নলিনী দাস

ব্রিটিশ বিরোধী বাংলাদেশি বিপ্লবী

নলিনী দাস (১ জানুয়ারি ১৯১০ - ১৯ জুন, ১৯৮২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। ১৯২৯ সনে মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপন করেন। পলাতক অবস্থায় ১৯৩০ সনে কলকাতার পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্ট সাহেবকে হত্যা-প্রচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হন।[]

নলিনী দাস
নলিনী দাস
জন্ম(১৯১০-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯১০
শাহবাজপুর, বরিশাল, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যুজুন ১৯, ১৯৮২(1982-06-19) (বয়স ৭২)
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
শিক্ষাআইএসসি
মাতৃশিক্ষায়তনব্রজমোহন কলেজ
পেশালেখক, রাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তি
উল্লেখযোগ্য কর্ম
স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বীপান্তরের বন্দী,
রাজনৈতিক দলস্বাধীনতার পুর্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, স্বাধীনোত্তর কালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • দুর্গামোহন দাস (পিতা)

নলিনী দাসের জন্ম ভোলা জেলার সাহবাজপুরে। তার পিতার নাম দুর্গামোহন দাস। শিক্ষাজীবন ভোলাতে শুরু। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় হরতাল ধর্মঘটে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯২৮ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে বরিশাল বি. এম. কলেজে আই.এস.সি. ক্লাসে ভর্তি হন। বরিশালে সে সময় তিনি একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। পরীক্ষার আগেই মামলা পড়ায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি।[]

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে কাজ

সম্পাদনা

নলিনী দাস ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিধ্বস্ত কলকাতায় প্রতিরোধ কমিটির কাজে তৎপর ছিলেন।

বরিশালে কর্মজীবন

সম্পাদনা

নলিনী দাস দেশবিভাগের পর বরিশালে চলে যান। ভোলা জেলায় কৃষক আন্দোলনের কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।[] ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকালে এক মিথ্যা মামলায় পাকিস্তান সরকার ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে। হাইকোর্ট থেকে মুক্তি পেলেও জেল গেটে পুনরায় গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিনা বিচারে রাজবন্দি হিসেবে আটক থাকেন। এরপর মুক্তি পান এবং আবার আটক করা হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টবাদের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্দী জীবনযাপন করেন। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার আমলে ছাড়া পান। ১৯৫৮ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে।[]

১৯৫৮ সাল থেকে আত্মগোপন অবস্থায় বরিশালের গ্রামে গ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জনগণের কল্যাণে স্মস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দুর্গামোহন ট্রাস্টের নিকট প্রদান করেন।[]

জেল ও পলাতক জীবন

সম্পাদনা

সত্তর বছরের জীবনের ভেতরে ২৩ বছর আন্দামান সেলুলার জেল, ব্রিটিশ ভারতের অন্যানয জেল, ভারতের জেল ও পাকিস্তানের কারাগারে অতিবাহিত করেন। ২০ বছর নয় মাস কাটান গোপন পলাতক জীবন।[] তার রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বীপান্তরের বন্দী গ্রন্থে তার দীর্ঘ ২৩ বছরের কারাবাস এবং ২০-২১ বছরের পলাতক জীবনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৪৯-৩৫০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. হোসেন, সেলিনা; ইসলাম, নুরুল, সম্পাদকগণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)। "অনিল মুখার্জি" (ছাপা)বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত বিতীয় সংস্করণ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ২০৭।