তেত্রিশ কোটি দেব মন্দির
শ্রী শ্রী তেত্রিশ কোটি দেব মন্দির আসামের কামরূপ মহানগর জেলার গুয়াহাটি মহানগরে অবস্থিত। ১৯৭৩ সালে এই মন্দির স্থাপিত হয়। বহুবছর ধরে এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের ভক্তসমাজের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে।
তেত্রিশ কোটি দেব মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | কামরূপ মহানগর |
অবস্থান | |
অবস্থান | ওদালবাক্রা, গুয়াহাটি |
দেশ | ভারত |
উৎপত্তির ইতিহাস
সম্পাদনাউৎপত্তির কাহিনী ওদালবাক্রা গ্রামের থেকে আরম্ভ হয়। এই ওদালবাক্রা গ্রাম গুয়াহাটির কাহিলীপারা অঞ্চলে অবস্থিত। গ্রামের বাসিন্দাগুলি মূলত: রাভা-কাছাড়ি জনগোষ্ঠীর। ১৯৬৪ সালে এই গ্রামটি ডাঠ হাবি এবং বড়ো ওখ পাথরে ভরা ছিল। সেই সময়ে রেংথং রাভা এবং সূর্য রাভা নামের দুজন লোক একদিন শিকারের উদ্দেশ্যে সেই শিলাগুলির উপর (নরকাসুর পাহাড় এলাকা) বিচরণ করছিল। সেই সময়ে হাবির কোরবার থেকে বিশাল একটি বাদুড় তাঁদের সন্মুখ দিয়ে উড়ে এসে সেই ওখ শিলাগুলির ফাঁকে ঢুকে যায়। তাঁরা বাদুড়টিকে ধরার উদ্দেশ্যে তাকে অনুসরণ করে একটি অন্ধকার পাথরের গুহার মধ্যে ঢুকে যায়। তখন সেই গুহার মধ্যে থাকায় তাঁরা কিছু একটা বস্তু অন্ধকারে ঝিকমিক করতে দেখতে পায়। তখন তাঁরা সেই বস্তুটি বার করে এনে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেখে যে সেইটি একটি শংখ। এইভাবে তাঁরা পরেরদিন সেই গুহার থেকে আবিষ্কার করে ২৩ টা মূর্তি। এভাবে অন্য একদিন এরকম ১০ টা মূর্তি এবং টিলিঙা কিছু ওলাল। এই মূর্তিগুলি আসলে ব্রোঞ্জের নির্মিত বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি ছিল। সেই মূর্তিগুলিকে নিয়ে সেই স্থানে এই মন্দিরের স্থাপন করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মের মতে হিন্দু দেব-দেবীর মোট সংখ্যা হ’ল ৩৩ কোটি। সেই উদ্ধার হওয়া মূর্তিসমূহের মোট সংখ্যা ছিল ৩৩ টা। কালক্রমে এই ৩৩ টি মূর্তি ৩৩ কোটি ভগবানের অস্তিত্ব বহন করছে বলে বিশ্বাস করে মন্দিরটি "শ্রী শ্রী তেত্রিশ কোটি দেব মন্দির" হিসাবে নামকরণ করা হয়। বর্তমান এই মন্দিরের সঙ্গে চতুর্থ অসম আরক্ষী বাহিনীর চৌকি আছে। এর বেটেলিয়ানরা ১৯৭৩ সালে এই মন্দির স্থাপন করে দিয়েছিল।[১]
উদ্ধার হওয়া বস্তুসমূহ
সম্পাদনাউদ্ধারিত বস্তুগুলির মোট ৩৩ টা মূর্তি এবং কিছু অন্য বস্তু ছিল। এগুলির বর্তমান কিছু অসম রাজ্যিক সংগ্রহালয়ে এবং বাকীগুলি এই মন্দিরে আছে। এইগুলি হ’ল- চারটি বিষ্ণুর মূর্তি, দুটি সূর্যদেবতার মূর্তি, একটি মনসাদেবীর মূর্তি, একটি গণেশের মূর্তি, একটি ইন্দ্রদেবতার মূর্তি, শিবের মূর্তি, বুদ্ধদেবের মূর্তি, রাধার মূর্তি, নটরাজের মূর্তি, কিছু অসনাক্ত মূর্তি (টুকরো আকারে), একটি মুখলিংগ, একটি শংখ এবং দুটা টিলিঙা। এর ভিতর বৃহত্তম মূর্তিটি হল ইন্দ্রদেবতার। এই মূর্তিটির আকার ৩২ x ১৬ সে: মি:। এই মূর্তিটি গোটা ভারতের মধ্যে অদ্বিতীয় পর্যায়ের। মূর্তিগুলি আসল ব্রঞ্জে নির্মিত। বর্তমান পুরাতত্ত্বের জগতে সেই মূর্তিসমূহ ‘নরকাসুর পাহাড়ে আবিষ্কৃত সামগ্রী’ অথবা ইংরাজীত “আর্কিওলজিকাল ফাইণ্ডস এট নরকাসুর হিলস” নামে প্রখ্যাত। আসামের প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক পণ্ডিতদ্বয় ড0রবীন্দ্র নাথ চৌধুরী এবং ধর্মেশ্বর চুতিয়া অসম অনুসন্ধান সমিতির বুলেটিনে (২৯ সংখ্যক) লেখা "এ নোট অন দ্য আর্কিওলজিকাল ফাইণ্ডস এট নরকাসুর হিলস" শীর্ষক বিস্তৃত নিবন্ধে নরকাসুর পাহাড় অঞ্চলে আবিষ্কৃত হওয়া এই মূর্তিসমূহের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
দৈনিক পূজা-অর্চনা
সম্পাদনাপ্রথম অবস্থায় মন্দিরের পূজারী ছিলেন কমল তাঁতী। এর পরে বহু পূজারী পরিবর্তিত হয়। মন্দিরের বর্তমান পূজারী হলেন ত্রিভূবন পোদ্দার। পূজারী মন্দিরে থাকা দেব-দেবীর মূর্তিগুলি নিত্য শুদ্ধচিত্তে স্নান করান। সকালে হিন্দুর ২৩ কোটি মূর্তিকে ২৩ টি কাঁসিতে এবং সন্ধেবেলা ১০ কোটি মূর্তিকে ১০ খন কাঁসিতে প্রসাদ প্রদান করা হয়। কিন্তু সোমবার এবং বৃহস্পতিবার বিশেষ পূজার দিন। সেদিন সেই দুটি সময়ে আসামের চারদিক থেকে আসা ভক্তরা ধূপ, চাকি, নৈবেদ্য ইত্যাদি নিয়ে পূজা করার ভিড় দেখা যায়। তবুও বাকি প্রতিদিন ভক্তের সমাগম পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসব, পূর্ণিমা, অমাবস্যা ইত্যাদিতে ওদালবাক্রা গ্রামটির বাসিন্দারা কাজ-কর্ম চালাতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সকলে মিলে নাম-কীর্তন করতে আসেন ।[১]
মন্দিরের পরিচালনা এবং বর্তমান পরিস্থিতি
সম্পাদনাউপরে বলা হয়েছে যে চতুর্থ অসম আরক্ষী বাহিনী মন্দিরটি সর্বপ্রথম স্থাপন করে দিয়েছিল; কিন্তু তথাপি বর্তমান গ্রামটির জনসাধারণ এর সমস্ত পরিচালনা করে। গ্রামটির যুবসংঘ এবং মহিলা সমিতি মন্দিরের জন্য বর্তমান বড় করে গণেশের মূর্তি, শিবের মূর্তি, হনুমানের মূর্তি ইত্যাদি বহু মূর্তি তৈরি করে এবং সঙ্গে কুয়ো, অন্যান্য বস্তু ইত্যাদি বানিয়ে দিয়েছে। মন্দিরের চারদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশ অতি মনোরম। অজস্র পার সরা মন্দিরের পরিবেশ শান্তিময় করে তুলেছে।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ রূপরাজ শর্মা। "দ্য সানডে ইণ্ডিয়ান"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - ↑ শ্রী যদুমণি রাভা, (), (ঠিকানা) গাওঁর পুরানো বাসিন্দা
টেমপ্লেট:Hindu Temples in Assam টেমপ্লেট:হিন্দুধর্মর দেব দেবী এবং ধর্মগ্রন্থ