দৌলগোবিন্দ মন্দির

অসমের হিন্দু মন্দির

শ্রীশ্রী দৌল গোবিন্দ মন্দির অসমের উত্তর গুয়াহাটির চন্দ্রভারতী পাহাড়ে অবস্থিত৷ এই মন্দিরে প্রধানত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয়৷ প্রত্যেক বছরের ফেব্রুয়রী মাসে স্থানীয় লোকরা এই মন্দিরে ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন করে৷ নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের সাদা বালিতে হাঁটার পাশাপাশি নদী ক্রুজের রোমাঞ্চ উপভোগ করা যায়।

দৌলগোবিন্দ মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলা কামরূপ
ঈশ্বরশ্রীকৃষ্ণ
উৎসবহোলি
অবস্থান
অবস্থানউত্তর গুয়াহাটি
দেশভারত
স্থানাঙ্ক২৬°১২′২৪″ উত্তর ৯১°৪৪′৩০″ পূর্ব / ২৬.২০৬৭৭৪° উত্তর ৯১.৭৪১৭০৬° পূর্ব / 26.206774; 91.741706

ইতিহাস সম্পাদনা

এই মন্দিরের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রচলিত কাহিনী শুনা যায়৷ ইংরাজদের সময়ে শাসন পরিচালনার জন্য স্থানীয় কিছু অভিজাতসম্প্রদায়ের হাতে শাসনের কিছু দায়িত্ব অর্পিত করা হয়েছিল৷ এর নলবারী অঞ্চলে দেখাশুনার দায়িত্ব বর্তায় গর্গরাম বরুয়ার উপর৷ গর্গরাম বরুয়া ছিলেন পণ্ডিত আনন্দরাম বরুয়ার পিতা৷ গর্গরাম বরুয়া দেখাশুনার দায়িত্বে থাকার সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল৷ বর্তমান রঙিয়া শহরের সীমায় অবস্থিত জাকারীয়া নামের একটি গাঁওয়ের কাছে সন্ধ্যাঝাড় নামের একটি অটব্য অরণ্য ছিল৷ সেই জাকারীয়া গাঁওয়ের এক ব্রাহ্মণর বাড়িতে এক কপিল বর্ণের গাই ছিল৷ গাইটি রোজ শেষ রাত্রে ডিঙির বন্ধন খুলে সন্ধ্যাঝাড় অরণ্যে গিয়ে একটি বিরিণা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুধ ঢেলে পুনরায় গোয়ালে ফিরে আসত৷ সদরামীন বরুয়া এই কথা জানতে পেরে সেই রহস্য উদ্‌ঘাটন করার জন্য বিরিণা গাছটি থাকা স্থানে খননকাজ করান এবং সেখান থেকে একটি শ্রীকৃষ্ণর বিগ্রহ উদ্ধার হয়৷ সেই মূর্তি ভক্তি সহকারে শোভাযাত্রা করে এনে চন্দ্রভারতী পাহাড়ে স্থাপন করা হয়৷ সেখানে আগে থেকে শ্রীশ্রীঘনশ্যাম রায়েরও বিগ্রহ ছিল৷ তখন থেকে সেই বিগ্রহের সঙ্গে নতুন বিগ্রহেরও পূজা-সেবা শুরু হয়৷ ক্রমে দৌল এবং ফাকুবা উৎসবের দিন আগত হয়৷ সাথে সাথে পূজারীর চিন্তা হ'ল কোন বিগ্রহকে দৌলে তুলবেন৷ অবশেষে পূজারী বিগ্রহের সামনে প্রণিপাত করে জানান যে, যে বিগ্রহ দৌলে চাপবেন তিনি যেন চার আঙুল অগ্রসর হয়ে প্রমাণ দেখান৷ পরদিন পূজারী দেখেন যে, নতুন আনা বিগ্রহটি চার আঙুল অগ্রসর হয়ে আছে৷ এমন ঘটনায় পূজারীর মন শান্ত হয়৷ এর পরে যথারীতি নতুন বিগ্রহকে দৌলে স্থাপন করা হ'ল এবং তখন থেকে এই বিগ্রহ দৌল গোবিন্দ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে৷

গুরুত্ব সম্পাদনা

মন্দিরটি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হোলি উদযাপনের জন্য পরিচিত। স্থানীয় লোকেরা পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে হোলি পালন করে এবং প্রায় পাঁচ হাজার তীর্থযাত্রী এই সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণে সমবেত হন। এই সময়ে গুয়াহাটি থেকে রাজাদুয়ার পর্যন্ত মন্দিরের জন্য বিশেষ ফেরি পরিষেবা উপলব্ধ।

দৌল গোবিন্দ মন্দিরের দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু হয় সকাল সাতটায় দরজা খোলার মাধ্যমে। পুরোহিত মূর্তিকে স্নান করান এবং তারপর অর্চনা করেন। এর এক ঘণ্টা পর থেকে পূজারীরা আসতে শুরু করে, যা দিনের শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে। এর মধ্যে, বিকেলে মন্দির বন্ধ থাকে। সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক গান বা 'কীর্তন' গেয়ে আরতি করা হয়। প্রসাদ তারপর ভোগা ভক্তদের মধ্যে খোলা হলের মধ্যে বিতরণ করা হয়, প্রতিদিন দুপুরের সময়। ভক্তদের একটি ভাল সংখ্যক লোক লালসা সহ বা ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে ভোগ এবং থাগি (সারাই) দেওয়ার জন্য মন্দির পরিচালনায় অবদান রাখে। এই ধরনের ভক্তরা কাউন্টার থেকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য কিছু পরিমাণ ভোগা পান।

মন্দিরের কার্যসূচী সম্পাদনা

ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কয়েকটি কার্যসূচীর মাধ্যমে এখানে দৌল উৎসব পালন করা হয়৷ এছাড়া, দৈনিক অগণন ভক্তের আনা পূজা এবং তাদের মধ্যে ভোগের প্রসাদ বিতরণ দৌল গোবিন্দ মন্দিরের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য৷

পরিবহন সম্পাদনা

এই মন্দির ব্রহ্মপুত্র নদীর পারে অবস্থিত হওয়ার জন্য এখানে যেতে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন নৌকার ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়া গুয়াহাটি থেকে শরাইঘাট সেতু পার হয়ে রাস্তা দিয়েও এই মন্দিরে যাওয়া যায়।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বিশ্ব ঐতিহ্য, শান্তনু কৌশিক বরুয়া

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা