পাকিস্তান মুসলিম লীগ

পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল

মুসলিম লীগ হচ্ছে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের মূল উত্তরসূরি যা পাকিস্তান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে ভারতের মুসলিমদের একাংশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল। পাকিস্তানের মোট পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী এই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা হলেন লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বগুড়া, চৌধুরী মুহাম্মদ আলি, এবং ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়। কিন্তু ১৯৫৫ সালের পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। তবে সংখ্যালঘু দলের নেতা হিসেবে চৌধুরী মুহাম্মদ আলি এবং ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়কে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান সামরিক আইন ঘোষণার পর দলটি ভেঙে দেওয়া হয়।[]

মুসলিম লীগ
উর্দু: مسلم لیگ‎‎
ঐতিহাসিক নেতৃবৃন্দমোহাম্মদ আলী জিন্নাহ
লিয়াকত আলী খান
চৌধুরী খালিকুজ্জামান
খাজা নাজিমুদ্দিন
ফাতেমা জিন্নাহ
প্রতিষ্ঠা১৭ ডিসেম্বর ১৯৪৭
ভাঙ্গন২৭ অক্টোবর ১৯৫৮
পূর্ববর্তীনিখিল ভারত মুসলিম লীগ
পরবর্তীপাকিস্তান মুসলিম লীগ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ
সদর দপ্তরকরাচি
সংবাদপত্রডন
ভাবাদর্শইসলামি আধুনিকতাবাদ
পুঁজিবাদ
রাজনৈতিক অবস্থানBig tent
আনুষ্ঠানিক রঙ  সবুজ
পাকিস্তানের রাজনীতি

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা নেতৃবৃন্দ

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নতুন দেশের গভর্নর-জেনারেল এবং মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল লিয়াকত আলী খান প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ভেঙে দেওয়া হয়। এর ফলে মুসলিম লীগ (পাকিস্তান) এবং ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের উত্তরসূরি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৭ই ডিসেম্বরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং দুই মুসলিম লীগে দুজন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চৌধুরী খালিকুজ্জামান মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)-এর এবং মোঃ ইসমাইল ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মতাদর্শ

সম্পাদনা

দেশ বিভাগের পর প্রথম দিকে দলটি পাকিস্তানের প্রধান শাসকদল ছিল। লিয়াকত আলী খানের প্রধানমন্ত্রীত্বের অধীনে মুসলিম লীগ সরকার সাফল্যের সাথে লক্ষ্য প্রস্তাবের খসড়া পাস করায়। যদিও লিয়াকত আলী খান প্রগতিশীল ছিলেন তবুও তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালা অনুসারে সাংবিধানিক সংস্কার চালু করেছিলেন। তবে খাজা নাজিমুদ্দিনের অধীনে দলটি একটি রক্ষণশীল প্ল্যাটফর্ম গ্রহণ করে। খাজা নাজিমুদ্দিন সংখ্যালঘুদের সমধিকারের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে দলটি বেশিরভাগ প্রগতিশীল উচ্চবিত্তদের সমর্থন হারায়। তবে তার নীতিমালা বেশিরভাগই তাঁর মোহাম্মদ আলী বগুড়া এবং চৌধুরী মুহাম্মদ আলির মতো উত্তরসূরিদের দ্বারা বাতিল করা হয়। তারা সব ধরনের মানুষের সাম্য এবং স্বাধীনতায় গুরুত্ব দিতেন।

মুসলিম যুগের অর্থনৈতিক নীতি ছিল পুঁজিবাদী ঘরনার। লিয়াকত আলী খান এবং মোহাম্মদ আলী বগুড়ার মতো প্রধানমন্ত্রীরা পশ্চিমা ধাঁচের অর্থনীতির প্রখর সমর্থক এবং অর্থনৈতিক উদারপন্থী রাজস্ব রক্ষণশীলতার প্রচার করেছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তান সেন্টো এবং সিয়াটো মতো পুঁজিবাদীপন্থী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। একই সাথে তারা দেশে কম্যুনিস্ট প্রভাবের যে কোনও সম্ভাব্য সম্ভাবনা প্রতিরোধ করে। ইসলামের পক্ষে মুসলিম লীগের সমর্থন সত্ত্বেও, দলটি সুদ প্রদানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

দলের ভাঙ্গন

সম্পাদনা

১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করেন এবং ১৯৫১ সালের অক্টোবরে লিয়াকত আলি খানকে হত্যা করা হয়। দুই প্রবীণ নেতার মৃত্যুর পর দলটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। ১৯৫৩ সাল নাগাদ লীগের মধ্যে বিভেদ দলের সদস্যদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে পরিচালিত করে। ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে লিয়াকত আলি খানের স্থলাভিষিক্ত বাঙালি নেতা খাজা নাজিমুদ্দিনকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও ১৯৫৫ সালের মে মাসে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে (পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে) যুক্তফ্রন্টের গঠিত রাজনৈতিক জোটের কাছে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং জেনারেল আইয়ুব খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়ে সব ধরনের রাজনীতি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দেয়। এর ফলে পুরনো মুসলিম লীগের সমাপ্তি ঘটে।

একই নামে অন্যান্য দল

সম্পাদনা

এখনো এই নামটির যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। ক্ষমতা দখলের কয়েক বছর পর আইয়ুব খান কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। বিরোধী দলটি কাউন্সিল মুসলিম লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই কাউন্সিল মুসলিম লীগ ১৯৬৭ সালে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়। কিন্তু আইয়ুব খানের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান পুনরায় সামরিক শাসন জারি করার পরবর্তীকালে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে দুই দলই ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে সরে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানে আধিপত্য লাভ করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য লাভ করে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ। যদিও উভয় পাকিস্তান মিলিয়ে নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পরবর্তীকালে বেসামরিক রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পরে মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) নামে একটি নতুন মুসলিম লীগ গঠিত হয়। তবে আসল মুসলিম লীগের সাথে এর কোনও যোগসূত্র ছিল না। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের তৃতীয় সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পুনরায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অক্টোবরে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সামরিক সরকার কর্তৃক অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে মুসলিম লীগের নাম ব্যবহার করে পাঁচটি আলাদা দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

এগুলোর মধ্যে বৃহত্তম দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদ-ই-আজম) ২৭২ টি আসনের মধ্যে ৬৯ টি আসন লাভ করে এবং নওয়াজ শরীফের অনুগত পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ১৯ টি আসন পায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে কায়েদ-ই-আজম মুসলিম লীগ ক্ষমতাসীন জোটে ছিল এবং নওয়াজশরীফের মুসলিম লীগ ছিল বিরোধী দলে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) দেশের বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয়। ফলশ্রুতিতে দলটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে এবং নওয়াজ শরীফ তৃতীয়বারের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

এই দল ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান দলসমূহ

সম্পাদনা
পাকিস্তান
বাংলাদেশ

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Archived copy"। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২৯