তোশিকি কাইফু

জাপানি রাজনীতিবিদ

তোশিকি কাইফু (海部 俊樹, Kaifu Toshiki, ২ জানুয়ারি ১৯৩১ – ৯ জানুয়ারি ২০২২) একজন জাপানি রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৮৯ হতে ১৯৯১ পর্যন্ত জাপানের ৭৭ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১]

তোশিকি কাইফু
海部 俊樹
সরকারি প্রতিকৃতি,১৯৮৯
জাপানের প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১০ আগস্ট ১৯৮৯ – ৫ নভেম্বর ১৯৯১
সার্বভৌম শাসকআকিহিতো
পূর্বসূরীসোসুকে ওয়ান
উত্তরসূরীকিচি মিয়াজাওয়া
আইচি নবম জেলার প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
২০ নভেম্বর ১৯৬০ – ২১ জুলাই ২০০৯
উত্তরসূরীমিৎসুনোরি ওকামোটো
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কাজের মেয়াদ
১৪ অক্টোবর ১৯৯১ – ৫ নভেম্বর ১৯৯১[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পূর্বসূরীরিউতারো হাশিমোতো
উত্তরসূরীসুতোমু হতা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৩১-০১-০২)২ জানুয়ারি ১৯৩১
জাপান
মৃত্যু৯ জানুয়ারি ২০২২(2022-01-09) (বয়স ৯১)
টোকিও, জাপান
রাজনৈতিক দললিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি
(১৯৬০–১৯৯৪, ২০০৩–২০২২)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
নিউ ফ্রন্টিয়ার পার্টি (১৯৯৪–১৯৯৭)
"অ্যাসেম্বলি অব ইনডেপেনডেন্টস" (১৯৯৭–১৯৯৮)
লিবারেল পার্টি (১৯৯৮–২০০০)
কনজারভেটিভ পার্টি (২০০০–২০০২)
নিউ কনজারভেটিভ পার্টি (২০০২–২০০৩)
দাম্পত্য সঙ্গীসাচিও কাইফু [ja]
প্রাক্তন শিক্ষার্থীচুও বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাক্ষর

শৈশব এবং শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

কাইফু ২ জানুয়ারী ১৯৩১ সালে নাগোইয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। তার পরিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল নাকামুরা ফটো স্টুডিও। এটি তার দাদা মেইজি যুগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটি মাতসুজাকায়া ফ্ল্যাগশিপ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পাশে অবস্থিত ছিল।[২]

কাইফু আইচি প্রিফেকচারাল আসাহিগাওকা সিনিয়র হাই স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনিসহ এগারো জন এই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এগারো জন ছাত্রের মধ্যে নয়জন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কাইফু সহ দুজন এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। যুদ্ধের সময় ছাত্র শ্রম সংঘটনের অংশ হিসাবে তাকে একটি মিটসুই ভারী শিল্প কারখানায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে তিনি দিনরাত বিমানের ইঞ্জিনের অংশগুলি একত্রিত করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের জন্য তিনি ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির যুব এয়ারম্যান একাডেমিতে যোগদান করেন। কিন্তু অক্টোবরে তার পরিকল্পিত তালিকাভুক্তির আগেই যুদ্ধ সমাপ্ত হয়।[২] এরপর তিনি চুও বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্জন করেন।[৩]

১৭ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে কাইফু হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্যের একজন মহিলা সহকারী সাবুরো ইয়ানাগিহারাকে বিয়ে করেন।[২][৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

 
কাইফু, জি-৭ নেতাদের সাথে বাম থেকে পঞ্চম (১৫ জুলাই ১৯৯১ সালে ১৭তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে)

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একজন সদস্য হয়ে কাইফু ১৯৬০ সালের জাপানের সাধারণ নির্বাচনে সফলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জাতীয় আইনসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৫] তিনি ষোল মেয়াদে অর্থাৎ ৪৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

তাকেশিতা নোবোরু এবং সোসুকে উনোর পদত্যাগের পর দলের নেতৃত্বে ওঠার আগে কাইফু জাপানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।[৬] ইয়োশিরো হায়াশি এবং শিনতারো ইশিহারার সামনাসামনি[৭] কাইফু দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।[৮][৯][১০] ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে জাপানের ৭৬ তম প্রধানমন্ত্রী হন।

১০ আগস্ট ১৯৯১ সালে কাইফু একটি প্রধান দেশের প্রথম নেতা হয়ে চীনে আনুষ্ঠানিক সফর করেন এবং ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ার বিক্ষোভ ও গণহত্যার পরে চীনের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ভেঙে দেন।[১১] কাইফু চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জাপানের অংশগ্রহণের অবসান ঘটিয়েছেন এবং জুন ও জুলাই মাসে দক্ষিণ চীনে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পর $৯৪৯.৯ মিলিয়ন ঋণ এবং অতিরিক্ত $১.৫ মিলিয়ন জরুরি সহায়তা প্রদান করেছেন।[১২] ১৯৯১ সালে তিনি উপসাগরীয় যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পারস্য উপসাগরে মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স পাঠান।[১৩]

তার দুটি মন্ত্রিসভা জুড়ে কাইফু দলটি তিনি যে সংস্কার চেয়েছিলেন তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য খুবই ছোট ছিল এবং সাগাওয়া এক্সপ্রেস কেলেঙ্কারির সৃষ্টি করেছিল। তিনি ১৯৯১ সালের নভেম্বরে পদত্যাগ করেন এবং কিচি মিয়াজাওয়া প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন।[১৪]

১৯৯৪ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত নিউ ফ্রন্টিয়ার পার্টির প্রধান হওয়ার জন্য এলডিপি ত্যাগ করেন।[১৫][১৬] ২০০৩ সালে[১৭] এলডিপিতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি ইচিরো ওজাওয়ার দলকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের নির্বাচনে ডিপিজে প্রার্থী মিৎসুনোরি ওকামোটোর কাছে পরাজিত হন[১৮][১৯] এবং ১৯৫৫ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন এলডিপি আধিপত্যের সমাপ্তির সাক্ষী ছিল। তার পরাজয়ের সময়, তিনি দীর্ঘ সময় আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য ছিলেন।[২০]

মৃত্যু সম্পাদনা

কাইফু ছিলেন শেষ জীবিত প্রাক্তন জাপানী প্রধানমন্ত্রী যিনি ১৯৮০ এর দশকে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে[২১] ৯ জানুয়ারি ২০২২-এ টোকিওর একটি হাসপাতালে ৯১ বছর বয়সে মারা যান। গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর ঘোষণা ১৪ জানুয়ারিতে হয়েছিল।[২২][২৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Toshiki Kaifu"Inter Press Service। ৩০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  2. Kaifu, Toshiki; 海部俊樹 (২০১৫)। Kaifu Ttoshiki kaisōroku : ware o motte inishie to nasu। Hiroki Kakimi, 垣見洋樹। পৃষ্ঠা 30–35, 223–224। আইএসবিএন 978-4-931388-95-6ওসিএলসি 931496864 
  3. Akimoto, Daisuke (১৪ জানুয়ারি ২০২২)। "In Memory of 'Kaifu Diplomacy' During the Gulf War Turmoil"The Diplomat (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. Kaifu, Toshiki; 海部俊樹 (২০১০)। Seiji to kane : Kaifu Toshiki kaikoroku। Shinchōsha। পৃষ্ঠা 38–39। আইএসবিএন 978-4-10-610394-0ওসিএলসি 682540758 
  5. Wiseman, Steven R. (৯ আগস্ট ১৯৮৯)। "Japan's Troubled Successor"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  6. Yates, Ronald E. (৯ আগস্ট ১৯৮৯)। "New Prime Minister elected in Japan"Chicago Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  7. Jameson, Sam (৫ আগস্ট ১৯৮৯)। "2 More Join Race for Japanese Premier : Ex-Ministers of Transportation, Health Also Seek to Succeed Uno"Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  8. "Japanese official quits over affair"The New York Times। Associated Press। ২৫ আগস্ট ১৯৮৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  9. Hiatt, Fred (৩ মার্চ ১৯৯০)। "Japan's Kaifu faces new hints of scandal"The Washington Post 
  10. Pringsheim, Klaus H. (১৯৯১)। "The Political Ordeal of Toshiki Kaifu (1990–1991)": 3–17। ডিওআই:10.1080/07383169.1991.10392623 
  11. "Japanese Prime Minister Meets With China's Communist Leader"Associated Press। ১২ আগস্ট ১৯৯১। ১৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  12. "Prime Minister Toshiki Kaifu departs Saturday for Beijing to..."UPI। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  13. "Ex-Japan PM Kaifu, who dispatched SDF to Persian Gulf, dies at 91" 
  14. Jameson, Sam (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)। "Miyazawa's Party Faction Chief Indicted"Los Angeles Times। Tokyo। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৩ 
  15. "New party taps"Sun Sentinel। ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  16. "Ex-premier to head new Japanese party"The Washington Post। ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  17. Dobson, Hugo; Rose, Caroline (২০১৯)। "The Afterlives of Post-War Japanese Prime Ministers": 127–150। ডিওআই:10.1080/00472336.2018.1460389  
  18. Murakami, Mutsuko (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "Untested New Regime Raises Fresh Hopes"। Inter Press Service। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  19. Maeda, Ko (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ২০১০)। "Factors behind the Historic Defeat of Japan's Liberal Democratic Party in 2009": 888–907। ডিওআই:10.1525/as.2010.50.5.888 
  20. "Several LDP bigwigs sent down to defeat"The Japan Times। Kyodo News। ৩১ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  21. POLITICS, · in; SOCIETY। "Former PM Kaifu dies at 91"Nippon TV NEWS 24 JAPAN (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৬ 
  22. "海部俊樹元首相が死去 91歳"। NHK। ১৪ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০২২ 
  23. "Former Prime Minister Toshiki Kaifu dies at 91"। ১৪ জানুয়ারি ২০২২। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা