তোফায়েল আহমদ
তোফায়েল আহমদ (২২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ - ২৮ মার্চ ২০০২) একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, লোকসংস্কৃতি গবেষক এবং লোকশিল্প সংগ্রাহক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প নিদর্শন সংগ্রহ ও সেগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।[১] তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। লোকসংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[২]
তোফায়েল আহমদ | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৮ মার্চ ২০০২ | (বয়স ৮৩)
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি ফেলো (২০০১) |
প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
তোফায়েল আহমদ ১৯১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি (১৩২৬ বঙ্গাব্দের ১০ ফাল্গুন) লক্ষ্মীপুর জেলার বড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সম্পন্ন করে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামিয়ার ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বেকার হোস্টেলে ছিলেন এবং এ হোস্টেলের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১]
কর্মজীবনসম্পাদনা
তোফায়েল আহমদ ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বরিশালের চাখার ফজলুল হক সরকারি কলেজে কিছুকাল শিক্ষকতা করে ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সরকারী সাদাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৭ বছর কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।[১]
তার সংগ্রহশালার প্রশংসা করে চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন একে ‘মিনি মিউজিয়াম’ নামে অবহিত করেছিলেন।[১] তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ হস্তশিল্প সমবায় ফেডারেশন লিমিটেডের (কারিকা) উদ্যোগে ‘ফোক ক্রাফট সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইন ডক্যুমেন্টেশন’ (লোকশিল্প জরিপ ও নকশা নথিবদ্ধকরণ) নামক একটি গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৩৬টি উপজেলায় ভ্রমণ করেন এবং সে সব অঞ্চলের লোক ও কারুশিল্পের নমুনা সংগ্রহ করেন। এছাড়া গ্রামীণ কারু শিল্পীদের কার্যক্রম থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।[১]
এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত তার উল্লেখ্যযোগ্য আবিষ্কারের মাধ্যে রয়েছে গ্রাম বাংলার লোকচিত্রকলা গাজীর পটের সংগ্রহ যা তিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেন। এছাড়াও তিনি আরো কয়েকটি দুর্লভ লোকশিল্প নিদর্শন উদ্ধার করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশের এক হাজারের বেশি লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প নিদর্শন সংগ্রহ করে তিনি একটি ব্যক্তিগ্রত সংগ্রহশালা গড়ে তুলেন।[১] ১৯৯৯ সালে তিনি প্রযত্ন পরিষদ নামে একটি আলাদা কমিটি গঠন করে ‘বাংলা ঘর লোক ও কারুশিল্প সংগ্রহ’ নামে তার সংগ্রশালাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পরিচালনা করছে।
তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ পরিষদ নামক সংগঠনের প্রধান এবং দুই মেয়াদে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালের ২৮ মার্চ (১৪ চৈত্র ১৪০৮) ৮৩ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]
গ্রন্থসম্পাদনা
তোফায়েল আহমদ কারুশিল্পের উপর বেশ কিছু গ্রন্থ ও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তার মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি থেকে ‘লোকশিল্প অ্যালবাম: তোফায়েল আহমদের বাংলা ঘর থেকে নির্বাচিত সংগ্রহ’ নামক ১২৮ নিদর্শন নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:[১]
- আমাদের প্রাচীন শিল্প গবেষণাকর্ম (১৯৬৪)
- লোকশিল্প (১৯৮৫)
- যুগে যুগে বাংলাদেশ (১৯৯২)
- লোকশিল্পের ভুবনে (১৯৯৩)
- ঢাকার বাণিজ্যিক কারুকলা (১৯৯৩)
- আটিয়ার চাঁদ, লোকঐতিহ্যের দশ দিগন্ত (১৯৯৯)
সম্মাননাসম্পাদনা
- শীলু আবেদ কারুশিল্প পদক (১৯৯৯)
- বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সম্মাননা (২০০০)
- বাংলা একাডেমি ফেলো (২০০১)
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ শাহীদা আখতার (২০১২)। "আহমদ, তোফায়েল"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা"। বাংলা একাডেমি। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২০।