পরীক্ষিৎ চন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায়

ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী

পরীক্ষিৎ চন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায় (জন্ম:- ১৮৮৯ - মৃত্যু:- ২৬ নভেম্বর ১৯৫৬) (ইংরেজি: Parikshit Mukharjee) অগ্নিযুগের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। বিপ্লবী বাঘা যতীন এর নেতৃত্বে তিনি বেশ কয়েকটি অভিযানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। জেল জীবনে তিনি ৪৫ দিনের অনশন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কাঙ্গালদা নামেই বিশেষ পরিচিত ছিলেন।[১]

পরীক্ষিৎ চন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায়
জন্ম১৮৮৯
মৃত্যু২৬ নভেম্বর ১৯৫৬
ভারত, (বর্তমান ভারত ভারত)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত
আন্দোলনভারতের বিপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন

জন্ম ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

জন্ম ১৮৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে, বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। পিতার নাম গুরুচরণ মুখোপাধ্যায় ও মাতার নাম কমলিনী দেবী। দেশ প্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি অল্প বয়সেই বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের ডাকে তিনি তার বিরুদ্ধে আন্দোলন অংশ নিয়েছিলেন, তখন তিনি এম. এন রায় ওরফে নরেন ভট্টাচার্য্য, শশাঙ্ক জোয়ারদার, নগেন দত্ত ও অন্যান্য বিপ্লবীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং যোগ দিলেন অনুশীলন সমিতিতে।[২] তিনি বন্যার ত্রাণ কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

বাঘা যতীনের সঙ্গে ডঃ যাদুগোপাল মুখার্জীর নেতৃত্বে এবং পি. মিত্র, কৃষ্ণ কুমার মিত্র, এইচ এন. বসু, ও এস. এন. হালদার প্রভৃতি হাইকোর্ট পার্টি ব্যারিষ্টারদের তত্ত্বাবধানে পাঁচ-ছয় মাস কাজ করেন। তিনি নেতা যতীন মুখার্জী ওরফে বাঘা যতীনের ডাকে 'সারা ভারত বিপ্লবে' যোগদান করেন। বিপ্লবী আশু দাস ও ডঃ যাদুগোপাল মুখার্জী মেডিকেল কলেজে যান। সেনা ছাউনিতে পাঞ্জাবি সৈনিকদের বিপ্লবের কাজে টানার। ডাক্তারির ছলে তারা সেনা ছাউনিতে প্রবেশ করবেন। সেই কাজে বিপ্লবী পরীক্ষিৎ মুখোপাধ্যায়কে কম্পাউন্ডারি পাস করানো হয়।

বিপ্লবী দলের আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন ছিল, তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই বিপ্লবী বাঘা যতীন কাজের জন্য কিছু কর্মী চেয়ে পাঠালেন বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাসের কাছে। পূর্ণচন্দ্র দাস পাঠিয়ে দিলেন বেশ কয়েকজন বিপ্লবীকে তাদের মধ্যে ছিলেন পরীক্ষিৎ মুখোপাধ্যায়। তারপর খিদিরপুরে ‘বার্ড ও কোং'-এ, এবং বেলে- ঘাটার চাউলপট্টিতে ডাকাতি করেন, এবং তারা সফল হন।

১৯১৪ সালে বৃটিশ সরকার পরীক্ষিৎ চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ‘ষ্টেট প্রিজনার' হিসাবে অন্তরীন রাখে এবং শেষ পর্যন্ত রেগুলেশন এ্যাক্ট-৩' অনুসারে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলে বন্দী থাকেন। তিনি প্রেসিডেন্সি জেলের ৪৪-ডিগ্রি তে কয়েক মাস আটক ছিলেন। ১৯১৮ সালে তিনি অরুন চন্দ্র গুহর সঙ্গে হাজারী বাগ সেন্ট্রাল জেলে রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে ৪৫ দিন অনশন করেন।

১৯১০ সালে প্রথম বিশ্ব মহাযুদ্ধ শেষ হলে, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে শিয়ালদহ বোমা মামলায় তাঁকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। তিনি ১৯৩৮ সালে ড: যাদুগোপাল মুখার্জির আহ্বানে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। এবং খুলনা জেলার সাত-ক্ষীরা থেকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।[৩]

যে সকল বিপ্লবীর সাথে কাজ করেন সম্পাদনা

রাজনৈতিক জীবনে তাঁর সতীর্থদের মধ্যে ড: যাদুগোপাল মুখার্জি, এম. এন. রায় (নরেন ভট্টাচার্য), বাঘা যতীন, চিত্তপ্রিয়, মনোরঞ্জন, কালীচরণ ঘোষ, সাতকড়ি ব্যানার্জী, হরিকুমার চক্রবর্ত্তী, সুরেন্দ্র ঘোষ, বিপিন গাঙ্গুলী, সতীশ চক্রবর্তী, অরুন চন্দ্র গুহ, মনোরঞ্জন গুপ্ত, ভোলা চ্যাটার্জী, ভূপতি মজুমদার প্রভৃতির নাম উল্লেখ যোগ্য। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী তিনি তার পাশে পেয়েছিলেন।[৪]

শেষ জীবন সম্পাদনা

১৯৫৬ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি তার কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি 'কাঙালদা' নামেই বিশেষ পরিচিত ছিলেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি নিঃস্বার্থে নির্ভিক সৈনিকের ভূমিকা পালন করে গেছেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. গঙ্গা নারায়ণ চন্দ্র, অবিস্মরণীয়, প্রথম খণ্ড , ১৯৬৪,
  3. বিশেষ কিছু তথ্য মহাজাতি সদন থেকে প্রাপ্ত,
  4. ডঃ যাদুগোপাল মুখার্জি, বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি, প্রথম খণ্ড, কলকাতা, ১৯৫৬,