পি. এল. ট্র্যাভার্স

পামেলা লিন্ডন ট্র্যাভার্স ওবিই (ইংরেজি: Pamela Lyndon Travers; জন্ম: হেলেন লিন্ডন গফ; ৯ আগস্ট ১৮৯৯ - ২৩ এপ্রিল ১৯৯৬) একজন অস্ট্রেলীয়-ব্রিটিশ লেখিকা ছিলেন। তিনি তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ইংল্যান্ডে কাটান। তিনি ম্যারি পপিন্স বই ধারাবাহিকের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।[১]

পি. এল. ট্র্যাভার্স

আনু. ১৯২৪ সালে এ মিডসামার নাইট'স ড্রিম নাটকে তিতানিয়া চরিত্রে ট্র্যাভার্স
আনু. ১৯২৪ সালে এ মিডসামার নাইট'স ড্রিম নাটকে তিতানিয়া চরিত্রে ট্র্যাভার্স
জন্মহেলেন লিন্ডন গফ
(১৮৯৯-০৮-০৯)৯ আগস্ট ১৮৯৯
ম্যারিবরা, কুইন্সল্যান্ড উপনিবেশ
মৃত্যু২৩ এপ্রিল ১৯৯৬(1996-04-23) (বয়স ৯৬)
চেলসি, লন্ডন, ইংল্যান্ড
সমাধিস্থলসেন্ট ম্যারি দ্য ভার্জিন্‌স চার্চ, টুইকেনহাম, লন্ডন
ছদ্মনামপামেলা লিন্ডন ট্র্যাভার্স
পেশা
  • লেখিকা
  • অভিনেত্রী
  • সাংবাদিক
জাতীয়তাঅস্ট্রেলীয়-ব্রিটিশ
ধরনশিশুসাহিত্য, কাল্পনিক
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিম্যারি পপিন্স বই ধারাবাহিক
সন্তান

গফ কুইন্সল্যান্ডের ম্যারিবরায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে সিডনিতে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত অস্ট্রেলীয় বুশে বেড়ে ওঠেন। তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় যখন তিনি কেবল কিশোরী। তিনি কিছুদিন পেশাদার শেকসপিয়ারীয় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ২৪ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর পর তিনি "পামেলা লিন্ডন ট্র্যাভার্স" নাম ধারণ করেন এবং ১৯৩৩ সালে ম্যারি পপিন্স বই ধারাবাহিকের প্রথম বই লেখার সময় তার কলম নাম পি. এল. ট্র্যাভার্স গ্রহণ করেন।

ট্র্যাভার্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ তথ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় নিউ ইয়র্ক সিটিতে সফর করেন। সেই সময়ে ওয়াল্ট ডিজনি ওয়াল্ট ডিজনি প্রডাকশনের জন্য ম্যারি পপিন্স-এর চলচ্চিত্র স্বত্ব ক্রয়ের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করেন। কয়েক বছরের যোগাযোগের পর ওয়াল্ট ডিজনি স্বত্ব পান এবং ১৯৬৪ সালে ম্যারি পপিন্স চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।

২০০৪ সালে বইটির সঙ্গীতনাট্য উপযোগী করে ওয়েস্ট এন্ডে মঞ্চস্থ হয় এবং ২০০৬ সালে ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয়। ২০১৩ সালে সেভিং মিস্টার ব্যাঙ্কস নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যেখানে ট্র্যাভার্সকে ম্যারি পপিন্স-এর স্বত্ব বিক্রি করতে ডিজনির প্রচেষ্টার চিত্রায়ন দেখা যায়। এতে ট্র্যাভার্সের চরিত্রে অভিনয় করেন এমা টমসন। ২০১৮ সালে মূল চলচ্চিত্রের অনুবর্তী পর্ব ম্যারি পপিন্স রিটার্নস মুক্তি পায়, এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন এমিলি ব্লান্ট

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

হেলেন লিন্ডন গফ ১৮৯৯ সালের ৯ই আগস্ট কুইন্সল্যান্ডের ম্যারিবরায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার মা মার্গারেট অ্যাগনেস গফ (জন্ম: মোরহেড) একজন অস্ট্রেলীয় ছিলেন এবং ১৮৮৮ থেকে ১৮৯০ পর্যন্ত কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার বয়ড ডানলফ মোরহেডের ভাইজি ছিলেন। তার পিতা ট্র্যাভার্স রবার্ট গফ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন কিন্তু মদপানের জন্য কর্মজীবনে ব্যর্থ হন এবং পরে ব্যাংকের কেরানি হিসেবে পদবনতি ঘটে।[৩] এই দম্পতির বিয়ে হয় ১৮৯৮ সালের ৯ই নভেম্বর, হেলেনের জন্মের নয় মাস আগে।[২] হেলেন নামটি রাখা হয় তার প্র-মাতামহীর নামানুসারে। যদিও তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন, তিনি নিজেকে আইরিশ বলে গণ্য করেন এবং বলেন তিনি ভুল জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

গফ অস্ট্রেলিয়ান গ্যাস লাইট কোম্পানিতে ক্যাশিয়ার হিসেবে প্রথম চাকরি করেন।[৫] ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি ৪০ পেমব্রোক স্ট্রিট অ্যাশফিল্ডে বসবাস করতেন।[৬] ১৯২০ সালে গফ তার প্রথম পান্তোমিমে অভিনয় করেন।[৭] পরের বছর অ্যালান উইলকি পরিচালিত সিডনি ভিত্তিক একটি শেকসপিয়ারীয় কোম্পানিতে কাজের জন্য নিযুক্ত হন।[৮]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্র্যাভার্স ব্রিটিশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের হয়ে কাজ করেন এবং পাঁচ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটান। এই সময়ে তিনি ১৯৪১ সালে আই গো বাই সি, আই গো বাই ল্যান্ড প্রকাশ করেন।[৫] তার বন্ধু ভারত বিষয়ক মার্কিন কমিশনার জন কলিয়ারের আমন্ত্রণে ট্র্যাভার্স দুটি গ্রীষ্ম নাভায়ো, হোপি ও পুয়েবলো জনগোষ্ঠীর সাথে কাটান এবং তাদের পুরাণ ও লোকাচার নিয়ে অধ্যয়ন করেন।[৯][১০] ট্র্যাভার্স যুদ্ধ শেষে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং তার লেখনী অব্যাহত রাখেন।[৫] তিনি লন্ডনের ৫০ স্মিথ স্ট্রিট, চেলসি, লন্ডন বসবাস শুরু করেন, যা বর্তমানে ইংরেজ ঐতিহ্যের নীল প্লাক দিয়ে সজ্জিত রয়েছে। তিনি ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত র‌্যাডক্লিফ কলেজে ও ১৯৬৬ সালে স্মিথ কলেজে রাইটার-ইন-রেসিডেন্স ছিলেন এবং ১৯৭০ সালে স্ক্রিপস কলেজে প্রভাষক হিসেবে ছিলেন।[৫][১১] তিনি ১৯৭৬ থেকে আমৃত্যু পুরাণ ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত পত্রিকা প্যারাবোলা-এর সম্পাদক ছিলেন।[৫]

ম্যারি পপিন্স সম্পাদনা

১৯২৬ সালের গোড়ার দিকে ট্র্যাভার্স ম্যারি পপিন্স অ্যান্ড দ্য ম্যাচ ম্যান শিরোনামে একটি ছোটগল্প লিখেন। এই গল্পের মধ্যেই প্রথম ম্যারি পপিন্স নামক আয়া চরিত্র ও বার্ট দ্য স্ট্রিট আর্টিস্ট চরিত্রটির দেখা মিলে।[১২] ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত ম্যারি পপিন্স শিশুতোষ বইটি ছিল সাহিত্যিক হিসেবে ট্র্যাভার্সের প্রথম সাফল্য। এরপর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই বইটির আরও সাতটি অনুবর্তী পর্ব প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ বইটি প্রকাশের সময় তার বয়স ছিল ৮৯।[১৩]

১৯৭৭ সালের মে মাসে বিবিসি রেডিও ৪-এর ডেজার্ট আইল্যান্ড ডিস্কস বেতার অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথোপকথনের সময় ট্র্যাভার্স জানান যে ম্যারি পপিন্স নামটি তার শৈশবের গল্প থেকে নেওয়া, যেটি তিনি তার বোনদের জন্য কল্পনা করেছিলেন, এবং সেই সময়ের একটি বই তার কাছে তখনও ছিল, যাতে এই নামটি খোদাই করা ছিল।[১৪]

সাহিত্যকর্মের তালিকা সম্পাদনা

বই সম্পাদনা

  • ম্যারি পপিন্স, লন্ডন: গেরাল্ড হো, ১৯৩৪
  • ম্যারি পপিন্স কামস ব্যাক, লন্ডন: এল. ডিকসন অ্যান্ড টমসন লিমিটেড, ১৯৩৫
  • আই গো বাই সি, আই গো বাই ল্যান্ড, লন্ডন: পিটার ডেভিস, ১৯৪১
  • আন্ট স্যাস, নিউ ইয়র্ক: রেইনাল অ্যান্ড হিচকক, ১৯৪১
  • আহ ওং, নিউ ইয়র্ক: রেইনাল অ্যান্ড হিচকক, ১৯৪৩
  • ম্যারি পপিন্স ওপেনস দ্য ডোর, লন্ডন: পিটার ডেভিস, ১৯৪৩
  • জনি ডেলানি, নিউ ইয়র্ক: রেইনাল অ্যান্ড হিচকক, ১৯৪৪
  • ম্যারি পপিন্স ইন দ্য পার্ক, লন্ডন: পিটার ডেভিস, ১৯৫২
  • জিঞ্জারব্রেড শপ, ১৯৫২
  • মিস্টার উইগ্‌স বার্থডে পার্টি, ১৯৫২
  • দ্য ম্যাজিক কম্পাস, ১৯৫৩
  • ম্যারি পপিন্স ফ্রম এ টু জেড, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৬৩
  • দ্য ফক্স অ্যাট দ্য ম্যাঞ্জার, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৬৩
  • ফ্রেন্ড মাঙ্কি, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৭২
  • ম্যারি পপিন্স ইন দ্য কিচেন, নিউ ইয়র্ক ও লন্ডন: হারকোর্ট ব্রেস জোভানোভিচ, ১৯৭৫
  • দ্য পেয়ার্স অব শুজ, নিউ ইয়র্ক: ভাইকিং প্রেস, ১৯৮০
  • ম্যারি পপিন্স ইন চেরি ট্রি লেন, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৮২
  • ম্যারি পপিন্স অ্যান্ড দ্য হাউজ নেক্সট ডোর, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৮৮

সংকলন সম্পাদনা

  • স্টোরিজ, ১৯৫২

অকল্পকাহিনী সম্পাদনা

  • মস্কো এক্সকারসন, নিউ ইয়র্ক: রেইনাল অ্যান্ড হিচকক, ১৯৩৪
  • জর্জ ইভানোভিচ গুর্দিয়েফ, টরন্টো: ট্র্যাডিশনাল স্টাডিজ প্রেস, ১৯৭৩
  • অ্যাবাউট দ্য স্লিপিং বিউটি, লন্ডন: কলিন্স, ১৯৭৫
  • হোয়াট দ্য বি নোজ: রিফ্লেকশন্স অন মিথ, সিম্বল অ্যান্ড স্টোরি, নিউ প্যাল্ট্‌জ: কোডহিল প্রেস, ১৯৮৯

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "P.L. Travers | British Author & Creator of Mary Poppins | Britannica"এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মার্চ ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  2. লসন ২০০৬, পৃ. ২৩।
  3. পিকার্ডি, জাস্টিন (২৮ অক্টোবর ২০০৮)। "Was P L Travers the real Mary Poppins?"দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল  থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  4. লসন ২০০৬, পৃ. ২৩-২৪।
  5. "Goff, Helen Lyndon [pseuds. P. L. Travers, Pamela Lyndon Travers]"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/62619  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
  6. "P. L. Travers (Mary Poppins) | Monument Australia"মনুমেন্ট অস্ট্রেলিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  7. লসন ২০০৬, পৃ. ৬২।
  8. লসন ২০০৬, পৃ. ৬৪-৬৫।
  9. বার্নেস ও গ্রিসওল্ড 1982
  10. উইচেল, অ্যালেক্স (২২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪)। "AT HOME WITH: P. L. Travers; Where Starlings Greet the Stars"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  11. লসন ২০০৬, পৃ. ২৯০।
  12. "Text of the short story Mary Poppins and the Match Man"ম্যারি পপিন্স অ্যান্ড দ্য ম্যাচ ম্যান। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  13. কালিন্যান, বার্নিস ই; পারসন, ডায়ান গোয়েটজ (২০০৫), Encyclopedia of Children's Literature, কন্টিনাম, পৃষ্ঠা ৭৮৪, আইএসবিএন 978-0-82641778-7, সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 
  14. "BBC Radio 4 - Desert Island Discs, P L Travers"বিবিসি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২৪ 

গ্রন্থসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা