, while a royal sphinx, conversely, is a man who has assumed the form of a lion."[১৫৮]) দেবতাদের মস্তকাবরণীর মধ্যে থাকত মুকুট-জাতীয় শিরোস্ত্রাণ (যা মানব রাজন্যবর্গও ব্যবহার করত) থেকে শুরু করে দেবতাদের মাথায় স্থাপিত বৃহদাকার চিত্রলিপি। এগুলি আরেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। অন্যদিকে দেবতারা হাতে যে সব জিনিস ধরে থাকতেন, সেগুলি সচরাচরত কোনও নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে প্রযোজ্য ছিল।[১৫৭] পুরুষ দেবতারা ওয়াজ নামে রাজদণ্ড এবং দেবীরা প্যাপিরাসের গুচ্ছ এবং উভয় প্রকার দেবীই মিশরীয় ভাষায় "জীবন" শব্দের প্রতীক আংখ চিহ্ন ধারণ করতেন। এই শেষোক্ত চিহ্নটি ছিল তাঁদের জীবন-দায়ী শক্তির প্রতীক।[১৫৯]

যে রূপগুলিতে দেবদেবীদের দেখানো হত তা বৈচিত্র্যপূর্ণ হলেও অনেক দিক থেকেই সীমায়িত ছিল। মিশরে বহুল-পরিচিত অনেক পশুপাখিকেই দেবদেবীদের মূর্তিতত্ত্বে দেখানো হত না। অন্যান্যরা অনেক দেবদেবীরই প্রতিনিধিত্ব করত। তার কারণ প্রায়শই এই সব দেবদেবী ও পশুপাখিদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হত।[১৬০] বৃষ ও মেষ ছিল পুরুষত্বের সঙ্গে, গোরু ও বাজপাখি ছিল আকাশের সঙ্গে, হিপোপোট্যামি ছিল মাতৃসুলভ সুরক্ষার সঙ্গে, বিড়াল-জাতীয় প্রাণীরা ছিল সূর্যদেবতার সঙ্গে এবং সর্প ছিল বিপদ ও নবীকরণ উভয়ের সঙ্গেই যুক্ত।[১৬১][১৬২] মিশরের ইতিহাসের আদিযুগে সে দেশে যে সব পশুপাখি দেখা যেত না তা দেবতাদের মূর্তিতে ব্যবহৃত হত না। উদাহরণস্বরূপ, ঘোড়া প্রথম মিশরে আসে দ্বিতীয় মধ্যবর্তী যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫০-১৫৫০ অব্দ)। এই কারণে এই পশুটি কখনই কোনও দেবতার প্রতীক হয়নি। একই ভাবে অধিকাংশ যুগেই নরাত্বরোপিত দেবদেবীরা যে সব পোষাক পরিধান করতেন, তার শৈলী পুরনো রাজ্যের যুগ থেকে খুব কমই পরিবর্তিত হয়েছে: পুরুষ দেবতাদের ক্ষেত্রে এক ধরনের ঘাঘরা-জাতীয় পোষাক, নকল দাড়ি এবং প্রায়শই এক ধরনের শার্ট এবং নারী দেবতাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘাকার আঁটোসাঁটো পোষাক।[১৬৩][Note ৪]

 
হাপি, জেনির মূর্তিতাত্ত্বিক জোড়ের মাধ্যমে প্রদর্শিত, যা প্রতীকীভাবে উচ্চ মিশরনিম্ন মিশরকে একত্রে জুড়েছে

মৌলিক নরাত্বরোপিত রূপগুলি পরিবর্তনশীল। শিশু দেবতাদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখানো হয়। কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক দেবতার প্রজনন-শক্তির উপর গুরুত্ব আরোপের জন্যও নগ্ন অবস্থায় দেখানো হত।[১৬৫] কোনও কোনও পুরুষ দেবয়ার স্ফীত উদর ও স্তন প্রদর্শিত হয় তাদের উভলিঙ্গত্ব বা সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য প্রদর্শনের জন্য।[১৬৬] অধিকাংশ পুরুষ দেবতার গাত্রবর্ণ লাল হলেও অধিকাংশ দেবীর গাত্রবর্ণ হলুদ—মিশরীয় পুরুষ ও নারীদের চিত্রণের ক্ষেত্রেও একই রং ব্যবহার করা হত—আবার ক্ষেত্রবিশেষে বেদস্তুর ও প্রতীকী গাত্রবর্ণ ব্যবহার করা হত।[১৬৭] এই কারণেই দেবতা হাপির গায়ের রং নীল ও আকার স্ফীতোদর-বিশিষ্ট, যা নীল নদের বন্যার দ্যোতক এবং এই বন্যা জমিকে যে উর্বরতা দান করে তার প্রতীক।[১৬৮] ওসাইরিস, প্তাহ ও মিনের মতো কয়েকজন দেবতার আকার "মমি-তুল্য", এঁদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জামাকাপড়ের ফাঁক দিয়ে সামান্য কাটা।[১৬৯] মমির প্রাচীনতম উদাহরণগুলি বস্ত্রাচ্ছাদিত মমির। এই সব দেবতার সঙ্গে মমির সাদৃশ্য থাকলেও তা সম্ভবত সেই আদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন দেবতাদের থেকেই এসেছে।[১৭০]

দেবতার প্রতীক-স্বরূপ কয়েকটি জড় বস্তু প্রকৃতি থেকে গৃহীত হয়েছে। যেমন গাছপালা বা সূর্য ও চন্দ্রের জন্য চাকতি-আকৃতির চিহ্ন।[১৭১] কোনও কোনও বস্তু নির্দিষ্ট দেবতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যেমন আড়াআড়ি স্থাপিত ধনুক ছিল নেইথের (𓋋) প্রতিনিধি বা মিনের (𓋉) প্রতীক, যা ছিল প্রাক্-রাজবংশীয় যুগে এই সকল দেবতার কাল্টগুলির প্রতীক।[১৭২] এই সব ক্ষেত্রে মূল বস্তুটির প্রকৃতি রহস্যময়।[১৭৩] প্রাক্-রাজবংশীয় ও আদি রাজবংশীয় যুগে, দেবদেবীরা প্রায়ই দৈব প্রতীক দ্বারা চিত্রায়িত হতেন: দেবদেবীদের প্রতীকচিহ্নের উপর স্থাপিত দণ্ড, যার মধ্যে পশুপাখি ও জড় বস্তু উভয়ের মূর্তিই দেখা যেত।[১৭৪]

মানুষের সঙ্গে সংযোগ

সম্পাদনা

ফ্যারাওয়ের সঙ্গে যোগসূত্র

সম্পাদনা
 
হোরাস ফ্যারাও দ্বিতীয় রামেসিসকে জীবন প্রদান করছেন। চুনাপাথরে অঙ্কিত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৫ অব্দ। ঊনবিংশ রাজবংশ। অ্যাবিডোসে দ্বিতীয় রামেসিস কর্তৃক নির্মিত একটি ছোটো মন্দির থেকে প্রাপ্ত; ফ্রান্সের প্যারিসে ল্যুভর জাদুঘরে রক্ষিত।
 
তৃতীয় রামেসিস আমুনের পূজা করছেন।

সরকারি নথিপত্রে ফ্যারাওদের দৈব বলে আখ্যাত করা হত এবং ক্রমাগত তাঁদের দেবমণ্ডলী কর্তৃক পরিবৃত অবস্থায় চিত্রিত করা হত। প্রত্যেক ফ্যারাও ও তাঁর পূর্বসূরিদের পৌরাণিক প্রাগিতিহাসে মিশর শাসনকারী দেবতাদের উত্তরসূরি গণ্য করা হত।[১৭৫] জীবিত রাজাদের হোরাসের সমতুল্য মনে করা হত এবং বহু সংখ্যক পুরুষ দেবতার (বিশেষত ওসাইরিস ও রা-এর) "পুত্র" আখ্যা দেখা হত। মৃত রাজাদেরও এই প্রাচীনতর দেবতাদের সমতুল্য মনে করা হত।[১৭৬] রানি ও রাজমাতাদেরও অনেক দেবীর সঙ্গে একাত্মীভূত জ্ঞান করা হত। হাতশেপসুত প্রমুখ অল্প কয়েকজন যে নারী ফ্যারাও পদ আবৃত করেছিলেন, তাঁরাও রাজপদের পৌরুষব্যঞ্জক দৃশ্যকল্পটিকে গ্রহণ করে এই একই দেবীগণের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতেন।[১৭৭] ফ্যারাওদের নিজস্ব শবাগার মন্দির থাকত, যেখানে তাঁদের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরেও বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালিত হত।[১৭৮] কিন্তু অল্প কয়েকজন ফ্যারাওই তাঁদের মৃত্যুর বহুকাল পরেও দেবতা হিসেবে পূজিত হয়েছিলেন এবং বেসরকারি লিপিগুলিতেও রাজন্যবর্গকে মানুষের রূপেই দেখা হত। এই সব কারণেই গবেষকদের মধ্যে এই ব্যাপারে মতদ্বৈধ আছে যে, সত্যিই হয়তো অধিকাংশ মিশরীয় নিজেদের রাজাদের দেবতা মনে করতেন না। সম্ভবত রাজা যখন অনুষ্ঠান পালন করতেন তখনই শুধু তাঁকে দেবতা হিসেবে গণ্য করা হত।[১৭৯]

যদিও রাজা যেহেতু দেবলোক ও মানবলোকের মধ্যে এক যোগসূত্র স্থাপন করেন বলে বিশ্বাস করা হত, সেই হেতু মিশরে দেবগণের প্রতিনিধি রূপে রাজা দৈব মর্যাদার একটি যুক্তিসঙ্গত ভূমিকা ছিল।[১৮০] মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, দেবতাদের বাসস্থান হিসেবে মন্দিরের প্রয়োজন এবং তাঁদের ভরণপোষণের জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর অনুষ্ঠান পালন ও বলিদানেরও প্রয়োজন আছে। রাজার তত্ত্বাবধানে এবং তাঁদের পুরোহিতগণ ও শ্রমিকদের সাহায্যে আয়োজিত কাল্টগুলি এই বিষয়গুলিকে ধরে রাখত।[১৮১] অবশ্য রাজকীয় আদর্শ অনুযায়ী, মন্দির নির্মাণ ছিল একচেটিয়াভাবে ফ্যারাওর কাজ, সেই সঙ্গে পুরোহিতেরাও যে সেখানে আচার-অনুষ্ঠান পালন করতেন, সেটাও করতেন ফ্যারাওর প্রতিনিধি হিসেবেই।[১৮২] এই কাজগুলি ছিল রাজার মৌলিক ভূমিকা অর্থাৎ মাত-এর রক্ষণাবেক্ষণের একটি অংশ।[১৮৩] রাজা ও যে জাতির প্রতিনিধিত্ব রাজা করতেন তারা উভয়ে মিলে দেবতাদের মাত প্রদান করতেন, যাতে দেবতারাও নিজেদের কাজ করতে পারেন, যে কাজটি হল ব্রহ্মাণ্ডে মাত-কে রক্ষা করা এবং তা করলেই, মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মানবজাতির জীবনধারণ সম্ভব ছিল।[১৮৪]

মানবজগতে উপস্থিতি

সম্পাদনা

যদিও মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, তাদের দেবদেবীরা তাদেরই চারিপাশে এই জগতে বিরাজমান, তবুও মানবলোক ও দেবলোকের মধ্যে যোগাযোগ প্রধানত নির্দিষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে সীমায়িত।[১৮৫] মিশরীয় সাহিত্যে দেখা যায়, দেবতার রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন মানুষের সামনে। কিন্তু বাস্তব জীবনে মিশরীয়দের সঙ্গে তাদের দেবতাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রটি অপ্রত্যক্ষ ও সীমায়িত।[১৮৬]

কথিত ছিল যে, কোনও দেবতার বা পর্যায়কালে দেবরাজ্য ত্যাগ করে সেই দেবতার মূর্তিতে এসে বাস করেন।[১৮৭] এই সব মূর্তিতে বাস করার মাধ্যমে দেবতারা তাঁদের লুক্কায়িত অবস্থাটি ত্যাগ করেন এবং এক মূর্তি ধারণ করেন।[১৮৮] মিশরীয়রা মনে করত, যে স্থান বা বস্তু ḏsr ("পবিত্র") তা আর সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র এবং সেই কারণেই কোনও দেবতার বাসস্থান হিসেবে উপযুক্ত।[১৮৯] মন্দিরের মূর্তি ও খোদাইচিত্র, এমনকি আপিসের মতো নির্দিষ্ট পবিত্র জন্তু-জানোয়ারও এইভাবে দৈব মধ্যস্থতাকারীর কাজ করত।[১৯০] স্বপ্ন ও দিব্যোন্মাদ অবস্থাও এই যোগাযোগের এক ভিন্ন উপায় ছিল। মনে করা হত যে, এই সব অবস্থায় মানুষ দেবতাদের কাছাকাছি আসে এবং কখনও কখনও তাদের থেকে বার্তাও লাভ করে।[১৯১] শেষ পর্যন্ত পরকাল-সংক্রান্ত মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মানুষের আত্মা মৃত্যুর পর দৈবরাজ্যে প্রবেশ করে। এই জন্য মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, মৃত্যুতেও দেবতাদের সমান স্তরে তাদের অস্তিত্ব বজায় থাকে এবং তারাও দেবতাদের রহস্যময় প্রকৃতি বুঝতে সক্ষম হয়।[১৯২]

 
আবু সিম্বেলের মহামন্দিরের গর্ভগৃহে প্তাহ, আমুন ও রা-এর সঙ্গে দ্বিতীয় রামেসিসের (ডানদিক থেকে দ্বিতীয়) মূর্তি

রাষ্ট্রীয় ধর্মানুষ্ঠান পালিত হত মন্দিরগুলিতে। এই মন্দিরগুলি দেবদেবীদের মূর্তিতে পরিপূর্ণ ছিল। মন্দিরের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মূর্তিটি ছিল কাল্ট মূর্তি এবং সেটি থাকত গর্ভগৃহে। এই মূর্তিগুলি ছিল প্রমাণ আকারের থেকে কিছু ছোটো এবং দেবতার শরীর যে মূল্যবান বস্তু দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হত তা দিয়েই গঠিত।[Note ৫] অনেক মন্দিরেই একাধিক গর্ভগৃহ বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেকটি গর্ভগৃহেই পারিবারিক দেবত্রয়ীর মতো দেবগোষ্ঠীর এক-এক জনের কাল্ট মূর্তি বিরাজমান ছিল।[১৯৪] শহরের প্রধান দেবতাকে সংশ্লিষ্ট শহরের প্রভু হিসেবে দেখা হত। শহরের বহু বাসিন্দাকে যে মন্দির এই প্রধান দেবতার দিব্য বাসভবন অর্থাৎ মন্দির হিসেবে কল্পিত হত, তার ভৃত্য হিসেবে নিযুক্ত করা হত। মিশরের মন্দিরগুলিতে বসবাসকারী দেবদেবীদের একত্রে সমগ্র দেবমণ্ডলীর প্রতিনিধি মনে করা হত।[১৯৫] কিন্তু অনেক দেবতাকেই (এঁদের মধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দেবতা যেমন আছেন, তেমনই আছেন অপ্রধান ও প্রতিকূল-মনোভাবাপন্ন দেবতারাও) নিজস্ব মন্দির দেওয়া হয়নি। যদিও তাঁদের মধ্যে কয়েকজন অন্যান্য দেবতাদের মন্দিরে প্রতিনিধিত্ব করতেন।[১৯৬]

বহির্জগতের অপবিত্রতা থেকে গর্ভগৃহের পবিত্র শক্তিকে রক্ষা করার জন্য মিশরীয়রা মন্দিরের গর্ভগৃহকে ঘিরে রাখত এবং গর্ভগৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক রকম বিধিনিষেধ আরোপ করত। রাজা ও মহাপুরোহিত ব্যতীত অন্য কাউকে এই কারণে কাল্ট মূর্তির কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হত না।[১৯৭] ব্যতিক্রম ছিল উৎসবের শোভাযাত্রা। এই সময় মূর্তিগুলিকে মন্দিরের বাইরে আনা হত একটি ঘেরা বহনযোগ্য বেদিতে স্থাপন করে।[১৯৮] এই সময়ও সচরাচর দেবমূর্তি জনগণের দৃষ্টির অন্তরালে রাখা হত।[১৯৯] জনসাধারণের সঙ্গে দেবতাদের যোগাযোগের প্রত্যক্ষ পন্থা কমই ছিল। মন্দিরে জনসাধারণের ব্যবহার্য জায়গাগুলির মধ্যে ছিল ছোটো ছোটো প্রার্থনাকক্ষ। এগুলি প্রবেশদ্বার থেকে মন্দিরভবনের পিছনে নিরাবলম্ব উপাসনালয়ের কাছ পর্যন্ত দেখা যেত।[২০০] বিভিন্ন সম্প্রদায়ও নিজস্ব ব্যবহারের জন্য ছোটো ছোটো উপাসনালয় নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করত এবং কোনও কোনও পরিবারে বাড়ির ভিতরেই পূজাবেদি ছিল।[২০১]

মানবজীবনে হস্তক্ষেপ

সম্পাদনা

প্রাকৃতিক শৃঙ্খলার ধনুকাকৃতির খিলানটির উপর যেমন, তেমনই মানবজীবনের সঙ্গেও মিশরীয় দেবতারা যুক্ত ছিলেন। এই দৈব প্রভাব প্রধানত মিশরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল; বিদেশিদের প্রথাগতভাবে দৈব শৃঙ্খলার বহির্ভূত মনে করা হত। নতুন রাজ্যের আমলে যখন অন্যান্য জাতি মিশরীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে এল, তখন কথিত হয়েছিল যে, মিশরীয়রা যেমন সূর্যদেবতার সহৃদয়তা লাভ করেছিল, তেমনই বিদেশিরাও লাভ করছে।[২০২]

কথিত ছিল যে, সময়ের তত্ত্বাবধায়ক থোথ মানুষ ও দেবদেবী উভয়েরই নির্দিষ্ট জীবৎকাল নির্ধারিত করে দেন।[২০৩] অন্যদিকে মেসখেনেতরেনেউতেত প্রমুখ দেবতারা মানুষের আয়ুষ্কাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই দুই দেবতাই মানুষের জন্ম পরিচালনা করতেন। অন্যদিকে শাই ছিলেন নিয়তির মূর্তিরূপ।[২০৪] এই কারণে মৃত্যুর সময় ও অবস্থা ছিল নিয়তি সম্পর্কে মিশরীয় ধারণার প্রধান অর্থ। যদিও এই সকল দেবদেবী কিছুটা পরিমাণে হলেও জীবনের অন্যান্য ঘটনাবলিকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন। বেশ কয়েকটি লিপিতে উল্লিখিত হয়েছে যে, ব্যক্তির "হৃদয়"-এর (মিশরীয় ধার্যণায় যা ছিল আবেগ ও বুদ্ধির আসন) মধ্য দিয়ে কাজ করে দেবতারা মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত বা অনুপ্রাণিত করতেন। এও মনে করা হত যে, রাজা কীভাবে তাঁর রাজ্য পরিচালনা করবেন এবং রাজ্যের মন্দিরগুলির ব্যবস্থাপনায় কী নিয়মনীতি জারি করবেন সে নির্দেশও দেবতারাই দিতেন। মিশরীয় লিপিগুলিতে অল্প ক্ষেত্রেই ব্যক্তি মানুষের উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং যেখানে দেওয়া হয়েছে সেখানে এগুলির সঙ্গে দেবতা-প্রদত্ত নৈতিক ধ্যানধারণার কোনও যোগ পাওয়া যায় না।[২০৫] প্রাচীন মিশরে নৈতিকতার ধারণাটির ভিত্তি ছিল মাত। মানবসমাজে এই মাত ধারণাটির প্রয়োগ ঘটালে তার অর্থ দাঁড়াতো যে প্রত্যেকেরই এমন এক সুশৃঙ্খল পন্থায় জীবনযাপন করা উচিত যযাতে অন্য ব্যক্তির সুখ-সাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত না ঘটে। দেবতারা যেহেতু মাত-এর রক্ষক ছিলেন, সেই হেতু নৈতিকতাও তাঁদের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, দেবতারা মানুষের মৃত্যুর পর তাদের নৈতিক গুণাবলি বিচার করতেন। নতুন রাজ্যের শাসনকালের মধ্যেই এমন এক বিশ্বাস চলে এসেছিল যে, এই বিচারে নিষ্পাপ প্রতিপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত পরলোকে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনিবার্য। সাধারণভাবে যদিও দেবতারা যে কঠোর নিয়মাবলি প্রবর্তন করেছিলেন তা পালন করার তুলনায় নৈতিকতাই ছিল দৈনন্দিন জীবনে মাত-কে রক্ষা করার ব্যবহারিক পন্থা।[২০৬]

 
দেবতা শেদের কবচ

দেবতার সহায়তা অগ্রাহ্য করার এবং মাত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণকে লঙ্ঘন করার স্বাধীন ইচ্ছা মানুষের আছে। কিন্তু তা করলে মানুষের উপরে দেবতারই শাস্তি নেমে আসে বলে ধারণা করা হত।[২০৭] একজন দেবতা মানবলোকে দেবতার শক্তির প্রকাশ বা ব্যবহার করে এই শাস্তি বহন করে নিয়ে আসতেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসুস্থতাকে দিব্য বা-এর শক্তির কাজ বলে মনে করা হত।[২০৮] অন্যদিকে দেবতারাও সদ্গুণসম্পন্ন মানুষকে আরোগ্যদান করতে ও তাদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করতে পারতেন।[২০৯] এই সব ধরনের হস্তক্ষেপই ক্রমে দেবতাদের দ্বারা প্রতীকায়িত হতে থাকে: নতুন রাজ্যে উদ্ভূত দেবতা সেদ দৈব উদ্ধারকার্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান।[২১০] এবং মিশরীয় ইতিহাসের শেষ যুগগুলির অ্যাপোট্রোপাইক দেবতা পেতবে হয়ে ওঠেন অপকর্মের প্রতিশোধ গ্রহণের দেবতা।[২১১]

মানুষ যখন অবিচারের শিকার হয় তখন তার জন্য দেবদেবীরা দায়ী থাকেন কিনা সেই প্রেক্ষিতে মিশরীয় লিপিগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যকে প্রায়শই দেখা হত মাত-এর বিপরীতে অবস্থানকারী ব্রহ্মাণ্ডের বিশৃঙ্খলা ইসফেত-এর ফল হিসেবে, এবং সেই কারণেই অশুভ ঘটনার কারণ হিসেবে দেবতাদের দোষ দেওয়া হত না। সেতের মতো কোনও কোনও দেবতা যাঁরা ইসফেত-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন তাঁদের বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করা হত, কিন্তু অন্য দেবতাদের দোষী করা হত না। কোনও কোনও লিপিতে মানুষের দুঃখকষ্টের জন্য দেবতাদের দায়ী করা হয়েছে, আবার অন্যগুলিতে দেবদেবীর স্বপক্ষে থিওডিসিস প্রদান করা হয়েছে।[২১২] মধ্য রাজ্যের গোড়ার দিকে বেশ কিছু লিপিতে জগতের অমঙ্গল-সংক্রান্ত অতিকথায় দেখানো হয়েছিল যে, সৃষ্টিকর্তা দেবতা নিজের শাসনকে কেন্দ্র করে এক মানব বিদ্রোহীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তারপর নিজেকে পৃথিবীর দায়িত্ব থেকে তুলে নিয়েছিলেন। মানুষের এই ধরনের আচরণের জন্য সৃষ্টিকর্তা নিজের সৃষ্টির থেকে এক দূরত্বের সৃষ্টি করেন এবং দুঃখকষ্টের অস্তিত্বের সুযোগ করে দেন। নতুন রাজ্যের লিপিগুলিতে মধ্য রাজ্যের লিপিগুলির মতো করে দেবতাদের যথাযথ প্রকৃতি সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়নি। এগুলিতে দেবতাদের সঙ্গে মানুষের প্রত্যক্ষ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের উপর এবং মানবীয় ঘটনায় দৈবশক্তির হস্তক্ষেপের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই যুগে মানুষ নির্দিষ্ট দেবদেবীদের উপর বিশ্বাস রাখত, যাঁরা জীবনধারণের ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করতে ও রক্ষা করতে পারেন বলেন আশা করত। তার ফলে মাত সম্পর্কে অনুমোদিত ধারণাটি দেবতাদের থেকে সুন্দর জীবন পাওয়ার আশার একটি পন্থার তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।[২১৩] এমনকি এও মনে করা হত যে, ফ্যারাওরাও দেবতাদের সাহায্যের অনুবর্তী। নতুন রাজ্যের একেবারে শেষভাগে সরকার ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমানরূপে ওর্যাকলের মাধ্যমে দেবতার ইচ্ছার সঙ্গে যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল।[২১৪]

সমগ্র মিশরের মঙ্গলের জন্য মাত রক্ষা করার উদ্দেশ্যে যে রাষ্ট্রীয় ধর্মানুষ্ঠান পালিত হত, তা সহজদৃশ্য না হলেও জনসাধারণের ধর্মকৃত্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল।[২১৫] এই জনসাধারণ নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানের আশায় দেবদেবীদের সাহায্য প্রার্থনা করত।[২১৬] মন্দিরভিত্তিক রাষ্ট্রধর্মের সঙ্গে একাধিক ক্রিয়াকাণ্ড যুক্ত ছিল। কয়েকটি কৃত্য নিত্য পালিত হত, আবার কয়েকটি পালিত হত উৎসবে। এই উৎসবগুলি পালিত হত দীর্ঘকাল অন্তর অন্তর এবং প্রায়শই এগুলি নির্দিষ্ট দেবতা বা মন্দিরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত।[২০১] দৈনিক উপাসনার মাধ্যমে দেবতার পূজা করা হত। এই পূজায় দেবতার মূর্তিকে বস্ত্র পরানো হত, তেল মাখানো হত এবং দেবতাদের স্তুতিগান করতে করতে খাদ্য নিবেদন করা হত।[২১৭] দেবতাদের জন্য মাত রক্ষা করা ছাড়াও এই কৃত্যগুলির মাধ্যমে দেবতাদের জীবনদায়ী উদারতাকে উদ্যাপন করা হত এবং তাঁদের প্রতিহিংসা-পরায়ন না হয়ে মঙ্গলদায়ী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হত।[২১৮]

 
এক নারী রা-হোরাখতির পূজা করছেন এবং দেবীও আলোকরশ্মির মাধ্যমে সেই নারীকে আশীর্বাদ করছেন।[২১৯]

উৎসব-অনুষ্ঠানগুলিতে সাধারণত একটি আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা বের হত, যাতে একটি কাল্ট মূর্তিকে বজরা-আকৃতির বেদিতে করে মন্দিরের বাইরে আনা হত। এই শোভাযাত্রাগুলির উদ্দেশ্য ছিল বিবিধ।[২২০] রোমান শাসনকালে যখন সব ধরনের স্থানীয় দেবদেবীদের নীল নদের বন্যা-নিয়ন্ত্রণকারী মনে করা হতে থাকে, তখন অনেক সম্প্রদায়ই মন্দিরের বিগ্রহকে নদীর তীরে নিয়ে যেতে শুরু করে, যাতে দেবতাকে এক বৃহৎ ও ফলপ্রসূ বন্যা প্রদান করার জন্য আবাহন করা যায়।[২২১] শোভাযাত্রা আবার দুই মন্দিরকে ঘিরেও হত। যেমন দেনদেরা মন্দির থেকে হাথোরের বিগ্রহকে এদফুর মন্দিরে তাঁর স্বামী হোরাসের বিগ্রহের কাছে আনা হত।[২২০] কোনও দেবতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানগুলি প্রায়শই সেই দেবতার পুরাণকথার ভিত্তিতে গড়ে উঠত। এই সব অনুষ্ঠান আচরিত হয় পৌরাণিক অতীতের ঘটনাবলি পুনরাবৃত্তির জন্য, যার মাধ্যমে মূল ঘটনাটির মঙ্গলদায়ী দিকটিকে নবীকৃত করা যায়।[২২২] ওসাইরিসের সম্মানে আয়োজিত খোইয়াক উৎসবে এই দেবতার মৃত্যু ও পুনর্জীবনলাভ পুনরাভিনীত হত যখন শস্যের ফলন শুরু হত। এই ঋতুতে সবুজের সমারোহ ফিরে আসাই ছিল ওসাইরিসের নিজের জীবনের পুনর্লাভের প্রতীক।[২২৩]

দেবদেবীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বিভিন্ন আকারে হত। জনসাধারণ ওর্যাকল থেকে তথ্য বা পরামর্শ অনুসন্ধান করতে পারত। এই ওর্যাকলগুলি চালাত মন্দিরগুলি এবং মনে করা হত যে ওর্যাকলের মাধ্যমে দেবতাদের থেকে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।[২২৪] রক্ষাকারী দেবদেবীদের কবচ ও অন্যান্য ছবি ব্যবহার করা হত মানুষের অনিষ্টকারী দানবদের প্রভাব দূরীভূত করার জন্য[২২৫] অথবা কবচ-ধারণকারীর মধ্যে দেবতার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করার জন্য।[২২৬] ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলিতে দেবতার শক্তিকে আবাহন করা হত ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, যার মধ্যে থাকত রোগ আরোগ্যকরণ থেকে শত্রুদের অভিশাপ দেওয়ার মতো অনেক কিছুই।[২২৪] এই ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে হেকা অর্থাৎ দেবদেবীরা যে জাদুর সাহায্য নিতেন, সেই জাদুরই সাহায্য নেওয়া হত। কথিত ছিল যে, এই হেকা-র সাহায্যেই সৃষ্টিকর্তা মানুষদের নিজদের দুর্ভাগ্য দূর করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ধর্মাচরণে প্রায়শই পুরাণে কথিত এক দেবতার ভূমিকা গৃহীত হত, এমনকি কোনও নিজ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য দেবতাকে শাসানোও হত।[২২৭] ব্যক্তিগত পূজা ও প্রার্থনার পাশাপাশিই এই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন চলত এবং এই তিন প্রকার উপাসনাই ছিল দেবতাদের সাহায্য লাভের অনুমোদিত পন্থা।[২২৮]

প্রার্থনা ও ব্যক্তিগত পূজার্চনাকে সাধারণত বলা হত "ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ": এই ধরনের ধর্মাচরণ ব্যক্তিমানুষের সঙ্গে এক দেবতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দ্যোতক ছিল। নতুন রাজ্যের আগে ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের প্রমাণ অল্পই পাওয়া গিয়েছে। মানতসিদ্ধি-মূলক পূজা-উৎসর্গ ও ব্যক্তিনামগুলির অনেকগুলিই থিওফোরিক। এগুলি ইঙ্গিত করে যে সাধারণ মানুষও নিজেদের ও দেবদেবীদের মধ্যে কিছু যোগ অনুভব করত। কিন্তু দেবদেবীর প্রতি ভক্তির অকাট্য প্রমাণ প্রথম পাওয়া যায় শুধুমাত্র নতুন রাজ্যের আমলেই এবং এই যুগের শেষ দিকে এই ভক্তি মধ্যগগনে উত্তরণ করেছিল।[২২৯] এই পরিবর্তনের অর্থ কী তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতদ্বৈধ আছে—এই দ্বিমত দেবতাদের সঙ্গে এই প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এক নতুন উদ্ভাবনা নাকি প্রাচীনতর প্রথার সম্প্রসারিত রূপ তা নিয়ে।[২৩০] মিশরীয়রা এই সময় তাদের ভক্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছিল মন্দিরকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের ক্রিয়াকাণ্ডের মাধ্যমে।[২৩১] তারা স্টেলাতে তাদের প্রার্থনা নথিবদ্ধ করত এবং দেবতার সাহায্যলাভের পর ধন্যবাদবাক্য লিপিবদ্ধ করত। তারা যে দেবতার কাছে প্রার্থনা জানাত সেই দেবতাদের পুত্তলিকা বা যা চাইত তার কোনও প্রতীক উৎসর্গ করত। এই জন্যই বলা যায় যে, হাথোরের কোনও খোদাইচিত্র বা ও এক নারীর ক্ষুদ্র মূর্তি উভয়েই উর্বরতার জন্য প্রার্থনার প্রতীক। ক্ষেত্রবিশেষে কোনও ব্যক্তি কোনও এক দেবতাকে ইষ্টদেবতা হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং নিজের সম্পত্তি বা শ্রম সেই দেবতার কাল্টের প্রতি উৎসর্গ করে দিতেন। এই প্রথাগুলি মিশরীয় ইতিহাসের সাম্প্রতিকতম পর্যায়গুলি পর্যন্ত চলে এসেছিল।[২৩২] এই শেষ যুগগুলিতে ধর্মের ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন আবিষ্কার দেখা গিয়েছিল। তার মধ্যে ছিল পশুপাখির রূপে বর্ণিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে পশুপাখির মমি উৎসর্গকরণ। এই কারণ বিড়াল-জাতীয় প্রাণীর দেবী বেসতেতকে বিড়ালের মমি উৎসর্গ করা হত।[২৩৩] পুরাণের এবং রাষ্ট্রধর্মের প্রধান কয়েকজন দেবদেবীকে কদাচিৎই ব্যক্তিগতভাবে আবাহন করা হত। কিন্তু অনেক রাষ্ট্রীয় দেবতাই জনসাধারণের বিশ্বাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরে রেখেছিলেন।[৩৪]

কয়েকজন মিশরীয় দেবদেবীর পূজা প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষত নতুন রাজ্যের শাসনকালে কনান ও নুবিয়ায় এই ঘটনা ঘটে, যখন এই সকল অঞ্চল ফ্যারাওয়ের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কনানে হাথোর, আমুন ও সেত সহ এই সব বহিরাগত দেবদেবীরা স্থানীয় দেবদেবীদের সঙ্গে সমন্বায়িত হয়ে গিয়েছিলেন, এবং এই সমন্বায়িত দেবদেবীদের পূজাও আবার মিশরে ছড়িয়ে পড়েছিল।[২৩৪] কনানে মিশরীয় দেবদেবীদের স্থায়ী মন্দির ছিল না ঠিকই,[২৩৫] কিন্তু মিশর এই অঞ্চলের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরেও এই দেবতাদের গুরুত্ব কনানে কমেনি।[২৩৪] এর বিপরীতে, প্রধান প্রধান মিশরীয় দেবতা ও দেবত্বীকৃত ফ্যারাওদের অনেক মন্দির নুবিয়াতে নির্মিত হয়েছিল।[২৩৬] সেই অঞ্চলে মিশরীয় শাসনের অন্তে বহিরাগত দেবতারা (বিশেষত আমুন ও আইসিস) স্থানীয় দেবদেবীদের সঙ্গে সমন্বায়িত হয়ে যায় এবং নুবিয়ার স্বাধীন কুশ রাজ্যের ধর্মের অংশ হিসেবে রয়ে যায়।[২৩৭] এই দেবতারা রাজপদ সম্পর্কে নুবীয় আদর্শের সঙ্গে ঠিক তেমন ভাবেই মিশে গিয়েছিল, যেমন হয়েছিল মিশরের ক্ষেত্রে। এই কারণেই আমুনকে রাজার দিব্য পিতা এবং আইসিস ও অন্যান্য দেবীদের নুবিয়ার রানি কানদাকে-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।[২৩৮] কোনও কোনও দেবদেবীর উন্নতি আরও বেশি হয়েছিল। তাওয়েরেত মিনোয়ান ক্রিটের এক দেবীতে পরিণত হন[২৩৯] এবং সিওয়া মরুদ্যানে আমুনের ওর্যাকল ভূমধ্যসাগরের চারিপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত ও ব্যবহৃত হত।[২৪০]

 
জুপিটার আমমোন, আমুন ও রোমান দেবতা জুপিটারের এক সম্মিলিত রূপ

গ্রিক টলেমীয় রাজবংশরোমান শাসনকালে গ্রিক ও রোমানরা নিজেদের দেবদেবীদের সঙ্গে মিশরীয়দের পরিচয় ঘটায়। ইন্টারপ্রেশাশিও গ্রিসিয়া-র গ্রিকো-রোমান প্রথার অঙ্গ হিসেবে এই নবাগত দেবতারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেই মিশরীয় দেবতাদের সমতুল্য দেবতায় পরিণত হন।[২৪১] বিদেশি দেবদেবীদের পূজা স্থানীয় দেবদেবীদের পূজাকে গ্রাস করেনি। বরণ গ্রিক ও রোমান দেবদেবীদের মিশরীয় দেবদেবীদেরই রূপান্তর হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। মিশরীয় কাল্টগুলি মধ্যে মধ্যে একত্রীভূত হয়ে যেত গ্রিক ভাষা, দর্শন, মূর্তিতত্ত্ব,[২৪২] এমনকি মন্দির স্থাপত্যেও।[২৪৩] অপর দিকে, বেশ কয়েকজন মিশরীয় দেবদেবীর কাল্ট (বিশেষত আইসিস, ওসাইরিস, আনুবিস, হারপোক্রেটস নামে হোরাসের একটি রূপ এবং গ্রিকো-মিশরীয় মিশ্র দেবতা সেরাপিসের) রোমান ধর্মে গৃহীত হয়েছিল এবং সমগ্র রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।[২৪৪] আগেকার টলেমীয় রাজাদের মতোই রোমান সম্রাটগণও নিজেদের কর্তৃত্ব মিশরের ভিতরে ও বাইরে প্রত্যায়িত করার জন্য আইসিস ও সেরাপিসকে আবাহন করতেন।[২৪৫] এই সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রথাগুলির এক জটিল মিশ্রণে থোথ রূপান্তরিত হন কিংবদন্তি রহস্যবাদী গুরু হার্মিস ত্রিসমেজিস্তাসে[২৪৬] এবং ব্রিটেন থেকে মেসোপটেমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পূজিত আইসিস[২৪৭] এই গ্রিক শৈলীর রহস্য কাল্টের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।[২৪৮] রোমান ধর্মীয় জগৎ থেকে উদ্ভূত পাশ্চাত্য রহস্যবাদী প্রথায় আইসিস ও হার্মিস ত্রিসমেজিস্তাস উভয়েই গুরুত্ব অর্জন করেছিলেন।[২৪৯]

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান অর্থনীতির অবনমনের স্নগে সঙ্গে মিশরের মন্দির ও কাল্টসমূহেরও পতন সূচিত হয়। চতুর্থ শতাব্দীর সূচনায় খ্রিস্টানরা মিশরীয় দেবদেবীদের পূজায় বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করে।[২৪২] ফিলিতে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক কাল্টটি অবলুপ্ত হয়ে যায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতাব্দীতে।[২৫০][Note ৬] কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই দেবদেবী-সংক্রান্ত সকল বিশ্বাসও অবলুপ্ত হয়। সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে থেকে যায় শুধুমাত্র জাদুবিদ্যা-সংক্রান্ত লিপিগুলি। এর বিপরীতে মিশরীয়দের পূজার বিভিন্ন অঙ্গ (যেমন শোভাযাত্রা ও ওর্যাকল) খ্রিস্টীয় ধর্মাদর্শে গৃহীত হয় এবং কপটিক চার্চের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।[২৪২] সেই যুগ থেকে মিশরীয় সংস্কৃতিতে বিরাট পরিবর্তন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রভাবগুলির প্রেক্ষিতে গবেষকদের মধ্যে এই বিষয়েই দ্বিমত আছে যে আধুনিক কপটিক ধর্মাচরণের মধ্যে এমন কিছু সত্যিই অবশিষ্ট আছে কিনা যার উৎস সেই ফ্যারাওদের ধর্ম। কিন্তু খ্রিস্টান ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের আধুনিক মিশরীয় অনেক উৎসব ও অন্যান্য প্রথার সঙ্গে এই দেশের পূর্বসূরিদের দেবদেবীদের পূজাপ্রণালীর সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[২৫১]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. মিশরীয় ধর্মগ্রন্থগুলিতে ওসাইরিসের মৃত্যু স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি। অন্যান্য দেবতাদের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। মিশরীয়রা কোনও এক মঙ্গলময় দেবতার মৃত্যুর মতো অমঙ্গলজনক ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ এড়িয়ে যেত। তা সত্ত্বেও অতিকথাটি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ওসাইরিস নিহত হয়েছিলেন এবং দুয়াতে অন্যান্য দেবতাদের মৃতদেহের আবির্ভাবও ইঙ্গিত করে যে অন্যান্য দেবতারাও মৃত্যুবরণ করেন। শেষ যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪-৩২৩ অব্দ) মিশর জুড়ে বিভিন্ন স্থান নির্দিষ্ট দেবদেবীদের সমাধিক্ষেত্র রূপে পরিগণিত হতে থাকে।[৭০]
  2. "নয় [দেবতার] গোষ্ঠী" অর্থে মিশরীয় শব্দটি ছিল psḏt. গ্রিক ভাষা থেকে উদ্ভূত এননিয়াড (ennead) শব্দটির অর্থটিও একই। তাই অনুবাদকালে এই পরিভাষাটিই সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[১০৭]
  3. Der Eine und die Vielen শিরোনামে এই গবেষণাপত্রটি ১৯৭১ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে সংশোধিত হয়েছিল। এটির ইংরেজি অনুবাদ কনসেপশনস অফ গড ইন ইজিপ্ট: দি ওয়ান অ্যান্ড দ্য মেনি এই নিবন্ধের উল্লেখপঞ্জি অংশে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
  4. প্রায়শই দেবতাদের পোষাকের পরিবর্তন মানুষের পোষাকে এসে পড়ত। নতুন রাজ্যে দেবীদের মাথায় যে শকুন-আকৃতির মস্তকাবরণী দেখা যেত তা সেই যুগের রানিরাও পরিধান করতেন[১৬০] এবং রোমান যুগে অনেক অ্যাপোট্রোপেইক দেবতাকে দেখা যেত সৈনিকদের মতো বর্ম পরিহিত এবং অশ্বপৃষ্ঠে উপবিষ্ট অবস্থায়।[১৬৪]
  5. দেবদেবীদের যে মূর্তিগুলি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির মধ্যে কোনওটিকেই নিশ্চিতভাবে কাল্ট মূর্তি বলে চিহ্নিত করা যায় না। যদিও এগুলির মধ্যে কয়েকটিতে কাল্ট মূর্তির সঠিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিদ্যমান।[১৯৩]
  6. দীর্ঘকাল ধরে মনে করে আসা হয়েছিল যে, ৫৩৫ থেকে ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় প্রথম জাস্টিনিয়ানের বাহিনী ফিলির কাল্টটি বন্ধ করে দেয়। আধুনিক গবেষকেরা এই মতটির বিরুদ্ধে বলে থাকেন যে এই মন্দিরের কাল্টটি পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগেই অবলুপ্ত হয়েছিল। এখানে কর্মকাণ্ডের শেষ চিহ্ন পাওয়া যায় ৪৫৬ বা ৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে।[২৫০]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অ্যালেন ২০১৪, পৃ. ৫২৩।
  2. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৭২।
  3. অ্যালেন ১৯৯৯, পৃ. ৪৪–৫৪, ৫৯।
  4. লেইৎজ ২০০৯, পৃ. ৩৯৩–৩৯৪।
  5. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৪২।
  6. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ৮–১১।
  7. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ২৬–২৮।
  8. বেইনস ২০০১, পৃ. ২১৬।
  9. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৬২।
  10. লেইৎজ ২০০৪, পৃ. ৩৯৩–৩৯৪।
  11. বেইনেস ২০০১, পৃ. ৭৬–৭৯।
  12. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ৭–৮, ৮৩।
  13. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ১১–১২।
  14. উইলকিনসন ১৯৯৯, পৃ. ২২৫–২২৬।
  15. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১২–১৫।
  16. গান্ডল্যাক ২০০১, পৃ. ৩৬৩।
  17. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ২৫–২৬।
  18. হার্ট ২০০৫, পৃ. ১৪৩।
  19. সিলভারম্যান ১৯৯১, পৃ. ১০–১৩।
  20. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৫৭।
  21. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৫০।
  22. উইলকিনসন ১৯৯৯, পৃ. ২৬৪–২৬৫।
  23. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ২৯।
  24. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৯২,১৪৬।
  25. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৭৪।
  26. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৭৪।
  27. ওয়াইল্ডাং ১৯৭৭, পৃ. ১–৩, ৩১।
  28. ওয়াইল্ডাং ১৯৭৭, পৃ. ৩১, ৮৩।
  29. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৫৮–১৫৯।
  30. সিলভারম্যান ১৯৯১, পৃ. ৫৮।
  31. ফ্র্যাংকফার্টার ২০০৪, পৃ. ১৬০।
  32. এংলান্ড ১৯৮৯এ, পৃ. ৯–১০।
  33. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ১৮।
  34. এংলান্ড ১৯৮৯এ, পৃ. ১৯–২০, ২৬–২৭।
  35. অ্যালেন ২০১৪, পৃ. ৫৪–৫৫।
  36. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ২৬।
  37. হার্ট ২০০৫, পৃ. ৯১, ১৪৭।
  38. হার্ট ২০০৪, পৃ. ৮৫–৮৬।
  39. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৫৮, ২২৭।
  40. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ১৯৭–২০০।
  41. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৮৫–৮৬।
  42. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৭৭–৭৯।
  43. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ৬৩।
  44. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৫৭–৫৮।
  45. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৯৮–৯৯, ১৬৬–১৬৯।
  46. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩৯।
  47. মিকস ২০০১, পৃ. ৩৭৫।
  48. লুকারেলি ২০১০, পৃ. ২–৫।
  49. ফ্রান্ডসেন ২০১১, পৃ. ৫৯–৬২।
  50. রোকাটি ২০১১, পৃ. ৯৩-৯৬।
  51. রিটনার ২০১১, পৃ. ৩–৫।
  52. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ৬৮।
  53. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ২০৭–২০৯।
  54. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ৫৭–৬৪।
  55. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ৫৭, ৬৮, ৮৪, ৮৬।
  56. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ১০–১২।
  57. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৬৩, ৭০–৭২, ৮০।
  58. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩১।
  59. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ১০১–১০২, ১০৭।
  60. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ১৬১, ১৬৯।
  61. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ১১২।
  62. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ৩৮–৪০।
  63. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৮১–৮৩।
  64. লেসকো ১৯৯১, পৃ. ৯১–৯৬।
  65. লেসকো ১৯৯১, পৃ. ১০৪–১০৬।
  66. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ৫৮–৫৯।
  67. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ৭৬, ৮৫।
  68. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ১৬–১৭, ১৯–২২।
  69. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ২১–২২, ৭৮–৮০।
  70. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১৫২–১৬২।
  71. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ৬৬–৭০।
  72. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১৬৬–১৬৯।
  73. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৮১–৮২, ৮৭–৯০।
  74. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১৭৮–১৮২।
  75. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ১৭–১৯, ৪৩–৪৭।
  76. সিলভারম্যান ১৯৯১, পৃ. ৩৮–৪১।
  77. ডেভিড ২০০২, পৃ. ১৫৪–১৫৫।
  78. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৬৬–৬৮, ৭২।
  79. গ্রেইন্ডর্র ২০০১, পৃ. ৩০৫–৩০৭।
  80. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ২১০।
  81. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৯৭–১০০।
  82. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৯০–৯১।
  83. বুড্ডে ২০১১, পৃ. ৬–৭।
  84. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ২২৮।
  85. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৮৬।
  86. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১৭১।
  87. বেইনেস ২০১১, পৃ. ৫২।
  88. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ১২৯–১৩০।
  89. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ১৬৪।
  90. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৫০, ১৫৬।
  91. ট্রয় ১৯৮৬, পৃ. ২০, ২৫।
  92. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ১০৫।
  93. ট্রয় ১৯৮৬, পৃ. ৫৩–৫৪।
  94. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১৩৮–১৩৯।
  95. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ৩৬–৩৭, ১৩১।
  96. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ১৬৯–১৭০।
  97. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১৩০।
  98. গ্রেভস-ব্রাউন ২০১০, পৃ. ৯৯–১০০, ১০৩।
  99. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৬৮–৬৯।
  100. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ১০১, ১৩৪।
  101. লর্টন ১৯৯৯, পৃ. ১২৩।
  102. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৭৫।
  103. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৫৭–৫৯।
  104. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ২৯–৩১।
  105. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ১৮৪।
  106. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১৩৭, ১৪৬।
  107. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৭৪–৭৯, ৮৩–৮৫।
  108. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৮, ৭৪–৭৫, ১৬০।
  109. এংলান্ড ১৯৮৯বি, পৃ. ৭৭–৭৯, ৮১।
  110. অ্যাসম্যান ২০০১, পৃ. ২৩৮–২৩৯।
  111. ডেভিড ২০০২, পৃ. ২৪৭।
  112. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৮৮।
  113. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৩৪–৩৬।
  114. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৬৭।
  115. লেসকো ১৯৯৯, পৃ. ৮৪।
  116. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৯২–৯৩, ১৪৬।
  117. ট্রনেকার ২০০১বি, পৃ. ২২১–২২২।
  118. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১২৬।
  119. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৫৩–৫৪।
  120. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ২০–২৩, ৩৩–৩৪।
  121. অ্যালেন ২০০১, পৃ. ১৬১–১৬২।
  122. লুফৎ ২০০১, পৃ. ১৪০।
  123. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৩৩।
  124. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৯৯।
  125. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৯৩।
  126. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১১১, ১২৮।
  127. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৬৯–৭১।
  128. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ৬৬।
  129. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৭৩–৭৪।
  130. হার্ট ২০০৫, পৃ. ৭৫।
  131. ফ্র্যাংকফার্টার ১৯৯৮, পৃ. ১০২, ১৪৫, ১৫২।
  132. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১৪৩।
  133. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ২৭।
  134. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩৩–৩৫।
  135. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৯২, ৯৬–৯৭।
  136. Wilkinson 2003, পৃ. 119, 172, 187, 203।
  137. টিটার ২০১১, পৃ. ১৮২–১৮৬।
  138. বেইনেস ২০১১, পৃ. ৬২।
  139. মন্টসেরাট ২০০০, পৃ. ৩৬–৩৮।
  140. বেইনেস ২০১১, পৃ. ৬৪–৬৫।
  141. বেইনেস ২০১১, পৃ. ৫৩–৫৪, ৬৩।
  142. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ১৭–২০।
  143. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩৫–৩৮।
  144. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ২৪–২৫।
  145. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩২, ৩৬।
  146. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ৫৬–৫৯, ২৩৪–২৩৫।
  147. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ২৩৫–২৩৭, ২৫২।
  148. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ১৫৬–১৫৮।
  149. অ্যাসমান ২০০১, পৃ. ১৯৮–২০১, ২৩৭–২৪৩।
  150. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৫৫–৫৯।
  151. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১১০–১১৭।
  152. হার্ট ২০০৫, পৃ. ২৫।
  153. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১১৭–১২১।
  154. বনহেম ২০০১, পৃ. ৪০১–৪০৫।
  155. গ্রিফিথস ২০০১, পৃ. ১৮৮–১৯০।
  156. লর্টন ১৯৯৯, পৃ. ১২৮–১২৯।
  157. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১১৮–১২২।
  158. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ২৭।
  159. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৫০–৫১।
  160. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৪৬, ৫৪।
  161. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৭০, ১৭৬, ১৮৩, ২০০।
  162. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১১৫, ১৯৮–২০০।
  163. ট্রনেরকার ২০০১এ, পৃ. ৪৬, ৫৪।
  164. ফ্র্যাংফার্টার ১৯৯৮, পৃ. ৩।
  165. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ৬০।
  166. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৪৫।
  167. রবিনস ২০০১, পৃ. ২৯১–২৯৩।
  168. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ১৩৬।
  169. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৪৮–৫০।
  170. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১০৭।
  171. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৬৯, ২৩৬, ২৪১।
  172. উইলকিনসন ১৯৯৯, পৃ. ২৫১–২৫২।
  173. সিলভারম্যান ১৯৯১, পৃ. ২২।
  174. উইলকিনসন ১৯৯৯, পৃ. ১৬৮–১৭০।
  175. পিঞ্চ ২০০২, পৃ. ৮৫–৮৭, ১৫৬–১৫৭।
  176. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৬০–৬৩, ৭৫।
  177. ট্রয় ১৯৮৬, পৃ. ১৪১–১৪৩।
  178. টিটার ২০১১, পৃ. ৫১।
  179. ওয়াইল্ডাং ১৯৭৭, পৃ. ১–৩।
  180. মোরেঞ্জ ১৯৭৩, পৃ. ৪০–৪১।
  181. টিটার ২০১১, পৃ. ২৮–৩০, ৪১–৫৩।
  182. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ১২৩–১২৫।
  183. অ্যাসমান ২০০১, পৃ. ৪–৫।
  184. ফ্রান্ডসেন ১৯৮৯, পৃ. ৯৬, ১০০–১০৫।
  185. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৪২।
  186. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ২১–২৩।
  187. টিটার ২০১১, পৃ. ৩৯–৪৫।
  188. অ্যাসমান ২০০১, পৃ. ১৭–১৯, ৪৩–৪৭।
  189. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৩০।
  190. মিকস ও ফাভার্ড-মিকস ১৯৯৬, পৃ. ১২৫–১২৬, ১২৯।
  191. টিটার ২০১১, পৃ. ১০১।
  192. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ৫৪।
  193. কজলফ ২০০১, পৃ. ২৪২–২৪৩।
  194. টিটার ২০১১, পৃ. ৩৯–৪৩।
  195. অ্যাসমান ২০০১, পৃ. ২৭–৩০, ৫১–৫২।
  196. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৪২, ১৬২, ২২৩–২২৪।
  197. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ১১১।
  198. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ১১৬–১১৮।
  199. লর্টন ১৯৯৯, পৃ. ১৪৫।
  200. টিটার ২০১১, পৃ. ৭৭–৮৩।
  201. থম্পসন ২০০১, পৃ. ৩২৬–৩৩২।
  202. মোরেঞ্জ ১৯৭৩, পৃ. ৪৯–৫২, ৫৭।
  203. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ১৫৫।
  204. হার্ট ২০০৫, পৃ. ৯২, ১৩৬, ১৪৬।
  205. মোরেঞ্জ ১৯৭৩, পৃ. ৬০–৬৭, ৭২।
  206. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ১৮০–১৮৩, ১৯০।
  207. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৬৩–১৬৪।
  208. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ৩৩, ৯৮।
  209. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ১৩৮–১৩৯।
  210. ওকিঙ্গা ২০০১, পৃ. ৪৪–৪৬।
  211. ফ্র্যাংকফার্টার ১৯৯৮, পৃ. ১১৬–১১৯।
  212. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৬৩–১৬৪, ১৮৬–১৮৭।
  213. এনমার্চ ২০০৮, পৃ. ১–৩।
  214. অ্যাসমান ২০০১, পৃ. ২৪২।
  215. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১২৬–১২৭।
  216. টিটার ২০১১, পৃ. ৭৬।
  217. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ৯০–৯১।
  218. হরনাং ১৯৮২, পৃ. ২০৩–২০৬, ২১৪।
  219. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ৩৩।
  220. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ৯৫–৯৬।
  221. ফ্র্যাংফার্টার ১৯৯৮, পৃ. ৪২।
  222. টবিন ১৯৮৯, পৃ. ২৮–৩০।
  223. টিটার ২০১১, পৃ. ৫৮–৬৩।
  224. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৬৫–১৭২।
  225. ফ্র্যাংকফার্টার ১৯৯৮, পৃ. ১১৯, ১৭৫।
  226. অ্যান্ড্রুজ ২০০১, পৃ. ৮১।
  227. রিটনার ২০০১, পৃ. ৩২১–৩২৬।
  228. ডেভিড ২০০২, পৃ. ২৭০–২৭২, ২৮৩–২৮৬।
  229. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৭৩–১৭৯।
  230. লুইসেলি ২০০৮, পৃ. ১–৪।
  231. বেইনেস ১৯৯১, পৃ. ১৮০–১৮৪।
  232. টিটার ২০১১, পৃ. ৭৮–৯০, ১০২–১০৩।
  233. ডেভিড ২০০২, পৃ. ৩১২–৩১৫।
  234. মোরেঞ্জ ১৯৭৩, পৃ. ২৩৫–২৩৯।
  235. ট্রনেকার ২০০১এ, পৃ. ১০৮–১১০।
  236. মোরেঞ্জ ১৯৭৩, পৃ. ২৪১–২৪৩।
  237. ইয়েলিন ২০১২, পৃ. ১২৬–১২৯।
  238. মোরকোট ২০১২, পৃ. ১২৪।
  239. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৮৬।
  240. মিলস ২০০১, পৃ. ৫০০।
  241. বোরগেউড ২০০৪, পৃ. ৩৯২–৩৯৩।
  242. ফ্র্যাংকফার্টার ২০০৪, পৃ. ১৬০–১৬৩।
  243. নেয়ারাবাউট ২০০৭, পৃ. ৫৪৫–৫৪৭।
  244. ভারস্লাইজ ২০০৭, পৃ. ৩–৭।
  245. ডুনান্ড ও জিভি-কোচে ২০০৪, পৃ. ২১৮–২২১।
  246. স্ট্রাক ২০০৪, পৃ. ৬৫০–৬৫২।
  247. উইলকিনসন ২০০৩, পৃ. ১৪৩।
  248. স্ফামেনি গ্যাসপারো ২০০৭, পৃ. ৪১।
  249. কাদিশ ২০০১, পৃ. ৫০৭–৫০৯।
  250. কোকেলমান ২০১২, পৃ. ৬–৮।
  251. নাগুইব ২০০৮, পৃ. ২–৫।

উল্লেখপঞ্জি

সম্পাদনা
  • অ্যালেন, জেমস পি. (জুলাই–আগস্ট ১৯৯৯)। "মনোথেইজম: দি ইজিপশিয়ান রুটস"। আর্কিওলজি ওডিসি (৩)। 
  • অ্যালেন, জেমস পি. (২০১৪)। মিডল ইজিপশিয়ান: অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার অফ হায়ারোগ্লিফস, তৃতীয় সংস্করণ। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-1-107-05364-9 
  • অ্যালেন, জেমস পি. (২০০১)। "বা"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১৬১–১৬২। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • অ্যান্ড্রুজ, ক্যারোল এ. আর. (২০০১)। "অ্যামুলেটস"। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৭৫–৮২। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5  Editors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  • অ্যাসম্যান, জান (২০০১) [জার্মান সংস্করণ ১৯৮৪]। দ্য সার্চ ফর গড ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। ডেভিড লর্টন অনূদিত। কর্নওয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেসআইএসবিএন 0-8014-3786-5 
  • বেইনেস, জন (২০০১) [First edition 1985]। ফেকান্ডিটি ফিগারস: ইজিপশিয়ান পারসনিফিকেশন অ্যান্ড দি আইকনোগ্রাফি অফ আ জেনর। গ্রিফিথ ইনস্টিটিটিউট। আইএসবিএন 978-0-8014-3786-1 
  • বেইনেস, জন (১৯৯১)। "সোসাইটি, মরালিটি, অ্যান্ড রিলিজিয়াস প্র্যাকটিশ"। শ্যাফার, বায়রন ই.। রিলিজিয়ন ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট: গডস, মিথস, অ্যান্ড পারসোনাল প্র্যাকটিশ। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১২৩–২০০। আইএসবিএন 978-0-8014-9786-5 
  • বেইনেস, জন (২০১১)। "প্রেজেন্টিং অ্যান্ড ডিসকাসিং ডেইটিজ ইন নিউ কিংডম অ্যান্ড থার্থ ইন্টারমিডিয়েট পিরিয়ড ইজিপ্ট"। পংগ্র্যাৎজ-লেইস্টেন, বিয়েট। রিকনসিডারিং দ্য কনসেপ্ট অফ রেভোলিউশনারি মনোথেইজম। এইসেনবার্নস। পৃষ্ঠা ৪১–৮৯। আইএসবিএন 978-1-57506-199-3 
  • বনহেম, মেরি-অ্যাংগে (২০০১)। "ডিভিনিটি"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৪০১–৪০৬। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • বোরগেউড, ফিলিপ (২০০৪)। "ডেইটিজ অ্যান্ড ডেমনস: ইন্ট্রোডাকশন"। জনস্টন, সারাহ্ আওইলেস। রিলিজিয়নস অফ দি এনশিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড: আ গাইড। দ্য বেকন্যাপ প্রেস অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৯২–৩৯৩। আইএসবিএন 978-0-674-01517-3 
  • বুড্ডে, ড্যাগমার (২০১১)। "এপিথেটস, ডিভাইন"। ওয়েন্ডরিচ, উইলেকে। এইসিএলএ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোলজি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচারস, উইসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • ডেভিড, রোজালি (২০০২)। রিলিজিয়ন অ্যান্ড ম্যাজিক ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। পেঙ্গুইন। আইএসবিএন 978-0-14-026252-0 
  • ডুনান্ড, ফ্র্যাংকোইস; জিভি-কোচে, ক্রিস্টিয়ানে (২০০৪) [ফরাসি সংস্করণ ১৯৯১]। গডস অ্যান্ড মেন ইন ইজিপ্ট: ৩০০০ বিসিই টু ৩৯৫ সিই। ডেভিড লর্টন অনূদিত। কর্নওয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8014-8853-5 
  • এংলান্ড, গার্টি (১৯৮৯a)। "গডস অ্যাজ আ ফ্রেম অফ রেফারেন্স: অন থিংকিং অ্যান্ড কনসেপ্টস অফ থট ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট"। এংলান্ড, গার্টি। দ্য রিলিজিয়ন অফ দি এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ানস: কগনিটিভ স্ট্রাকচারস অ্যান্ড পপুলার এক্সপ্রেশনস। এস. আকাদেমি উবসাইএন্সিস। পৃষ্ঠা ৭–২৭। আইএসবিএন 978-91-554-2433-6 
  • এংলান্ড, গার্টি (১৯৮৯বিb)। "দ্য ট্রিটমেন্ট অফ অপোসিটস ইন টেম্পল থিংকিং অ্যান্ড উইসডম লিটারেচার"। এংলান্ড, গার্টি। দ্য রিলিজিয়ন অফ দি এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ানস: কগনিটিভ স্ট্রাকচারস অ্যান্ড পপুলার এক্সপ্রেশনস। এস. আকাদেমি উবসালিয়েনসিস। পৃষ্ঠা ৭৭–৮৭। আইএসবিএন 978-91-554-2433-6  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • এনমার্চ, রোল্যান্ড (২০০৮)। "থিওডিসি"। ওয়েন্ডরিচ, উইলেকে। ইউসিএলএ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোলজি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুয়েজেস অ্যান্ড কালচারস, উইসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • ফ্রান্ডসেন, পল জন (১৯৮৯)। "ট্রেড অ্যান্ড কাল্ট"। এংলান্ড, গার্টি। দ্য রিলিজিয়ন অফ দি এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ানস: কগনিটিভ স্ট্রাকচার্স অ্যান্ড পপুলার এক্সপ্রেসনস। এস. আকাদেমি উবসালিএনসিস। পৃষ্ঠা ৯৫–১০৮। আইএসবিএন 978-91-554-2433-6 
  • ফ্রান্ডসেন, পল জন (২০১১)। "ফিসেস অফ দ্য ক্রিয়েটর অর দ্য টেম্পটেশনস অফ দ্য ডেড"। কউসোলিস, পানাগিওটিস। এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান ডিমনোলজি: স্টাডিজ অন দ্য বাউন্ডারি বিটুইন দ্য ডেমোনিক অ্যান্ড দ্য ডিভাইন ইন ইজিপশিয়ান ম্যাজিক। পিটারস। পৃষ্ঠা ২৫–৬২। আইএসবিএন 978-90-429-2040-8 
  • ফ্র্যাংকফার্টার, ডেভিড (১৯৯৮)। রিলিজিয়ন ইন রোমান ইজিপ্ট: অ্যাসিমিলেশন অ্যান্ড রেজিস্টেন্স। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-691-07054-4 
  • ফ্র্যাংকফার্টার, ডেভিড (২০০৪)। "হিস্ট্রিজ: ইজিপ্ট, লেটার পিরিয়ড"। জনস্টন, সারাহ্ আইলেস। রিলিজিয়নস অফ দি এনশিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড: আ গাইড। দ্য বেকন্যাপ প্রেস অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১৫৯–১৬৪। আইএসবিএন 978-0-674-01517-3 
  • গ্রেইজডর্জ, ক্যাথারিন (২০০১)। "সোকার"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩০৫–৩০৭। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • গ্রেভস-ব্রাউন, ক্যারোলিন (২০১০)। ড্যান্সিং ফর হাথোর: উইমেন ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। কন্টিনিউয়াম। আইএসবিএন 978-1-8472-5054-4 
  • গ্রিফিথস, জে. গাইন (২০০১)। "আইসিস"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১৮৮–১৯১। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • গান্ডলাচ, রলফ (২০০১)। "টেম্পলস"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৬৩–৩৭৯। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • হার্ট, জর্জ (২০০৫)। দ্য রটলেজ ডিকশনারি অফ ইজিপশিয়ান গড অ্যান্ড গডেসেস, দ্বিতীয় সংস্করণ। রটলেজ। আইএসবিএন 978-0-203-02362-4 
  • হরনাং, এরিক (১৯৮২) [জার্মান সংস্করণ ১৯৭১]। কনসেপশনস অফ গড ইন ইজিপ্ট: দি ওয়ান অ্যান্ড দ্য মেনি। জন বেইনেস কর্তৃক অনূদিত। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8014-1223-3 
  • কাদিশ, গেরাল্ড ই. (২০০১)। "উইসডম ট্র্যাডিশন"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৫০৭–৫১০। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • কোকেলম্যান, হোলগার (২০১২)। "ফিলি"। ওয়েন্ডরিচ, উইলিকি। ইউসিএলএ এমসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোজলি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুজেয়েস অ্যান্ড কালচারস, ইউসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • কজলফ, অ্যারিয়েলে পি. (২০০১)। "স্কাল্পচার: ডিভাইন স্কাল্পচার"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দু অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৪২–২৪৬। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • লেইৎজ, ক্রিস্টিয়ান (২০০৪)। "ডেইটিজ অ্যান্ড ডিমনস: ইজিপ্ট"। জনস্টন, সারাহ্ আইলেস। রিজিলিয়নস অফ দি এনশিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড: আ গাইড। দ্য বেকন্যাপ প্রেস অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৯৩–৩৯৬। আইএসবিএন 978-0-674-01517-3 
  • লেস্কো, বারবারা এস. (১৯৯৯)। দ্য গ্রেট গডেসেস অফ ইজিপ্ট। ইউনিভার্সিটি অফ ওকলাহোমা প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8061-3202-0 
  • লেস্কো, লিওনার্ড এইচ. (১৯৯১)। "এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান কসমোগনিজ অ্যান্ড কসমোলজি"। শ্যাফার, বায়রন ই.। রিলিজিয়ন ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট: গডস, মিথস, অ্যানশ পারসোনাল প্র্যাকটিশ। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৮৯–১২২। আইএসবিএন 978-0-8014-9786-5 
  • লর্টন, ডেভিড (১৯৯৯)। "দ্য থিওলজি অফ কাল্ট স্ট্যাচুজ ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট"। ডিক, মাইকেল বি.। বর্ন ইন হেভেন, মেড অন আর্থ: দ্য মেকিং অফ দ্য কাল্ট ইমেজ ইন দি এনশিয়েন্ট নিয়ার ইস্ট। এইসেনব্রাউন্স। পৃষ্ঠা ১২৩–২১০। আইএসবিএন 978-1-57506-024-8 
  • লুকারেলি, রিটা (২০১০)। "ডিমনস (বেনেভলেন্ট অ্যান্ড ম্যালভোলেন্ট)"। ওয়েন্ডরিখ, উইলেকে। ইউসিএলএ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোজলি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুয়েজেস অ্যান্ড কালচার্স, ইউসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • লুফৎ, আলরিখ এইচ. (২০০১)। "রিলিজিয়ন"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১৩৯–১৪৫। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • লুইসেলি, মিশেলা (২০০৮)। "পারসোনাল পাইটি (মডার্ন থিওরিজ রিলেটেড টু)"। ওয়েন্ডরিখ, উইলেকে। ইউএলসিএ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোলজি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার, ইউসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • মিকস, দিমিত্রি; ফাভার্ড-মিকস, ক্রিস্টিন (১৯৯৬) [ফরাসি সংস্করণ ১৯৯৩]। ডেইলি লাইফ অফ দি ইজিপশিয়ান গডস। জি. এম. গশগ্যারিয়ান কর্তৃক অনূদিত। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8014-8248-9 
  • মিকস, দিমিত্রি (২০০১)। "ডিমনস"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৭৫–৩৭৮। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • মিলস, অ্যান্থনি জে. (২০০১)। "ওয়েস্টার্ন ডেজার্ট"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৪৯৭–৫০১। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • মন্টসেরাট, ডমিনিক (২০০০)। আখেনাতেন: ইতিহাস, ফ্যান্টাসি, অ্যান্ড এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। রটলেজ। আইএসবিএন 978-0-415-18549-3 
  • মোরেঞ্জ, সেইগফ্রাইড (১৯৭৩) [জার্মান সংস্করণ ১৯৬০]। এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান রিলিজিয়ন। অ্যান ই. কিপ কর্তৃক অনূদিত। মেথুয়েন। আইএসবিএন 978-0-8014-8029-4 
  • মোরকোট, রবার্ট জি. (২০১২)। "কিংস অ্যান্ড কিংশিপ ইন এনশিয়েন্ট নুবিয়া"। ফিশার, মার্জোরি এম.; লাকোবারা, পিটার; ইকরাম, সালিমা; ডি'অরিয়া, সু। এনশিয়েন্ট নুবিয়া: আফ্রিকান কিংডমস অন দ্য নাইল। দি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন কায়রো প্রেস। পৃষ্ঠা ১১৮–১২৪। আইএসবিএন 978-977-416-478-1  |display-editors=৩ অবৈধ (সাহায্য)
  • নেরেবাউট, ফ্রেডেরিক (২০০৭)। "দ্য টেম্পল অ্যাট রাস এল-সোডা। ইজ ইট অ্যান আইসিস টেম্পল? ইজ ইট গ্রিক, রোমান, ইজিপশিয়ান, অর নিদার? অ্যান্ড সো হোয়াট?"। ব্রিকল্ট, লরেন্ট; ভারস্লাইজ, মিগুয়েল জন; মেবুম, পল জি. পি.। নাইল ইনটু টাইবার: ইজিপ্ট ইন দ্য রোমান ওয়ার্ল্ড। প্রসিডিংস অফ দ্য থার্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ আইসিস স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিওলজি, লেইডেন ইউনিভার্সিটি, মে ১১–১৪, ২০০৫। ব্রিল। পৃষ্ঠা ৫০৬–৫৫৪। আইএসবিএন 978-90-04-15420-9 
  • নাগুইব, সাফিনাজ-অ্যামাল (২০০৮)। "সারভাইভালস অফ ফ্যারোনিক রিলিজিয়াস প্র্যাকটিশেস ইন কনটেম্পোরারি কপটিক খ্রিস্টিয়ানিটি"। ওয়েন্ডরিচ, উইলেকে। ইউসিএলএ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইজিপ্টোলজি। ডিপার্টমেন্ট অফ নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাংগুয়েজেস অ্যান্ড কালচারস, ইউসি লস এঞ্জেলস। আইএসবিএন 978-0615214030। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  • ওকিঙ্গা, বয়ো (২০০১)। "পাইটি"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৪৪–৪৭। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • পিঞ্চ, গেরাল্ডাইন (২০০২)। ইজিপশিয়ান মাইথোলজি: আ গাইড টু দ্য গডস, গডেসেসেস, অ্যান্ড ট্র্যাডিশনস অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-517024-5 
  • রিটনার, রবার্ট কে. (২০০১)। "ম্যাজিক: অ্যান ওভারভিউ"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩২১–৩২৬। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • রিটিনার, রবার্ট কে. (২০১১)। "অ্যান এটারনাল কার্স আপঅন দ্য রিডার অফ দিজ লাইনস"। কসোলিস, প্যানাগিওটিস। এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান ডিমনোলজি: স্টাডিজ অফ দ্য বাউন্ডারি বিটুইন দ্য ডেমোনিক অ্যান্ড দ্য ডিভাইন ইন ইজিপশিয়ান ম্যাজিক। পিটারিস। পৃষ্ঠা ৩–২৪। আইএসবিএন 978-90-429-2040-8 
  • রবিনস, গে (২০০১)। "কালার সিম্বলিজম"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৯১–২৯৩। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • রোকাটি, আলেসান্দ্রো (২০১১)। "ডিমনস অ্যাজ রিফ্লেকশনস অফ হিউম্যান সোসাইটি"। কসোলিস, প্যানাগিওটিস। এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান ডিমনোলজি: স্টাডিজ অন দ্য বাউন্ডারি বিটুইন দ্য ডিমোনিক অ্যান্ড দ্য ডিভাইন ইন ইজিপশিয়ান ম্যাজিক। পিটারিস। পৃষ্ঠা ৮৯–৯৬। আইএসবিএন 978-90-429-2040-8 
  • স্ফামেনি গ্যাসপারো, গিউলিয়া (২০০৭)। "দ্য হেলেনিস্টিক ফেস অফ আইসিস: কসমিক অ্যান্ড সেভিয়ার গডেস"। ব্রিকল্ট, লরেন্ট; ভার্স্লাইজ, মিগুয়েল জন; মেবুম, পল জি. পি.। নাইল ইনটু টাইবার: ইজিপ্ট ইন দ্য রোমান ওয়ার্ল্ড। প্রসিডিংস অফ দি থার্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ আইসিস স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিওলজি, লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়, মে ১১-১৪, ২০০৫। Brill। পৃষ্ঠা ৪০–৭২। আইএসবিএন 978-90-04-15420-9 
  • সিলভারম্যান, ডেভিড পি. (১৯৯১)। "ডিভিনিটি অ্যান্ড ডেইটিজ ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট"। শ্যাফার, বায়রন ই.। রিলিজিয়ন ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট: গডস, মিথস, অ্যান্ড পারসোনাল প্র্যাকটিশ। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৭–৮৭। আইএসবিএন 978-0-8014-9786-5 
  • স্ট্রাক, পিটার টি. (২০০৪)। "এসোটেরিসিজম অ্যান্ড মিস্টিসিজম: হার্মেটিকিজম"। জনস্টন, সারাহ্ আইলেস। রিলিজিয়নস অফ দি এনশিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড: আ গাইড। দ্য বেকন্যাপ অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৬৫০–৬৫২। আইএসবিএন 978-0-674-01517-3 
  • টিটার, এমিলি (২০১১)। রিলিজিয়ান অ্যান্ড রিচুয়াল ইন এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-61300-2 
  • থম্পসন, স্টিফেন ই. (২০০১)। "কাল্টস: অ্যান ওভারভিউ"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩২৬–৩৩২। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5 
  • টবিন, ভিনসেন্ট আরিয়েহ (১৯৮৯)। থিওলজিক্যাল প্রিন্সিপলস অফ ইজিপশিয়ান রিলিজিয়ন। পি. ল্যাং। আইএসবিএন 978-0-8204-1082-1 
  • ট্রনেকার, ক্লাউড (২০০১এ) [ফরাসি সংস্করণ ১৯৯২]। দ্য গডস অফ ইজিপ্ট। ডেভিড লর্টন অনূদিত। কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8014-3834-9  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • ট্রনেকার, ক্লাউড (২০০১বি)। "কামুটেফ"। রেডফোর্ড, ডোনাল্ড বি.। দি অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২২১–২২২। আইএসবিএন 978-0-19-510234-5  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • ট্রয়, লানা (১৯৮৬)। প্যাটার্নস অফ কুইনশিপ ইন এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান মিথস অ্যান্ড হিস্ট্রি। আক্টা ইউনিভারসিটাটিস উপ্সালিয়েন্সিস। আইএসবিএন 978-91-554-1919-6 
  • ভারস্লাইজ, মিগুয়েল জন (২০০৭)। "ইজিপশিয়াকা রোমানা: দ্য ওয়াইডেনিং ডিবেট"। ব্রিকাল্ট, লরেন্ট; ভারস্লাইজ, মিগুয়েল জন; মেবুম, পল জি. পি.। নাইল ইনটু টাইবার: ইজিপ্ট ইন দ্য রোমান ওয়ার্ল্ড। প্রসিডিংস অফ দি ইলিরিড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ আইসিস স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিওলজি, লেইডেন ইউনিভার্সিটি, মে ১১-১৪, ২০০৫। ব্রিল। পৃষ্ঠা ১–১৪। আইএসবিএন 978-90-04-15420-9 
  • উইল্ডাং, ডেইরিক (১৯৭৭)। ইজিপশিয়ান সেইন্টস: ডেইফিকেশন ইন ফ্যারাওনিক ইজিপ্ট। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8147-9169-1 
  • উইলকিনসন, রিচার্ড এইচ. (২০০৩)। দ্য কমপ্লিট গডস অ্যান্ড গডেসেসেস অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট। থেমস অ্যান্ড হাডসন। আইএসবিএন 978-0-500-05120-7 
  • উইলকিনসন, টবি (১৯৯৯)। আর্লি ডায়নাস্টিক ইজিপ্ট। রটলেজ। আইএসবিএন 978-0-203-02438-6 
  • ইয়েলিন, জেনিস ডব্লিউ. (২০১২)। "নুবিয়ান রিলিজিয়ান"। ফিশার, মার্জরি এম.; লাকোভারা, পিটার; ইক্রাম, সালিমা; ডি'অরিয়া, সু। এনশিয়েন্ট নুবিয়া: আফ্রিকান কিংডমস অন দ্য নাইল। দি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি কায়রো প্রেস। পৃষ্ঠা ১২৫–১৪৪। আইএসবিএন 978-977-416-478-1  |display-editors=৩ অবৈধ (সাহায্য)

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:অঞ্চল অনুযায়ী পৌরাণিক চরিত্রদের তালিকা