নির্মল সেন
নির্মল কুমার সেন গুপ্ত (৩ আগস্ট ১৯৩০ - ৮ জানুয়ারি ২০১৩) যিনি নির্মল সেন নামে অধিক পরিচিত ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
নির্মল সেন | |
---|---|
নির্মল কুমার সেন গুপ্ত | |
![]() | |
জন্ম | ৩ আগস্ট ১৯৩০ |
মৃত্যু | ৮ জানুয়ারি ২০১৩ | (বয়স ৮২)
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
শিক্ষা | এমএ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সাংবাদিক, বামপন্থী রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | বামপন্থী রাজনীতিবিদ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই |
রাজনৈতিক দল | স্বাধীনতার পুর্বে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল |
আন্দোলন | কৃষক আন্দোলন |
পিতা-মাতা |
|
প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা
নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ও মাতার নাম লাবণ্য প্রভা সেন গুপ্তা। পরিবারের ছয় ভাই ও বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন চতুর্থ।[১] তার পিতা কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে ভারত বিভাগের ঠিক পূর্বে তার পুরো পরিবার বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেও তিনি এদেশেই থেকে যান।[২]
শিক্ষা জীবন সম্পাদনা
নির্মল সেন প্রথমে কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে পরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি এম ই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি তার পিসির বাড়ির পার্শ্বস্থ বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি বি এম একাডেমী-তে ভর্তি হন এবং এখান থেকে ১৯৪৪ সালে প্রবেশিকা (এসএসসি) পাস করেন। এরপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে আইএসসি পাস করে বিএসসি-তে ভর্তি হন। এসময় তিনি রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হয়ে জেলে গেলে সেখান থেকে বিএসসি পরীক্ষা দিলেও অকৃতকার্য হন। তবে, পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে জেলখানা থেকেই বিএ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতকার্য হন। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।[১]
কর্মজীবন সম্পাদনা
নির্মল সেন ১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[১] পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক জেহাদ পত্রিকায় এবং ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে প্রেস ট্রাস্টের অধীনস্থ দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এতেই যুক্ত ছিলেন।[১] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও যুক্ত ছিলেন।[২]
রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা
১৯৪২ সালে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় মহাত্মা গান্ধীর ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল গেটে ১৬ দিন ধর্মঘট করার মাধ্যমে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।[১] তিনি ১৯৪৪ সালে রেভ্যুলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি (আরএসপি)-তে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হোন।[২]
প্রকাশনা সম্পাদনা
শৈশব থেকেই নির্মল সেনের লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়। তিনি ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময় হাতে লিখে প্রকাশিত ‘কমরেড’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। নির্মল সেন মূলত: কলাম লেখক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রবন্ধ এবং ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন বেশ কয়েকটি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশের সমকালীন সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই' নামক একটি উপ-সম্পাদকীয় তাকে লেখক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি ও পরিচিতি দান করে।[৩] তার উল্লেখযোগ্য কিছু বইয়ের নাম:[১]
- মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র
- বার্লিন থেকে মস্কো
- পূর্ব বঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ
- মা জন্মভূমি
- লেনিন থেকে গর্বাচেভ
- আমার জবানবন্দী
- স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই
- আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ
মৃত্যু সম্পাদনা
নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসা পরবর্তী সময় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দীঘিরগ্রামে নিজ বাড়ীতেই থাকতেন। এখানেই তিনি ২০১২ সালে ২৩ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৪ ডিসেম্বর তাকে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ফুসফুসে যে ইনফেকশন ছিল, তা রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় (সেপটিসেমিয়া) তাকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছিলো। এই অবস্থায় তিনি ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[২]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "চলে গেলেন নির্মল সেন, দৈনিক জনকণ্ঠ, সংগ্রহ : ৯ জানুয়ারি, ২০১৩"। ২০১৩-০১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ "নির্মল সেন নেই, বিডি নিউজ ২৪.কম, সংগ্রহকাল: ৯ জানুয়ারি, ২০১৩"। ১১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ বামপন্থী নেতা এবং সাংবাদিক নির্মল সেনের জীবনাবসান, বিবিসি, সংগ্রহ : ৯ জানুয়ারি, ২০১৩