হরিকুমার চক্রবর্তী

হরিকুমার চক্রবর্তী (১৮৮২ - ১৯৬৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

হরিকুমার চক্রবর্তী
জন্ম১৮৮২
মৃত্যু১৯৬৩
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

হরিকুমার চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার সোনারপুর থানার অন্তর্গত চাংড়িপোতা (সুভাষগ্রাম) গ্রামে হরিকুমার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম যোগেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী।[]

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড

সম্পাদনা

হরিকুমার চক্রবর্তী এবং মানবেন্দ্রনাথ রায় ওরফে নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারার সূচনা হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায়। হরিকুমার প্রথমে অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরে তিনি বাঘা যতীনের যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। বাঘা যতীনের নির্দেশে হরিকুমার সঙ্গীসাথীদের সাথে সুন্দরবনের গোসাবা অঞ্চলে গভীর জঙ্গলে ম্যাভেরিক জাহাজে জার্মানি থেকে পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অভিযান করতে যান। কলকাতায় হ্যারি এন্ড সন্স নামে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আড়ালে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন চালাতেন তিনি। অস্ত্র আমদানি ছিল তার দায়িত্ব। এই গুপ্ত ঘাঁটিতে তিনি গ্রেপ্তার হন ১৭ আগস্ট, ১৯১৫ সালে। এরপর ব্রিটিশ সরকার তাকে বহুদিন কারারুদ্ধ করে রাখে। সরকারী ভাষ্যে তিনি ছিলেন 'বাংলার সবথেকে ভয়ঙ্কর বিপ্লবী গোষ্ঠীর উচ্চ পর্যায়ের নেতা'[]

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। এরপর তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। এই সময় তিনি নেতাজী সুভাষ ও চিত্তরঞ্জন দাশের সাহচর্য পেয়েছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। তারপর তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন এবং ইনডিপেন্ডেন্স লিগের বাংলাদেশ শাখার সম্পাদক হন। স্বরাজ পার্টির কাজে জড়িত থাকার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে আবার গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বর্মার মান্দালয় ও ইনসিন জেলে বন্দী থাকেন।

১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনে ভলান্টিয়ার সাবকমিটির সম্পাদক হন । কংগ্রেসের এই অধিবেশনে নেতাজির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রস্তাবের পরিবর্তে জওহরলাল নেহরুর স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় হরিকুমার কংগ্রেস ছেড়ে আবার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন। এই কারণে ব্রিটিশরা আবার ১৯৩০ সালে তাকে কারাবন্দী করে। তিনি যুগান্তর দলের মুখপত্র 'স্বাধীনতা' ও র‍্যাডিকাল পার্টির 'জনতা' পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হরিকুমারের সাথে তার বন্ধু মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আবার যোগাযোগ হয়। তারা তখন র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিজমের চর্চা করতে থাকেন। গোঁড়া ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও হরিকুমার সারা জীবন যুক্তিবাদের চর্চা করেছেন। তিনি ঈশ্বর বা ধর্মে অবিশ্বাসী ছিলেন।

মৃত্যু

সম্পাদনা

১৯৬৩ সালে ক্যানসার রোগে হরিকুমার চক্রবর্তীর জীবনাবসান হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৮৪৩-৮৪৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  • পশ্চিমবঙ্গ - জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা সংখ্যা - তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার পৃঃ ২৫৯