শহীদ কাদরী

একুশে পদক প্রাপ্ত কবি

শহীদ কাদরী (১৪ আগস্ট ১৯৪২ - ২৮ আগস্ট ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশী কবি ও লেখক। তিনি ১৯৪৭-পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিনি নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করেছিলেন।[১] তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ববোধ এবং প্রকৃতি ও নগর জীবনের অভিব্যক্তি তার কবিতার ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যেকে বৈশিষ্ট্যায়িত করেছে। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে তিনি ব্যবহার করেছেন তার কাব্যে। তার কবিতায় অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্ণতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট।

শহীদ কাদরী
শহীদ কাদরী
শহীদ কাদরী
জন্ম(১৯৪২-০৮-১৪)১৪ আগস্ট ১৯৪২
কলিকাতা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে ভারত)
মৃত্যু২৮ আগস্ট ২০১৬(2016-08-28) (বয়স ৭৪)
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশি বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব
  • ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৪২-১৯৪৭)
  • পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
  • বাংলাদেশী (১৯৭১-২০১৬)
ধরনকবিতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিআমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩)
একুশে পদক (২০১১)
সক্রিয় বছর১৯৪৭-২০০৯
দাম্পত্যসঙ্গীনাজমুন নেসা পিয়ারি

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ চারটি।[২] ১৯৭৩ সালে বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।

প্রাথমিক জীবনসম্পাদনা

শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ভারত) রাজধানী কলিকাতা শহরের পার্ক সার্কাসে জন্ম নেন এবং কলিকাতা শহরে তার শৈশব কাটান। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের দিকে দশ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর প্রায় তিন দশক তিনি ঢাকা শহরে অবস্থান করেন এবং ১৯৭৮ সাল থেকে প্রবাসজীবন শুরু করেন।[৩] তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন।[৪]

সাহিত্য জীবনসম্পাদনা

এগারো বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে তিনি ‘পরিক্রমা’ শিরোনােম তার প্রথম কবিতা রচনা করেন যা মহিউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘স্পন্দন’ কাগজে ছাপা হয়েছিল। এরপর ‘জলকন্যার জন্য' শিরোনামে কবিতা লিখেন, এবং একই কাগজে ছাপতে দেন। এভাবে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে তার কবিতা লেখা চলতে থাকে। পঁচিশ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে ছাপা হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উত্তরাধিকার। এরপর ১৯৭৪ সালে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে রচিত কবিতা নিয়ে ২০০৯ সালে কাব্যগ্রন্থ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও প্রকাশিত হয়।[৪]

তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা চারটি এবং এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতার সংখ্যা ১২২টি। পরবর্তীতে তিনি আরও চারটি কবিতা লিখেন যার তিনটি ছাপা হয় কালি ও কলম সাহত্যি পত্রিকায় আর একটি প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায়; এবং সব মিলিয়ে তার কবিতা সংখ্যা ১২৬টি।[৪]

গ্রন্থতালিকাসম্পাদনা

কাব্যসম্পাদনা

  • উত্তরাধিকার (১৯৬৭)[৫]
  • তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (১৯৭৪)[৬]
  • কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)[৭]
  • আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)[৮]

সংকলনসম্পাদনা

  • শহীদ কাদরীর কবিতা[৯]
  • তোমার জন্যে[১০]

মৃত্যুসম্পাদনা

২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪][১১]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. সেলিনা হোসেন; নুরুল ইসলাম; মোবারক হোসাইন, সম্পাদকগণ (২০০০)। বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান (অনলাইন)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ১৬৭। আইএসবিএন 980-07-4052-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য) 
  2. রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সম্পাদিত; কবিতা সংগ্রহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তৃতীয় মুদ্রণ; জুলাই, ১৯৯০; পৃষ্ঠা- ৪৮৭
  3. "কবি শহীদ কাদরী মারা গেছেন"বিবিসি বাংলাবিবিসি। আগস্ট ২৮, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  4. নিউইয়র্ক প্রতিনিধি (আগস্ট ২৮, ২০১৬)। "কবি শহীদ কাদরী আর নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  5. "উত্তরাধিকার"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  6. "তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  7. "কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  8. "আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  9. "শহীদ কাদরীর কবিতা"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  10. "তোমার জন্যে"goodreads.comগুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৬ 
  11. শহীদ কাদরী আর নেই।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]