নীলগাই

স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি

নীলগাই (দ্বিপদ নাম: Bocephalus tragocamelus)[৪][৫][৬][৭] (ইংরেজি: Blue Cow) এশিয়ার কৃষ্ণসার জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহদাকৃতি। পুরুষ কৃষ্ণসার নীলগাও নামেও পরিচিত।

নীলগাই
জামত্রে পুরুষ, মধ্যপ্রদেশ, ভারত
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী
পর্ব: মেরুদণ্ডী
শ্রেণী: স্তন্যপায়ী
বর্গ: আর্টিওডাক্টাইলা
পরিবার: বোভিডি
উপপরিবার: বোভিনি
গণ: বোসেলাফাস
ব্লেনভিল, ১৮১৬
প্রজাতি: বি. ত্রেগুক্যামেআস
দ্বিপদী নাম
বোসেলাফাস ট্রাগোকামেলাস
(পালাস, ১৭৬৬)[২]
নীলগাই এর পরিসীমা
প্রতিশব্দ[৩]
  • Antilope tragocamelus (Pallas, 1766)
  • A. albipes (Erxleben, 1777).
  • A. leucopus (Zimmermann, 1777)
  • A. picta (Pallas, 1776)
  • Boselaphus picta (de Blainville, 1816)
  • B. albipes (Desmarest, 1816)
  • Cemas tragocamelus (Oken, 1816)
  • C. picta (Oken, 1816)
  • Damalis risia (C. H. Smith, 1827)
  • D. picta (Brookes, 1828)
  • Portax risia (C. H. Smith, 1827)
  • P. tragelaphus (Sundevall, 1846)
  • Tragelaphus hippelaphus (Ogilby, 1838)

ভৌগোলিক বিস্তার সম্পাদনা

ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলেই নীলগাই দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মালাবার উপকূলবঙ্গোপসাগর সংলগ্ন অঞ্চলগুলো বাদে উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে কর্ণাটক প্রদেশ পর্যন্ত এদের দেখা মেলে। এছাড়া পাকিস্তাননেপালের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় নীলগাই দেখা যায়।[১] চীনেও নীলগাই রয়েছে বলে জানা যায়।[৮] ১৯৫০ এর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের দিনাজপুর এলাকায় নীলগাই দেখা গেলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত।[৯] যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে নীলগাই অবমুক্ত করা হয়েছে।

বিবরণ সম্পাদনা

 
মুখের গঠনঃ অঙ্কিত চিত্র

নীলগাই এমনিতে সুন্দর, তবে দেখতে অনেকটা বিদঘুটে চেহারার ঘোড়ার মত। দেহের পেছনের দিক কাঁধ থেকে নিচু। কারণ সামনের পা পেছনের পা থেকে লম্বা। ঘাড়ে বন্য শূকরের কেশরের মত ঘন লোম থাকে। মর্দা নীলগাইয়ের গাত্র বর্ণ গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচে রঙের।। অনেক সময় গায়ে নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ। মাদী নীলগাই ও শাবকের গাত্র বর্ণ লালচে বাদামী কিন্তু খুরের উপরের লোম সাদা এবং প্রত্যেক গালে, চোখের নিচে ও পেছনে দুটি সাদা ছোপ থাকে। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নিচের তলদেশ সাদাটে।[১০]

মর্দা নীলগাইয়ের শুধু শিং হয়। শিং দুটি মসৃণ, অনুচ্চ, কৌণিক ও সামনের দিকে ঈষৎ বাঁকানো। শিঙের গোড়া ত্রিকোণাকৃতি হলেও ডগা বৃত্তাকার।

দেহের মাপ সম্পাদনা

পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা সাধারণত ১৩০-১৪০ সেন্টিমিটার (৫২-৫৬ ইঞ্চি)। তবে ১৫০ সেন্টিমিটার (৫৮ ইঞ্চি) পর্যন্তও হতে পারে। মাদী নীলগাই আকারে একটু ছোট হয়। শিঙের দৈর্ঘ্য গড়ে ২০ সেন্টিমিটার (৮ ইঞ্চি), রেকর্ড পরিমাণ দৈর্ঘ্য ২৯.৮ সেন্টিমিটার (১১.৭৫ ইঞ্চি)।[১০]

বিচরণস্থল সম্পাদনা

নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চড়ে বেড়াতে ভালবাসে। ঘন বন এড়িয়ে চলে।

আচরণ সম্পাদনা

সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দল নিয়েই নীলগাই ঘুরে বেড়ায়। দলে কখনও ২০ বা তার বেশি সদস্যও থাকতে পারে। শিশু-যুবা-বৃদ্ধ একসঙ্গে থাকে।

নীলগাই গাছেঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে যেমন স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যক্ষেত্রে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতে পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিনের বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি ছাড়া এরা দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়, এমনকি গরমের দিনেও এরা নিয়মিত পানি খায় না।[১০] আত্মরক্ষার প্রধান উপায় দৌড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।

গন্ডারের মত নীলগাইও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মলত্যাগ করে ঢিবি বানিয়ে ফেলে।[১০]

সাংস্কৃতিক লেখালেখি সম্পাদনা

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার আরণ্যক উপন্যাসে বার বার নীলগাইয়ের উল্লেখ করেছেন। বিহারের কড়া গ্রীষ্মের ভয়াবহতা বোঝাতে উপন্যাসের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন:

বাংলাদেশের কবি শহীদ কাদরী তার কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই কাব্যগ্রন্থের সঙ্গতি কবিতাটিতে নীলগাইয়ের উল্লেখ করেছেন।

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

আঞ্চলিক নাম "নীলগাই" /এনɪlˌɡa/ হিন্দি শব্দের সংমিশ্রণ থেকে আসে শূন্য ("নীল") এবং গাই ("গাভী"). শব্দটি প্রথম ব্যবহারে রেকর্ড করা হয়েছিল 1882 স। 4] বিকল্প উত্স পার্সিয়ান হতে পারে গা ("গাভ।[2] নীলগাই বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে: নীল 2] নীলগা, নী,[1] নাইলঘ[5] এবং নাইলঘ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mallon, D.P. (2008). Boselaphus tragocamelus. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 29 March 2009. Database entry includes a brief justification of why this species is of least concern.
  2. Wilson, D. E.; Reeder, D. M., সম্পাদকগণ (২০০৫)। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। আইএসবিএন 978-0-8018-8221-0ওসিএলসি 62265494 
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ms নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. Banks, R. C., R. W. McDiarmid, A. L. Gardner, and W. C. Starnes (2003) , Checklist of Vertebrates of the United States, the U.S. Territories, and Canada
  5. Wilson, Don E., and DeeAnn M. Reeder, eds. (1992) , Mammal Species of the World: A Taxonomic and Geographic Reference, 2nd ed., 3rd printing
  6. (1998) , website, Mammal Species of the World
  7. Wilson, Don E., and F. Russell Cole (2000) , Common Names of Mammals of the World
  8. [১], কোকোসিলির কয়েক হাজার নীলগাই মূল বিচরণভূমিতে ফিরে যাচ্ছে, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বাংলা বিভাগ।
  9. Mammals of Bangladesh: a field guide,M. A. R. Khan, Nazma Reza, Dhaka, 1985.
  10. বাংলাদেশের বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী, গাজী এস. এম. আসমত, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০১), পৃ. ৮৯-৯০।
  11. [২], আরণ্যক, তৃতীয় পরিচ্ছেদ।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা