পৌষ পুত্রদা একাদশী

পুত্রদা একাদশী (অর্থাৎ "পুত্র দানকারী একাদশী") একটি হিন্দু পবিত্র দিন যা পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) হিন্দু মাসের শুক্লপক্ষের ১১ তম চান্দ্র দিবসে ( একাদশী ) পড়ে। শ্রাবণের (জুলাই-আগস্ট) অপর পুত্রদা একাদশী থেকে পৃথককরণের জন্য এই দিনটিকে পৌষ পুত্রদা একাদশীও বলা হয়। অন্যটিকে শ্রাবণ পুত্রদা একাদশী বলা হয়। [১] দম্পতিরা এই দিনে উপবাস করে ও উত্তম পুত্রের জন্য দেবতা বিষ্ণুর পূজা করে। [২] এই দিনটি বিশেষ করে বৈষ্ণবগণ পালন করে। একটি পুত্রকে হিন্দু সমাজে সম্পূর্ণরূপে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় কারণ সে জীবনে বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার যত্ন নেয় ও শ্রাদ্ধ (পূর্বপুরুষের আচার) দ্বারা পরলোকের জীবনে তার পিতামাতার মঙ্গল নিশ্চিত করে। প্রতিটি একাদশী নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য নির্ধারিত হলেও পুত্রসন্তানের ইচ্ছা এতটাই মহান যে দুটি পুত্রদা ("পুত্রদাতা") একাদশী রয়েছে। অন্যান্য একাদশীতে এই সুবিধা নেই। [৩] [৪]

পুত্রদা একাদশী
অন্য নামপৌষ পুত্রদা একাদশী
পালনকারীহিন্দু
ধরনহিন্দু উপবাস
তাৎপর্যপুত্র লাভ
পালনপ্রার্থনা,ধর্মীয় কৃত্য,বিষ্ণুপূজো
তারিখচান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নির্ধারিত

কিংবদন্তি সম্পাদনা

ভবিষ্য পুরাণ রাজা যুধিষ্ঠিরকে কৃষ্ণের বলা পুত্রদা একাদশীর কাহিনী প্রকাশ করেছে। [৫] একদা ভদ্রাবতীর রাজা সুকেতুমান ও তার রাণী শৈব্যা বংশলোপের আশংকায় শোকাহত হন। দম্পতি ও তাদের মৃত পূর্বপুরুষরা চিন্তিত ছিলেন যে বংশের কেউ শ্রাদ্ধ না করলে তারা শান্তি পাবে না। মৃত্যুর পরে হারিয়ে যাবে আত্মা। হতাশ হয়ে রাজা তার রাজ্য ত্যাগ করে সবার অজান্তে বনে চলে গেলেন। কয়েকদিন বনে ঘুরে বেড়ানোর পর পুত্রদা একাদশীতে সুকেতুমান মানস সরোবর হ্রদের তীরে কয়েকজন ঋষির আশ্রমে পৌঁছেন। ঋষিরা বললেন, তারা দশজন ঐশ্বরিক বিশ্বদেব । তারা রাজাকে পুত্রলাভের জন্য পুত্রদা একাদশী উপবাস করার পরামর্শ দেন। রাজা তা স্বীকার করে রাজ্যে ফিরে গেলেন। শীঘ্রই রাজা এক পুত্রপ্রাপ্তির আশীর্বাদ পান।পুত্র বড় হয়ে একজন বীর রাজা হয়েছিলেন। [৬] [৭]

কৃত্য সম্পাদনা

নারীরা পুত্র কামনা করে পুত্রদা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেন। দম্পতিরাও তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য দেবতার পূজা করে। [৮] এ দিন শস্য, মটরশুটি, ভক্ষ্য শস্য, কিছু শাকসবজি ও মশলা এড়ানো হয়। [৯] এই পৌষ পুত্রদা একাদশী উত্তর ভারতে বেশি জনপ্রিয়। অন্যদিকে অন্যান্য রাজ্য শ্রাবণ পুত্রদা একাদশীকে অধিক গুরুত্ব দেয়। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Shravana Putrada Ekadashi"। Drik Panchang .com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১২ 
  2. Dr. Bhojraj Dwivedi (২০০৬)। Religious basis of Hindu beliefs। Diamond Pocket Books (P) Ltd.। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 978-81-288-1239-2 
  3. James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: Volume Two। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 540–1আইএসবিএন 978-0-8239-3180-4 
  4. Lochtefeld, James G. (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: A-M। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 218–9। আইএসবিএন 9781598842050। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১২ 
  5. "Shravana Putrada Ekadashi 2021 पर जानें पूर्ण मोक्ष प्राप्ति की सतभक्ति विधि"S A NEWS (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৮-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৮ 
  6. Putrada Ekadashi (Pausha-shukla Ekadashi) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে by The National Council of Hindu Temples (UK).
  7. "Putrada Ekadasi"। ISKCON। ১৯৮৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১২ 
  8. "Poojan Vidhi"। ২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০২৩ 
  9. Melton, J. Gordon (২০১১)। Religious Celebrations: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorations। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 722। আইএসবিএন 9781598842050। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১২